বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬

প্রশ্নের বাজারদর বেড়ে চলেছে দিনদিন।যত অযৌক্তিক যে প্রশ্নের ভিত,তার চাহিদা তত বেশি।রঙ্গীন মোড়কে থাকা অবান্তর প্রশ্নের বিক্রি করে কয়েকদিনে বড়লোক হয়ে যাচ্ছে বিতর্কিত আলোচনার আয়োজকেরা। বাজার ছেয়ে গেছে তীক্ষ্ণতার প্রশ্নজালে।দাঁত বার করে তারা ভয় দেখিয়ে বেড়ায় অন্ধকার গলিগুলোয়,যেখানে নিভুনিভু বাড়ি চালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে যুক্তি,উত্তর আর ব্যর্থ শ্রোতাদের দল।এদের গলার জোর কম,আদর্শের জোরে বেঁচে রয়েছে আজও।কিন্তু প্রশ্নের সওদাগরেরা পিছন থেকে আক্রমণ করলেও দিনের আলোয় এই দলের সম্মুখীন হতে চায় না,সযত্নে এড়িয়ে চলে তাদের।কানাঘুসো শোনা যায়,উত্তরের গলিতে শ্রোতাদের দলের কাছে লুকোনো আছে গোপন একটা অস্ত্র।কোনো হাতিয়ার তাকে রোধ করতে পারে না।নানা দলের লোক এই অস্ত্রের ওপর অধিকার দাবি করে কিন্তু জোর করে ছিনিয়ে নিলেও এই অস্ত্রপ্রয়োগ করতে পারে না সকলে। যুদ্ধের একতরফা রণভেরীর মাঝে একা জেগে থাকে,রাতের পর রাত মাথার কাছে এসে দাঁড়ায় সঙ্গী হয়ে,স্বপ্ন দেখায় ভবিষ্যতের। শত্রু দলের লোকেরা গোপন সূত্রে জানতে পেরেছে,অস্ত্রটির নাম বিশ্বাস।
চোখের তারাদের প্রতিটা দিন কাটে একভাবে।একঘেয়ে দৃশ্যের ঘেরাজালে।প্লেটে রাখা টোস্ট আর টেবিলে সাজানো কম্পিউটার।রাস্তার কোলাহল আর ইউটুবের ভিডিও।ছুটির জন্যে পাঠানো দরখাস্ত মঞ্জুর করে না ওপরওয়ালা।তার কোনো ছুটি নেই,নেই কোনো মুখবদলের উপহার।কখনো কখনো সে রেগে মেগে নাকের বদলে নরুণ আর বাস্তবের বদলে কল্পনার ছবি পাঠিয়ে দেয় ব্রেন এর দপ্তরে বসে থাকা নিউরনদের কাছে।কিন্তু সে ছবি অবশেষে চলে যায় জোড়াতালির কারখানায় রাখা পুরনো স্বপ্নঘরের চিলেকোঠায়।স্বপ্নের নিউরন দের নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না,বড় আলসে তারা।বাস্তবের কোনো ছবি তাদের ডাটাবেস সাপোর্ট করে না।কিন্তু পুরনো কর্মচারী বলে পার পেয়ে যায় প্রত্যেকবার।পলকের চেয়ারে বসে থেকে তারাদের অপেক্ষা চলতে থাকে অন্যান্য ইন্দ্রিযদের অগোচরে।অবশেষে একদিন স্বপ্নঘরের ডাক পায় সে,ছুটি পাওয়া যায়নি কিন্তু ট্রান্সফার হয়ে গেছে স্ব্প্নজগত ডিপার্টমেন্ট এ।অপ্রত্যক্ষ ছবির প্রোগ্রামিং করতে হবে,কিন্তু কোনো রকম স্ট্রাকচার অথবা ফ্লোচার্ট ফলো করা চলবে না।আনন্দে আত্মহারা হয়ে সামনের দিকে তাকায় তারা।জ্বলজ্বল করে ওঠা নীল চোখের পলক বন্ধ থাকে সামনে।ঠোঁটের ভিজে আবরণ তখন অন্য ঠোঁটের আড়ালে। 

শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬

১)আতরের দোকান করে যারা,তাদের দোকানের বাইরের পৃথিবীটা বড়ই বাসী মনে হয়।পুষ্পের সৌরভ পেলেও তা যেন মনে হয় জোলো, ভালো মিষ্টির সুবাস মনে ধরে না।সব কিছুই বড় অপরিশোধিত।আতরের দোকানটা যেন আরেক জগত,গন্ধের হাট বসেছে সেখানে।কোনোটা পারস্যের ফুলের আতর,কোনটা হিমালয়ের আয়ুর্বেদিক শিকড়এর গন্ধ।প্রতিটি ফুল নিজের ইতিহাস জানায়।বলতে চায় নিজের গল্প।কয়েকজন কারিগর বছরের পর বছরের ধরে এক্সপেরিমেন্ট করে নতুন সুগন্ধের আশায়।দক্ষ হাতে গন্ধ তৈরী করে ওস্তাদ তারা।কিন্তু যে গন্ধ তৈরী করা যায় না,সেই গন্ধ পেলে তারা হীনমন্যতায় ভোগে।মাথার চুল খামচে ধরে চেষ্টা চালিয়ে যায় কিন্তু  ... পারে না। 

২)পুরনো দেরাজের ভিতর একরকম গন্ধ থাকে।গন্ধটা খুব পরিচিত কিন্তু ঠাহর করা যায় না।কখনো মনে হয় গন্ধটা প্রাচীন আসবাবের,কখনো মনে হয় নতুন বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ।বেশ কয়েক বছর পর যখন দেরাজ খোলে,গন্ধটা ছড়িয়ে থাকে বইয়ে,ছোটবেলার ডায়রিতে,জমানো স্টিকারএর কৌটোয়,রঙিন পেনসিলে.একটুক্ষণ বসে থাকলে আস্তে আস্তে অন্যান্য প্রতিযোগিরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেকে চেনানোর জন্য.লক্ষী পুজোর গন্ধ,সন্ধ্যেবেলায় হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসার গন্ধ,মাদুরে বসে খেতে বসার সময় হারিকেনের সলতের গন্ধ,মরাঘাসের ওপর ভিজে ফুলের অপেক্ষার গন্ধ,আরো কত....রঙের ও নিজস্ব এক একটা গন্ধ থাকে,যেমন থাকে ইতিহাসের.স্মৃতির গন্ধ অবশ্য লুকিয়ে থাকে নুড়ি নুড়ি গল্পের পিছনে,আড়াল দিয়ে হাসে.কিন্তু বর্তমানের কোনো গন্ধ থাকে না,কেননা বর্তমানের কোনো গল্প থাকে না।গল্প বুনে ওঠে অতীতের তারে।তাই গল্পের গন্ধ তৈরী করা যায় না।