বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

হাইলিগেনস্ট্যাট টেস্টামেন্ট

আমার জীবনে রক্ত মাংসের শিক্ষকদের প্রভাব খুব বেশি নেই। যতটা শিখেছি, বই পড়ে, নানান ধরনের লোকের সঙ্গে আলাপ করে আর পথে পথে ঘুরে। যেমন, কাকাবাবুর 'ভয়ংকর সুন্দর' গল্পে পড়া 'আকাশ পুরোনো হয় না' কথাটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার একটা বলেই মনে করি। একজন আমাকে বলেছিল, টিচিং লাইজ ইন ডিসগাইজ। কোথায় সে দেখা দেবে, কেউ জানে না। 

হ্যাঁ, স্কুলজীবনে অনেক শিক্ষকের সাবজেক্ট নলেজ ভালো ছিল, যত্ন নিয়ে পড়াতেন, কিন্তু ওইটুকুই। পাউডার কৌটোর টেলিস্কোপ আমাকে কেউ বানিয়ে দেয়নি, প্রোফেসর লুপিনের মতোও কেউ ছিল না। ব্যতিক্রম ইংরেজি ও আর্টের শিক্ষক ডিটিলবাবু, স্কুলে ড্রয়িং রুমে তাঁর নিজস্ব লাইব্রেরি থেকে বাংলা বই এনে পড়ার অভ্যেস আমাকে অনেক পরিণত করেছে, তবে স্কুলজীবনে পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে জীবনের পাঠ দিয়েছেন, এমন শিক্ষকের কথা বিশেষ মনে পড়ে না। এহেন উচ্চমাধ্যমিকের পর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোচিং করতে গিয়ে একজন কেমিস্ট্রির মাস্টার পেলাম, যাকে শিক্ষক বলে ভাবার অবকাশ ছিল না। কালো-কুলো ছোকরা চেহারা, র‍্যাগিংয়ে নাগিন ডান্স করতে হয়েছিল বলে তার নিকনেম পড়ে গিয়েছিল 'নাগু'; এমনকি আমরাও নাগু স্যার বলেই ডাকতাম। নাগু আই টি বিএইচইউ থেকে কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পাস করেছিলেন, কিন্তু কোচিং উদ্যোগেই কেরিয়ার করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। ফলে তিনজন আইআইটিয়ান মিলে একটা কোচিং খুলেছিলেন বেনারসে। (প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, কোটা ফ্যাক্টরি ওয়েব সিরিজের জিতু ভাইয়া চরিত্রটা যে ব্যক্তিকে মাথায় রেখে লেখা, সেই এনভি স্যার ওরফে নিতিন বিজয় তাঁর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন কোটা পয়েন্ট থেকেই। তখন তিনি সেরেমিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বছরের ছাত্র, ফাটাফাটি পড়াতেন। আমরাই তাঁর প্রথম ব্যাচ) কিন্তু আমার প্রিয় ছিলেন নাগু। তাঁর কেমিস্ট্রি জ্ঞান নিয়ে আমার কিছু বলার নেই কিন্তু মাঝেমধ্যে তিনি এমন এক একটা কথা বলতেন যা মনে থেকে যেত। কোন শিক্ষকের কোন কথা লাইফ লেসন হয়ে মনে গেঁথে যায় চিরকালের জন্য, সে কথা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। তা সেবার কেমিস্ট্রি শীট সাবমিট করার পর সমর নামে এক ব্রিলিয়ান্ট ছেলে বাজে রকম সিলি মিস্টেক করে নম্বর কম পেয়ে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল প্রায়, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, নাগু সে কথা জানতে পেরে বললেন, "সালো! এক বাত গাঁঠ বাঁধ লো! অ্যায়সা হ্যায়, আই আই টি বহুত কুছ হ্যায়, পর সব কুছ নেহি হ্যায়!"

এই নীতিকথা শুনে ছেলের মুখের ভাব বদলাল না। সমর মুখ গোঁজ করে বলল, "সরজি, আই আই টি না সেহি, ইঞ্জিনিয়ারিং তো নিকালনা পড়েগা। নেহি তো জিন্দেগি বরবাদ হো জায়েগি।"

নাগু আবার হেসে বলেছিলেন, "জিন্দেগি বহুত বড়ি চিজ হ্যায় বচ্চে। ইঞ্জিনিয়ারিং, জব, পড়াই লিখাই, সাকসেস...ইয়ে সব জিন্দেগি মে বহুত কুছ হ্যায়... পর...সব কুছ নেহি হ্যায়! "

তখন জানতাম না, এই কথাটা সারাজীবনের জন্য আমার মাথায় জায়গা করে নেবে। সে কথা থাক! গল্পটাও আসলে নাগুকে নিয়ে নয়, এই গল্পে তাঁর ভূমিকা শুধুই সূত্রধরের! সেদিন ক্লাসের পর আমরা কয়েকজন তাঁকে গিয়ে বললাম, "কেয়া নাগু স্যার! ডিপ্রেসড বাচ্চে কো জ্ঞান দে দিয়া বেফালতু মে!"

নাগু হেসে বললেন, "অবে জ্ঞান নেহি থা ইয়ার, ইন্সপিরেশন থা! এক শীট কা ইতনা টেনশন লেগা তো আগে কেয়া পড়েগা?"

একজন খ্যাক খ্যাক করে হেসে বলল, "ফির আপকা ইন্সপিরেশন! আপ তো সুইসাইড নোট মে ভি ইন্সপিরেশন ঢুন্ড লোগে স্যার!"

নাগু মুচকি হেসে বললেন, "লড়কে, উয়ো ভি হোতা হ্যায়! হাইলিগেনস্টাট টেস্টামেন্ট কা নাম শুনা হ্যায়!"

"হায়... কেয়া?" আমরা ভড়কে গিয়েছি। 

নাগু কপাত করে আমার খাতাটা কেড়ে নিয়ে লিখতে শুরু করলেন। খাতাটা তুলে নিয়ে সবাই দেখলাম লিখেছেন-- Heiligenstadt Testament... 

এই অদ্ভুত শব্দের কী মানে আর এসবের মাঝে কী ভূমিকা, সে রহস্যের কিনারা সেদিন হয়নি। কিন্তু খাতাটা ভাগ্যক্রমে আমার ছিল বলে লেখাটা মাঝেমধ্যেই আমার চোখে পড়ত, ফলে মাথায় থেকে গিয়েছিল ওই কথাটা।

এই ঘটনার পর বহুবছর কেটে গিয়েছে। সেবার ইউপি এমপি সীমানাতে একটা এনজিওর সঙ্গে ভলান্টিয়ারশিপের কাজে গিয়েছি। নদীর ধারে একটা ছোট্ট গ্রাম, সেখানে চারজন ছেলে থাকি। তার মধ্যে দুজন বিদেশি। তাদের নাম আর মনে নেই। ধরা যাক মার্ক আর স্টিভ। তা বুন্দেলখন্ড অঞ্চলের ওই জায়গা ভীষণভাবে প্রান্তিক, দারিদ্র্যের রূপ সচক্ষে দেখার সুযোগ আমাদের হয়েছিল সেবার। নিয়াগর পাতার খোঁজে জঙ্গলে ঘোরে গ্রামের লোক, মাঝেমধ্যেই ভুখমরিতে এক একজনের মৃত্যু হয়। সে খবর আসে আমাদের কাছেও। প্রথম দিকে বিচলিত হলেও সয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের সয়ে গেলেও মার্কের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, সে রীতিমত ডিপ্রেশনে দিন কাটাত, রাতে জেগে বসে থাকত। একদিন রাতে উঠে দেখি, মার্ক চারপাইয়ের ওপর উঠে বসে আছে, ঢিবরির আলোয় একটা বই পড়ছে। উঠে গিয়ে দেখলাম, তার মুখে অদ্ভুত একটা উজ্জ্বল আলো। জিজ্ঞেস করলাম, "কী পড়ছ মার্ক?"

সে উজ্জ্বল মুখে আমাকে বইটা ধরিয়ে দিয়ে বলল, "আমার বাইবেল। বা গীতা, কুরান যা খুশি বলতে পারো। যখন মনে হয় জীবনে বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই, তখন এই বইটা পড়ি।"

ঢিবরির অনুজ্জ্বল আলোয় দেখলাম, হলুদ রঙের মলাটের ওপর লেখা-- Heiligenstadt Testament... 

এই বইয়ের সঙ্গে যে গল্প জড়িয়ে আছে সেটা খুব কমন, অনেকেই হয়তো জানে, কিন্তু আমি গল্পটা শুনেছিলাম সেই রাতে। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক একটানা বলে গিয়েছিল মার্ক, আমিও শুনে গিয়েছিলাম হতভম্ব হয়ে। একটা চিঠি কাম অবসাদের দলিল কাম আত্মহত্যার স্বেচ্ছানামা, যা কিনা পরে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে আশার আলো হয়ে এসেছে। একটা আদ্যোপান্ত সুইসাইড নোটের ন্যায় দস্তাবেজ, যা পড়ে হাজার হাজার লোক ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেয়েছে, এখনও পাচ্ছে। মার্কের মতো অনেকের কাছেই (হয়তো নাগুর কাছেও! জানার কোনও উপায় নেই) হয়তো এই চিঠি অবসাদ জীবন থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র অবলম্বন হয়ে এসেছিল।

হাইলিগেনস্টাট আসলে ভিয়েনার নাইন্টিন্থ ডিস্ট্রিক্টের একটা পাড়া। সাজানো উদ্যান, গাছপালা দিয়ে সাজানো এই পাড়া এককালে শহরের বাইরে অবস্থিত ছিল। বেটোফেন আর তাঁর ছাত্র ফার্ডিনান্ড রাইজ বৈকালিক ভ্রমণে  সেখানে যেতেন মাঝেমধ্যেই। সেদিনও তারা দুজনে ঘুরছেন। গাছেগাছে পাখিদের কলতান, একটা পাখি এমন সুরেলা গলায় গান গাইছে যে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। রাইজ বেটোফেনকে ইশারা করে বললেন, "শুনতে পাচ্ছেন স্যার?"

বেটোফেন কিছুক্ষণ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন রাইজের দিকে, তারপর আস্তে আস্তে ঘাড় নাড়লেন। রাইজ এগিয়ে গেলেন। লক্ষ করলেন না, বেটোফেনের দু চোখ বেয়ে নেমে আসছে জলের ধারা। আসলে তিনি কিছুই শুনতে পাননি। পাওয়ার কথাও নয়। তাঁর শ্রবণশক্তি তখন প্রায় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, আংশিক ভাবে কালা হয়ে গিয়েছেন বেটোফেন। সেটা ছিল ১৮০২ সাল। 

সমস্যা অবশ্য বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে। সাতাশ বছর বয়সে যখন একদিন তিনি সিম্ফনি রচনা করছেন, কে যেন তাঁর কাজে বাধা দিয়েছিল। বেটোফেন ভীষণ রেগে গিয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। রাগ যখন কমে আসে, তাঁর মনে হয় কানে যেন ঠিক করে শুনতে পাচ্ছেন না। সেই শুরু। ধীরে ধীরে এই সমস্যা বাড়তেই থাকে। বেটোফেন দু একজন বন্ধুকে ছাড়া কাউকেই কিছু জানাননি, বাড়িতে তো নয়ই। কে যেন তাঁকে বলেছিল যে ভিয়েনার থারমাল বাথে স্নান করলে উপকার পাওয়া যাবে, ফলে ভিয়েনা চলে আসেন বেটোফেন। কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি। বেটোফেন অসম্ভব প্রকৃতি প্রেমিক ছিলেম। ঝরনার জলের শব্দ, পাখিদের কলকাকলি শুনেই কম্পোজিশন রচনা করতেন তিনি। সে সব কোথায় ঘুচে গেছে তখন! একজন সঙ্গীতজ্ঞ, শোনাই যার কাজ, সে কিনা শুনতেই পাচ্ছে না! যে ঘরই ভাড়া নিতেন, সে ঘরটাই কিছুদিন পর তাঁর অসহ্য ঠেকত। ভিয়েনা প্রবাসের দরুণ প্রায় ষাট সত্তরটা ঘর বদলেছেন বেটোফেন, কিন্তু কোনোদিন শান্তি পাননি। বার বার ভাবতেন, এইবার আত্মহত্যা করবেন। করবেনই। কোথাও না কোথাও তাঁর ধারণা হয়েছিল, এ আসলে তাঁর পাপের ফল। ছোটবেলা থেকে বাবা তাঁকে সঙ্গীত দুনিয়ায় 'চাইল্ড প্রডিজি' করে প্রচার চালিয়েছেন, প্রয়োজনে মিথ্যা বলিয়েছেন তাঁকে দিয়ে, এমনকি তাঁর বোন, সঙ্গীত প্রতিভায় যে কিনা বেটোফেনকেও ছাপিয়ে যেতে পারত, তাঁকে জোর করে পিছিয়ে ছেলেকে সামনে করে দিয়েছেন। হয়তো দোষ বেটোফেনেরও ছিল! অন্তত তিনি নিজে যে সে কথা ভেবেছেন, তা নিয়ে সংশয় নেই। 

তিরিশ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগেই বেটোফেনের শ্রবণশক্তি কমে আসছিল দ্রুত, চল্লিশ আসতে আসতে বদ্ধ কালা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আয়রনি হল, মানব সভ্যতার সঙ্গীতের ইতিহাসের সবচেয়ে অসামান্য কিছু কম্পোজিশন তৈরি হয়েছে একজন বদ্ধ কালার হাতে। বেটোফেন শুধু অন্তরাত্মার ওপর ভরসা করে কম্পোজিশন করতেন, কিন্তু সে সব কালজয়ী সুর তিনি নিজে একবারের জন্যও শুনতে পাননি। শোনার উপায়ও ছিল না। সবাই তাঁর কন্সার্টের পর এসে তারিফ করত, তিনি বোকার মতো চেয়ে থাকতেন, কিছুই বুঝতে পারতেন না। 

আরো আশ্চর্যের কথা হল, তাঁর ডিপ্রেশন যত বেড়েছে, তত বেশি ভালো কম্পোজিশন উপহার দিয়েছেন এই মহান সঙ্গীতজ্ঞ। বেঁচে থাকতেই সারা দুনিয়ার শ্রোতাদের কাছে গ্রেটেস্ট মিউজিক আইকন হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু ছাপ্পান্ন বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুর আগে আয়োজিত শেষ কন্সার্টে যখন হাজার হাজার শ্রোতা তালি বাজিয়েই চলেছেন, তিনি মুখ ঘুরিয়ে বসে স্বরলিপির খাতা দেখছেন। বাধ্য হয়েই একজন তাঁর চেয়ারটাকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল দর্শকের দিকে। 

হাইলিগেনস্টাটে থাকার সময়ে অবশ্য৷ বেটোফেন  যুবক। ভেবেছিলেন, এইবার হয়তো কিছু লাভ হবে। তখন সেকেন্ড সিম্ফনির কাজ শেষ হয়েছে সদ্য। ভিয়েনার ডাক্তার জন অ্যাডামস তাঁকে জানিয়েছিলেন, শহর ছেড়ে কান্ট্রি সাইডে গিয়ে থাকলে হয়তো কিছু উপকার হবে। খুব আশা নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ছয় মাস কেটে গিয়েছে, লাভ হয়নি কিছুই। উল্টে দিনদিন বাইরের দুনিয়া আরো নীরব, আরো নিস্তব্ধ হয়ে আসছে তাঁর কাছে। এমন সময় ফার্ডিনান্ড রাইজ এসে উপস্থিত, যিনি তাঁকে পাখির গান শোনাবেন বলে পীড়াপীড়ি করেন রোজ। কিন্তু ... বেটোফেন যে কিছুই শুনতে পাবেন না সে কথা তাঁর প্রিয় ছাত্রেরও জানা ছিল না। 

যে ঘটনার কথা প্রথমেই লিখেছি, সেইদিনই বাইরে থেকে ঘুরে এসে ভাই কার্ল আর জনকে বিশাল এক চিঠি লিখেছিলেন বেটোফেন। আদপে চিঠি, না স্বগতোক্তি না মৃত্যুকামনা...সে সব পরের কথা! কিন্তু এই চিঠির নামই পরবর্তী সময়ে দেওয়া হয়েছে হাইলিগেনস্টাট টেস্টামেন্ট। চিঠির শুরুতেই লেখা...

"to be read and executed after my death." 

বলাবাহুল্য, এই লেখার অস্তিত্ব কেউই জানত না। বেটোফেনের মৃত্যুর বেশ কিছুদিন পর এই চিঠি উদ্ধার করা হয়, রিপ্রোডাকশন কপি প্রকাশিত করা হয় দু মলাটে। কয়েক বছরের মধ্যেই দেখা যায়, অবসাদের গভীরতম জায়গা থেকে উঠে আসা একটা চিঠি সারা দুনিয়ার অবসাদগ্রস্ত মানুষের কাছে আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি ও সিভিয়ার ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকা অসংখ্য মানুষ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটুকু খুঁজে পেয়েছেন এই লেখায়, যা কিনা লেখা হয়েছিল জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে, এক অবসাদগ্রস্ত মানুষের কলমে। সবাই অবাক! দুনিয়ায় কী না হয়! ওই যে বললাম! টিচিং লাইজ ইন ডিসগাইজ! একটা সুইসাইড নোটও দৈবক্রমে কারো কাছে অনুপ্রেরণার স্রোত হয়ে উঠতে পারে।

হাইলিগেনস্টাট টেস্টামেন্ট লেখাটার কিছুটা অংশ দিলাম। ইচ্ছে হলে সম্পূর্ণ লেখাটাই পড়তে পারেন।

For six years now I have had an incurable condition, made worse by incompetent doctors, from year to year deceived with hopes of getting better, finally forced to face the prospect of a perpetual ailment (whose cure will either take years or be entirely impossible). Though born with a fiery, vigorous character, always tempted by the attractions of society, I have had to withdraw into myself, and spend my life in solitude... Such a situation brought me almost to despair; anymore and I would have ended my life. Only my art prevented me from doing it. I couldn't leave the world until I had produced all that I felt was within me."

লেখাটা বেটোফেনস লেটার্স-এ পেয়ে যাবেন। কেম্ব্রিজ লাইব্রেরি কালেকশন ইলাস্ট্রেটেড ভার্সন প্রকাশ করেছে, কিন্তু দাম বড্ড বেশি। কপিরাইট ফ্রি ম্যাটেরিয়াল বলেই মনে হয়, নেট থেকে পড়লেও অসুবিধা নেই। কিছু ছবি কমেন্টে দিলাম।

ফ্রায়ারে ফ্যান্ডম

 আমার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যারা বেনারসে থেকে গিয়েছে, প্রায় প্রত্যেকেই স্কুলে বা কলেজে শিক্ষকতা করে। এছাড়াও দেশের নানা জায়গায় বন্ধুরা অ্যাকাডেমিক লাইনে আছে। মাঝেমধ্যেই তাদের মুখে শুনি, শিক্ষকদের গুরুত্ব কমে আসছে দ্রুত। কাজ বাড়ছে, দায়িত্ব বাড়ছে, মাইনে খুব বেশি না হলেও মোটামুটি বাড়ছে, কিন্তু সম্মান কমছে ওভারঅল, গুরুত্বও কমছে। তারপর নন টিচিং ওয়ার্ক আর উল্টো পাল্টা আবদারের ফিরিস্তি তো আছেই। এদিকে যোগ্য শিক্ষকরা হিমশিম খাচ্ছেন অবস্থা সামলাতে। আমার এক বন্ধু তো আমাকে বলল, "এর চেয়ে ভাই বাহুবলি নেতা হলে ভালো হত! আমাদের দেশে জনতার মনোভাব হল, যারা আর কিছু হতে পারে না, তারা টিচার হয়!"

কী আর বলি! প্রতি বছর নানা জায়গা থেকে একাধিক সরকারি বেসরকারি  রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, তাতে স্পষ্ট বোঝা যায় শিক্ষা ব্যবস্থার হাল ক্রমে খারাপের দিকে। তারপর কোভিড এসে তো যাকে বলে 'সোনে পে সুহাগা' অবস্থা। ২০২১ সালে জানানো হয়েছিল অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য কমপক্ষে এগারো লক্ষ শিক্ষক দরকার, তা সে সব ডেটায় আর আমল দিচ্ছে কে? এমনিতেও দেশের বহুসংখ্যক স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক, ১৪০০০ টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার হলেও মাত্র ১২ শতাংশ শিক্ষক ট্রেনিং শেষ করে, আর শিক্ষকদের প্রতি সরকারের মনোভাবের কথা আর নতুন করে কী বলব? আমার এক বন্ধু উত্তরাখণ্ডের এক গ্রামে পড়ায়, স্কুল কমিটির সাহায্য না পেয়ে নিজের টাকা খরচ করে ব্ল্যাক বোর্ড, চক ইত্যাদি নিয়ে আসত, গ্রাম পঞ্চায়েত উল্টে ওকেই তলব করে শাসানি দিয়েছিল। নিয়ম নেই। আমি না দিই না দেব, ছাত্রছাত্রীদের পড়া চুলোয় যাবে যাক, কিন্তু তুমি নিজে থেকে সাহায্য করতে পারবে না। ওতে যদি তোমার প্রভাব বেড়ে যায়? তাই নিয়ম নেই! ল্যাও! বং গাই স্টাইলে বলতে ইচ্ছে হয়, এ কেমন নিয়ম!

তবে সে একা নয় মোটেও, বেশি সক্রিয় হলে বা ছাত্রছাত্রীদের কথা বেশি ভাবলে আগেও শিক্ষকদের মূল্য চোকাতে হয়েছে, এখনও হচ্ছে! তবে ভাববেন না এটা শুধু ভারতের সমস্যা, চেহারাটা গোটা বিশ্বে কমবেশি একই। এখান থেকেও বেশি বাড়াবাড়ি আছে অনেক জায়গায়। ভারতের চেয়েও বেশি ঠ্যাঁটা সরকার আছে অনেক দেশে। ওই যে গালিব বলেছিল...

রেখতা কে তুম হি উস্তাদ নেহি হো গালিব

কেহথে হ্যায় আগলে জমানে মে কোই মির ভি থা...

পাউলো ফ্রায়ারের নামটার সঙ্গে পরিচিত নয়, এমন মানুষের সংখ্যা কম। তাঁর কাজ নিয়ে অনেকেই সরব, কিন্তু তাঁর ব্যক্তি জীবন নিয়ে বরং বিশেষ লেখালেখি হয় না। ব্রাজিলের এই শিক্ষাবিদ 'ক্রিটিকাল পেডাগোজি' বা সমালোচনামূলক শিক্ষানীতি সম্পর্কে কী বলেছিলেন, তা জানা যায় 'পেডাগোজি অফ দ্য অপ্রেসড' বইটা পড়লে। যারা জানেন না, তাঁদের জন্য বলি, ক্রিটিকাল পেডাগোজি পদ্ধতিতে প্রধানত শিক্ষক ও ছাত্রের মাঝে একটা ডিসকোর্স গড়ে তোলা হয়। মুখস্থ বিদ্যার শিক্ষানীতিকে বিসর্জন দিয়ে বিভিন্ন ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে শিক্ষক ও ছাত্রদের মাঝে একটা ডায়ালগ স্থাপিত করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, সেজন্য স্কুল ফিস্কুলেরও দরকার নেই, প্রয়োজন হলে মাস্টাররা দল বেঁধে গরীব ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে চলে যেত, গ্রামের অন্যান্য লোকের সঙ্গে কথা বলে তাদের সামাজিক আর্থিক পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করত। দিনের পর দিন গ্রামে কাটাত, স্কুলের ছেলেমেয়েদের জন্য আনাজপাতি জোগাড় করত। ছাত্ররাও শুধু মুখে বই নিয়ে বসে না থেকে নানান কাজে ইনভলভ হত, রান্নাবান্না করত, সরাসরি যা ইচ্ছে তাই প্রশ্ন করত গতানুগতিক শিক্ষাপদ্ধতির নীতি অনুসরণ না করে। আরো অনেক কিছুই আছে, আমি একটা আইডিয়া দিলাম মাত্র।

ফ্রায়ারে ছোটবেলায় ভীষণ দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছিলেন। তখন ১৯২৯ সালের মন্দা দীর্ঘায়িত হয়েছে, বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা। না খেয়ে স্কুলে যেতেন, ক্লাসে বসে পড়াশোনা প্রায় কিছুই মাথায় ঢুকত না। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতেই যখন ফুটবল খেলতে যেতেন, বেশ চনমনে অনুভব করতেন তিনি। ফ্রায়ারের বিশ্বাস ছিল, ব্যাপারটা শুধুই সংযোগ নয়। পরে তিনি জানিয়েছিলেন, "পড়াশোনায় আগ্রহ কম ছিল না আমার। কিন্ত ক্ষিদের চোটে আমার মাথা ঝিমঝিম করত, তাই পড়া মাথাতেই ঢুকত না।" এই অভিজ্ঞতা তাঁকে বুঝিয়েছিল, শিক্ষা ও আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা বর্গের ছেলেমেয়েরা স্কুলের বদ্ধ পরিবেশে তত সাবলীল হতে পারে না, শেখেও কম। শিক্ষার হার বাড়াতে হলে পড়ানোর পদ্ধতি বদলাতে হবে, ক্লাসরুম বসাতে হবে আনুষাঙ্গিক কাজের সঙ্গে, পড়া হবে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে। শুধু অল্পবয়সীরাই নয়, সকলের জন্যই এই শিক্ষাপদ্ধতি ব্যবহার করা হলে সামগ্রিকভাবে শিক্ষা ব্যবস্থায় বদল আসবে বলে ধারণা ছিল তাঁর। 

দীর্ঘদিন এই বিশ্বাস নিয়ে কাজ করেছেন ফ্রায়ারে। ১৯৪৬ সালে যখন প্রথম তাঁকে শ্রমিকদের জন্য তৈরি এক শিক্ষা সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তবে থেকেই গ্রাউন্ড লেভেলে এই প্রজেক্টকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না যেতেই তিনি বুঝেছিলেন, সরকার তাঁর কাজকে মোটেও ভালো চোখে দেখছে না। কাগজে কলমে এমন অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয় বটে, কিন্তু হাতেকলমে কাজ করতে গেলেই শুরু হয় ঝামেলা। গরিবদের পড়াশোনা নিয়ে কেউই সিরিয়াস নয়। না সরকার, না সংগঠন, না মাইনে করা শিক্ষক। যদি কেউ নিজে আগ্রহ নিয়ে কাজ করতে চায়, একের পর এক বাধা আসে। এক সময়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, শিক্ষা আর রাজনীতির মধ্যে গভীর যোগাযোগ আছে। পড়াশোনা, বিশেষ করে সর্বহারা বর্গের পড়াশোনা মানেই বিপ্লবের সূত্রপাত, আর বিপ্লব মানেই বিপর্যয়। তিনি বলেছিলেন, "The trust of the people in the leaders reflects the confidence of the leaders in the people."

স্বভাবতই ফ্রায়ারের নিজস্ব রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাও ছিল, সেটা নিয়ে আলোচনা করা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। তবে মোদ্দা কথা হল এরপর প্রায় পনেরো বছর ধরে ফ্রায়ারে ক্রিটিকাল পেডাগোজিকে ব্রাজিলের সমাজে নিয়ে আসার জন্য ছুটোছুটি করেছেন। সে সময় অদ্ভুত এক নিয়ম ছিল ব্রাজিলে, শুধু পড়াশোনা জানা লোকেরাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারত। ফলে তৎকালীন সরকার চেয়েছিল, আরো লোকজন শিক্ষিত হোক, কিন্তু শর্ত ছিল অনেক।

স্থাপিত নিয়মকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নতুন কিছু করতে যাওয়া মানেই ঝামেলা! ফ্রায়ারে এই সময় গোটা লাতিন আমেরিকা ও দুনিয়ার অন্যান্য জায়গার শিক্ষাবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, সর্বত্রই এক অবস্থা। দুর্নীতির ফলে স্কুলের টাকা মার খাচ্ছে, ক্ষতি হচ্ছে ছোট ছোট  ছেলেমেয়েদের। নিজে থেকে কোনো উদ্যোগ নিয়েছ কি মরেছ! মজার কথা নয়! ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় শিক্ষকরা বারবার রাজামশাইদের কোপে পড়েছেন, স্টেট মেশিনারিকে কাজে লাগিয়ে তাদের সর্বনাশ করা হয়েছে। মুশকিল হল ভালো শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই পড়াশোনাটাকে সিভিল রাইট বলেই মনে করেন, আর দেশ-কাল-সীমানা নির্বিশেষে সিভিল রাইট অ্যাক্টিভিস্টদের ভাগ্যে কী লেখা থাকে, সেটা তো গত কয়েক বছরের রিপোর্ট ঘাঁটলেই জানা যাবে।

১৯৬৪ সাল। কুড়ি বছরের চেষ্টার পর যখন ব্রাজিলে মোটামুটি সরকারের সঙ্গে বনিবনা হয়েছে, দেশ জুড়ে স্টাডি সার্কল খোলা হবে বলে কথা চলছে, তখনই আবার মাথায় বাজ পড়ল ফ্রায়ারের। সামরিক বিপ্লবের ফলে সরকার পড়ে গেল, সরকারের সহযোগী হিসেবে ফ্রায়ারেকে অভিযুক্ত করা হল। আর গরীবদের শিক্ষার জন্য কাজ করছেন মানে অতি অবশ্যই তিনি রেডিকাল কমিউনিস্ট। মিলিটারি হুন্তা সরকার ট্রায়ালে ফ্রায়ারেকে 'International subversive' আর 'a traitor to Christ and the Brazilian People' বলে দাগিয়ে দিল, তারপর তাঁকে নিক্ষেপ করল জেলে। জেলে তাঁর সঙ্গে কী ব্যবহার হয়েছিল সে আর আলাদা করে বলছি না। সত্তর দিন জেলে থাকার পর ব্রাজিল থেকে নির্বাসিত হয়ে ফ্রায়ারে বলিভয়ায় চলে যান। রাজনৈতিক শরনার্থী হিসেবে পাঁচ বছর বলিভিয়াতে থাকাকালীন তিনি 'এজুকেশন অফ দ্য প্র‍্যাক্টিস অফ ফ্রিডম' লিখে আন্তর্জাতিক স্তরে জনপ্রিয়তা পান, কিন্তু ব্রাজিলে এই বই ব্যান করা হয়। দেশের বাইরে এসেও অবশ্য ফ্রায়ারে খুব  আনন্দে ছিলেন না, হাতেকলমে কাজ করতে গিয়ে বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। বলিভিয়াতে ক্লাস ডিভাইড আরো প্রবল, ইন্ডিজেনাসদের শিক্ষার জন্য কোনো কিছু করতে গেলেই তাঁর ওপর পরোয়ানা জারি করা হত, তাই ফ্রায়ারে এই সময়ের বেশিরভাগটাই চিলিতে গিয়ে কাটিয়েছেন। বছর দুয়েক পর 'পেডাগোজি অফ দ্য অপ্রেসড' প্রকাশিত হয়। ততদিনে সারা দুনিয়ার লোক তাঁকে চিনে গিয়েছে। জেনেভা থেকে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয় স্পেশাল এডুকেশনল অ্যাডভাইসার হিসেবে কাজ করার জন্য। 

পরবর্তী দশ বছর হার্ভার্ড সহ পৃথিবীর নানান জায়গায় কাজ করেছেন ফ্রায়ারে। শুধু ভাষণ দেওয়া আর বই লেখা নয়, গ্রাসরুট লেভেল এক্সেকিউশন করে তাঁর বিশ্বাসকে প্রমাণিত করেছেন বারবার। এই সময়ে তাঁকে আবার রেডিকাল এডুকেশনিস্ট ইত্যাদি বলে কটুক্তি করা হয়, তাঁর তৈরি স্কুল আর স্টাডি সার্কল ধ্বংস করা হয়, এমনকি তাঁকে আর তাঁর অনুসরণকারী অন্যান্য শিক্ষকদের প্রাণে মারার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু ফ্রায়ারে কিছুতেই দমেননি, দাঁতে দাঁত চেপে নিজের জেদ বজায় রেখেছেন। 

দেশ থেকে নির্বাসনের প্রায় পনেরো বছর পর ব্রাজিলের নতুন সরকার তাঁকে ফেরত ডেকে পাঠায়। ১৯৮৮ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির সরকার আসার পর  তাঁকে সাও পাউলোর শিক্ষামন্ত্রী করা হয়। ১৯৯১ সালে ফ্রায়ারে ইন্সটিটিউট খোলা হয়। নয়ের দশকে এই ইন্স্টিটিউটের কুড়িটারও বেশি শাখা কাজ করত, পরে সারা দুনিয়ায় ক্রিটিকাল পেডাগোজি সম্পর্কিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে যখন ফ্রায়ারে মারা যান, তাঁকে একবাক্যে 'ওয়ান অফ দ্য গ্রেটেস্ট এডুকেশনিস্ট অফ দ্য সেঞ্চুরি' বলা হত। ২০০৯ সালে ব্রাজিলের সরকার তাঁর সঙ্গে করা দুর্ব্যবহারের জন্য দুঃখপ্রকাশ করা হয়, পাবলিক অ্যাপোলজির পাশাপাশি ফ্রায়ারের নামে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়!

কিন্তু আজ হঠাৎ এসব লেখার দরকার পড়ল কেন? হুট করে ফ্রায়ারেকে নিয়ে প্রবন্ধ লেখারও কী আছে? কারণ আর কিছুই নয়, ব্রাজিলের বর্তমান পরিস্থিতি। ফ্রায়ারের নামে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরু হয়েছিল, তারা বেশ সুচারু ভাবে কাজকর্ম করছিল। কিন্তু বোলসানেরো সরকার আসার পর সেসব লাটে উঠেছে। শিক্ষকদের খোলাখুলি প্রাণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, মাইনেপত্তর আটকে দেওয়া হচ্ছে, আর কী কী হচ্ছে সে আর কী বলব?

কারণ একটাই, ফ্রায়ারে ইন্সটিটিউট এর ছাত্র আর শিক্ষক, এরা প্রত্যেকেই বড় প্রশ্ন করে! বিশেষ করে ল্যান্ডলেস ওয়ার্কার অ্যাসোসিয়েশন এর বর্তমান আন্দোলন নিয়ে অ্যাকাডেমিক কমিউনিটি সরব।ক্রিটিকাল পেডাগোজির অনুসরণকারী হওয়ার ফলেই হয়তো সরকারের কাজকর্ম নিয়েও এরা 'ক্রিটিকাল'। ফলে রাষ্ট্রপতি মশাই প্রথম থেকেই ক্ষেপে ছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন ফ্রায়ারের ভূতকে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে তাড়াবেনই...to use a flamethrower at the Ministry of Education to get Paulo Freire out of there”.

এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ক্রমাগত টেনশন চলছে। ব্রাজিলে তো বটেই, ব্রাজিলের বাইরেও এ নিয়ে তুমুল হট্টগোল। কেমব্রিজে ফ্রায়ারের 'স্ট্যাচু অফ রেজিস্ট্যান্স' এর প্রতিমা বসানো নিয়ে প্রচুর জলঘোলা হয়েছে। সেখানাকার প্রফেসর সুসান রবার্টসন বলেছেন, “Around the world, academic communities are facing challenges to their freedom that they never expected to have to defend. Freire offers a way forward for educators striving to resist this. Everything he talked about: ideas about living, loving, trying to know, being tolerant, being curious – these are resources that enable us to confront those challenges, and to live well with each other and our planet.”

তিন দিন আগের কথা। সাও পাউলো সহ ব্রাজিলের একাধিক জায়গায়, যেখানে ফ্রায়ারে ইন্সটিটিউট এর শাখা আছে, সেখানকার রেসিডেন্ট শিক্ষকদের ওপর গুন্ডারা চড়াও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মিডিয়াতে স্বাভাবিকভাবেই কোনো খবর আসেনি, কিন্তু ইন্সটিটিউট এর ছাত্র আর কর্মচারীরা বলছে, অবস্থা মোটেও ভালো নয়। আততায়ীদের বক্তব্য ক্লিয়ার। হয় এসব ক্রিটিকাল পেডাগোজি-ফজি বন্ধ করো, নাহলে কপালে দুঃখ আছে তোমাদের। যা হয় আর কি! দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু এটাই বাস্তব। কিন্তু সত্যি বলত এটাও কিন্তু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ফ্রায়ারে বা ব্রাজিলের আন্দোলন উপলক্ষ্য মাত্র, সারা দুনিয়াতেই শিক্ষকদের সঙ্গে এই হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতেও হবে।

সুতরাং, শিক্ষক বন্ধুরা, তৈরি থাকুন। কোনো না কোনো সময়ে হয়তো এই মানবনির্মিত দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হতে পারে। আপনারা যে পথ বেছেছেন, তা বড় সহজ নয়। এইটুকুই বলব আফসোস করবেন না, হতাশও হবেন না। বজায় রাখবেন জেদটুকু। বাকিটা... না বললেও চলে!

শিফটার্স

আন্তর্জাতিক গুপ্তচরবৃত্তি আর এসপিওনাজ নিয়ে কিছু সিরিয়াস কাজ করেছি বলেই হয়তো সিক্রেট সার্ভিসের গোপন কাজকর্ম নিয়ে খানিক আগ্রহ রয়ে গিয়েছে এখনও। মাঝেমধ্যেই ক্লাসিফায়েড ডকুমেন্ট লিক হয় নানা জায়গা থেকে, সে সবের নোটিফিকেশন সোজা মেলে চলে আসে। অপারেশন ব্ল্যাক অ্যারো লেখার আগে গাঁটের কড়ি খরচ করে বছর পাঁচেকের জন্য মেম্বারশিপ নিয়েছিলাম অনেক জায়গাতেই, সে সদস্যপদ এখনও সক্রিয় আছে। যাই হোক, এই পোস্টটা অবশ্য বইয়ের প্রচার বা স্পাই কাহিনি নিয়ে নয়, বরং একটা বই নিয়ে। বই না বলে ব্যাপারটাকে একটা এপিক লেভেলের জনরা ডিফাইনিং প্রোজেক্ট বললেই হয়তো সঠিক হবে। প্রথম থেকেই বলা যাক।

আচ্ছা, আপনাদের কী মনে হয়, আমাদের সমাজ বা পৃথিবীতে জীবজন্তুদের গুরুত্ব ঠিক কতটা? মানে, বলতে চাইছি, এই গ্রহের ইতিহাস কি শুধু মানব সমাজের জীবনযাত্রার নিরিখেই বিবেচনা করা হবে? হাজার হাজার প্রাণীদের মধ্যে মানুষ একটা প্রজাতি মাত্র, তারা নিজেকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান বলে প্রতিপন্ন করেছে বলেই কি বাদবাদি সবাইকে বাদ দিতে হবে? ভাবনাটা অদ্ভুত মনে হচ্ছে? আসলে ততটাও অদ্ভুত নয়। ফরাসি ঐতিহাসিক এরিক বারাতে গোটা জীবনই প্রায় এই নিয়ে চর্চা করেছেন, তাঁর মতে মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন জীবজন্তুর দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও পৃথিবীর ইতিহাস রচনা ও বিশ্লেষণ করার একটা সম্ভাবনা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু সেটা হবে কী করে? মানুষ সমস্ত জীবকে তার মতোই ভাবে, এই অ্যান্থ্রোপোসেন্ট্রিক মনোভাব বিসর্জন দিয়ে অন্য প্রাণীদের সঙ্গে মানসিক সম্পর্ক তৈরি করার কোনো বৈজ্ঞানিক উপায় এতকালে আবিষ্কার করা যায়নি, পরেও হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু সেটা না হলে ব্যাপারটা একপেশে হয়েই থাকে। বিখ্যাত পক্ষীবিদ ও নেচর রাইটার এস্থার উল্ফসন তাঁর বই 'বিটউইন নেচর অ্যান্ড স্টর্ম'-এ বলেছেন, "মানুষ আসলে জীবজন্তুদের মধ্যে নিজেদের প্রতিকৃতিই দেখতে চায়। কথা বলা, পড়াশুনা করা, বিজ্ঞান বোঝা... ইত্যাদি ইত্যাদি।" এই মনোভাব শুধু জীবজগত নিয়ে নয়, আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে মহাকাশ বিজ্ঞান, সব জায়গাতেই মানুষ ভেবে বসেছে, সে যা জেনেছে, সেটাই ঠিক, সেটাই শ্রেষ্ঠ, সেটাই সভ্যতার প্রতীক। মনুষ্য সমাজে এই অহংকার জন্মগত, আর তা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়ও নেই। উল্ফসন বলেছেন, "There should be effort to understand the cognitive abilities of other species with an open mind as this is an unfinished and never-ending quest.”

খুব বেশি কেউই এই ব্যতিক্রমী লেখক বা বৈজ্ঞানিকদের কথা বা কাজ নিয়ে মাথা ঘামাননি, কিন্তু  মার্তা বোগদান্সকা বলে এক শিল্পী ও ফোটোগ্রাফারের কাছে কথাগুলো যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছিল। উল্ফসন বা বারাতে বলেছিলেন, একটা টিয়াপাখি মানুষের ভাষা শিখে গান করতে পারে, একটা হাতি বা বাঘ মানুষের কথা বুঝে সার্কাসে খেলা দেখাতে পারে, ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুকে ট্রেনিং দিলে অনেক রকম কাজ করানো হয়, তাতে প্রমাণিত হয় জীবজগতের অন্যান্য প্রাণীরা ভিন্ন প্রজাতির এক জীবের সঙ্গে মানসিক যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু মানুষ কি হালুম হালুম করে সিংহদের ভাষায় কথা বলতে পারে? ডল্ফিনের গানের মানে বুঝতে পারে? পরিয়ায়ী পাখিদের সমস্ত ব্যবহার বুঝতে পারে, কিছুটা হলেও আয়ত্ত করতে পারে তাদের বিদ্যা? পারে না। কিন্তু আমাদের গুমোর কম নয়। তাই মানুষ স্রেফ বলে দেয়, জীবজন্তুরা ডাকে বটে, কিন্তু ওটা কোনো ভাষা নয়। ওরা অপরিণত মগজ নিয়ে এসেছে, খাওয়া জোগানো মানে সার্ভাইভাল ছাড়া আর কিছুই বোঝে না ব্যাটাচ্ছেলেরা। জীবজগতের কগনিটিভ অ্যাবিলিটি সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ ভাবে অজ্ঞ... আর সে নিয়ে আমাদের গর্বও বড় কম নয়।

যাই হোক, ব্যাপারটা মার্তা বোগদান্সকা ভাবিয়েছিল। তিনি অনুমান করেছিলেন, মানুষ ভিন অন্য প্রাণীদের গ্রাস্পিং পাওয়ার অনেক বেশি। এমন সময় ভারত আর ইজিপ্টের খবরের কাগজে পোষা পায়রা বা উট সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই মাঝেমধ্যে যা হয় আর কি! পায়রাদের দিয়ে চিঠি পাঠানো হত, কুকুর মনিবের প্রাণ বাঁচিয়েছে, ভাল্লুক পা দিয়ে অক্ষত লিখতে পারে... অধিকাংশত এই ধরনের খবরগুলো স্থানীয় খবরের কাগজ বা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, তারপর বিবিসি বা এল এ টাইমস সে নিয়ে বেশ চটুল একটা এন্টারটেনমেন্ট পিস বার করে। সেখানে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় না, পুরো ব্যাপারটা হাসিঠাট্টা আর মজার ছলে প্রকাশিত হয়। 

এই নিগেটিভ অ্যাপ্রোচ দিয়ে কাজের কাজ কিছু হয় না, কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যাবে সারা দুনিয়ায় প্রাচীন কাল থেকে জীবজন্তুদের কাজে লাগানো হয়েছে। এখনও হচ্ছে। আধুনিক কালে এ কাজে সবচেয়ে এগিয়ে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স আর সিক্রেট সোসাইটিরা। ইন্টারন্যাশনাল এসপিওনাজের প্রয়োজনে নানাভাবে নানান জন্তুজানোয়ারকে ব্যবহার করা হয়েছে। আর কাজে লাগানো মানে শুধু তাদের মাথায় যন্ত্র ঢুকিয়ে দেওয়া বা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তাদের গিনিপিগ করার কথা হচ্ছে না, কথা হচ্ছে জীবজন্তুর কগনিটিভ অ্যাবিলিটিকে কাজে লাগিয়ে কাজ উদ্ধার করা নিয়ে। 

আশ্চর্যভাবে এ সম্পর্কে প্রচুর গল্প আর গুজব থাকলেও এভিডেন্সিয়াল রেকর্ড বা সরকারি তথ্য প্রায় কিছুই নেই। মার্তা ছাড়ার পাত্র নন। তিনি ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। রেড ক্রসের কর্তাদের থেকে প্রথম ও বিশ্ব যুদ্ধের মিলিটারি আর্কাইভ, অসংখ্য অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক, সিক্রেট এজেন্ট, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, সাংবাদিক ও ফোটোজার্নালিস্টদের সাক্ষাৎকার... কিছুই বাদ রাখেননি। ডেটা সাইন্সের অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে অজস্র আধিকারিক নথিপত্র বের করে এনেছেন, এমনকি ২০১৯ সালে সি আই এ-এর কাছ থেকে লিক হওয়া বিশাল পরিমাণ ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে স্টাডি করেছেন। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মার্তা একটু একটু করে একটা প্যাটার্ন তৈরি করে মডেল তৈরি করেছেন এসপিওনাজ জগতে জীবজন্তুর ভূমিকা নিয়ে। এই প্রজেক্টের নাম দিয়েছেন 'শিফটার্স'। দীর্ঘ এই তদন্তের ফলে যে সব চমকপ্রদ ঘটনার কথা জানা গিয়েছে আর যে সব তথ্য উঠে এসেছে, সেই সবই সম্বলিত হয়েছে এই ফোটো রিপোর্টাজে। বই হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার আগে শিফটার্সের ফোটো এক্সিবিশন হয়েছে সারা দুনিয়ায়, সেখানে মার্তা এই গবেষণা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানিয়েছেন। সে সব থাক আপাতত।

বইয়ে চোদ্দটা চ্যাপ্টার আছে। প্রতিটা চ্যাপ্টার একজন প্রাণীর পার্সপেক্টিভ থেকে লেখা। তার এক একটা ঘটনা পড়লে মাথা ঘুরে যায়। এছাড়াও অসংখ্য ফোটোগ্রাফ তো আছেই। ইজরায়েলের মোসাদ কবে ডলফিনকে দিয়ে শত্রুকে খুন করিয়েছিল, পাকিস্তানের পায়রারা কীভাবে শত্রুপক্ষের খবর এনে দিত, সি আই এ মাছ ও ডলফিনদের আন্ডারওয়াটার মাইনিংয়ে ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছিল...কী নেই? পোল্যান্ডের সেনাবাহিনী একসময় ওয়োজটেক বলে এক বিশাল ভাল্লুককে সৈনিকদের ইউনিফর্ম দিয়ে ভর্তি করিয়েছিল। ভারী ওয়পেনারি সাপ্লাই করা এই পাঁচশো পাউন্ড ওজনের ভাল্লুকের কাছে ছেলেখেলা ছিল প্রায়। ওয়োজটেক সেনাবাহিনীর তাঁবুতে বসে অন্যদের সঙ্গে বিয়ার আর সিগারেট খেত, কমব্যাট মিশনে যেতে হত বলে তার মিলিটারি র‍্যাংকও ছিল। রিটায়ার করার পর এডিনব্রা চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে, অনেকেই তখন তার সঙ্গে ছবি তুলিয়েছে। 

সন্দেহ নেই এই কাজে ব্যবহার করা জীবজন্তুরা খুব আরামের জীবন পায়নি। তাদের যে সমস্ত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, তা করা মানুষের অসাধ্য ছিল। তাদের জেদ, সহ্যশক্তি, কমান্ড বোঝা ও ইমপ্লিমেন্ট করার অসামান্য স্কিল ছাড়া এ সব সম্ভব হত কি? না। সবাই ভালো করেই জানত, এই জীবগুলোর তুখোড় মানসিক ক্ষমতা না থাকলে অনেক মিশন ফেল করত। অথচ পরবর্তী কালে সে নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি, পুরো ব্যাপারটা 'ভালো ট্রেনিংয়ের আউটপুট' বলে একটু পিঠ চাপড়ে দেওয়া হয়েছে ঘোড়া, কুকুর বা অন্যান্য নিয়োগ করা প্রাণীদের।

বইয়ের শেষ চ্যাপ্টারের নাম 'ডেডবডিজ'। গুপ্তচরবৃত্তি, পুলিশ আর ডিফেন্স সার্ভিসে নিয়োগ জন্তু জানোয়ারের অনেকেই যে এই কাজ করতে গিয়ে মারা পড়েছে, তারই মর্মস্পর্শী আখ্যান এই চ্যাপ্টারটি। সন্দেহ নেই, ট্রেনিং চলাকালীন তাদের বেশ যত্নেই রাখা হত, কিন্তু প্রয়োজনে মানুষের জীবনের তুলনায় একটা চারপেয়ের জীবনের গুরুত্ব কোনটুকু, সে নিয়ে মানুষদের মনে কোনোকালেই কোনো দ্বিধাভাব ছিল না। হলফ করে বলতে পারি, জন্তুজানোয়ারদের ভালোবাসলে পড়তে পড়তে চোখে জল চলে আসবে। আসতে বাধ্য। যাই হোক, এই এপিক লেভেল কাজের জন্য মার্তা বোগদান্সকাকে কুর্নিশ করলাম। কোনো প্রশংসাই তার জন্য যথেষ্ট নয়। আশা করি, বইটা সম্পর্কে তাঁর বলা এই কথাগুলো মানুষকে ভাবাবে।

"I felt that the book would give me this very material way of showing the weight of this issue. I wanted to show how, in this really small amount of time, we have already gathered so much material and so many examples of animals being used, working for us, suffering, all these emotions that they felt. I wanted to make it somehow visible and tangible.”

শিফটার্স এখনও সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে না। আমি নিজেও একটা প্রাইভেট লিংকের মাধ্যমেই পেয়েছি। তবে শীঘ্রই পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। যারা জন্তুজানোয়ার সম্পর্কে ফোটো রিপোর্টাজ পড়তে আগ্রহী, বইটা মিস করবেন না। কয়েকটা ছবি দিলাম আপাতত।