রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬


(গল্পের প্রথম অংশটা আমার লেখা।পরেরটা লিখেছে মৌসুমী ঘোষ। তার ব্লগ এর ঠিকানা হলো http://sagorbalaka.blogspot.in/)

1)সকাল সাতটা বাজতেই পোষা টিয়াপাখিটা ডেকে ওঠে।কুটকি পাখির নাম দিয়েছে কুট্টুস। টিনটিনের খুব ভক্ত বলেই মনে হয়। কুট্টুস আর কুটকির
বদমায়েশির চোটে বাড়ির লোকেরা হয়রান। সাত বছর বয়স হলে কি হবে,সারাদিন কুটকি বাড়ি মাথায় তুলে নাচানাচি করছে আর সমানে ওর সাথে তাল রেখে চেঁচিয়ে যাচ্ছে কুট্টুস।কুট্টুস কে নিয়ে এসেছিল ছোটমামা।ছোটমামার আবার সখের চিড়িয়াখানা আছে একটা,যদিও পাখিই বেশি। দেশী বিদেশী ময়না,টিয়া,কাকাতুয়ার ডাকে ছোটমামার বাড়িটা সরগরম হয়ে থাকে সারাদিন।এছাড়াও আছে কয়েকটা গুঁটলু-পুঁটলু খরগোশ,পাঁচটা বেড়াল আর একটা ছাগল। ছাগল পোষার কথা আবার কেউ ভাবে নাকি,কিন্তু ছোটমামার ব্যাপারই আলাদা। ছাগলটাকে দেখে নাকি তার ছোটবেলার বন্ধু ল্যাংচা কে মনে পড়ে গেছিল।ছাগল বাবাজির নামও রাখা হয়েছে ল্যাংচা। কি আশ্চর্য ,ল্যাংচা আবার ল্যাংচার দারুণ ভক্ত। মাঝে মধ্যেই ছোটমামা নিজে হাতে করে এনে ল্যাংচাকে ল্যাংচা খাওয়ান। এ নিয়ে প্রথম দিকে বিস্তর হাসাহাসি হলেও পরে সকলের কাছেই ল্যাংচা আপনজন হয়ে উঠেছে। সাদা রঙের ছাগল বড় একটা দেখা যায় না,তার ওপর ল্যাংচার মাথায় একটা কালো টিপ আছে। যেন কেউ কাজল পরিয়ে দিয়েছে।
যাই হোক,কথা হচ্ছিল কুট্টুস আর কুটকির।কুটকির স্কুল ছুটি পড়ে গেছে।এখন অর দুরন্তপনা আরও বেড়েছে তাই। সকাল থেকে দুরন্তপনায় নাকাল করে তুলছে সবাইকে,কুট্টুস কে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে এ ঘর সে ঘর।আর গুচ্ছের লঙ্কা খাইয়ে চলেছে কুট্টুসকে। কুট্টুস টাও হয়েছে মহাপাজি,সকাল হতেই   চেঁচাতে থাকে "ভোর হোলো দোর খোল" বলে।ছোলা আর লঙ্কা ছাড়া কিছুই অর মুখে রুচছে না আজকাল আবার। এর মাঝে একদিন রবিবারে সকাল সকাল এসে হাজির হলেন ছোটমামা।পরনে জোব্বা আর কাঁধে ঝোলাব্যাগ। ছোটমামা কে দেখেই মা নালিশ করতে বসলো কুট্টুস আর কুটকির,ওরা বড় ন্যাওটা কিনা ছোটমামার।
ছোটমামা হাত তুলে বললেন,"দিদি,দাঁড়াও দাঁড়াও। আগে একটু বসে নি। কি গরম পড়েছে!তার ওপর বেচারা ল্যাংচার সর্দি হয়েছে ঠান্ডা গরম হয়ে" এই বলে তিনি ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লেন।ব্যাগ থেকে একটা শালপাতার ঠোঙ্গা বের করে বললেন,"দিদি,জিলিপি এনেছি।নিয়ে এস তো একটু সবার জন্য"ততক্ষণে কুটকি,কুটির বাবা আর দিদিও চলে এসেছে।ছোটমামা কে দেখেই দিদি বলে উঠলো,"ছোটমামা।তোমার কুট্টুস কে নিয়ে যাও গো,সঙ্গে কুটকিটাকেও নিয়ে যাও।দুজনে সারাদিন বাড়ি মাথায় করে নাচছে।"বলে দিদি লম্বা ভেংচি কাটলো কুটকিকে।কুটকিও মুখ ভেঙ্গাতে দেরি করল করলো না।ছোটমামা হাত তুলে বললেন,"ওরে বাবা।দাঁড়া দাঁড়া।
তোদের নিয়ে আর পারি না।"মা ততক্ষনে সকলের জন্যে খাবার সাজিয়ে এনেছে।জিলিপিতে একটা লম্বা কামড় দিয়ে ছোটমামা বললো,"কিরে কুটকি?বদমায়েশি করছিস বুঝি?"কুটকি মাথা নেড়ে বললো,"না ছোটমামা।দিদি মিছিমিছি মিথ্যে নালিশ করে দিদিটা খালি।আমি আর কুট্টুস তো খেলা করছিলাম।একটুও দুষ্টুমি করিনি।"ছোটমামা বললেন,"তাই তো?তাহলে কি করা যায়?খেলা তো বন্ধ করা উচিৎ নয়।গরমের ছুটি চলছে।" বাবা বললো,"গরমও যা পড়েছে এবার,কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে এলে হতো কিন্তু আমার আবার ছুটি পাওয়া মুশকিল এই বছরে।"ছোটমামা আস্ত একটা জিলিপি মুখে পুড়ে বললো,"তাহলেই দেখো!গরমে কুটকি বাড়িতে বসে করবেই বা কি?সেই জন্যেই বাড়ি মাথায় করছে।ওকে দোষ দেওয়া যাবে না। তাহলে বরং
সবচেয়ে ভালো সবাই মিলে কোথাও ঘুরে আসা যাক। জামাইবাবু না হয় নাই গেলো।কুটকি আর ছুটকি তো যেতেই পারে।আমি যাবো না হয় সঙ্গে',দিদির কি মত?"মা একটু কিন্তু কিন্তু করছিল,মার যাওয়া যায় না।বাবাকে ছেড়ে গেলে বাড়িতে কাউকে থাকতে হবে,সারাদিন।খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারও আছে। বিশদ আলোচনার পর সবাই একমত হলো যখন,কুটকি-ছুটকি মানে কুটকি আর দিদিই যাবে ছোটমামার সঙ্গে ,গোল বাধলো জায়গা নিয়ে। বাবা বলছে,"দীঘা" মায়ের ইচ্ছে রাঁচি। কুটকি সুন্দরবন যাবে বলে লাফাচ্ছে আর দিদি বলছে দার্জিলিং। অতএব হয় হট্টগোল এর মধ্যে একবার ছোটমামা চেঁচিয়ে বললো,"ব্যাস। আমি যা বলবো সেটাও ফাইনাল। আরে বাবা আমি তো সঙ্গে যাবো না কি?আমরা যাবো হাফলং।"বাবা বললো,"হাফলং তো অনেক দূর। তুই একা এদের সামলে এতদূর যেতে পারবি?"ছোটমামা মুচকি হেসে বললো,"একা কেন?কুট্টুস ও যাবে আমার সাথে "

2)কুটকির আনন্দ আর ধরে রাখে কে?একেই মাবাবা এ যাত্রায় সাথে নেই,তাই "ওদিকে যেও না""সবসময় দিদির হাথ ধরে থাকবে""সব জিনিস দেখেই খাব খাব করবে না"এসব জ্ঞান দিয়ে বিরক্ত করার মানুষজন নেই।তার সাথে যোগ হলো কুট্টুস-এর সহযাত্রা।ছোটমামা ঘোষণা না করা পর্যন্ত কুটকির মাথায় কুট্টুসএর যাওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্নই ওঠেনি।যেন পাখিটা ওরই সম্পত্তি যেখানে ও যাবে সঙ্গে তো যাবেই।ভাগ্য ভালো ,মাবাবাও এই নিয়ে আর বিশেষ আপত্তি করলো না।
ছোটমামা খেয়ালে মানুষ হলে কি হবে,প্ল্যান যখন করেছেন সেইমত কাজ গুছিয়ে রাখছেন।প্রথমেই ট্রেনএর টিকিট কেটে নিয়ে হাজির। কামাখ্যা এক্সপ্রেস।পরশু সকাল সাড়ে দশটায় হাওড়া থেকে ওদের ট্রেন ছাড়ার কথা। বেড়াতে যাওয়ার খাবার পেয়ে কুটকির সব বন্ধুরা একে একে হাজির। তাদের মনে একটু চাপা দুঃখ ও বটে। ভাবলো,"আমাদের যে কেন এমন একটা মামা জোটেনি কপালে?"মামা সবার সঙ্গে মিশলেন হই হই করে। সবাই মিলে মামাকে দিয়ে প্রমিস করালো যে,পরেরবার গরমের ছুটিতে শুধু কুটকি ছুটকি নয়,ওদের সক্কলকে সাথে করে পাড়ি দিতে হবে। এর মধ্যে কুটকি আর কুট্টুসএর গানে সারা বাড়ি মাতোয়ারা। মা-বাবা-দিদি নাজেহাল তো বটেই,মে পাশের বাড়ির লোকেরা পর্যন্ত পর্দা সরিয়ে রমা,মানে কুটকি ছুটকির মাকে না জিজ্ঞাসা করে পারল না,"আরে,মেয়েটার হলটা কি?আর পাখিটাই বা বাড়ি মাথায় করছে কেন!"কিছুই না,যত ছুটির গান এদ্দিন পর্যন্ত শিখেছে কুটকি,সেগুলোই জোরে জোরে ওগরাতে লেগেছে,আর কি?"আমাদের ছুটি ছুটি,চল নেব লুটি ওই আনন্দঝর্না" আবার কখনো "আজ আমাদের ছুটি রে ভাই আজ আমাদের  ছুটি"এমনি যা মনে আসছে ছুটির আমেজের গান। পাখিটা কি এই অবস্থায় চুপ করে থাকবে বলে মনে হয় ?কুটকিকে গাইতে দেখে সেও শুরু করেছে তার যা কাজ,নকল করা। এই দুইয়ের রাগ-রাগিনী নিয়ে ঘোষাল বাড়ি সরগরম।
রমা একটা বাক্সে দুই বোনের জামাকাপড় গুছিয়ে রাখলেন। কিছু হালকা গরমের জামা দিলেন,দরকারে যদি লাগে। ট্রেনে শীত করে রাতে শোয়ার সময় সে খেয়ালও আছে।বাবা এসে বললেন,"যাক,আর চিন্তা নেই। কালকের ছুটিটা কোনক্রমে মঞ্জুর করিয়েছি।মামাভাগ্নিদের ট্রেনে তুলে দিতে পারব অন্তত "আর মামাকে কয়েকশো টাকা হাতে ধরিয়ে দিলেন। খরচাপাতিও তো হয়েছে কিছুটা,হবেও।
পরদিন যাত্রার ক্ষণ উপস্থিত।যে যার মত ব্যস্ত এখন।মা নাডুর কৌটো বাক্সে গুঁজে দিতে ছাড়ছে না।বাবা গেছে মোড়ের মাথায় রিক্সা ডাকতে। ততক্ষণে সব গুছিয়ে ফাইনাল করে রাখতে গেছে বাবা।কুটকির তখনও একটা ডায়রি পেন ঢোকানো হয়নি ব্যাগে। ওমা তাইতো !মনে পড়তেই চট করে কাজ সেরে নিল সে। ছুটকির সাজ যে শেষ হয় না। এখনো ক্লিপ লাগানো বাকি চুলে। ওদিকে প্যাঁক প্যাঁক আওয়াজ বাড়ির বাইরে,মানে রিক্সা আগত।
তল্পিতল্পা বিশেষ কিছু নেই। মামার একটা সেড ব্যাগ আর ছোট সুটকেস।দুবোনের একটা পুঁচকে বাক্স।রমা নিজেই আস্তে আস্তে বাইরে বের করছিল। হঠাৎ দেখল ছোটমামা একটা কি খুঁজছে এঘর ওঘর করে। নিশ্চয়ই হাতঘড়িটা গুম করেছে বাড়িতে।জিগ্গেস করতে মামা বললেন যে চুল আঁচরানোর আগে এই ট্রেনের টিকিট তা বের করে টেবিলের ওপর রেখেছিলেন,তারপর আর খুঁজে পাচ্ছেন না। পাঞ্জাবির পকেটে রাখবেন বলে বাইরে রাখলেন তো মাল উধাও। ভেবেচিন্তে কিছুই কুল করতে পারছে না। মা তো ব্যস্তসমস্ত হয়ে চারবার দেখছে।বাবা ওদিকে বাইরে থেকে হাঁক ডাক দিতে শুরু করেছে,বাড়ি থেকে কেউ বেরোচ্ছে না দেখে।এই ড্রয়ার ওই ড্রয়ার হাতড়াতে হাতড়াতে মা আনমনেই একবার কুটকিকে জিগ্গেস করল,"টিকিটটা দেখেছিলিস কোথাও?"কুটকির উৎসাহে এখনো একটুও ভাঁটা পড়েনি। চেঁচিয়ে বলল,"কই না তো!"তারপর একটু কি ভেবে নিয়ে বলল,"কুট্টুসএর মুখে কি একটা সাদা কাগজ যেন দেখেছিলাম। তারপর তো সে ছাদে চলে গেছে। এখানে তো দেখছি না। "পাশের ঘর থেকে মামা শুনতে পেয়েছে ভাগ্নির কথা। বাবাও আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে উঠোনে এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেছিল। মেয়ের কথা শুনে তো মাথায় হাত। ব্যাস!!তারপর আর দেখে কে?ছাদের সিঁড়িতে বাড়ির সবাই লাইন দিয়েছে,আর ঘোষালবাড়ির সদর থেকেও শোনা যাচ্ছে বাড়ির ভেতরর গোলমাল,"কুট্টুস!এই কুট্টুস! কুট্টুসসোনা,কুট্টুস রে,কুট্টুস....."

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

1)​ট্রিগার টিপতেই যেন বিস্ফোরণ হলো হাতে।দুই হাত সামনের দিকে শক্ত করে ধরে রেখেছিল অমিত কিন্তু তা সত্ত্বেও যেন বুলেটের প্রতিক্রিয়াতে বুক অব্দি এসে লাগলো সেই আগুনের উত্তাপ,লোহার বলের মত। কোনমতে হাত সোজা করে সামনের দিকে এগোতে লাগলো অমিত।সামনের লোকটা হারিয়ে গেছে অন্ধকারে।
2)
হাতড়ে হাতড়ে সুজল সামনের দিকে এগোতে চেষ্টা করছিল।চাপ চাপ অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।এত ঘন এই অন্ধকার যেন মনে হচ্ছে কেউ চোখে কালো ফেট্টি বেঁধে দিয়েছে অথচ কিছুক্ষণ আগেই আলোয় আলোকিত হয়েছিল চারিধারে।লোকজন আসছিল যাচ্ছিল রোজকার মত।হঠাৎ করে হলো সেই দুর্ঘটনা।
3)বাগচিবাবুর বুকের রোগ আছে।ডাক্তারের বারণ আছে বেশি চলাফেরা করার।কিন্তু সবসময় সে কথা মানলে কি চলে!বাইশ বছর সিকিউরিটি সার্ভিস এ কাজ করেছেন উনি।ভয় পাওয়ার লোক নন।প্রাক্তন সিকিউরিটি চিফ হিসেবে সিস্টেম রেভলিউসান করা আজ তারই কর্তব্য।যে কোনো কনফিডেনশিয়াল অপারেশনএর দিন তিনি ব্যাঙ্কে যাবেনই।আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।রেডিয়েশন ব্যাজ হাতে নিয়ে এগোচ্ছেন করিডোর দিয়ে,অন্য হাতে ডসিমিটার এমন সময় CCTV তে দেখা গেল কালো মুখোশ পরা কয়েকজন লোক ঢুকে এসেছে ক্যাম্পাসে?মোবাইল বের করে কয়েকটা নম্বর টিপতে লাগলেন তিনি।

4)লাল বাতিটা দেখতে পেয়েই সচকিত হয়ে উঠলো শমিত।অ্যালার্ম।কীবোর্ড এ খটখট করে হাত চলতে লাগলো তার।সিকিউরিটি কোডের প্রোগ্রাম চেঞ্জ করতে তার লাগবে তিরিশ সেকেন্ড।.কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কি?

5)অমিতের দলে আরো একজন ছেলে আছে।সকলেই আর্মড।চার লেভেল সিকিউরিটি ভেদ করতে কোনরকম অসুবিধেই হয়নি তাদের।দরকারের সব জিনিসই ছিল তাদের কাছে।বলাই আছে এই ডাকাতির উদ্দেশ্য টাকা নয়,অন্যকিছু।সে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে ম্যানেজার এর বুকে বন্দুক ঠেকালো।সিকিউরিটি ভল্টের কোড জানতে তার ঠিক আঠ সেকেন্ড লাগল,যদিও দেরী না করার পুরস্কার হিসেবে ম্যানেজার মাথায় বন্দুকের বাড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে আছে এখন।ম্যানেজার এর ডেস্কের তলায় হাত নিয়ে গিয়ে একটা বিশেষ বোতাম টিপে দিল সে।

6)সুজলের কাছে তিন মিনিট আছে।শমিতএর কাছ থেকে আপডেট পেয়েই সে ছুটে গেছে ব্যাঙ্ক এরিয়ার মধ্যে।এই ব্যাঙ্কে সাধারণ লোক আসতে পারে না,ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর টেস্টিং স্টেশন এর ক্যাম্পাসের এই ব্যাঙ্ক খালি NNRTS এর এমপ্লয়ী আর তাদের পরিবারের জন্যে,তাও প্রচুর নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে।আজ সকালেই খবর পেয়েছে সুজল,ডিফেন্স মিনিস্ট্রি ক্লাসিফাইড ইনফরমেশন এর কয়েকটা ফাইল রাখা হয়েছে ব্যাঙ্কে,মাত্র দুদিনের জন্যে। দিল্লির চেয়ে এখানে রাখা নিরাপদ মনে করেছেন আর্মি পার্সোনালরা।মিডিয়া খবর পাবে না।নিউক্লিয়ার টেস্টিং এর সময় এরকম বেশ কয়েকবার হয়।কিন্তু এরকম বিপর্যয় কোনদিন ঘটেনি।

7)১৫ সেকেন্ডএর মধ্যেই চারিদিকের সিকিউরিটি সিস্টেম রিসেট হয়ে গেল।সিকিউরিটি সিস্টেম এর কোড লক হওয়ায় আগেকার কোনো এক্সেস ই কাজ করবে না,যদিও সিকিউরিটি ফোর্স আসতে সময় লাগবে এতে কিন্তু অনুপ্রবেশকারীরা বাইরে বেরোতে পারবে না কোনভাবেই।কাজ শেষ করে শমিত দৌড়ে গেল সি ব্লকএর দিকে।

8)প্ল্যান ঠিকমতন এগোচ্ছে।অমিতের ব্যাগ থেকে বেরোলো ফুলস্কেপ কাগজ,এনিগ্মা সিফার ট্রান্সমিটার,শুহিল ট্রান্সমিট ক্রিপ্টোগ্রাফার,আরও নানাবিধ জিনিস।প্রয়োজন মত সরঞ্জাম তুলে অমিতরা এগোলো ভল্টের দিকে।সিকিউরিটি কোড লেখা আছে হাতে ধরে রাখা এনিগ্মা সিফার এর স্ক্রিন এ। দরজা খুলে গেল। জিপিএস সেট করাই আছে। দ্রুত তারা এগিয়ে গেল।নির্দিষ্ট সিস্টেম এ স্টোরড তথ্য ট্রান্সমিট করতে হবে প্রিপ্রোগরাম্যান্ড ডিভাইস আইডি তে। কাজ শেষ করতে বেশিক্ষণ লাগবে না।

9)Air condition duct দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল সুজল।যতদুর জানতে পেরেছে বাগচিবাবুর কাছ থেকে,অনুপ্রবেশকারীরা ডাটা ব্লো অপারেশন প্লান করেছে।নিউক্লিয়ার প্রজেক্টস এর যাবতীয় তথ্য শত্রুদের পাচার করাই একমাত্র উদ্দেশ্য,কিন্তু ওরা এত সিকিউরিটি ক্রস করে ভিতরে ঢুকলো কি করে?নিশ্চই কেউ সাহায্য করেছে।সামনেই চার নম্বর duct,এখানেই মনে হয় আছে সন্ত্রাস্কারীরা।হঠাৎ দুম করে সব আলো নিবে গেল।সুজল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।মেন পাওয়ার সোর্স অফ না করলে তো অন্ধকার হওয়ার কথা নয়,এখানে অটোমেটিক ব্যাকআপ সিস্টেম আছে।
হাতড়ে হাতড়ে সুজল সামনের দিকে এগোতে চেষ্টা করছিল।চাপ চাপ অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।এত ঘন এই অন্ধকার যেন মনে হচ্ছে কেউ চোখে কালো ফেট্টি বেঁধে দিয়েছে অথচ কিছুক্ষণ আগেই আলোয় আলোকিত হয়েছিল চারিধারে।

10)খুব সাবধানে duct খুলে নেমে এলো সুজল।হাতে অটোমেটিক পিস্তল।বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরে আছে সে।আস্তে আস্তে এগোচ্ছে সে। এমন সময় যেন মাটি ফুঁড়ে একটা লোক সামনে এসে দাঁড়ালো।ট্রিগার টিপতে গিয়েও সামলে নিল সে। বাগচিবাবু।তিনি আঙ্গুল মুখে রেখে তাকে চুপ করতে বললেন। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলেন সামনের দিকে।  

"হোল্ড ইট"চকিতে মাথা তুলল অমিত।সামনে একজন বুড়ো লোক,তার পিছনে একজন কমান্ডো।এক মুহুর্তের মধ্যে ট্রিগার টিপলো সে।পর পর তিনবার। ট্রিগার টিপতেই যেন বিস্ফোরণ হলো হাতে।দুই হাত সামনের দিকে শক্ত করে ধরে রেখেছিল অমিত কিন্তু তা সত্ত্বেও যেন বুলেটের প্রতিক্রিয়াতে বুক অব্দি এসে লাগলো সেই আগুনের উত্তাপ,লোহার বলের মত।হাত সোজা করে সামনের দিকে এগোতে লাগলো অমিত ।সামনের লোকটা হারিয়ে গেছে অন্ধকারে।মাটিতে পড়ে থাকা দেহ দুটিই নিথর,কিন্তু এরা মরেনি।তার সঙ্গীর হাতে ধরা tranquilizer sedative দিয়ে এদের ডার্ট মারা হয়েছে,যা মাত্র কয়েক সেকেন্ড  এর মধ্যেই লোককে বেহুঁশ করে দিতে পারে,কিন্তু ইচ্ছে করেই তার সঙ্গে গুলি চালিয়েছিল অমিত,যাতে এই কয়েক সেকেন্ড এরা সামলানোর সুযোগ না পাক। সামনের লোকটির সামনে উবু হয়ে বসলো অমিত।দুমিনিট।বাকি কাজটা শেষ করলো।।সিকিউরিটি,রেডিয়েশন সিস্টেম অকেজো। দ্রুত বেরিয়ে গেল তারা।

11)হসপিটালে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছে শমিত।এতক্ষণে ভিসিটিং আওয়ার্স হলো।সামনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো সে। সামনে শুয়ে আছেন বাগ্চিবাবু।তাকে দেখে হাসলেন।নিশ্চিন্ত কন্ঠে বললেন,"আমার ফোনটা পেয়েছিলে তো?"শমিত বলল,"পেয়েছি।কাজ হয়ে গেছে। স্পাই স্টিক দিয়ে deleted ডাটাগুলো বের করতে সময় লেগেছে ৪২ সেকেন্ড" বাগচিবাবু হাসলেন। শমিত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো।NNRTS এ ইন্টারপ্রেটার হিসেবে চাকরি যখন পেয়েছিল,শমিত বেশ গর্ব বোধ করেছিল।দেশের জন্যে কাজ,এত বড় একটা প্রজেক্টের অংশ।কিন্তু ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারল,সে আসলে NNRTS  এর এমপ্লয়ী নয়,তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে RAW  এর দিক থেকে। ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স RAW এর রিক্রুটমেন্ট এ কখনই তাদের নাম লেখা থাকে না,বরং ফিল্ড এক্সেকিউটিভ,কোডার,সিকিউরিটি অফিসার হিসেবেই তাদের চাকরি হয় কিন্তু পরে তারা জানতে পারে যে তারা ইন্টেলিজেন্স এর মেম্বার।করাপশন আর রাজনৈতিকদের যোগসাজশে দেশের বহু গোপনীয় তথ্য চলে যায় শত্রুপক্ষ দের কাছে,defense,স্পেস,টেলিকম সব সেক্টর এই এরকম হয় আকছার। তাই RAW দেশের সরকারী আমলাদের মধ্যে ডাবল এজেন্ট নিযুক্ত করে।এরা সরকারী চাকরি করে ঠিকই কিন্তু দরকার পড়লে বেআইনি ভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষার্তে এগিয়ে আসে।বাগচিবাবু RAW এর ডাবল এজেন্ট ছিলেন,তারপর আসে শমিত।শমিত বাগচিবাবুর মারফত জানতে পারে,রাজনৈতিক যোগসাজশে নিউক্লিয়ার ডিফেন্সের প্রচুর তথ্য বেচে দেওয়া হবে শত্রুপক্ষ কে,এই কাজে খোদ NNRTS আর সরকারের হাত আছে।মিডিয়া আর পলিটিকাল সত্তার বিনিময়ে এরকম সওদা আকছার চলে ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স এ। তাই RAW এর তরফ থেকে তাদের আগেই সরিয়ে নিতে হবে জরুরি ডাটা।গোপনে প্ল্যান হয়।বাগচিবাবু,শমিত এর সঙ্গে যোগ দেয় অমিত ও তার বন্ধু।অমিতদের পাঠানো হয়েছিল RAW এর দিক থেকে।সিকিউরিটি ক্র্যাক করার সবরকম ব্যবস্থা করে দেন বাগচিবাবু।সিকিউরিটি চিফ থাকাকালীন তিনি সিস্টেমের সব ফাঁকফোকর জানতেন।কিন্তু সিকিউরিটি সিস্টেম এর ভল্ট এর কোড জানা কোনমতেই সম্ভব নয়।প্রতি ১০ মিনিট অন্তরে কোড বদলে যায়,কোড জানা থাকলেও রেটিনা স্ক্যান করেই ভিতরে ঢুকতে যাবে।একমাত্র উপায় যদি সিকিউরিটি algorithm রিসেট করা যায়।কিন্তু সিসটেম রিসেট করলে দরজা খুলে গেলেও বেরিয়ে আসার সময় রেটিনা স্ক্যান না করে কোনো উপায় থাকবে না।

ভেবেচিন্তে বাগচিবাবু একটা উপায় বার করলেন।ঝুঁকি থাকলেও এছাড়া কোনো উপায় নেই।পনের মিনিটে অপারেশন শেষ না করতে পারলে প্রোগ্রাম reactivate হয়ে পুরো পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যাবে।তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমের করিডোর এ।CCTV তে অমিতদের দেখেই তিনি ফোন করলেন,সুজলকে।চিফ সিকিউরিটি।কমান্ডো।সুজল ফোন তুলতেই তিনি বললেন,"সুজল,intruders.আমাদের কাছে বেশি সময় নেই।ফোর্স ডাকতে গেলে দেরী হয়ে যাবে।আমি দেখেছি ওরা দুজন মাত্র।তুমি সহজেই হ্যান্ডেল করতে পারবে।ওরা সিকিউরিটি ভল্টের দিকে এগোচ্ছে। "সুজল বলল,"কিন্তু ওরা ভিতরে ঢুকবে কি করে স্যার?কোডের এক্সেস তো থাকার কথা নয় ওদের কাছে। "বাগচিবাবু বললেন,"সে সব ভাবার সময় নেই এখন সুজল।হয়ত ভিতর থেকে কেউ সাহায্য করেছে।এতগুলো সিকিউরিটি লেভেল ক্রস করা সম্ভব ছিল না তাহলে"
সুজল বলল,"আমি এখনই বেরিয়ে যাচ্ছি। duct দিয়ে যেতে হবে".
"সুজল,সময় কিন্তু বেশি নেই,খুব বেশি হলে আঠ মিনিট "
"ভাববেন না"সুজল ফোন  দেয়।ফোন রেখে হাতঘড়ি দেখেন বাগচিবাবু।এতক্ষণে অমিতের পাঠানো সিগনাল পেয়ে গেছে শমিত।আজ আগে থেকেই অর রাতের ডিউটি ফিক্স করা হয়েছিল।সিস্টেম reset করতে শমিতের একমিনিট ও লাগবে না।দ্রুত পায়ে তিনি এগিয়ে গেলেন মেন বিল্ডিং এ।সুজল নিশ্চই এতক্ষণে duct দিয়ে এগিয়ে গেছে ভল্টের দিকে।সিকিউরিটি এরিয়া  থেকে ব্যাঙ্কের ভল্ট এরিয়া কমপক্ষে ২০ মিনিটের রাস্তা। আর তারপর সোজা রাস্তা নয়,তাকে যেতে হবে ducts এর টানেল দিয়ে।তার মত কমান্ডোর পক্ষেই  এরকম করে দুরত্ব অতিক্রম করে পৌছনো সম্ভব সেখানে পাঁচ মিনিটের মধ্যে কিন্তু সুজল কে ইনক্লুড করার উদ্দেশ্য অন্য।জোর পায়ে তিনি এগিয়ে গেলেন পাওয়ার রুমে।পকেট থেকে বার করলেন  অত্যাধুনিক এক যন্ত্র। এর নাম পিন্চার। যে কোনো ট্রান্সফরমার কে কিছুক্ষণের জন্য বিকল করে  দিতে পারে। মুহুর্তের মধ্যে সারা ক্যাম্পাস অন্ধকার হয়ে গেল। কিন্তু সিকিউরিটি ব্যাকআপ এর বিদ্যূত এই ট্রান্সফরমার দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয় না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভল্ট এরিয়াতে পৌঁছে অপেক্ষা করতে লাগলেন শমিতের জন্যে। অমিতেরা ততক্ষণে position  নিয়েছে।সিস্টেম রিসেট হওয়ায় ভিতরে ঢুকতে কোনরকম অসুবিধে  হয়নি,ডাটা ক্র্যাক করাও প্রায় শেষ কিন্তু আসল কাজ এখনো বাকি।ততক্ষণে সুজল এসে গেছে। তাকে সঙ্গে নিয়ে অমিতদের দিকে  গেলেন তিনি। "হোল্ড ইট"চকিতে মাথা তুলল অমিত।সামনে একজন বুড়ো লোক,তার পিছনে একজন কমান্ডো।এক মুহুর্তের মধ্যে ট্রিগার টিপলো সে।

12)কাজ শেষ।অমিত cryptic কোডে ডাটা ট্রান্সফার করে দিয়েছে বাগচিবাবুর আইফোনে। কিন্তু নিরাপত্তার কথা ভাবতেই হয় তাই সব ডাটা সে নিপুণ ভাবে ডিলিট করে দিল।ডাটা derive করার কাজ শমিতের। এখান থেকে বেরোনোর সময় হাতে কিছু থাকা চলবে না। বিপ করে একটা আওয়াজ অমিত রা বুঝলো সিস্টেম reactivate হয়ে গেছে।সুজলের দেহটা টেনে নিয়ে গিয়ে দরজার কাছে পৌছল অমিত,শেষ কাজ।রেটিনা স্ক্যান এর সামনে সুজলের চোখ রাখতেই accepted হয়ে খুত করে দরজা খুলে গেল। বাইরে বেরোনোর সময় সুজলের পায়ে লেগে থাকা গুলিটা দেখল সে।রক্ত বেরোচ্ছে ,কিন্তু কোনো ক্ষতি হবে না। নিজের অজান্তেই দেশের জন্যে একটা ভালো কাজ করেছে সে।

13)বাগচিবাবুর আইফোনের deleted ডাটা revive করতে পারল শমিত স্পাই স্টিক দিয়ে।এই যন্ত্রের সাহায্যে deleted ডাটা সহজেই রিস্টোর করা যায় যদি সেই ডাটা IOS এ থাকে। কালই পাঠিয়ে দিয়েছে যাবতীয় তথ্য RAW তে।ব্যাঙ্কের ভল্টে এখন যে ডাটা আছে,সেটার কোডিং বিস্তর চেঞ্জ করে দিয়েছে অমিত।বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও আসলে সেই ডাটা ইনকমপ্লিট।কোনভাবেই কেউ সেটা কাজে লাগাতে পারবে না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটতে লাগলো শমিত।কখনো কখনো মনে হয় ও কি ঠিক করছে?দেশের ভালো ভেবে যা করছে তাতে কি দেশে ভালো হচ্ছে আদৌ?RAW তাকে ভুল উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে না তার কি নিশ্চয়তা আছে.?কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়ে যায় Robert Brault এর বলা একটা কথা।
"Never act until you have clearly answered the question: "What happens if I do nothing?"