শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০

প্রিয়তমা পারি -চতুর্থ পর্ব


Orsay Museum Clock

এখানে, আলোর বাড়ি। কোনো ভোর নেই,  

এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে দিন, বলার মতো যত বাসনা। 

তোমার স্বপ্নে মরীচিকার গান, এখনও আছে

তবে পাথরের ঝলক আসতে সময় নেবে। এখানে, সন্ধ্যা অবধি। 

ছায়াদের ফুল দেয়ালে ফুটে উঠবে। সময়ের গোলাপ

ঝরিয়ে দেবে তাদের নীরব পাপড়ি। 

যেখানে দিনের সঙ্গে ভালোবাসার পদক্ষিপ পড়ছে

ঝলমলে পাথর আমাদের সেখানে নিয়ে যাবে। 

এখানে, এখনও ঠিক এখানেই। 

পাথরের ওপর পাথর

গড়ে তুলেছে দেশ, এই হল স্মৃতিকথন। 

ফলের সামান্য শব্দ খুব কমই শোনা যায়

সময়ের জ্বর তোমার দিকেই আবার ধেয়ে আসে

খুব শিগগির হয়তো জ্বরটা সেরে যাবে। 


~ইভ বনফয়

৪) রু দু বাখ মেট্রো স্টেশন থেকে হাঁটতে সামান্য সময় লাগে। অলস সকালে সেইন নদী একা বসে বসে কবিতা লিখছে। তাকে বিরক্ত না করে আমরা এগিয়ে চললাম মিউসে দে উর্সের দিকে। অপেক্ষা করে থাকা ছবিগুলোর সঙ্গে আজ একটা হেস্তনেস্ত না করলেই নয়। বড় জ্বালিয়েছে এরা। 

এককালে দক্ষিণ পশ্চিম ফ্রান্সের রেলওয়ে স্টেশন থাকা এই মিউজিয়াম আত্মপ্রকাশ করেছে আমার জন্মের ঠিক আগে। এর মধ্যেই সেরার শিরোপা কেড়ে নিয়েছে পৃথিবীর তাবড় তাবড় জাদুঘরকে পিছনে ফেলে। উর্সে মিউজিয়ামের নাম শুনেই অনেক মানুষের চোখে ঝিলিক দিয়ে যায়, যেন হঠাৎ করে মনে পড়ে যায়  কোনও  পুরোনো প্রেমিকার কথা। 

এই সম্পর্ক একটা জাদুঘরের সঙ্গে ব্যক্তিবিশেষের নয়। মিউসে দে উর্সে প্রতীক জীবনের নানা ওঠাপড়ার। উর্সে প্রতীক হয়ে আছে শিল্পবিপ্লবীদের, যাঁরা জীবনকে হেলায় হারিয়েছে শিল্পের খাতিরে। যাঁরা জাতীয়তাবাদী চেতনার দায়বদ্ধতায় সীমাবদ্ধ না হয়ে আপন হয়ে উঠেছেন সমগ্র মানুষের। সেখানকার অভিবাসী, যারা শিল্প রচনা করেছেন আবেগীয় ভাববিনিময়ের বোধ আর মানসিক মুক্তির জায়গা থেকে। কয়েকজন পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার পর স্বীকৃতি পেয়েছেন, বাকিদের জীবন মূল্যহীন সাব্যস্ত হয়েছে সমাজের চোখে। 

সকালবেলাতেই লম্বা লাইন পড়েছে টিকিটের জন্যে। টিকিট কেটে ফ্লোর প্ল্যান নিয়ে ঢুকে পড়লাম। ভিক্টর ল্যালুঁর নকশায় তৈরি বিশাল এক হাউস ক্লক টাঙানো রয়েছে প্রধান হলে। আর সুচিন্তিত ভাবে সাজানো নানান ভাস্কর্য্য, শিল্পদ্রব্য ও আসবাব পত্র রাখা আছে পাঁচতলা জুড়ে। আজকাল পাশ্চাত্যের সব মিউজিয়ামেই অডিও গাইডের ব্যবস্থা আছে। দোনামনা করে একটা যন্ত্র নিয়েই নেওয়া হল। নিজের জানার গন্ডি খুবই কম।  কোনও এক ছবির সামনে দাঁড়িয়ে নম্বর টিপলেই ছবি ও শিল্পীর জীবন ও ইতিহাস সম্পর্কে জানা যাবে, এর চেয়ে ভালো ব্যবস্থা আর হয় না। 

Related image
Orsay Museum

ইম্প্রেশনিস্ট ছবির গ্যালারি সবচেয়ে ওপরের তলায়। লিফ্টে করে সেখানে পৌঁছে ঢুকে পড়লাম। অনেক ছবিই আগে লুভ্য়র আর জে-দে পুম মিউজিয়ামে ছিল, সেখান থেকে ১৮৪০ সালের পর জন্মানো সব শিল্পীর ছবিই চলে এসেছে এখানে। এডগার দেগার 'বৃক্ষবিশেষ' দারুণ নাম করা ছবি,  তার ওপর থেকে চোখ সরতেই চায় না। গুস্তাভ কাইব্তের আঁকা ছবি 'ফ্লোর স্ক্র্যপর' আবার অন্য জাতের রচনা, দেখে মুগ্ধ হতে হয়। ১৮৭৫ সালে আঁকা এই ছবিতে কয়েকজন শ্রমিক বাড়ির মেঝে ঘসে চলেছে, তাদের গায়ে  কোনও  জামা নেই।  কোনও  ভিত্তিতে এই ছবিটাকে বাতিল করে অশ্লীল বলা হয়েছিল সেটা আমি অনেক ভেবেও বুঝে উঠতে পারলাম না। বহুমাত্রিক আমেজ ছুঁয়ে থাকা ক্লদে মোনের ক্যাথেড্রাল সিরিজের পর পর ছবি, যেখানে একই বস্তুকে অপরিবর্তিত রেখে সময় এবং আলোর পরিবর্তনে ঘটানো হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আমেজ। আলোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বস্তুর গড়ন ও পরিবেশের যে আমূল পরিবর্তন ঘটতে পারে তার প্রমাণ প্রতিটা ছবিতে জ্বলজ্বল করছে। ফ্রেদেরিক বাজিলের আঁকা ছবি 'ফ্যামিলি রিইউনিয়ন' আর অন্যান্য দেখে চমক লাগে। মাত্র আঠাশ বছর বয়সে মারা গেছিলেন বাজিল,  হয়তো বেঁচে থাকলে আরো অনেক ছবি এঁকে যেতেন। 

এডওয়ার্ড মানের আঁকা ছবি 'ঘাসের ওপর মধ্যাহ্নভোজ' যা দেখে পরিহাসের ঝড় বয়ে গিয়েছিল সেকালের সমালোচকদের মধ্যে, তার সামনে যেতে আমাদের কুড়ি মিনিট লেগে গেল। এমনই ভিড় সেখানে। অবশ্য তার যথেষ্ট কারণও আছে। আমাদের মতন আনাড়ি জনতাকে যেই ছবি মুহ্যমান করে দিতে পারে সেই শিল্পের সার্থকতা সম্পর্কে আমার  কোনও  সন্দেহ নেই। গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছি আর হাঁ করে তাকিয়ে আছি এক একটা ক্যানভাসের দিকে। 

কী জানতে চাইছেন? কেমন অনুভূতি হচ্ছে? সেটা বোঝানো বড়ই কঠিন। কেয়া মুখোপাধ্যায় ‘পারির ছবি ছবির পারি’ বলে একটি অসামান্য বই লিখেছেন, সেটা পড়লে বরং অনেক কিছু জানা যায়। আমি একেবারেই আনাড়ি। অনেক শিল্পী আর ছবি সম্পর্কে আগে পড়েছি হয়তো, আর অডিও গাইড নেওয়া আছে বলে অজানা গল্পগুলো জেনে নেওয়া যাচ্ছে সহজেই। কেমন লাগছে ছবি গুলো দেখে? মনে কী ভাবের উদয় হচ্ছে? সেই কথা বোঝানো আরো কঠিন। ফরাসি কবি বন্ফয়ের কবিতার কয়েক লাইন বললে কি বাড়াবাড়ি হবে?


দূরে কীসের কলরব? ভোরকে উপেক্ষা করে 

মানুষ দৌড়চ্ছে বৃষ্টিমাথায় 

ছবির ক্যানভাসের মধ্যে সমুদ্রের বাতাস বইছে শো শো করে। 

একটা লোক কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। কী বলছিল সে?

কি জানে সে? কি দেখেছে! আমি তার কথাগুলো বুঝতে চাইছি। 

আহ! আমি হয়তো বুঝে ফেলেছি সব। 

একটা যাদুঘরে আশ্রয় নিলাম আমি। এখন থেকে দেখবে বাইরে একা

জলের সাম্রাজ্যে মেশানো হাওয়া,  কাচের শার্সিগুলোকে কাঁপাচ্ছে। 

ক্যানভাসের প্রতিটা ছবিই, আমি ভাবি, এইভাবে আঁকা হয়

ঈশ্বর বুঝি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। 


ইম্প্রেশনিস্ট যুগের গল্পকথা হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে আমাদের সামনেই, একেকটা ছবি দেখে মনে পড়ে যায় আগে থেকে পড়া কোনও কথা! হয়তো পরিচিত লেখকের গদ্যে বা সংবাদপত্রের ফিচারে। সিনেমাতেও হতে পারে। ফেলিনি থেকে সত্যজিত রায় সকলেই একাধিক ইম্প্রেশনিস্ট ছবির ভাবনা নামিয়ে এনেছেন সিনেমার পর্দায়, বিশেষ কোনো কোনো  দৃশ্যে। 

রেনোয়া থেকে মানে, সেজান থেকে মোনে সকলেই আছেন, আর সকলের সঙ্গে মিলেমিশে আছেন কামিল পিসারো। সেই আজব মানুষ যাঁর নির্বিকার হাসি আর জীবন দর্শন মুগ্ধ করেছিল এদের প্রত্যেককে, বোহেমিয়ান জীবনযাত্রার মধ্যে থেকেও যিনি অন্তরে অনেকটাই অন্যরকম। পিসারোর সঙ্গ না থাকলে ইম্প্রেশনিস্ট আন্দোলনের শিল্পীরা অনেক আগেই নির্বাসন নিতেন। প্যারিসে থাকলেও পিসারোর হৃদয় ছিল তাঁর জন্মস্থান ক্যারাবিয়ানের শার্লট অ্যামোলি শহরে, মাঝে মাঝে জাহাজে করে ভার্জিন আইল্যান্ডের সেন্ট টমাস দ্বীপে গিয়ে তিনি বিশুদ্ধ বাতাস ভরে নিতেন ফুসফুসে, গ্রামীণ জীবনের অর্থবাহী ছবি আঁকতেন প্রবল মমতা দিয়ে। তাঁর মতন করে সাধাসিধে অথচ বাস্তব জীবনের গতিশীল ছবি খুব কম শিল্পীই আঁকতে পেরেছেন।  

মন দিয়ে দেখতে বোঝা যায় এক ঘরানার ছবি আঁকলেও প্রতিটা শিল্পীর নিজস্ব ভাষা আছে, তার প্রতিটাই এসেছে তাঁদের নিজস্ব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। পিসারো যেমন গ্রাম্য জীবনের ছবি তুলে ধরতে পছন্দ করেন, তাঁর বেশিরভাগ ছবিই প্লট নির্ভর, বার বার তিনি চলে জান ফরাসি গ্রামগুলোতে। রেনোয়া আনন্দের ছবি আঁকেন, তাঁর বিষয়বস্তু উজ্জ্বল তারুণ্যে ভরপুর। রেনোয়ার ছবিতে কেউ  কোনও  উদাস চেহারার মানুষকে দেখতে পাবেন না, কিন্তু আসলে রেনোয়ার বেশিরভাগ জীবনই কেটেছে প্রবল দারিদ্রে এবং কষ্টে। গুস্তাভ কাইবট তুলে এনেছেন শহুরে শ্রমিকদের জীবনকথা। বাবা উচ্চবিত্ত সমাজের পরিচিত ধনী ব্যক্তি ছিলেন, কিন্তু প্যারিসের প্রতিপত্তিদের হাতে শ্রমিক বর্গের নিপীড়ন নিজের চোখে দেখেছেন তিনি। ১৮৭৬ সালে দ্বিতীয় 'ইম্প্রেশনিস্ট এক্সিবিশন'-এর সময় ২৮ বছরের কাইবট উইল করে বলেছিলেন, তিনি যদি হুট করে মরে-টরে যান, তাহলেও ইম্প্রেশনিস্টদের পরবর্তী এক্সিবিশনের সমস্ত খরচ বহন করা হবে তাঁর সম্পত্তি থেকে। 

ইম্প্রেশনিস্ট থেকে পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট যুগের ছবি। আবার এক ঝাঁক চেনা অচেনা শিল্পীদের কাজের সঙ্গে সামনাসামনি বোঝাপড়া। আছেন জর্জ স্যুরা থেকে শুরু করে পল গঁগ্যা সকলেই। আর এদের সঙ্গেই নিজস্ব পাগলামি নিয়ে আছেন আমাদের পরিচিত ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। 

ভ্যান গঘের জীবন নিয়ে যত কথা হয়েছে, অন্য  কোনও  শিল্পীকে নিয়েই হয়েছে বলে মনে হয় না। তাঁর উন্মাদ নৈরাশ্যবাদী জীবন, নিজের কান কেটে পরিচারিকাকে উপহার দেওয়া, তাঁর আঁকা ছবিতে সৃষ্ট পরাবাস্তব আবহ এবং তাঁর আত্মহত্যা। ডেরেক ওয়ালকট লিখেছেন...


যখন আয়না দাবী করবে না

কোন বেদনা কিংবা খ্যাতি নয়

কোন হ্যাঁ বা না নয়

কিংবা হয়তো বা, অথবা একদা, অথবা

না। সেখানে কেউ নেই,  

ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ নন,  

নম্র, ভীত আর একাকী,  

কেবলই একটি গল্প। 

একটি সত্তা।

ভিনসেন্ট যে মানসিক ভাবে সুস্থ ছিলেন না, এটা আমারও ব্যক্তিগত ধারণা। তার আঁকা ছবিগুলো সামনাসামনি দেখার পর এই ধারণা আরো দৃঢ় হয়েছে। আমাদের মস্তিস্ক এবং মন যেই পরিস্থিতিকে সুস্থ বলে বিচার করে, সেই অবস্থায় থাকলে তিনি কোনোদিনই এই ছবিগুলো আঁকতে পারতেন না। কোনও  শিল্পীর কাজের সঙ্গেই তাঁর সাদৃশ্য নেই। তাঁর রঙের ব্যবহার, তুলির নির্ভীক আঁচড়, পরিচিত ছবির ঘরানাকে দুমড়ে মুচড়ে এক অত্যাধুনিক অতিন্দ্রিয়তার সমন্বয় ঘটিয়েছে। সুস্থ মানুষের পক্ষে এই উন্মাদনা কঠিন, এই ছবি আঁকা অসম্ভব। 

Image result for musee d'orsay impressionist collection renoir
Van Gogh Self Painting

যখন সুস্থ থাকতেন, ছবি আঁকতেন না। চিঠি লিখতেন। চিঠি না লিখে থাকতে পারতেন না ভিনসেন্ট। জীবনে অগুনতি চিঠি লিখেছেন। তাঁর মধ্যে ছয় শো একান্নটা শুধু ভাই থিওকে। ডাচ শিল্পী আন্তন ভ্যান র‌্যাপার্ডকে লিখেছিলেন আটান্নটা। ফরাসি শিল্পী এমিল বার্নার্ডকে লিখেছিলেন বাইশটা। মনের তাগিদেই চিঠি লিখতেন ভিনসেন্ট, উত্তরের প্রত্যাশায় নয়। হাজারের ওপর চিঠি লিখেছিলেন শেষ কয়েক বছরে, পেয়েছিলেন মাত্র তিরিশটা। তাঁর বহু চিঠি সংগ্রহিত আছে আমস্টারডামের ভ্যান গঘ মিউজিয়ামে। চিঠিগুলো পড়লে বোঝা যায় ভিনসেন্ট নিয়ম করে কবিতা পড়তেন, বহু চিঠিতে কবি ও কবিতার উল্লেখ আছে। কিটসের ভক্ত ছিলেন। তাঁর কয়েকটা চিঠির লাইন একসঙ্গে পড়লেই একটা গদ্য কবিতা ভেসে ওঠে মনের আয়নায় যেটা আসলে ভিনসেন্টের জীবন... হয়তো আমাদের সকলেই জীবন...

"আমাদের চারপাশে সর্বত্র কবিতা ঘিরে রয়েছে। তাকে কাগজে-কলমে ধরা, ওফ্, দেখে যেমন মনে হয় তত সহজ নয়। অনেকটা সেই সত্যের মতন যাকে অনুভব করা যায় কিন্তু বোঝা যায় না। কোনো একটা অনন্ত গভীর সত্য ছাড়া জীবন আমার কাছে অর্থহীন। জীবন যে কী এক রহস্য, আর রহস্যের রহস্য হল ভালোবাসা। প্রকৃতিকে ভালবাসব বলে একদিন অনেক দূরে চলে গিয়েছিলাম গ্রাম ছাড়িয়ে। বিশ্বাস করি একটা সময় আসবে যখন আমিও বিক্রি হব...."

বুঁদ হয়ে তাকিয়ে থাকি ছবিদের দিকে। অনন্ত গল্প আর শিল্পের মাঝে। এক এক সময় মনে হয় ভুল হচ্ছে না তো? বছর পাঁচেক আগেও আমি প্লেনেই চড়িনি কোনদিন, প্যারিসে আসা তো দূরের কথা। আর আজ আমি সত্যিই এসে উপস্থিত হয়েছে অচেনা মুলুকে? পথের টান এমন ব্যাকুল করে তুলেছিল, ঘুমেও স্বপ্ন দেখতাম দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানোর। শহরে বেশিদিন থাকলে হাঁফ ধরে। বাড়িতে থাকলে পথের পিছুটান শান্তি দেয় না। নিরুদ্দেশ হতে চেয়েছি প্রাণপণে। শিল্পী না হয়েও। কিন্তু বিশ্বাস ছিল একদিন স্বপ্ননদীতে ভেলা ভাসিয়ে নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি দেব... হয়তো স্বপ্নই। স্বপ্নের ঘোরে নাকি পাঁচ মিনিট পাঁচ বছর বলে মনে হয়। স্বপ্নই হোক... 

আজ প্যারিস ছেড়ে চলে যাব। গাছে ঢাকা সরণী আর বুলেভারের কোণে আত্মগোপন করা পাবগুলো এঁকে রাখলাম স্মৃতিতে। সেইন নদীর পাশের  সে সমস্ত বইয়ের দোকান মনে রেখে দিলাম, যেখানে হামাগুড়ি দিয়ে হাতড়ে বেরিয়েছি বই। নাইটল্যাম্প আর কফিশপ। গির্জা। মায়াবী মঁমার্ত। শিল্পীদের গল্প। আর মানুষ। পরিচিত ও অপরিচিত। ছেড়ে যাওয়া বন্ধুদের সঙ্গে কি আর দেখা হবে? 

একসময় চোখের সামনে তুর দাফেল। আইফেল টাওয়ার। আলো জ্বলে উঠবে সন্ধ্যের শেষ প্রহরে। অন্ধকারে বহু দূর থেকে দেখা যায় তাকে। দিন কেটে গেছে কখন। সূর্যের নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে বিদায়ের পালায়। অন্ধকার ডানা মেলছে নিঃশব্দে। আলোর ফুটকি দেখা যাচ্ছে একটা একটা করে। ওই তো! সোনালি আলোর ছটা ছড়িয়ে দিচ্ছে তুর দাফেল। জরিদার সোনা রঙের রেশমি স্কার্ট পরা কিশোরী দল আর তাদের চোখের তারায় ছিটকে যাওয়া আলোকস্রোতের বহমান প্রাচুর্য...প্রেয়সী প্যারিসের বুকে...দুজনে তাকিয়ে থাকি। সেজার ভালেখো...তুমি ভুল বলোনি....


Related image
The Floor Scrapers



ক্রমশঃ
পরের পর্ব এখানে পড়ুন
ব্রাসেল্স

আগের পর্ব এখানে পড়ুন

যাত্রার শুরু থেকে পড়তে হলে 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন