Amsterdam |
(২)
চাঁদ তুলি দিয়ে এঁকেছে বিপদ ক্যানালের জলে
মধ্যরাত্রে প্রতিদিন আমি গুলিয়ে ফেলি পদক্ষেপ
প্রতিবিম্বহীন, স্লান্ত হেলান দিয়ে থাকা আকাশের তলে
বিচুর্ণ পরিত্যাক্ত সিঁড়ি ধরে উঠে যাওয়া কিছু আক্ষেপ
প্রতিধ্বনি ধরে এগোই আন্দাজে
সর্পিল এই শহরের ভাঁজে ভাঁজে
~হেন্ড্রিক মার্সম্যান
একটি দেশ, যেখানে যত না মানুষ তার চেয়ে বেশি সাইকেল। মাথাপিছু একটি করে সাইকেল প্রত্যেক ব্যক্তির আছে, তা সে পাঁচ বছরের শিশু হোক অথবা নব্বই বছরের বৃদ্ধ। সারা দেশ জুড়ে সাইকেল চালকদের জন্যে রাস্তা করেছে সরকার। স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর দল থেকে শুরু করে অফিসকর্মী, সকলেই সাইকেল নিয়ে চলাফেরা করছে। বিপুল সংখ্যক সাইকেল রাখা থাকে জেটি, বাস অথবা ট্রেন স্টেশনে। সাইকেল ব্যবহার করার ফলে পরিবেশে দূষণ তো কমেইছে, স্বাস্থ্যসচেতনতাও বেড়েছে ডাচ নাগরিকদের। 'ওয়ার্ল্ড সাইক্লিং ক্যাপিটল' এবং 'সাইক্লিং প্যারাডাইস'-এর পুরস্কার প্রতি বছরই পেয়ে থাকে অ্যামস্টারডাম।
এককালে এই শহরেই সাইকেলচালকরা প্রায় প্রতিদিন দুর্ঘটনার শিকার হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনৈতিক উচ্চাশা সারা পৃথিবীর মানুষকে গ্রাস করেছিল। নিদারুণ শিল্প উদ্যোগ এবং ত্বরিত গতিতে বাড়তে থাকা মোটরগাড়িদের জন্যে উপযুক্ত রাজপথ নির্মাণ করাই প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমেরিকার বেশিরভাগ শহরে মোটরগাড়ির জন্যে শহরের নকশায় আমূল পরিবর্তন করা হয়, সেই নীতি অনুসরণ করে নেদরল্যান্ডসও পরিকল্পনা করেছিল শহরের পরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তন করার। চওড়া পথ নির্মাণ করতে হলে এখানকার খালগুলো বুজিয়ে ফেলতে হবে, এই পরিকল্পনা নিয়ে যখন অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে প্রশাসন, ঠিক সেই সময়ে বেঁকে বসেন শহরের সাধারণ মানুষেরা। 'প্রোভো' নামের এক অ্যানার্কিস্ট গ্রূপ ঘোষণা করে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে শিকেয় তুতোলা চলবে না। শহরকে ধোঁয়ায় আর অনিয়ন্ত্রিত গাড়ির চাকায় পিষ্ট হতে দেওয়া হবে না।
এদিকে ১৯৭৩ সালে তেলের দাম প্রচন্ড বেড়ে যায়। সরকার বাধ্য হয়ে সপ্তাহে একদিন মোটর পরিবহন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই অবস্থায় রোজকার কাজকর্মের জন্যে সাইকলের বিক্রি বেড়ে যায় উল্লেখযোগ্য ভাবে। বেসরকারি অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও জনসাধারণকে সাইকেল ব্যবহার করতে উৎসাহ দেওয়া শুরু হয়। এদিকে সরকারেরও টনক নড়েছে। মানুষের উৎসাহ দেখে সরকারের তরফ থেকে 'Woonerf' বলে বিশেষ এক পরিবহন নিয়ম বাস্তবায়িত করা হয় যার ফলে মোটরচালিত গাড়িদের তুলনায় রাস্তায় চলাফেরা করার জন্য সাইকেলচালকদের বিশেষ সুবিধে দেওয়া হবে। সেই থেকেই ডাচদের নিত্যসঙ্গী সাইকেল। অ্যামস্টারডাম শহর এবং শহরের বাইরের সবুজ গ্রামাঞ্চলে অগুনতি সাইক্লিং ট্যুর হয় আজকাল। ঠাট্টা করে বলা হয় নেপোলিয়ান যেমন ঘোড়ার ওপর ঘুমিয়ে পড়তে পারতেন, ডাচরা ইচ্ছে করলে সাইকেল চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে নিতে পারে।
এই ছিল গল্প। তা এই অসামান্য কাহিনির বক্তা আমাদের ওয়াকিং ট্যুরের গাইড সেলিনা, যার সঙ্গে আমরা শহরের কিছুটা অংশ হেঁটে হেঁটে দেখছি। ইতিহাসের গল্প প্রায় সবই জানা, তার চেয়ে আধুনিক কালের এই ইতিহাস কম চিত্তাকর্ষক নয়। রাজারাজড়ার যুদ্ধ এবং সিংহাসন কাড়াকাড়ির গল্প তো প্রায় প্রতিটা দেশেই আছে, শুধু নামগুলো বদলে বদলে যায়। মানব ইতিহাসের বেশিরভাগটাই যুদ্ধ করে কেটে গেছে, শিল্প সংস্কৃতির অধ্যায় বলতে গেলে শুরু হয়েছে এই সেইদিন থেকে।
ডাচ সংস্কৃতিতে অবশ্য নিয়ম ভাঙার একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি আছে। মধ্যযুগে যখন ক্যাথোলিক চার্চের লিখিত নিয়মে বড় বড় শিল্পীরা কেবল বাইবেলের বিভিন্ন ঘটনার ছবি আঁকতে বাধ্য হচ্ছেন, এখানকার শিল্পীরা একের পর এক 'স্টিল আর্ট' এঁকে চলেছেন। প্রাকৃতিক দৃশ্য বা ল্যান্ডস্কেপকে যদিও কেউ আড়চোখে দেখত, স্টিল আর্টকে একেবারেই পাত্তা দিত না। তাতে অবশ্য এখানকার ফ্লেমিশ শিল্পীদের মোহভঙ্গ হয়নি। নেদরল্যান্ডসসের টিউলিপ ফুল আর স্টিল আর্টের সংযোগে শয়ে শয়ে ক্যানভাস ভরে উঠেছিল। রেমব্রান্ট, পিটার ক্লাস্জ, জোহানের ভের্মির থেকে শুরু করে পিয়েট মন্ডারিয়ন এবং আধুনিক কালের ডাচ গ্রাফিক আর্টের পুরোধা এম সি এসিয়ের মতন বহু শিল্পী চেনা পথ ছেড়ে বেড়িয়ে এসে নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছেন। মজার কথা হল পর্যটকেরা অ্যামস্টারডামে এসেই ভ্যান গঘের মিউজিয়ামেই ছোটে। ডাচ শিল্পীদের কাজ নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামায় না। ভ্যান গঘ যে বিংশ শতাব্দীর সেরা শিল্পীদের অন্যতম তাতে কোনও সন্দেহ না থাকলেও বাস্তবে জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি ফরাসি দেশেই কাটিয়েছেন।
বাস্তবে আধুনিক কালের ডাচ সমাজ সম্পর্কে আমাদের বিশেষ ধারণা নেই। ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তারা হয়তো কয়েকজন ফুটবলারদের চিনতে পারে। কিন্তু দু'একজন ছাড়া তেমন কারো কথা আমি নিজেও সেইভাবে জানি না।
সেলিনাকে জিগ্গেস করলাম, “তোমার কী মনে হয়? আজকাল কোন ডাচ ব্যক্তিত্বকে সারা পৃথিবীর মানুষ চেনে? ফুটবলারদের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম।”
সেলিনা মিষ্টি করে হেসে বলল, “সত্যি বলতে কি নেদরল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামের ফ্ল্যান্ডার্স অঞ্চল ছাড়া এখানকার ব্যক্তিত্বের খবর হয়তো খুব কম মানুষেই জানে। যারা সাধারণ টুরিস্ট, তারা শুধু অ্যানা ফ্রাঙ্কের কথাই জানে। সে তো একযুগ আগের ঘটনা। কিন্তু পনেরো বছরের সেই কিশোরী মেয়েটির ট্র্যাজিক জীবনের গল্প হয়তো প্রত্যেকের মনেই গেঁথে গিয়েছে। এছাড়া অনেকে পল ভেরোভেনের কথাও জানে। তাঁর পরিচালিত সিনেমা ওয়ার্ল্ড ফেস্টিভাল সার্কিটে বেশ সাড়া ফেলেছে। হ্যারি মুলিস, গেরার্দ রিভ, গেরিত কোম্রিজ, হের্ম্যান কোচ প্রভৃতি কবি সাহিত্যিকের কথাও কিছু লোকে জানে কিন্তু তাদের ব্যতিক্রমই বলা যেতে পারে। বিশ্বসাহিত্যের মঞ্চে নেদরল্যান্ডসসের কথা কতজন জানে তাতে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।”
আমি কিঞ্চিত অবাক হয়ে বললাম, “কিন্তু নেদারল্যান্ডসে তো সাহিত্য নিয়ে বেশ উন্মাদনা ছিল বলেই জানি। ইউরোপের অন্যান্য দেশে গির্জা যে বই নিষিদ্ধ করে দিত, এখানে তা প্রকাশিত হত সহজেই। ফ্রি ভার্স, সিম্বোলিক সাহিত্য নিয়ে কয়েকটা আন্দোলনও নাকি হয়েছে! তাহলে আধুনিক কালে এসে পিছিয়ে পড়ার কারণটা কী?"
আমরা রাস্তা পার হব। বড় রাস্তায় বেশ ট্রাফিক। একটা গাড়ি হর্ন দিতেই রক্সি চেঁচিয়ে বলে উঠল, “অত তাড়া থাকলে সাইকেলে করে যান।”তার ভঙ্গি দেখে আমি হেসে ফেললাম। পথচারীরাও হাসছে। রাস্তা পার হয়ে সে বলল, “আন্দোলন তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই চলছে। পঞ্চাশের দশকে 'উইজফ্টিগার' বলে একদল কবি উঠে এসেছিল যারা প্রচুর পরিমাণে পরীক্ষামূলক পদ্য লিখেছেন। সুরিয়ালিস্টিক ধারণার সঙ্গে যৎসামান্য বিরামচিহ্ন ও চিত্রাবলী ব্যবহার করে কবিতা লেখা শুরু করেন লুবার্টাস সোয়ানসুইজক আর হেন্ড্রিক মার্সম্যানরা। গেরিট কেমব্রিজ তো বিদ্রুপাত্মক সনেট লেখায় প্রায় বিপ্লব এনে দিয়েছিলেন। শুধু কবিতা কেন, গদ্যতেও উল্লেখযোগ্য কাজ কিছু কম হয়নি। সাইমন কারিগেল্ট, মারিয়া ডালমুটদের লেখা পড়লেই বুঝতে পারবে। সাহিত্য নিয়ে আন্দোলন আর গবেষণা তো এখনও চলছে। ইডা গের্ডহার্ট পোস্ট সিম্বলিজম নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করেছেন, হারমান বাল্কটের কাজ তো বেশ জনপ্রিয়। লাইডেন শহরের নাম শুনেছ?"
লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক বন্ধু পড়ত, সেই সূত্রে জায়গাটার কথা জানা ছিল। বললাম, “শুনেছি।”
"লাইডেনকে আমরা বলি কবিতার শহর। সেখানে গেলে দেখতে পাবে ডাচ সাহিত্য নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কী উত্তেজনা! প্রায় প্রতি সপ্তাহতেই কবিতা নিয়ে উৎসব চলে। শিক্ষক আর ছাত্রছাত্রীরা তো বটেই, সেখানকার সাধারণ মানুষেরাও পিছিয়ে থাকে না। 'টেখেন ব্লিড’ নামে শিক্ষার্থীদের একটি সাহিত্যপ্রেমী দল আছে, তারা শহরের দেওয়ালে প্রায় সারা পৃথিবীর জনপ্রিয় কবিদের নানা কবিতা লিখে ফেলেছে। গত কয়েক বছরে রাশিয়ান, স্প্যানিশ, জার্মান কত ভাষাতেই যে কবিতা লেখা হয়েছে। অক্টোবর মাসে সাহিত্য কার্নিভালে গেলে দেখতে পাবে লাইডেন শহর জুড়ে কবিতার আসর বসেছে। কিন্তু উৎসাহ থাকলেই তো পরিচিতি হয় না। বিশ্বসাহিত্যের মঞ্চ শুধু সাহিত্যের জায়গা নয়। অনুবাদ সাহিত্যে ডাচ সাহিত্য অনেকটাই পিছিয়ে, তাছাড়া মার্কেটিংয়ের অভাবও আছে। ইংরেজিতে দেখবে বহু পরিচালক উপন্যাস নির্ভর ছায়াছবি তৈরি করেন, তাতে লেখকেরও নাম হয়। বইয়ের অনুবাদও হয় অন্যান্য ভাষায়। সে সব এখানে নেই। সেই কারণেই হয়তো বিশ্বসাহিত্যের দরবারে ডাচ সাহিত্য সেভাবে পরিচিতি পায় না।”
আমি চুপ করে গেলাম। আমার নিজের মাতৃভাষায় লেখা কত বিশ্বমানের সাহিত্যও যে জনমানসের চক্ষুর আড়ালে রয়ে গেছে! ডাচদের আর কী বলব?
অ্যানা ফ্রাঙ্কের বাড়ির সামনে অজস্র মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন নাৎসিদের হাত থেকে রক্ষা পেতে কিশোরী অ্যানা ফ্রাঙ্কের পরিবার যে এই বাড়ির একটি চোরাকুঠুরিতে লুকিয়ে ছিল মাসের পর মাস, সেই কথা এখন সকলেরই জানা। নাৎসি বাহিনী ১৯৪০ সালে নেদারল্যান্ডস আক্রমণ করে। এরপর ইহুদিদের ধরার জন্য তন্ন তন্ন করে তল্লাশি অভিযান চালায়। ১৯৪২ সালের ৬ জুলাই থেকে ১৯৪৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত লুকিয়ে থাকা সেই জীবনের কথা আনা তাঁর দিনপঞ্জিতে লিপিবদ্ধ করেছেন, যা অ্যানা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি বলে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত বইটিতে প্রকাশিত।
অ্যানার লেখা এই চোরাকুঠুরির দমবন্ধ করা পরিবেশে একটি ইহুদি পরিবারের দীর্ঘশ্বাসের কাহিনী হয়তো বের্গেন-বেলসন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে তার মৃত্যুর সঙ্গেই শেষ হয়ে যেত, কিন্তু সেটা হয়নি। ফ্রাঙ্ক পরিবারের প্রতিবেশি মিয়েপ গিইয়েস যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন ওটটো ফ্রাঙ্কের মেয়ের সেই স্মৃতিচিহ্ন, অ্যানার ডায়রি। যুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন বছর পর ওটটো যখন নিঃস্ব বাড়িতে ফিরে এলেন, মিয়েপ কোনও কথা না বলেই ডায়রিটা তুলে দিয়েছিলেন তার হাতে।
শুধুমাত্র ইহুদি হওয়ার অপরাধে লক্ষ লক্ষ মানুষকে যে মূল্য চুকোতে হয়েছে, সেই বেদনাদায়ক স্মৃতি আজও ইউরোপের প্রতিটা শহরে জীবন্ত। অত্যাচার, ক্ষোভ আর মৃত্যুর ইতিহাস। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বাধ্যতামূলক ভাবে নিয়ে যাওয়া হয় কোনও না কোনও কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে, যাতে ধর্মীয় বিভাজনের এই হৃদয়বিদারক ঘটনাবলি দেখে তারা অনুভব করতে পারে সেই দমবন্ধ করা পরিবেশ। ভবিষ্যতে যেন কোনক্রমেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না হয়।
সারা সকাল সেলিনার সঙ্গে হেঁটে হেঁটে কেটে গেল। উজ্জ্বল লাল, নীল, ক্যাডবেরি রঙের বাড়ির প্রত্যেকটাতেই একাধিক সাদা ফ্রেমের জানলা, কালো রঙের ঢালু ছাদ। অসংখ্য পাথরের ব্রিজ। কাঠের সেতুর নিচে খালের সবুজ জল আর শত শত সাইকেলের উপস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এলোমেলো শান্ত গলি পথ দিয়ে হেঁটে বড় রাস্তায় পৌঁছলেই মনে হয় অনেক যুগ অতিক্রম করে এসেছি। জনসমুদ্রের মাঝে চলে যাওয়া ট্রামের লাইন আর ডিজিটাল যুগের বিলাসভ্রমণের মাঝে উড়ে আসা শব্দের মিছিল।
দুপুরে হাঁটতে হাঁটতে ব্লুমেনমার্কেটে চললাম। অ্যামস্টারডামের নামকরা ফুল আর চীজের এই বাজার আসলে এক ভাসমান সরণী। 'ফ্লোটিং মার্কেট' নামে জনপ্রিয় এই বাজারে সারি সারি আকর্ষণীয় দোকান দেখে মনে হয় পিকনিক বসেছে বুঝি। টবে করে বিক্রি হচ্ছে রকমারি ফুল, অর্কিড, ক্যাকটাই। টিউলিপের বীজ নিয়ে বসে আছে স্কার্ট পরিহিত মহিলারা। চীজের দোকানগুলোতে চলছে চীজ টেস্টিং। হরেক রকমের চীজ চেখে দেখার অভিজ্ঞতা না হলে ব্লুমেনমার্কেটে আসাই নাকি বৃথা। তাই আমরাও খুব বুঝদারের মত চীজের টুকরো মুখে দিয়ে মাথা নাড়ছি। নানা ধরনের চীজ স্যাম্পল সাজিয়ে রাখা, চেখে দেখতে দেখতেই পেট ভরে যায়। এদিকে ক্যাফে আর পাব থেকে রান্নার উজাড় করা সুবাস এসে চীজের গন্ধের সঙ্গে জোট পাকিয়েছে। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে ফুলের সৌরভ। গ্রীষ্মের উৎসবের আমেজে উড়ে যাচ্ছে আহ্লাদিত প্রজাপতির দল। দোকানদাররা সওদাগরি করতে ব্যস্ত। আমরা মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকি। অভ্যেস না থাকলে যা হয়...
দুপুরে লাঞ্চ করে সোজা সেন্ট্রাল স্টেশন। স্থানীয় ভাষায় যার নাম স্টেশনসপ্লেইন। কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই, নিখাদ উদ্দেশ্যহীন ভ্রমণের লক্ষ্য নিয়ে উঠে পড়লাম দূরপাল্লার ট্রামে। ট্রাম চলল, আমরাও চললুম দু'ধারের দৃশ্য দেখতে দেখতে। হঠাৎ দেখি সামনে এক বিশাল বন্দর, বিরাট এক যাত্রীজাহাজ দাঁড়িয়ে আছে খাঁড়িতে। সামনে থেকে দেখতেই হয়! সুট করে নেমে পড়লাম। দৌড়ে গিয়ে বন্দরের সামনে। মালপত্র বোঝাই হয়ে গেছে, ক্যাপটেন সাদা ইউনিফর্ম পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। যাত্রীরা একে একে করে উঠছে। দাঁড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। তারপর ফিরে এসে চড়ে বসলাম আরেকটা ট্রামে। ট্রাম নিয়ে চলল শহরের শেষ প্রান্তে। খাঁ খাঁ প্রান্তর, মাঝে মাঝে এক একটা কচিকলাপাতা রঙের জলাভূমি। এসব পাড়ায় বাড়িঘর নেই, দোকানপাট নামমাত্র। শুধু বিস্তীর্ণ জলাভূমির মাঝ দিয়ে পাকা রাস্তা চলে গেছে উক্রেটের দিকে। সবুজের প্রলেপ মাখা প্রান্তর, মাঝে মাঝে ট্রামস্টপ আর সুপারমার্কেট। এই অ্যামস্টারডামের চেহারা কত লোকে দেখে জানি না! আমরা অন্তত একজনকেও দেখলাম না।
অ্যামস্টারডামে শহরের বেশ খানিকটা অংশ সমুদ্রের কবল থেকে মুক্ত করা জমিতে অবস্থিত। অ্যামস্টেল নদীর জেটি থেকে বিনামূল্যে অবিরাম ফেরি চলে নদীর অপর প্রান্তে থাকা দুই প্রধান উপদ্বীপ বুইকস্লোতরওয়েক এবং এন এস ডি এম জেটির উদ্দেশে। বুইকস্লোতরওয়েকের আই ফিল্ম মিউজিয়াম আর টোল্টহুইজটিন সেন্টারে অনুষ্ঠিত নাটক দেখতে অনেক লোকেই ফেরি করে সেখানে যায়। বুইকস্লোতরওয়েক দ্বীপে 'আই লভ অ্যামস্টারডাম' লেখা একটা ল্যান্ডমার্ক আছে, অন্ধকারে সেই আলোকিত সৌধের সামনে গিয়ে ছবি তোলার লোভও বড় কম নয়।
আমরা যখন ফেরিতে করে পাড়ি দিলাম, তখন বিকেল। অন্ধকার নামতে সেই ন'টা, তার আগেই ফিরে আসব। যাত্রীরা চলেছে সাইকেল নিয়ে, ফেরিঘাটের ফোল্ডেড স্ট্যান্ডেও হাজার হাজার সাইকেল দাঁড় করানো। ফেরি ছাড়তেই সারা শহরের উঁচু উঁচু বাড়ি আর দপ্তরগুলো এক লাফে চোখের সামনে চলে এল। জলভ্রমণ আমার দারুণ লাগে, তার ওপর বেশ সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে, রোদের উত্তাপ গায়ে লাগে না। জল কেটে বুইকস্লোতরওয়েক পৌঁছাতে মিনিট পাঁচেকও লাগল না। টোল্টহুইজটিন সেন্টারের সামনেই খালটা কোমর ঘুরিয়ে চলে গেছে, ছোট্ট এক সেতু পেরিয়ে ঘুরে তাকিয়েছে আবার। আর চারটে জায়গার মতোই খাদ্য আর পানীয়র দোকান। অনুষ্ঠান অবশ্য প্রতিদিন হয় না।
সন্ধ্যেবেলায় হস্টেলে ফেরার সময়ে দেখি যথারীতি সূর্যাস্ত হতে না হতেই ক্যানাল ডিস্ট্রিক্ট জেগে উঠছে। ডরমিটরিতে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা ছিলাম, তার মধ্যে প্রায় কুড়িজনের সঙ্গে আলাপ হল। আর সে যেমন সেমন আলাপ নয়! টেক্সাস থেকে কয়েকজন ছেলে এসেছে, কালকের রেড লাইট অঞ্চলের অভিজ্ঞতা শুনে তারা আমাকে চেপে ধরল হেইনেকেনের বিয়ার খাওয়ানোর জন্যে। হেইনেকেন বিয়ারের নামডাক আছে এই অঞ্চলে, ছেলেগুলো প্রায় এক বাক্স বিয়ার নিয়ে এসেছে। সকলে অবশ্য বিয়ার ভক্ত নয়। আনিলেনেস বলে ফ্রান্সের এক ছোকরা নোটবুকে লিখে চলেছে ক্রমাগত, কাটাকুটিও চলছে। জিগ্গেস করায় বলল সে গ্রাফিক নভেল লিখছে। লন্ডন থেকে ড্যান বলে একটা ছেলে এসেছে বোনের সঙ্গে, তার সঙ্গে আমার বেশ ভাব জমে গেল। গল্প করতে গিয়ে দেখলাম সে ফিল্ম নিয়ে পড়াশুনা করছে। ভারতীয় সিনেমার খবরও রাখে। স্পেনের কয়েকটা ছোকরা এসেছে বাস্ক অঞ্চল থেকে। তারা পরের বছর হিমালয়ে যাবে, ক্রমাগত আমার সঙ্গে সেই গল্প করে যেতে লাগল।
ক্যাফেতে গিয়ে কফি খাওয়ার সময়ে আলাপ হল সেখানকার পরিচারক ক্রিসের সঙ্গে। জার্মানির ছেলে, প্রায় আট বছর ধরে ঘরছাড়া, এক বছর এই দেশে পরের বছর অন্য দেশে। বহু জায়গায় ভলান্টিয়ার করেছে, এইখানেও তার মেয়াদ মাত্র তিন মাস। প্রায় ঘন্টাখানেক তার সঙ্গে আড্ডা চলল।
আমি বললাম, “তোমার কী সৌভাগ্য! দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছ? কত অভিজ্ঞতা, কত বন্ধু হচ্ছে রোজ? আর কী চাই জীবনে?"
ক্রিস মৃদুহেসে বলল, “হ্যাঁ। অভিজ্ঞতা তো অবশ্যই হয়। ব্যাকপ্যাকিং না থাকলে আমাদেরও হয়তো পরিচয় হত না। পথই আমাদের মতন অনেক যাত্রীকে পরিচিত করিয়ে দেয়। তবে জানো, পথে অনেক বন্ধু পেয়েছি সেটা ঠিকই, কিন্তু ছোটবেলার অনেক বন্ধু হারিয়েও গেছে। আমি গ্রামের ছেলে। বহু বছর ধরে দেশের সঙ্গে, গ্রামের সঙ্গে তেমন কোনও যোগাযোগ নেই। প্রত্যেকে নিজের জীবন নিয়ে এগিয়ে গেছে। হয়তো এই অমূল্য অভিজ্ঞতার মূল্য দিতে গিয়ে আমি নিজের ঠিকানাই হারিয়ে বসেছি।
হাসলাম। আমাদের সকলের গল্পই এক হয়ে যায় এক একটা বিন্দুতে এসে। যে সমস্ত অভিন্নহৃদয় বন্ধুদের সঙ্গে সারাদিন কেটে যেত, তাদের সঙ্গে সাক্ষাত হয় না বছরের পর বছর। প্রথম প্রথম রিইউনিয়নের প্ল্যান হয়, একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়, তারপর ব্যস্ততার মাঝে মিইয়ে আসে সে সব। কথাবার্তাও কমে যায়। মনে অভিমান জমে। কে কাকে আগে ফোন করবে সে নিয়ে মনে মনে অপেক্ষা। ফেসবুকে ইনস্টাগ্রামে যখন দেখা যায়, আমার বেস্ট ফ্রেন্ডরা নতুন বন্ধু পাতিয়ে ফেলেছে, একসঙ্গে ঘুরছে, রাগ হয় অবুঝ বাচ্চার মতো। তারপর মনে পড়ে, আমারও তো নতুন বন্ধু হয়েছে এ কয়েক বছরে। লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ নিয়ে আর কাঁহাথক থাকা যায়! সত্যিই যখন একদিন মুখোমুখি দেখা হয় স্বপ্নবেলার বন্ধুদের সঙ্গে, কথা শুরু করাই কঠিন হয়। এইটুকুই গল্প। কমন প্লট! আলগা হাসলাম আবারও। কোনও কথা না বলে ক্রিসের পিঠে একটা চাপড় মারলাম। সেও নীরব হাসিতে জানিয়ে দিল, সে সবটাই বুঝেছে।
পরদিন আলবার্ট ক্যুপের স্থানীয় বাজারে যাব ভেবে রেখেছিলাম, তার আগে টুক করে অ্যামস্টেল পার্ক ঘুরে আসা হল। ভন্ডেলপার্কের মত না হলেও অনেকটা জায়গা নিয়ে ছড়ানো আছে পার্কটা, একটা চিড়িয়াখানাও আছে। সবুজ গাছ দিয়ে আড়াল করা ছোট্ট ছোট্ট হ্রদগুলো একেবারে নির্জন, নিরিবিলিতে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়।
আলবার্ট ক্যুপে আসলে আধ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পথ। শহরের প্রধান অঞ্চলের জৌলুস এইখানে নেই ঠিকই কিন্তু সেটা পুষিয়ে গেছে বাজারের অভিনব জিনিসপত্র এবং খাদ্যের বৈচিত্রে। সস্তায় জামাকাপড়, জুতো থেকে শুরু করে ছবি, ফুল, বই সব বিক্রি হচ্ছে। আরবি থেকে গ্রীক, চাইনিজ থেকে ফ্রেঞ্চ, নানা ধরনের জিভে জল আনা খাবারের দোকানে লম্বা লাইন পড়েছে। শুধু খাবার জন্য নয়, রান্নার পদ্ধতি দেখার জন্যেও। মধ্যপ্রাচ্যের একজন বয়স্কা মহিলা যেভাবে অবলীলায় নেচে নেচে রুটি তৈরি করছিলেন, সেটা দেখলেই পয়সা উসুল হয়ে যায়। আমরাও এটা সেটা চেখে দেখলাম বটে। দিব্যি!
বিকেলবেলায় আবার স্টেশনসপ্লেইনের জেটি থেকে উঠে বসলাম ফেরিতে। এইবারের গন্তব্য অত কাছে নয়, আমরা যাব গিয়ে এনএসডিএম হোয়ার্ফ। এখান থেকে জলপথে প্রায় আধ ঘন্টা সময় লাগে সেখানে যেতে। এককালে জাহাজের মেরামতি আর মালপত্র রাখার জায়গা থাকলে কয়েক বছর আগে এনএসডিএম অঞ্চল নতুন করে গড়ে উঠেছে আধুনিক শিল্পীদের কার্যশালা রূপে। প্রচুর গ্রাফিতি, স্ট্রিট আর্ট আর আধুনিক শিল্পের মডেল নিয়ে তৈরি এই অঞ্চলের মেজাজ একেবারে অন্য। টুরিস্ট সার্কিট থেকে শত যোজন দূরের জায়গা, কেউই প্রায় যায় না। তবে আমাদের কথা আলাদা। ভুলভাল জায়গাতে যেতে আমাদের দুজনেরই উৎসাহ চাগাড় দিয়ে ওঠে।
ফেরি থেকে নেমে খানিকটা হাঁটাহাটি করতেই আবহটা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল। এখানে বাড়িঘরদপ্তর কিছুই নেই, শুধু প্রাচীন শিপইয়ার্ড-এর পরিত্যাক্ত কয়েকটা গোদাম এবং ভাঙা বাড়িতে রেখে যাওয়া যন্ত্রপাতি। সেইখানেই স্টুডিও করে কাজ করে চলেছেন বহু অনামী শিল্পী। কয়েক বছর আগে এই অঞ্চলে ওপেন এয়ার স্ট্রিট আর্ট মিউজিয়াম শুরু করা হয় স্বাধীন শিল্পীদের উৎসাহ দিতে, মাঝে মাঝেই নানা কনসার্ট এবং ফ্লি মার্কেটও হয়। কিন্তু বেশিরভাগ সময় খালি পড়ে থাকা স্টুডিওতে নির্বিঘ্নে কাজ করে শিল্পীরা। এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য আদর্শ জায়গা। দেওয়ালে দেওয়ালে সেই এক্সপেরিমেন্টের চিহ্ন বিদ্যমান। ব্রাজিলের নামকরা স্ট্রিট আর্টিস্ট এদুয়ার্ড কোবরার আঁকা অ্যানা ফ্রাঙ্কের একটা অসাধারণ শিল্পকর্মও আছে এই পাড়ায়, তার ওপর বড় বড় করে লেখা 'লেট মি বি মাইসেলফ'। এছাড়াও ডেভিড ওয়াকার, ক্রনিয়া, হোক্সা ইত্যাদি নামকরা ব্রিটিশ এবং মার্কিন শিল্পীদের কাজ দেখা যায়। ঝাঁ চকচকে মিউজিয়াম করে তিরিশ ইউরো টিকিট করলে হয়তো লাইন পড়ে যেত, কিন্তু এখানে দু' একজন বাদে কেউই নেই। সবকিছুই চমকের খেলা।
হেঁটে হেঁটে একটা পরিত্যাক্ত গোদামের দিকে এগোলাম। প্রায় তিন তলা জুড়ে যন্ত্রপাতি, চাকা, লোহার পাত, শিপইয়ার্ড-এর পুরোনো বাক্স ছড়িয়ে আছে অযত্নে। এরই মধ্যে নিজস্ব স্টুডিও করে কেউ এঁকে চলেছে, কেউ গড়ছে আধুনিক শিল্পের নানা মডেল। তিনতলায় একটা ছোট্ট প্রদর্শনী চলছিল একজন মহিলা একক শিল্পীর, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা নির্ভর হৃদয়স্পর্শী ছবিগুলো দেখে মুগ্ধ হতে হয়। ভদ্রমহিলা সেখানেই ছিলেন, আমাদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে।
হস্টেলে ফিরতেই সেবাস্টিয়ানদের সঙ্গে দেখা। তারা তিনজন সাইকেল করে চরকি উড়ান দিচ্ছে। কালই মোহাম্মদ আর নাথান চলে যাবে বার্সেলোনায়, সেবাস্টিয়ান ফিরে যাবে বাড়িতে। ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামে অ্যাড করে নিলাম একে অপরকে। হয়তো কোনোদিনই আর দেখা হবে না, তাও একটা ক্ষীণ আশা রয়ে যাবে। হতেও তো পারে!
কফি নিয়ে হস্টেলের বাগানে এসে বসেছি। সকালে ব্রেকফাস্টের সময়ে মেক্সিকোর একটি জুটির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, তারা হাত নাড়ল। বাইবেলের একটা আলোচনায় সময় কাটাতে যোগ দিয়েছিলাম মিনিট দশেক থেকে, সেই সুত্রে ক্লারা বলে একটি জার্মান মেয়ে আমাদের সঙ্গে গল্প শুরু করে দিল। ক্লারা স্কুল শেষ করে গ্যাপ ইয়ারে এই হস্টেলে ভলান্টিয়ার হয়ে এসেছে, ঈশ্বরচর্চা নিয়ে তার প্রবল আগ্রহ। তিন দিনে প্রায় তিরিশ জনের সঙ্গে আলাপ, নতুন বন্ধুর সংখ্যাও বড় কম নয়। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, কী নিয়ে কথা হয়নি? এই হল গিয়ে ব্যাকপ্যাকারদের আন্তর্জাতিক হস্টেল জীবন।
রাতে শেষবারের মত অ্যামস্টারডামে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বেড়ালাম বহুক্ষণ ধরে। ড্যাম স্কোয়ার থেকে রেড লাইট অঞ্চল, নিউমার্কেট গির্জা, ক্যানাল ডিস্ট্রিক্ট এর অলিগলি...সেই জলের ওপর রঙিন আলোর খেলা, সেই লাল সাদা টিউবলাইট দেওয়া কেবিন, ফুলগাছ দিয়ে সাজানো সেতু, সাইকেল...কবিতার লেখাগুলো স্পষ্ট হয়ে আসে...
The Floating Market |
NSDM Wharf |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন