আফ্রিকান স্পেকুলেটিভ সাহিত্য নিয়ে জয়ঢাক প্রকাশন একটা উচ্চাকাঙ্খী কাজ করেছে ২০২৩ সালে। 'বাংলায় এই প্রথম' বা 'আসতে চলেছে বিশাল চমক' টাইপ স্লোগান দেওয়ার কোনও মানে হয় না, কিন্তু আমার ধারণা স্কেলের দিক থেকে এই কাজটা সত্যিই একটা মাইলস্টোন। চার বছরেরও আগে শুরু হওয়া এই প্রজেক্টে (যখন প্রজেক্ট বলে কিছু ছিলই না) প্রায় ছশোটা মেলই করেছি আমি। কমপক্ষে তেরোটা দেশের চল্লিশজন লেখক অনুবাদক ও সম্পাদক যুক্ত ছিলেন এই কাজে। তার চেয়েও বড় কথা, এটা শুধুই একটা বিচ্ছিন্ন অনুবাদ সংকলন নয়, বরং একটা কন্টিনিউড কালচার এক্সচেঞ্জ প্রজেক্টের প্রথম পদক্ষেপ।
খাতায় কলমে এই সংকলনের প্রথম খণ্ডের সম্পাদনার দায়িত্ব ছিল আমার। দ্বিতীয় খণ্ডের সম্পাদক জনপ্রিয় স্পেকুলেটিভ ফিকশন লেখক শ্রী দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য। তবে আমরা একা ছিলাম না, কারণ এই প্রোজেক্টটাও ছিল আর চারটে অনুবাদ সংকলনের চেয়ে আলাদা।সঙ্গে ছিলেন পুরস্কারপ্রাপ্ত আফ্রিকান লেখক ওলে তালাবি, এই প্রজেক্টের প্রধান সম্পাদক। বিদেশি গল্প নিয়ে অনুবাদ আগেও হয়েছে, পরেও হবে। তবে এই সংকলনে ঠিক কী কী আলাদা হল সেটা ডকুমেন্টেশনের জন্য খুব সংক্ষেপে জানিয়ে রাখলাম।
১) বিশ্বসাহিত্যে আফ্রিকান স্পেকুলেটিভ আজকাল যে উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে, তাতে এই জনরার লেখকদের মোটেও অগ্রাহ্য করা চলে না। তাঁদের অনেকেই বিপুল জনপ্রিয়, আফ্রিকা বাদেও ইউরোপ, আমেরিকা, চিন ও জাপানে তাঁদের লেখা নিয়মিত অনুবাদ হয়, পাঠকও কম নেই। কয়েক বছর ধরে আমি এই ধারার লেখা পড়েছি, এখনও পড়ছি, আর আফ্রিকার লেখকদের কলমের গুণে মুগ্ধ হচ্ছি বারবার। তাই ভেবেছিলাম, যদি বাংলায় এই গল্পগুলো অনুবাদ করা যায়! তবে অনুবাদ করা মানে অবশ্য আমি অনুমতি নিয়ে অনুবাদ করাই বুঝি, হুট করে নেট থেকে বা বই থেকে গল্প তুলে অনুবাদ করাটা আমার মূল্যবোধে আটকায়। তাই লেখকদের ব্যাপারটা বোঝানো এবং রাইটস হস্তান্তরণ করাটা প্রধান সমস্যা ছিল। আমি উটকো একজন পাঠক, প্রকাশক তো নইই। সে সময় জানতামও না ভবিষ্যতে জয়ঢাক এই বই করতে আগ্রহী হবে, বা আমাকে সম্পাদনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। শুধু চেয়েছিলাম, লেখাগুলো বাংলা পাঠকদের কাছে পৌঁছাক। গত চার আড়াই বছরে প্রায় আট দশজন লেখকের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে, কিন্তু সত্যি সত্যি যখন কাজটা বাস্তবায়িত হওয়ার জায়গায় আসে, তখন গিয়ে অবশেষে দেবজ্যোতিদাকে ব্যাপারটা জানিয়েছিলাম।
'জয়ঢাক প্রকাশন কি কন্টেম্পোরারি আফ্রিকান স্পেকুলেটিভ রাইটারদের কাজ অনুবাদ করতে ইচ্ছুক?'
গ্রিন সিগন্যাল এসেছিল মুহুর্তের মধ্যে, কিন্তু তারপরেও প্রচুর বাধাবিপত্তি এসেছে। বেশ কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পর অবশেষে ব্যাপারটার ফাইনাল ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হয়। ভেবেছিলাম, এইবার মানেমানে কেটে পড়ব, কিন্তু সে আর হল না। দেবজ্যোতিদা আমাকেই সম্পাদনার দায়িত্ব দিলেন। কাজটা ইন্টারন্যাশনাল কোলাবরেশন হিসেবে নেওয়াটাই প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, তাই ওলে অবশ্যই সঙ্গে ছিলেন। একটা এ ধরনের কাজে কালচার এক্সচেঞ্জ না হলে, বিদেশি সাহিত্য আর বাংলা অনুবাদ নিয়ে সত্যিকারের আগ্রহ না থাকলে শুধু রাইটস বিনিময় করে কী লাভ?
২) এই বইটা কেবলমাত্র একটা ট্রান্সলেশন অ্যান্থলজি নয়, প্রোজেক্টটার মাধ্যমে আমি বাংলা সাহিত্য ও বইবাজার সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি বিদেশি সাহিত্যিক ও সম্পাদকদের। অনেক লেখককে নেওয়া সম্ভব হয়নি প্রথম কাজে, কিন্তু গত দু' বছরে গোটা আফ্রিকার প্রায় কুড়ি তিরিশজন লেখক সম্পাদককে আমি সমসাময়িক বাংলা ও ভারতীয় স্পেকুলেটিভ সাহিত্য সম্পর্কে ক্র্যাশ কোর্স দিয়েছি বলা যায় (তাই বলে এ নিয়ে আমি খুব বেশি কিছু জানি বলে দাবী করছি না, উল্টে কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য নিয়ে আমার পড়াশোনা খুবই কম) অনীশ দেব থেকে মিমি মন্ডল বা দীপেনবাবু, রণেন ঘোষ থেকে সোহম গুহ, অদ্রীশ বর্ধন থেকে সুমিত বর্ধন, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য থেকে সৌম্যসুন্দর মুখোপাধ্যায়, সত্যজিৎ থেকে অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, সৌভিক চক্রবর্তী থেকে সৌরভ ঘোষ, ইন্দ্রপ্রমিত দাস থেকে গৌতম ভাটিয়া, ফ্যান্টাস্টিক থেকে কল্পবিশ্ব। স্বাভাবিকভাবেই সম্পাদক বা পত্রিকাগুলোর নাম বলব না, কিন্তু এইটুকু বলতে পারি, আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে এদের অনেকের লেখার লিংক শেয়ার করেছি এদের সঙ্গে, প্রয়োজনে মাল্টিলিংগুয়াল অ্যান্থোলজির জন্য বিদেশি লেখকদের গল্প বাংলায় অনুবাদও করে দিয়েছি। (অনেক সম্পাদক জিজ্ঞেস করতেন, তুমি নিজে বেশি বেশি করে কল্পবিজ্ঞান লেখো না কেন? তখন নিজেই বুঝতাম না কী বলব😁)
কাজটা জরুরি গ্রাউন্ডওয়ার্ক হিসেবেই ধরেছিলাম, কারণ একটা বই করে বসে থাকলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। আর বদলাতে হলে এই কাজগুলো করা প্রয়োজন। কান্নাকাটি করে কিছুই হবে না। বলতে পারি, প্রথম পদক্ষেপে খুব একটা হতাশ হইনি। যারা অনুমতি দিয়েছেন, প্রায় প্রত্যেকেই প্রজেক্ট চলাকালীন কন্ট্যাক্টে ছিলেন, আপডেট নিচ্ছিলেন অনেকেই। এই অ্যাক্টিভ এঙ্গেজমেন্ট অন্য প্রজেক্টে হয় কিনা আমার জানা নেই। নো ওয়ান ইন উইন্টার স্লিপ! আর কী চাই? আশা করি, আমি সক্রিয়ভাবে যুক্ত না থাকলেও জয়ঢাক পরবর্তীতে এ ধরনের কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবে।
৩) সম্পাদনার দায়িত্ব পাওয়ার পরেই ঠিক করেছিলাম, আমি নিজে কোনও গল্পের অনুবাদ করব না। (দ্বিতীয় খণ্ডে অবশ্য অনুবাদে হাত দিতে হয়েছিল, সম্পাদনার গুরুদায়িত্ব ছিল না) কল্পবিজ্ঞানে মৌলিক লেখা বা অনুবাদ করার অভিজ্ঞতা যে খুব একটা নেই, সেটা স্বীকার করাই ভালো। এমন একটা কাজে যোগ্যতাটাই প্রথম এবং শেষ শর্ত হওয়া উচিত। টিম নির্বাচনে যেটুকু আমার ইনপুট ছিল, তাতে কোনও পার্সোনাল ইমোশন বা দাদাইবাসা/দিদিয়াবাসা মার্কা বায়াস দেখাতে যাইনি। বিশেষ চেনাজানা ছিল না অনুবাদকদের সঙ্গে, অনেকের সঙ্গে তো আমি এই প্রথম কথা বলেছি। কিন্তু কথা না হলেও তাঁদের কাজের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম ঠিকই। কে কোন গল্প অনুবাদ করবেন, সেটাও ঠিক করেছি তাঁদের ব্যক্তিগত পছন্দ, দক্ষতা ও আগের কাজ দেখে। এখন বলতেই পারি, অনুবাদকরা অসামান্য কাজ করেছেন। হ্যাঁ, পাঠকদের ভালো মন্দ লাগা নিয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে, সে অন্য বিষয়।
৪) লেখকরা সবাই যাতে অনুবাদক ও তাঁদের প্রোফাইল সম্পর্কে অবগত থাকেন, সে কাজটা আমি প্রথমেই করে দিয়েছিলাম। সময়ে সময়ে আপডেটও দিয়েছি সবাইকে। অনুবাদকরাও ইচ্ছে করলে লেখককে যোগাযোগ করতে পারবেন, সেও নির্দিষ্ট করা হয়েছিল হয়েছিল। পাশাপাশি আফ্রিকার অন্যতম সম্পাদককে প্রকাশনার সমস্ত ওয়ার্ক সিডিউল জানানো হয়েছে, এবং সম্মতিও নেওয়া হয়েছে প্রতিটা পদক্ষেপে। হ্যাঁ, বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, কাজ শুরু হওয়ার আগেই প্রত্যেক লেখকের সঙ্গে আইনি চুক্তি করা হয়েছে, প্রয়োজনে দীর্ঘ নেগোসিয়েশনও হয়েছে বইকি। কিন্তু যে জিনিসটা নিজের তরফ থেকে গোড়া থেকেই এড়িয়ে যেতে চেয়েছি সেটা হল অপেশাদার অ্যাটিটিউড। বড় ইন্ডাস্ট্রি না হতে পারে, বড় প্রকাশক না হতে পারে, কিন্তু বাংলা ভাষার কাজগুলো নিয়ে আমাদের ভিশনটুকু অন্তত যেন বড় হয়! এইটুকু যেন ভুলে না যাই আমরা কেউই।
এই সংকলন দুটির এক একটা গল্প এক একটা বোমা বটেক। শুধু নেবুলা, হিউগো, নোম্মো, কেইন মনোনীত/বিজয়ী গল্প বলে নয়, বরং গল্পের চরিত্রের কথা ভেবেই এটা বলা। এখানে যত না বিজ্ঞান আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি করে আছে মানুষ। মানুষের ভয়, মানুষের দ্বিধা, মানুষের রাগ, মানুষের নিরাসক্তি, মানুষের অসহায়তা, মানুষের মনস্তত্ত্ব, মানুষের জেদ... এই বইয়ের প্রতিটা গল্প আফ্রিকার মানুষের কান্না রক্ত ঘাম দিয়ে লেখা। কোথাও সেটা খুব প্রমিনেন্ট, কোথাও অদৃশ্য। কিন্তু এই সততাটা অনুভব করতে পারবেন সকলেই। গল্পগুলো মন দিয়ে পড়লে মাথা ঘোরা তো দূর, গোটা পৃথিবীটাই উল্টোদিকে ঘুরে যেতে পারে।
বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যের দিক থেকে দ্বিতীয় খণ্ডটা খানিকটা বেশি নম্বর অবশ্যই পাবে। উগাণ্ডা, নাইজিরিয়া, কেনিয়া, সেনেগল, গাম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বোটসওয়ানা আর মিশরের এই এগারোজন লেখক কতভাবে স্পেকুলেটিভ ফিকশনকে ব্যবহার করেছেন, কল্পনা ও বাস্তবকে কী অসামান্য দক্ষতায় মেনস্ট্রিম সাহিত্যে নিয়ে এসেছেন, বিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসিকে হাতিয়ার করে কী সাবলীলভাবে তৎকালীন সমাজ ও মনুষ্যত্বের গল্প বলে গিয়েছেন, তা পড়লে বার বার চমকে উঠতে হয়, মুগ্ধ হতে হয়। গল্প নির্বাচনের সময় থেকে আজ পর্যন্ত সেই মুগ্ধতা বেড়েছে বই কমেনি।
আর লেখক সূচি! তাঁদের নিয়ে কথা বলতে গেলে তো আলাদা প্রবন্ধ লিখতে হবে! বলতে বাধা নেই, এত বড় বড় সাহিত্যিকদের কাছ থেকে অফিসিয়াল অনুমতি নিয়ে গল্পগুলো অনুবাদ করা বড় সহজ ছিল না। তবে পেশাদারভাবে কাজটার নিষ্পত্তি হল বলে আমি খুশি। বাংলায় অনুবাদ করতে গেলে কপিরাইটের পরোয়া অনেকেই করে না, সেটা দুর্ভাগ্যজনকই বটে। ওলে তালাবি আর জয়ঢাক টিম তো যথাসম্ভব সাহায্য করেছেন ঠিকই, মূল লেখক ও তাঁদের লিটারারি এজেন্টদের কাছেও কৃতজ্ঞ রইলাম। মার্ভেলের জেসিকা জোন্সের সিরিজের প্রধান লেখিকা ও ফিনান্সিয়াল ফিউচারের বিশেষজ্ঞ স্যাম বেকবেসিঞ্জার আছেন, একেপকি আছেন, নিক উড আছেন, আফ্রিকান স্পেকুলেটিভে ঝড় তোলা লেখক মামে ডিয়েনে আছেন। জে এম কোয়েটজির স্নেহধন্য ছাত্রী ও বিশ্বসাহিত্যে তুমুল আলোচিত হেনরিয়েটা রোজ-ইন্স আছেন তাঁর একটি অসামান্য পুরস্কার প্রাপ্ত গল্প নিয়ে, সমসাময়িক সময়ে 'শাইনিং গার্লস' লিখে প্রায় সেলেব হয়ে যাওয়া লরেন বিউকসও আছেন। অ্যাপল টিভি 'শাইনিং গার্লস' নিয়ে সিরিজ করার পর তাঁর খ্যাতি এখন সারা দুনিয়ায়। স্টিফেন কিং থেকে নীল গাইমান, সবাই তাঁর লেখার তারিফ করেছেন একসুরে।
অনুবাদক সূচিও চমকে দেওয়ার মতো। যশোধরা(রায়চৌধুরী) দি ও সৈকত (মুখোপাধ্যায়) দার পাশাপাশি এই সময়ের সেরা কিছু অনুবাদক এই গল্পগুলো বাংলায় অনুবাদ করেছেন। আই অ্যাম অন ক্লাউড নাইন। ভাগ্যিস বছর চারেক আগে আমার মাথায় পোকা কামড়েছিল কাজটা করার।
যে কথাটা না বললেই নয়, সেটা হল, দয়া করে কেউ শুধু প্রচ্ছদ ভালো লেগেছে বলেই বা আফ্রিকার গল্প শুনেই বই কেনার সিদ্ধান্ত নেবেন না। শিল্পী সুবিনয় দাস দুই খণ্ডেই দারুণ প্রচ্ছদ করেছেন, পুস্তানির কাজও অসামান্য, কিন্তু সেই ছবিগুলোই কেবল মূল আকর্ষণ না হলেই ভালো। এই দুটো সংকলনে থাকা গল্পগুলো শুধুই আমাদের চেনা প্লটভিত্তিক 'গল্প' নয়, সাহিত্যসৃষ্টির বিভিন্ন হাতিয়ারকে কাজে লাগিয়ে, ভাষা-ফর্ম-ক্রাফট দিয়ে বুনে তোলা এক একটা বক্তব্য। অসম্ভব প্রাসঙ্গিক, ভীষণ ব্যক্তিগত। প্রায় প্রতিটা গল্প আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে, এক একটা গল্প নিয়ে অনলাইন ফোরামে বছরের পর বছর আলোচনা চলেছে, তা এমনি এমনি নয়। কিন্তু এ-ও জানি, বাংলার পাঠকদের কাছে এই ঘরানার গল্প এখনও খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি, সেটা অস্বীকার না করাই ভালো। একটা গল্পকে ভালো বা মন্দ বলার জন্য যে সমস্ত প্যারামিটার আছে, তার অনেকগুলোর সঙ্গে আমাদের এখনও সেভাবে পরিচয় হয়নি। আচমকা নতুন জিনিস পাতে পড়লেই যে সবাই সেটা একইভাবে অ্যাপ্রিসিয়েট করতে পারবে, সেটা জরুরি নয়। ইতালো কালভিনোর উপন্যাস পড়ে প্রথমে অনেকেই দুরছাই করেছে, গিবেরিশ আর ইন্টারেক্টিভ সাহিত্যকে পাঠকের নিন্দেমন্দ শুনতে হয়েছে, এমনকি প্রাপ্তমনস্ক গ্রাফিক নভেল যে সত্যিকারের সাহিত্য হতে পারে, সে কথা এস্ট্যাবলিশ হতে এক শতাব্দী পেরিয়ে গিয়েছে। এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। আমার এক পরিচিত সাহিত্যিক বন্ধু দুনিয়ারাজ্যের বই পড়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, কিন্তু 'পার্সেপলিস' বা 'প্যালেস্তাইন' এর মতো সাড়াজাগানো গ্রাফিক নভেল পড়েও তাঁর ওই ফর্মটা ঠিক পছন্দ হয় না। মাঝে মাঝে আমার হাতেও এমন এক একটা বই হাতে আসে, প্রচুর নামডাক থাকলেও সেগুলো পড়তে হিমশিম খেয়ে যেতে হয়। মাথার চুল ছিঁড়তে হয় এই ভেবে যে, এই লেখাটা নিয়ে এত হইহই কেন?
এই সূত্রে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। শুনেছিলাম গুলজার প্রথম যখন অপেরা শুনতে গিয়েছিলেন, সেদিন তাঁর বিরক্তই লেগেছিল, কিছুই বুঝতে পারেননি। কিন্তু আর সকলের মতো তিনি অপেরারা ব্যাপারটা নাকচ করে দেননি আগেভাগে। এত এত শ্রোতা কেন সঙ্গীতের এই ফর্মটাকে পছন্দ করেন, সেটা জানার সদিচ্ছা তাঁর ছিল। তাই বিদেশে থাকাকালীন নিয়মিত অপেরা শুনেছেন, সে নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, যতদিন না এই অজানা শিল্পমাধ্যম তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করে। একসময় গুলজার অপেরাকে ভালোবেসেছেন। কেউ তাঁকে জোর করেনি এত সব করতে, নতুন জিনিসকে বোঝার আর নিজের চিন্তাভাবনার প্রসারতাকে বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তাঁকে নিজেই নিতে হয়েছিল। এইজন্যই তিনি গুলজার।
আমরা কেউই সবজান্তা নই। সবাই এখনও শিখছি। তবে নতুন জিনিস শেখার ও অ্যাপ্রিসিয়েট করার ইচ্ছেটুকু, ওই আগ্রহটুকু অন্তত বজায় থাকুক, সেটাই প্রার্থনা। স্পুনফীড করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। দেশবিদেশের স্পেকুলেটিভ ফিকশনের অনুরাগীদের এই বই ভালো লাগবে, সে বিশ্বাস আমাদের আছে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত নতুন পাঠকদের কয়েকজনের মনেও যদি কয়েকজনের মধ্যেও এই লেখাগুলো, এই জনরা সম্পর্কে ইনকুইজিটিভনেসটুকু জাগিয়ে তোলা যায়, কেউ যদি এই এই বইটা পড়ে নেটে গিয়ে অন্যান্য কিছু গল্প পড়েন, আমাজন থেকে হেনরিয়েটা রোজ-ইন্স বা ওলে তালাবির একটা বই আনিয়ে পড়েন, তাহলেই আমাদের সমস্ত পরিশ্রম সার্থক হবে।
লেখক ও অনুবাদক সূচী
১. আগামী রাত্রির উপাখ্যান
২. আলো আঁধারের উপাখ্যান
Chikodili Emelumadu, Ivor W. Hartmann, Oghenechovwe Ekpeki Donald, Nick Wood, Wole Talabi, Nerine Dorman, Kofi Nyameye, Dare Segun Falowo, T.L. Huchu, Blaize Kaye, Eugen Bacon, Suyi Davies Okungbowa, Sam Beckbessinger, Ada Nnadi, Emad El-Din Aysha, Mame Bougouma Diene, Biram Mboob, Tlotlo Tsamaase, Richard Oduor Oduku, Derek Lubangakene, Henrietta Rose-Innes, Lauren Beukes and Chinelo Onwualu.
Soham Guha, Dip Ghosh, Debjyoti Bhattacharya, Rajarshee Gupta, Santanu Bandopadhyay, Saranya Mukhopadhyay, Anushtup Sett, Sumit Bardhan, Partha De, Arindam Debnath, Aditi Sarkar, Mahasweta, Amit Debnath, Partha Chattopadhyay, Tapas Moulik, Arindam Ganguly, Saptarshi Chatterjee, Saikat Mukhopadhyay, Kaushik Bhattacharya, Mousumi Ray, Yashodhara Ray Chaudhuri and Nandini Das Chattopadhyay.
যদি কেউ পড়তে চান, জয়ঢাক প্রকাশন বা আমাজন থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন