শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩

জো-এর জাপান

ওপেনহাইমার দেখে আর তাঁর জীবন সম্পর্কে পড়ে যখন সবাই উচ্ছ্বসিত, তখন আমি একটা অন্য বই রিভিজিট করে ফেললাম। বইপত্র নিয়ে দীর্ঘ পোস্ট দিতে আজকাল আর ইচ্ছে করে না, ও আর পড়ে কতজন! কিন্তু জীবনের কোন সময়ে কী ভাবছিলাম, সেটা জার্নালিং করার বাসনাটা এখনও পুরোপুরি যায়নি। অতএব...থাক পোস্টটা। ডিজিটাল স্পেসে জায়গা জুড়ে থাকবে হাজারটা পোস্টের মধ্যে, ঠিক আর চারটে ছাপা বইয়ের মতোই অদরকারি, অর্থহীন। যাকগে...

ঘটনা হল, জাপানিরা যে আসলে মানুষের ছদ্মবেশে শয়তান, সে নিয়ে ছেলেটির মনে কোনো সন্দেহই ছিল না। কয়েক বছর আগে যখন সে কৈশোরের গণ্ডি পেরিয়েছিল, তখন থেকেই সে রেডিওতে শুনেছে, খবরের কাগজে পড়েছে যে জাপানিদের চেয়ে হতচ্ছাড়া প্রাণী ইহজগতে নেই। দেশনায়কদের বক্তৃতায় বারবার উঠে এসেছে সে কথা। আজ থেকে নয়, বেশ কয়েকবছর ধরেই এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল আমেরিকানদের মনে, আর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তো কথাই নেই। রাস্তায় মঙ্গোলিয়ান ধাঁচের চেহারা দেখলে নাকের পাটা ফুলে যায় ছেলেটির, ডাউনটাউনের কফিশপ বা শহরতলির ডাইনারে টেকো বুড়োদের উত্তপ্ত আলোচনা শুনে সেও জাপানিদের গালিগালাজ করে, টিভিতে জাপানি চক্রান্তের খবর দেখলে রাগে কাঁপতে থাকে। কী হাড়বজ্জাত এই বেঁটে জাপানিগুলো! এদের নিঃশেষ না করা পর্যন্ত তার শান্তি নেই। পারলে সে এখনই তাদের গোটা জাতিটাকেই কচুকাটা করে ফেলে! বিশ্বযুদ্ধ চলছে, এদের শিক্ষা দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। রেগেমেগে ছেলেটা ইউ এস মারিন কর্পসে নামই লিখিয়ে ফেলল। জাপানিদের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া না হলে তার আর চলছে না! বেচারি জানত না, বোঝাপড়া ঠিকই হবে, কিন্তু এই বোঝাপড়া তার গোটা জীবনকে বদলে রেখে দেবে।
ছেলেটার নাম জো। বাড়ি জন্সভিল। এক চিলতে মফস্বল, আমেরিকার ছোটখাটো টাউন যেমন হয় আর কি! ১৯২২ সালের কথা, সে সময় এই টাউনগুলোর একটা নিজস্ব আমেজ ছিল, ঠিক ভারতের মফস্বলি টাউনের মতোই। ছোটবেলা থেকেই জো বুদ্ধিমান, তার দেখার চোখ আর অবজারভেশন স্কিলও ছিল চমৎকার। কিন্তু তার শৈশব আর যৌবনের মাঝে কেটে যাওয়া কয়েকটা বছরের মধ্যে দিনকাল বদলে গিয়েছে, মফস্বলের চেহারা বদলেছে, দেশের রাজনীতি আর মানুষজনের মানসিকতাতেও বদল এসেছে কম নয়। যে জো ছোটবেলায় একটা ফুল, প্রজাপতি বা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষজনের দিকে চেয়ে কল্পনায় বুঁদ হয়ে থাকত, এখন সে বন্দুক চায়। সেই বন্দুকের গুলি দিয়ে জাপানিদের নিঃশেষ করতে চায়। জো-এর আশা, তাকে খুব তাড়াতাড়ি ডেপুটেশনে পাঠানো হবে। সে যে জাপানিদের সঙ্গে লড়াই করতে আগ্রহী, সেটা সে সিনিয়রদের জানিয়েও রেখেছে। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘুরল অন্যদিকে। সরাসরি যুদ্ধে পাঠানোর আগে ম্যারিন কর্পসরা তাকে পাঠিয়ে দিলেন ফটোগ্রাফি স্কুলে। যুদ্ধের সময়ে একজন সামরিক বাহিনীর ফোটোগ্রাফার রাখতেই হয় ডকুমেন্টেশনের জন্য, আর দেখেশুনে তারা বুঝেছিলেন, জো-এর চেয়ে ভালো অবজারভেশন স্কিল আর কারো কাছেই নেই। জো দমে গেল বটে, কিন্তু হাল ছাড়ল না। জাপানে তাকে পাঠানোর জন্য সে আর্জি দিয়ে রাখল সরকারের কাছে, প্রতিমাসে ওপরওয়ালার দপ্তরে গিয়ে ঘ্যানঘ্যান করে সে। কবে তাকে জাপানে পাঠানো হবে? সে জাপানিদের কচুকাটা করবেই, আজ নয় কাল, এই ভাবনা সঙ্গে নিয়েই সে জীবন কাটাতে লাগল। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ক্রমে আরো নৃশংস, আরো ভয়ানক হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন মর্মান্তিক সব খবর আসে। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, ঘরছাড়া হচ্ছেন তারও বেশি। এসব দেখেশুনে জো-এর রাগ আরো বেড়ে যায়। হিটলার না হয় বদ্ধ উন্মাদ, কিন্তু ওই বেঁটে জাপানিগুলো অতদূর থেকে এসে পার্ল হার্বারে বোমা ফেলে যায়, আমেরিকার লোকজনদের চোখ রাঙায়, তাদের এত সাহস? একবার শুধু হাতের মুঠোয় পাক তাদের, জাপানিদের বাপের নাম ভুলিয়ে ছাড়বে সে। এখন শুধু সুযোগের অপেক্ষা।
অবশেষে সুযোগ যখন এল, তখন বিশ্বযুদ্ধ শেষ। ১৯৪৫ সালের আঠাশে সেপ্টেম্বর, আমেরিকার প্রথম ইউনিট নাগাসাকি থেকে দশ মাইল দূরে চড়াও হল। জো-ও এসেছে তাদের সঙ্গে। কিন্তু শত্রুকে কচুকাটা করবে যে, শত্রুই তো নেই। দু দুটো পরমাণু বোমা ফেলা হয়েছে জাপানে, গোটা দেশটাই ধ্বসে গিয়েছে। জো আনন্দে আটখানা, ওপেনহাইমার তখন তার হিরো। কিন্তু গুলিগোলা চালানোর প্রয়োজন ফুরিয়েছে, এই যা দুঃখ। যাকগে, এই ত্যাঁদড় জাপানিদের ক্যামেরা দিয়েই শ্যুট করবে সে। ক্যামেরা নিয়ে লেগে পড়ল সে। সুপেরিয়রের আদেশও তাই। শহরের ছবি তুলতে হবে, ছবি তুলতে হবে ধ্বংসপ্রাপ্ত শত্রুঘাঁটির। এখন আর কোনও ভয় নেই, কোনও বিপদ নেই। দুটো ক্যামেরা দু কাঁধে নিয়ে জো রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। কিন্তু কোথায় শহর, কোথায় ঘাঁটি? একটা পাখি নেই, একটা খড়কুটো নেই, বাতাসও যেন নেই, বোঝা মুশকিল যে এক মাস আগে এখানে একটা জীবন্ত শহর ছিল। আছে শুধু ধ্বংসস্তূপ। সেই ধ্বংসস্তুপের ভিতর দিয়ে তেজস্ক্রিয়নিরোধী পোশাক পরে এগিয়ে চলেছে জো। মাঝেমধ্যে চোখেপড়ে ছিন্নভিন্ন পোড়া দেহের অংশ, ধোঁয়া ওঠা আসবাবপত্র, ছাইগাদার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া টেডিবিয়ার বা চিরুনি, মাথার ফিতে, বুদ্ধের মূর্তি, পোড়া চামড়ার কার্পেট, অস্থিসর্বস্ব চরাচর। কালো। ধূসর। জনশুন্য। তারই মধ্যে কিছু স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে, হাত পা মাথা জোড়া করে মৃতদেহ একত্র করে সমাধিস্থ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের। তারাও শূন্য চোখে ঘুরছে, কিছুই বুঝতে পারছে না। জো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল, ছবি তুলতে ভুলে গেছে সে। জাপানি শত্রুরা নিকেশ হয়েছে, নিকেশ হয়েছে তাদের শহরও। কিন্তু জো বুঝতে পারল না, আচমকা তার মাথা কেন ঝিমঝিম করছে, কেন তার গলার কাছটা শুকনো লাগছে, বুকে চিনচিনে ব্যাথা, তার চোখ বেয়ে জলই বা গড়াচ্ছে কেন?
পরবর্তী সাতমাস জো জাপানে কাটিয়ে দিল। যুদ্ধ আর মৃত্যু সম্পর্কে সে যে আগে কিছুই জানত না, এই সাত মাসে সে বারবার অনুভব করল এই সত্যিটা। ইউনিটের লোকজন চলে গিয়েছে, আধিকারিক ফটোগ্রাফির দায় কাঁধে নিয়ে শহর আর গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে জো একা। নাগাসাকি আর হিরোশিমা ছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলে যেতে হয়, যেখানে এমনি হাজার হাজার বোমা ফেলেছে তার দেশ। কোত্থেকে একটা টাট্টু ঘোড়া জোগাড় করেছে সে, তার ওপর দুটো ক্যামেরা বসিয়ে সে এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায়। রাতে স্লিপিং ব্যাগ বিছিয়ে শোয় একটা ভাঙা বাড়ির মধ্যে। পরদিন সকালে ওঠে যখন, গতকালের কথা মনে পড়ে প্রথমেই। তখন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, সর্বক্ষণ যেন বুকের ওপর একটা ভারী পাথর বসিয়ে রেখেছে কেউ। আবার ক্যামেরা তুলে বেরিয়ে পড়ে সে।
কে বলবে এখানে এককালে লোকালয় ছিল? ছিমছাম সুন্দর সব বাড়ি, মন্দির আর গির্জা...এখন সেখানে কিচ্ছু নেই। ভাঙা রঙিন টিলার ওপর মৃত মানুষের দীর্ঘশ্বাস শোনা যায়। মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে অনাথ শিশুদের দল, হারিয়ে যাওয়া পরিজন বা মৃত বাবামায়ের জন্য ছাইগাদা হাতড়াচ্ছে, খাবার খুঁজছে। অনেকের পিঠে বাঁধা তাদের ছোট ভাই বা বোন, হয়তো তাদের কয়েক মাস বয়স, এদের অনেকেই চিরঘুমে তলিয়ে গিয়েছে। তাদের জোর করে বাচ্চাদের পিঠ থেকে নামিয়ে আগুনে দাহ করে স্বেচ্ছাসেবীরা। সেই চিতার দিকে তাকিয়ে অপলক তাকিয়ে থাকে বাচ্চাগুলো। তাদের নিজেদের হাতেপায়েও বিষিয়ে যাওয়া ঘা, তেজস্ক্রিয়তার ফলে এদের সবাই কিছুদিনের মধ্যে মারা যাবে। শকুনের দল কী করে যেন বুঝে গিয়েছে, তারা এই ভাগাড়ের মধ্যে খাদ্যসন্ধান করে না। মাঝেমধ্যে আক্রান্তদের ছবি তুলতে, সাক্ষাৎকার নিতে হাসপাতালে যায় জো, জাপানিদের ফ্যালফ্যাল দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে, তাদের কথা শোনে মন দিয়ে। তেজস্ক্রিয়তার ফলে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছে, মারা যাচ্ছে, বাকিরা বেঁচে আছে না বেঁচে থাকার মতোই। এরাই সেই জাহান্নমের সওদাগর? মানুষের ছদ্মবেশে মনস্টার? কিন্তু এরা তো নিতান্ত সাধারণ মানুষ, অনেকে জানেই না যুদ্ধ কেন লেগেছিল, আমেরিকার নামই শোনেনি কতলোক! সাধারণ কৃষক, দোকানি, খেলনার কারিগর, দিনমজুর... জো মাঝেমধ্যে ক্যামেরা বন্ধ করে চোখের জল মোছে, তার মাথার মধ্যে সব ঘোঁট পাকিয়ে গেছে। এই সাতমাসের অভিজ্ঞতা তাকে বুঝিয়ে দিল, রাজনৈতিক ফায়দার জন্য একটা গোটা দেশ, একটা গোটা জাতির মানুষকে ভিলেন বানিয়ে দেওয়া যায়। জো বুঝল, সে কতটা অবোধ ছিল, কতটা বোকা ছিল! পঁচাশি বছরের জীবনে একটা রাতও এরপর সে শান্তিতে ঘুমোতে পারেনি, বারবার এই সাত মাসে দেখা দৃশ্যের বিভীষিকা তাকে দুঃস্বপ্ন দেখিয়ে জাগিয়ে তুলেছে। সতর্কতা অবলম্বন না করে জাপানে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে এসে একটা গুরুতর রোগ বাধিয়ে ফেলল সে, যে রোগ তাকে সারাজীবন নিস্তার দেবে না। কিন্তু শরীরের রোগের চেয়ে মনের রোগ আরো অনেক বেশি বেদনাদায়ক, অনেক বেশি গভীর।
দেশে ফিরে এসে আধিকারিক ছবি আর নথিপত্র সরকারের হাতে তুলে দিল সে। কিন্তু, সরকারি আর্কাইভে সব রাখা যায় না, রাখা সম্ভবও নয়। তাই, জো খুব সাবধানে তিনশোটা ছবির নিগেটিভ একটা বাক্সে লুকিয়ে রাখল। সেই বাক্সটা তুলে রাখল সেলারের মধ্যে। যাতে কারো হাত না পড়ে। জো ভেবেছিল, এই ছবিগুলো না দেখলে তার হারিয়ে যাওয়া ঘুম ফিরে আসবে, ফিরে আসবে জীবনের শান্তিও। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই সে বুঝে গেল, জাপানের এই যাত্রা তাকে আমূল বদলে ফেলেছে, বদলে ফেলেছে সারাজীবনের মতো। চোখ বন্ধ করলে সে পিঠে মৃত ভাইয়ের মৃতদেহ বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখতে পায়, ঘুমোতে গেলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত মানুষের দগদগে ঘা। 'দ্য বয়' বলে যে ঘোড়াটিকে সঙ্গে নিয়ে সে কয়েকমাস কাটিয়েছিল, সেই ঘোড়াটার কথা মনে পড়ে যায় ড্রাইভ করতে হলে। এখন জাপানিদের সম্পর্কে বাঁকা মন্তব্য শুনলে তার রক্ত গরম হয় না, বরং সে করুণার চোখে মন্তব্যকারীদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সময় বয়ে যায়। ক্রমে জো ফোটোজার্নালিস্ট হিসেবে নাম করে ফেলে, ডকুমেন্টারিয়ান আর ওয়ার ফোটোগ্রাফার হিসেবে প্রায় একটা ইন্সটিটিউশন বলে মান্যতা দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু কোথাও না কোথাও, জো তখনও বহু বছর আগে কাটানো যুদ্ধপরবর্তী জাপানেই দিন কাটাচ্ছে। পরমাণু বোমা ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে দেওয়া তার মতবাদ নিয়ে সমাজমাধ্যম উত্তাল, কিন্তু জো নির্বিকার। যে জাপানিদের সে এককালে মনেপ্রাণে ঘৃণা করত, বাকি জীবনটা তাদের সমাজ ও সংস্কৃতি বোঝার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে জো, এমনকি সে বিয়েও করেছে কিমিকো সাকাই বলে এক জাপানিকে।
১৯৮৮ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর কেন্টাকিকে ভ্রমণ করতে গিয়ে একটা ছবির মুখোমুখি পড়ে জো। তখন আর তিনি শুধুই জো নন, বিশ্ববিখ্যাত ফোটোগ্রাফার জো অ ডনেল। ছবিটা সিস্টার জিন ডবার এঁকেছেন। সেখানে যীশুর পরিচিত ভঙ্গি একই, কিন্তু ক্রসে চড়ানো তাঁর দেহটা পুড়ে গেছে। জিন ছবিটি এঁকেছিলেন হিরোশিমা নাগাসাকির বিপর্যয়ে মৃত মানুষের উদ্দেশে। জো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন ছবিটার দিকে, অজস্র দৃশ্য মাথায় ভিড় করে এল তাঁর। যখন কেন্টাকি থেকে ফিরলেন, সঙ্গে সেই ছবি। বাড়ি ফিরেই সেলার থেকে সেই বাক্সটা বের করলেন জো। অর্ধেক শতাব্দী পরও নিগেটিভগুলো অক্ষত অবস্থায় আছে। সার্বজনীন সৎকার গৃহে অপেক্ষারত শিশুরা, ভেঙে পড়া স্কুলের ক্লাসরুমে ছাত্রীরা পড়ছে, খালি পায়ে রাস্তা বানাচ্ছে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে... দেখে চোখের জল সামলানো যায় না। জো দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি ভুল করেছিলেন। এ জিনিস গোপন করার নয়। মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের জঘন্যতম অপরাধের এই ছবি জনসমক্ষে এলেই হয়তো ভালো। মানুষ দেখুক, বুঝুক... যুদ্ধ আসলে কী? পরবর্তীতে কোনো ফোটোগ্রাফারকে যেন এরকম ছবি দেখতে না হয়! ১৯৮৯ সালে সেই তিনশোটা ছবি নিয়ে প্রকাশিত হয় 'Japan 1945 : U. S. marine's photographs from ground zero.' প্রকাশিত হওয়া মাত্র সাড়া ফেলে দেয় ছবিগুলো। জো ও ডনেল তখন কিচ্ছু বলেননি, শেষ জীবনে একবার এক সাংবাদিক তাঁর কাছে পিঠে ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছবিটা দেখিয়ে কিছু জানতে চান। জো বলেছিলেন--
“I saw a boy about ten years old walking by. He was carrying a baby on his back.
In those days in Japan, we often saw children playing with their little brothers or sisters on their backs, but this boy was clearly different.
I could see that he had come to this place for a serious reason. He was wearing no shoes.
His face was hard.
The little head was tipped back as if the baby were fast asleep. The boy stood there for five or ten minutes”.
“The men in white masks walked over to him and quietly began to take off the rope that was holding the baby.
That is when I saw that the baby was already dead.
The men held the body by the hands and feet and placed it on the fire.
The boy stood there straight without moving, watching the flames.
He was biting his lower lip so hard that it shone with blood.
The flame burned low like the sun going down.
The boy turned around and walked silently away”.
সাংবাদিক থতমত খেয়ে যান। কিছুক্ষণ চুপ করে অবশেষে বলেন, "আচ্ছা, জাপান আসলে কেমন স্যার? আমরা ওদের চরিত্রটা ঠিক বুঝতে পারি না।"
জো কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন। তারপর আস্তে আস্তে বলেছিলেন, "ছবিতে দাঁড়িয়ে আছে যে ছেলেটি, তার চোখটা দেখেছ? ওই চোখের দৃঢ়তা, ওই চোখের দৃষ্টির আড়ালে থাকা জেদ আর ভালোবাসা দেখেছ! ওইটাই জাপান!"
জো মারা গিয়েছেন অনেক আগেই। বইটা রয়ে গিয়েছে, রয়ে গিয়েছে ছবিগুলো। আর তার সেই কথা। এখন জাপানকে দেখলে মাঝেমধ্যে কথাটা মনে পড়ে যায়।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন