শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১৬

১)
"খুন্দন ব্রিজ খুন্দন ব্রিজ" চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলো।খুন্দন ব্রিজ। আরে,এখানেই তো নামার কথা। জীপের মধ্যে জানলার ধারে বসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি কে জানে!হুড়মুড় করে পিঠে ব্যাগ চাপিয়ে নেমে পড়লাম।জীপের আর কোনো যাত্রী নামেনি এখানে।বিচ্ছিরি হর্ন বাজাতে বাজাতে জীপটা ঘোরানো রাস্তা দিয়ে এগিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।চারপাশে নজর ফিরিয়ে দেখলাম,অবস্থা মোটেই সুবিধের নয়।চারপাশে দোকান বাজার বলতে যা ছিল,এই ঘনঘোর বৃষ্টির মরশুমে সবই বন্ধ প্রায়।গায়ে গরম কম্বল মতন জিনিস চাপিয়ে সামনের চায়ের দোকানে যারা মাফলারের আড়ালে মুখ লুকিয়েছে,তাদের কারোরই চোখে আমাকে দেখে কৌতূহলের উদ্রেক হলো না।রাস্তার পাশে একটা জীপ স্টার্ট করা অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে গর্জন করছে,কিন্তু ড্রাইভারের কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।এর মধ্যে আবার টুপটুপ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ব্যাগ থেকে রেইনসুট বের করে মাথায় গলালাম।ঝামেলা যখন পাকিয়েই ফেলেছি এত তাড়াতাড়ি হার মানলে চলবে না।রুকস্যাক এর বেল্ট কোমরে কসে এগোলাম চায়ের দোকানের দিকে।দোকানের এক পাশে একটা চালার ঘরে উনুন বসেছে,ত্রিপল দিয়ে ভালোভাবে ঢাকা বলে জল পড়ছে না।জনাকয়েক যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,তাদের কাউকেই শহরের লোক মনে হলো না।একটু কথা বার্তা চালানো দরকার।দোকানির কাছে মুখ বাড়িয়ে এক কাপ গরম চা বলে দিলাম,তারপর একগাল হেসে বললাম,"বারিশ ওয়ারিশ রুকেগা কি নাহি?ই সময় য়েহি হাল রেহতা হ্যায় ক্যা ভাইয়া ?"কয়েকজন এর চোয়াল নড়ল,বাকিরা বোধহয় বুঝলোই না এক বর্ণ। আমি আবার চেষ্টা চালালাম,"সরজি।থাচি জানা হ্যায়।কুচ গাড়ি-উড়ি মিলেগা?"কেউ উত্তর দিলো না।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আবার একই কথা বললাম।এবার উত্তর এলো পাশের লোকটার কাছ থেকে।"অভি সব বন্ধ হ্যায়। রস্তা টুট গায়ে পহাড় গির কে,কুচ ভি নাহি মিলেগা। "শুনে মাথায় বাজ পড়লো। গোদের ওপর বিষফোঁড়া।বেজায় রাগ হলো বৃষ্টির ওপর।বৃষ্টির চোটে ল্যান্ডস্লাইড হয়ে রাস্তা ভেঙে যাওয়া এখানে রোজকার ব্যাপার এই মরশুমে।কিন্তু কোনো না কোনো উপায় তো থাকবেই,রাস্তা ভাঙা হলে কি আর লোকজন চলা ফেরা করবে না ?একটু ভুজুং ভাজুং দিয়ে যদি কোনোরকম পথ বের করা যায়,দেখেছি পাহাড়ে জঙ্গলে সব জিনিসেরই একটা অল্টারনেট খুঁজে রাখা হয়।কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,"অরে নাহি সারজি ,বহুত জরুরি হ্যায়।আপ কোই জুগাড় বাতাও।"বলেই দোকানি কে বলে ওর জন্য আরেকটা চা বলে দিলাম।লোকটি নির্বিকার চিত্তে নতুন আনা চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে বললো,"আগার জানা হি হ্যায় তো পায়দল জাইয়ে।এক রাস্তা হ্যায় পায়দল জানে কে ওয়াস্তে,৩-৪ ঘন্টা লাগ্ যায়েগা।"দীর্ঘশ্বাস ফেলে লোকটার পাশে গিয়ে বসে সিগারেটের প্যাকেট বের করলাম।
2)
সহজের কথা
অতীন্দ্রিয়বাদ অথবা transcendentalism যাদের রক্তে,তাদের কোনো কথা বোঝানোর চেষ্টা করেই লাভ হয়না।যা হয়েছে,যা হচ্ছে,যা সবই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের existence এর জন্যে,এমনকি আমাকে না বলে হুট্ করে তির্থান থেকে পালিয়ে আসাতেও যে অনুসূয়ার কাছে transcendentalism তাতে কোনো সন্দেহ আমার নেই।এমন বান্ধবী পেলে যে বেশিরভাগ ছেলেদের প্রেম করার নেশা দুদিনেই ছুটে যেত,সেই সম্পর্কেও আমার বিশ্বাস অটল।এমন বোহেমিয়ান আর পাগল মেয়েও যে থাকতে পারে,না দেখলে বিশ্বাস করবে কেউ?তাও বিলেত আমেরিকায় নয়,হিপি পান্ক দের আখাড়ায় নয়,মধ্যবিত্ত বাঙালীর বাড়িতে।অনুকে প্রথম দেখি কলেজ সোসাইটির রিক্রিয়েশন ক্লাব এ।শর্টস আর পুলওভার পরে বই হাতে বসেছিল মাঝের দিকে,মঞ্চের দিকে একবার ও দৃষ্টি দেয়নি।গভীর মনোযোগে পড়ছিল হাতের বইটা।সামনের সারিতে বসা শাড়িপড়া মহিলাদের ভ্রুকুটি তাকে একবারের জন্যেও অস্থির করেনি।সুন্দরী মনে হয়নি ওকে,কিন্তু চোখ আটকে গেছিল কিসের টানে কে জানে!তার বেমানান পোশাক আর সাবলীল ভঙ্গি আমাকে শান্ত থাকতে দেয়নি সেদিন।পরের চার বছর।কি করে যে আমাদের সম্পর্কটা তৈরী হয়েছিল আমিও ঠিক জানি না,হঠাৎই একদিন আবিষ্কার করলাম আমার কোলে মাথা রেখে অনু,অনুসূয়া  শুয়ে আছে ময়দানে।চুল এলোমেলো,মুখ শান্ত,চোখ দুটো উজ্জ্বল।যেমন থাকে আজও।
অনুর পছন্দ-অপছন্দ,চিরকাল অন্য ঘরানারই ছিল।প্রথম প্রথম অবাক হলেও আস্তে আস্তে আমি বোধহয় তার মতনই হয়ে গেছিলাম খানিকটা।তার পছন্দের কান্ট্রি মিউসিক,ঢোলা ফ্যাশন এর ভক্তি,পাহাড় জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়ার নেশা হুট হাট করে,একটু একটু করে আমাকেও গ্রাস করেছিল।আমি যে অনুর সাথে দেখা হওয়ার আগে খুব বাধ্য ছেলে ছিলাম তা নয়,কিন্তু পৃথিবীটাকে অন্য রকম করে দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কেউ করেনি আমাকে।ধীরে ধীরে আমিও মেতে উঠলাম ওর সঙ্গে,ওর অবান্তর ফিলোসফিতে,impractical জীবনদর্শনে আর অতিন্দ্রিযবাদের চরিত্রায়নে।কিন্তু একটা তফাৎ রইলো,থাকবে।অনু হলো স্বভাবপাগল,তার পাগলামি আমার সঙ্গের তোয়াক্কা করে না,সে অন্ধের মতো সে নিজের মনের কথা শোনে।আমি স্বভাবপাগল নই,আমার পাগলামির আনন্দ অনুর সঙ্গেই,ওকে ছাড়া নয়।এই সমস্যাটা অবশ্যই আমার নিজস্ব কেননা অনু প্রথম থেকেই ওর স্বভাব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছে বেশ কয়েকবার।সাবধান করতে চেয়েছে আমাকে,বুঝিয়েছে যে তার গতিপথ গতানুগতিক নয়,সকলের মত সে life সেগমেন্টেশন এ বিশ্বাস করে না,কিন্তু প্রতিবারই আমি জোর করে তার কথাগুলো উড়িয়ে দিতে চেয়েছি।অনুর সঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে আসাটা যে নিরামিষ বাঙালি ছুটির আমেজে হবে না,সেটা না বুঝেই জোর করে ওর সঙ্গে এসেছি এইবার।আগে কোনোবারই যদিও হাজার বলা সত্বেও সে আমাকে সঙ্গে নেয়নি,এইবার একরকম ভাবে ঝুলেই পড়েছিলাম।কিন্তু প্রথম দিন থেকেই বুঝতে পেরেছি,দাল মে কুছ কালা হ্যায়।মানালির নাম করে বাড়ি থেকে বেরোলেও সেখানকার মত টুরিস্ট স্পট যে অনুর জন্যে না,তা বুঝতে আমাকে বেশি বেগ পেতে হলো না।সে খুঁজে খুঁজে বের করে অজানা সব জায়গা আর হুট করে পাড়ি জমায় কোনো রকম প্ল্যান ফ্ল্যান না করে।যদিও আমিও কোনকালেই ননীর পুতুল ছিলাম না কিন্তু অনুর মত stamina আমার নেই,সে রীতিমত ন্যাশনাল লেভেলের এথেলিট,তার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে গত এক সপ্তাহে।কিন্তু এমন চরকি ঘোরান ঘুরেছি যে এই অঞ্চলের মানচিত্র প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে।মানালিত়ে না গিয়ে অনু প্রথমেই গিয়ে উঠলো,কসোলএ।কুল্লু থেকে পূর্বদিকে পার্বতী নদীর সঙ্গে সঙ্গে প্রায় দু ঘন্টা গিয়ে পৌছতে হয় এই ছোট্ট জায়গাটায়,লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে।সেখানেও না থেমে অনু চলে গেল তোশ এ।ভারসেনি গ্রাম থেকে প্রায় চার ঘন্টা ট্রেক করে তোশ পৌছে আমরা আস্তানা গাড়লাম জমদগ্নি ঋষির মন্দিরে বাইরে কাঠ দিয়ে বানানো ছোট লগ কেবিনে।
 ৬টা বাজতে না বাজতেই অন্ধকার,তিন দিন কেটে গেল সেখানে।অনু বই পড়ল,ট্রেক করলো,আকাশ দেখল,গাঁজা খেল।বসে রইলো ঘন্টার পর ঘন্টা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে,পাহাড় দেখল দু চোখ ভরে,আর আমি ওকে দেখলাম।কি নিশ্চিন্ত!কি নির্বিকার!পাহাড়ের মধ্যের ছোট সেই গ্রামে রাতে শীতে কাঁপতে কাঁপতে চেয়ে থাকলাম অনুর মুখের দিকে,প্রতিদিন
..তোশ থেকে আমরা বেরিয়ে পড়লাম মালানার উদ্দেশ্যে,যেখানে নাকি আজও আলেকজেন্ডারএর বংশধরেরা থাকে,ভারতীয় কোনো নিয়ম সেখানে না চললেও মালানা বিখ্যাত সারা পৃথিবীতে এখানে চাষ করা আফিমের জন্যে,যার নাম ডাক ছড়ানো মালানা ক্রিম বলে।
 মালানা থেকে নাগর হয়ে তির্থান ভ্যালি।অনু ক্রমে ক্রমে আরো অজানার দিকে,আরো আদিমতার দিকে চলছে,তির্থান এ টুরিস্ট বলতে দু তিন জন বিদেশী bagpackers.লোকেদের কাছে এ জায়গা অচেনাই রয়ে গেছে internet এর যুগে এসেও,যদিও বেশি লোক আসা যে ভালো নয় এসব জায়গার জন্যে,আমিও বুঝতে পারি।মান্ডি,লার্জি,গুসায়নি হয়ে তিরাথান পৌঁছতে হয়,পুরো এলাকাটাই গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্ক এর অংশ।


একটা সরকারী ছোট বাংলো ছাড়া কথাও কিছু নেই,শুধু তির্থান নদীর স্রোতের শব্দ,পাখির ডাক,সূর্য ওঠা ও নামার অনুভূতি..ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি যত আমরা মানুষজন থেকে দুরে সরছি অনু আরো চুপচাপ,আরো শান্ত হয়ে যাচ্ছে।আমার সাথে কথা আর বলছে না বললেই চলে,কোনো মানুষের চিহ্ন দেখলেই নদীর পার দিয়ে হেঁটে গা ঢাকা দিচ্ছে বড় বড় পাথরের আড়ালে,এমনকি আমার দিকে চোখ পড়লেও চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ইচ্ছাকৃত ভাবে।দিন কাটছে ওর ডায়রির(অথবা বই)এর পাতায় কি সব লিখে,আর সামনের দিকে চেয়ে থেকে।এরকম জায়গায় আমাদের মত শহুরে লোকেদের ভাববিহ্বল হওয়া স্বাভাবিক,কিন্তু অনু যেন নিজের থেকেও পালিয়ে গিয়ে মিশে যেতে চাইছে বনে পাহাড়ে,নদীর জলের রেণুতে,আকাশের মেঘ হয়ে থেকে যেতে চাইছে এখানেই...তার খামখেয়ালী স্বভাব আমার অজানা নয়,এও অজানা নয় যে প্রকৃতির কোলে এলে ওর কিছুই মাথায় থাকে না,কিন্তু এতটা বাড়াবাড়ি হবে বলে ভাবিনি।এই নিয়ে আজ তিনদিন হলো তির্থানে।কাঠের আগুনের ওপর ঝলসানো তির্থান নদীতে ধরা ট্রাউট দিয়ে ডিনার করলাম আমরা।আগুনের কমলা আলোয় অনুকে দেখে কোনো রকম চিন্তা করতে ইচ্ছে হলো না,তার মুখে হাসি...গুন গুন করে গাইছে তার প্রিয় গান..ধীরে ধীরে উঠে সে এগিয়ে এলো আমার দিকে।আমার পাশে এসে বসলো..সামনের আগুন ছাড়িয়ে তির্থান নদী পর্যন্ত গানের সুর ভেসে যেতে লাগলো...

ঘুম ভেঙ্গে গেল।পাশ ফিরতেই অনুর গিটারের তারে আঙ্গুল লেগে ঝন ঝন করে উঠলো,অনু ঘরে নেই।গিটারের গায়ে লাগানো স্টিকনোট কালকের গান গেয়ে চলেছে.."Country roads, take me home..to the place I belong....থাচি"
৩)
দু সপ্তাহ আগে জিগ্গেস করলে আমি থাচি আর রাঁচির ভৌগোলিক পার্থক্য বুঝতে হিমশিম খেতাম,কিন্তু সেই বলে না খিদে পেলে বাঘে ঘাস খায়।অনুর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে নিজের তাগিদেই সব জেনে নিতে হয়েছে,সে কবে কোন দিকে বেরিয়ে পড়বে না বললে জানার উপায় নেই।বেগতিক দেখে বাধ্য ভূগোলের ছাত্রর মতো ম্যাপ গিলে খেয়েছি,লোকেদের জিগ্গেস করে রেখেছি পথঘাট।যদিও এখনো অনেক ভুল বজল হয় কিন্তু এইটুকু জানি যে চণ্ডিগড় থেকে মানালি যাওয়ার রাস্তাতে,সুন্দারনগর,মনডি আর তারপর কুল্লু পড়ে।কুল্লু থেকে detour নিলে পূর্বদিকে নাগর,কাসোল,মানিকরণ,আর মনডি থেকে পূর্বদিকে ঘুরলে পড়ে জালোরী পাস,তির্থান,থাচি ইত্যাদি ছোট ছোট জায়গা।


পারতপক্ষে এদিকে লোকে কম আসে,কিন্তু গাইড বুক দেখতে দেখতে আশেপাশের নামগুলো মুখস্থ হয়ে গেছিল।ভাগ্যিস হয়েছিল,না হলে আজকে আমার দশা পাগলের মত হত।সকালবেলায় অনুর লেখা পড়েই বুঝতে পেরেছিলাম,সে একাই থাচির দিকে এগিয়ে গেছে।আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেল না কেন,সে কথাও আন্দাজ করেছি।যতদুর মনে হয় আমার সঙ্গ তাকে পুরোপুরি স্বাধীন করতে পারছিল না,আমার তাকে চোখে চোখে রাখা,খাবার এগিয়ে দেওয়া তার হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় বাধা দিচ্ছিল।তড়াঙ করে উঠে,ব্যাগ গুছিয়ে বেরোতে না বেরোতেই তুমুল জোরে বৃষ্টি নামে।বহু কষ্টে একটা ল্যাড়ঝ্যারে বাস যদিও বা পেলাম,খুন্দন ব্রিজে নেমে এই কান্ড।শেষমেষ হেঁটেই এগোলাম থাচির দিকে,বৃষ্টিটা একটু ধরেছে এখন।জোরে পা চালাচ্ছি,এখন ভালয় ভালয় অনুর দেখা পেলে হয়।না হয় একটু রেগেই যাবে আমাকে দেখে,কিন্তু ভয় হচ্ছে থাচি থেকে যদি সে এগিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তাকে খোঁজা আমার পক্ষে অসম্ভব।থাচি থেকে বেশ কয়েকটা ট্রেক আরম্ভ হয়,এদিকটায় ঘন জঙ্গল আর পাহাড় কোনো জনবসতি নেই।এরকম সময় এই বৃষ্টির মধ্যে না জেনে শুনে কোন পথে যাব অনুকে খুঁজতে?

4)
অনুর কথা

হয়তো অনেক আগেই আসা উচিৎ ছিল।আসা হয়নি,কিন্তু একদিক থেকে দেখলে ভালোই হয়েছে। বাবা মায়ের হাত যে যদি ছোটবেলায় এখানে আসতাম,আজ এখানে দাঁড়িয়ে যা অনুভব করছি তা কি করতে পারতাম তখন?হয়তো পারতাম,হয়তো পারতাম না।সম্ভাবনার অঙ্কের নিয়ম এখনো আবিষ্কৃত হয়নি বলেই পৃথিবীটা আজও খানিকটা অকৃত্তিম,খানিকটা পবিত্র রয়ে গেছে।মানুষ বড় ছটপটে,কোনো সুন্দর জিনিসকে নিজের মতো থাকতে দেয় না।সব কিছুর ওপর তার নির্বিশেষ অধিকার চাই।যতক্ষণ না কাটাছেঁড়া করছে ততক্ষন শান্তি নেই।শিল্প হোক অথবা প্রকৃতি,অথবা মানুষ নিজে,সকলকে নিয়ে অবিরাম চুলচেরা বিশ্লেষণ চলতে থাকে।কখনো ল্যাবে,কখনো ড্রয়িং রুমে আবার কখনো জটলায়।কোনো ভালো জিনিস কি শুধুই নিজের মতো করে স্মৃতির কোনে রেখে দেওয়া যায় না?নিজের মত থাকতে দেওয়া যায় না কোনো দৃশ্য কে?কোনো অনুভূতিকে?কবিতা লিখে লোককে না দেখলে কি তার গুরুত্ব কমে যায়?আমার কাছে অন্তত না।সকলকে নিজের মতো থাকতে দিলেই তারা সবচেয়ে খুশি থাকতে পারে,মহৎ থাকতে পারে। থাচিতে এসে আরেকবার সেটা বুঝতে পারছি।

সহজের জন্য যে একটু খারাপ লাগছে না তা নয়।কিন্তু ওকে না নিয়ে এসে কোনো উপায় ছিল না।সে যে আমার জীবনের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে এই কয়েক বছরে,হিমাচলে ওকে না নিয়ে এলে বুঝতে পারতাম না কোনোদিনও।কোনো রকম প্রশ্ন না করেই সে আমার সঙ্গে চলছে প্রথম দিন থেকে।কোনো ভাবেই তাকে বিশ্বাস করাতে পারিনি যে ওকে ভালোবাসলেও ওর সঙ্গে থাকতে পারবো না আমি কোনোদিন।কারো  সঙ্গে থাকলেই তার জীবনের নিজস্ব ভাব,অনুভূতি,পছন্দ অপছন্দ একটু হলেও বদলাতে থাকে।সেটা আমি পারবো না। নিজের অজান্তেই আমি ওর জীবনে দখল দিয়ে চলেছি চার বছরের বেশি।আমার কোনো রকম বোঝাপড়া করতে হয়নি কোনোদিন ওকে ভালোবেসে।কোনো রকম কম্প্রোমাইস করিনি নিজের পছন্দ অথবা সিদ্ধান্তে। কিন্তু সহজ যেন একটু একটু আমার মতোই হয়ে যাচ্ছে। যদিও সেটা খারাপ কিছু নয়,তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার সে কি করবে,কি পছন্দ করবে কি করবে না ,কার সাথে থাকবে কার সাথে থাকবে না...কিন্তু তার সঙ্গ কোথাও না কোথাও আমাকেও তার ওপর নির্ভর করে তুলছে।সে আমার সঙ্গে থাকলে আমার মনে কি ভাব আসবে,আর এক থাকলে আমার কি মনে হবে সেটা নিশ্চিতভাবে এক নয়।তোষ অথবা তীর্থান,পাহাড় আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে যখন খেয়াল হয়েছে,মনে হয়েছে অনেকক্ষণ  সহজকে দেখলাম না তো?সে তো খাবার অথবা চা নিয়ে এলো না রোজকার মত?কোথায় গেলো সে?কিন্তু একা থাকলে কি আমি এরকমই ভাবতাম?নিশ্চয়ই না।সহজ আমাকে চোখে চোখে রাখতে গিয়ে হয়তো অনুভব করতে পারছে না এখানকার সৌন্দর্য,যেখানে একা থাকলে সে অজানা অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতে পারতো অনায়াসে।কিন্তু আমি তো জানি,ওকে নিয়ে না আসলেও সে নিজেই চলে আসবে এখানে।আমাকে খুঁজতে।কে জানে,যদি আমার থেকেও বেশি কিছুর সন্ধান পেয়ে যায় এখানে এসে?


ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছিলো।তুষারপাতও শুরু হয়ে গেছে। ক্যাম্পের ভিতর বসে গরম কফিতে চুমুক দিলাম।আগস্টের এই সময় এখানে লোকজন আরও কম আসে।বৃষ্টির সময় ক্যাম্পে থাকা মোটেই কাম্য নয়।গাওঁ বীর জলপ্রপাতের ট্রেক করতে সময় লাগে তিন গুন্ পথ ঘাট যাও ভেঙে,ট্রেইলরুট গুলো হারিয়ে যায়,বৃষ্টির সময় নানা রকম ইনফেকশন আর পোকামাকড়ের উপদ্রবও বেড়ে যায় গভীর জঙ্গলে।কিন্তু তা সত্ত্বেও এইসময় থাকি যেন সবচেয়ে সুন্দর হয়ে ওঠে।সারাবছর সবুজ হয়ে থাকা ঘাসের মরশুমে ফোটে হাজার হাজার ফুল।বনেও লেগে যায় ফুলের মেলা।ভেজা জঙ্গলের গভীর বোনের মাঝে মাঝে শুনতে পাওয়া যায় নানা রকমের পাখির ডাক।বিথুনারায়ণ মন্দিরের কাছে থাচি ফরেস্টের গায়ে লেগে থাকা লগ কেবিন গুলো এক দাঁড়িয়ে থাকা ঝম ঝম করে হওয়া বৃষ্টিতে।পাঞ্জাই গ্রামের দিক থেকে ছিটকে চলে আসা ছোট ছোট ভেড়া গুলো কচি পায়ে হেঁটে বেড়ায় সামনের মাঠের ওপর। থাচি পাঞ্জাই যমজ গ্রাম। হাতে গোনা কয়েক বাড়ি লোক,সবুজের বিস্তার আর নিস্তব্ধতার আকাশ নিয়ে থাকি যেন লুকিযে থাকে সারাবছর এই ব্যস্ত কুলু-মানালি রুটের একপাশে।প্রিয় কবি রাল্ফ বলদ এমারসন এর বলা কথাগুলো বার বার ঘুরে যাচ্ছে মনের জানলা দিয়ে  ....“Do not follow where the path may lead. Go instead where there is no path and leave a trail."সময়ের থেকেও দামি যে কিছু হতে পায়ে জীবনে এখানে এলে কেউ কেউ অনুভব করতে পারবে। এক একটা কফির চুমুকে যেন কেটে যায় কত কত বছর,এতই শান্ত আর নির্জন থাচির আকাশ।

I sit idle and think about pen and paper, what should I pen?
My thoughts?
Imagination?
reality of life? beauty of nature?
Happy or sad creature?
All of a sudden, strike with the reminiscence,
Travel to my sense of life,
Its a long story of a better and bitter!
Both the taste are so differ, love the learn of hither and thither,
Went to childhood to drunkard boot!
Both speaks the real truth,
Is there any crude, which can beat the rawness of these brute(cruel its not so cruel, it is just one real of brute) ?
I look at Almighty!
I dont know where is he?
Right there in my heart of temple/part of these physical dead!
I am not afraid to accuse him,
Because it is in me, not in that unknown cult!
Boom! Life goes boom!
Boom! I go boom!
All I have is my past time,
My last time: not faded in my memories of thousands,
I have all the times.
Desert to ocean; ocean to desert, story goes,
Oh my gosh!
Thirst is in both the toaste,
I cream, I didt screen my scream, I let go with the nightmare of my dream.

কেটে গেল জীবন।কফির কাপ থেকে ধোঁয়া তখনও উঠছে।সামনের ছেলেটার হতভম্ব হাতে একটু হেসে আমার বইটা ধরিয়ে দিলাম।

5)
বইটা হাতে নিলাম। প্রথম পাতা খুলতেই দেখতে পেলাম অনু হাতের লেখা কয়েক লাইন  ..........