জেকব লরেন্সের মাইগ্রেশন ও অন্যান্য সিরিজের কিছু ছবি। এক একটা দেখি আর কান্না চাপার চেষ্টা করি। মাত্র তেইশ বছর বয়সের একজন ছেলে, যে আর্টিস্ট হবে বলে সমস্ত বাধাবিপত্তিকে অতিক্রম করতে প্রস্তুত, সে কেন হুট করে আচমকা প্রথাগত পথ থেকে সরে দাঁড়িয়ে সিরিজ পেইন্টিং-এর কাজ বেছে নিল? ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান মাস্টার্সদের অনুকরণ করে 'সিঙ্গলস' আঁকলে কি একজন ব্ল্যাক আমেরিকানের জীবন বেশি সহজ হত না? অন্ততপক্ষে স্টুডেন্টশিপ তো জুটতই, অর্থও আসত!
আশি বছর আগের কথা, দুনিয়াটা তখন আরো কঠিন ছিল সন্দেহ নেই। একটা সিরিজ পেইন্টিং করে স্টোরিটেলিং এর যে ফরম্যাট পরবর্তীতে মডার্ন আর্টে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, একজন কালা আদমির জন্য তা প্রায় অভাবনীয় ছিল আঁকা। একটা দুটো ছবি নিয়ে নিন্দা হলেই সব কাজ জলে যাবে, এদিকে কেরিয়ারের শুরুতেই, জেকব এই সিরিজে ছবি এঁকেছেন ষাটটা।
জেকব লরেন্স এমন এক যুগান্তকারী শিল্পী, যিনি আমেরিকান ব্ল্যাকদের স্রেফ আমেরিকান বলে দেখতে জানতেন। সিভিল রাইটস মুভমেন্ট থেকে হার্লেম রেনেসাঁ... সব কিছুই তার কাছে আমেরিকার ইতিহাস হয়ে ধরা দিয়েছে। একের পর এক সিরিজ করেছেন, স্টোরিটেলিং ফরম্যাটের কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন একসময়। বলতেন, “I do not look upon
the story of the Blacks in America as a separate experience to the American culture but as a part of the American heritage and experience as a whole.”
হার্লেমের ছোটবেলা তাঁকে বাস্তবটা দেখতে শিখিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু ইমিগ্র্যান্ট দম্পতির সন্তান হয়েও তিনি পাশপাশি স্বপ্ন দেখতেও শিখেছেন। বাড়ির রোজনামচাই তাঁর তুলি কলমে ফুটে উঠত। মেক্সিকান মুরালিস্ট মুভমেন্ট নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত ছিলেন জ্যাকব, কিন্তু ন্যারেটিভ পেইন্টার হয়েও এক্সপ্রেসানিজম আর কিউবিজমে তাঁর দক্ষতা স্বতন্ত্র ও লক্ষণীয়। 'ওয়ার সিরিজে' তাঁর এই ডায়নামিক কিউবিজম আরো ভালো করে ধরা পড়ে।
জীবনের শেষ দিন অব্দি ছবি এঁকেছেন বাস্তবেই, ভরপুর রঙ দিয়ে, কঠোর বাস্তবের ছবি। দেখে মুগ্ধ হতে হয়, তারপর মুগ্ধতার আবেশ কাটিয়ে একটা বিষণ্ণতা চেপে ধরে। জেকবস তাঁর মনের রঙে ছবি এঁকে গেছেন চিরকাল, তখনও, যখন গ্রেট মাইগ্রেশনের বিভীষিকা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে সাদাকালো করে দিয়েছিল, এবং তখনও, যখন ক্যান্সারে মারা যাবেন বলে ডাক্টাররা তুলি ধরতে বারণ করে দিয়ছিল।
মাঝে মাঝে ভাবি, কী সব অসামান্য মানুষ জন্মেছেন আমাদের এই পৃথিবীতে! শুধু এদের কথা জানতে গেলেই তো সাত জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়। তবু আমরা নিজেকে মহান করার চেষ্টা চালাচ্ছি, একে ওকে খিস্তিয়ে সুখানুভব করছি, নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে হয় যুদ্ধের মাঠে নয় ফেসবুকে লড়াই চালাচ্ছি। মন খারাপই হয়, রাগও কম হয় না। তখন আমি গুগল আর্টসে গিয়ে ছবি দেখতে শুরু করি, আর্ট মিউজিয়ামে ভার্চুয়াল ট্যুর করে আসি। মন শান্ত করার দুর্দান্ত টেকনিক, শুধু নিজের মতো ছবি পেলেই হলে। কখনও না হয় ট্রাই করে দেখবেন।
যে বইয়ের কথা বলার :
Jacob Lawrence: The Migration Series
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন