লাভ স্টোরি নিয়ে আমার সিরিয়াস অবসেশন আছে। মুশকিল হল, ওই শাহরুখ খানের সিনেমা আর দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টার্স দেখে আবার আমার বেদম হাই উঠতে থাকে আজকাল (গোঁসা হবেন না, এককালে আমিও শাহরুখ খানের ডাই হার্ড ফ্যান ছিলাম, বারো ইঞ্চির একটা পোস্টারও কিনেছিলাম গাদাগাদা পোস্টকার্ডের পাশাপাশি। ডিডিএলজে আমি বাহান্ন বার দেখেছি। তারপর... থাউক সে কতা) উনিশ কুড়ির জন্য লেখা বা প্রাপ্তমনস্ক উপন্যাস পড়লেও বিশেষ কিছু আসে যায় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। আমার কাছে লাভ স্টোরির প্রেমে পড়ারও বেশ কিছু শর্ত আছে। সে নিয়ম খুব কড়া। তাই অধিকাংশ প্রেমের গল্প উপন্যাস সিনেমা দেখেই আমার হয় ন্যাকামি নয় ছিঁচকাদুনি বলে মনে হয়। আবার ঘোর বাস্তবপন্থী ন্যারেটিভ হলেও আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। কী থাকবে, কেন থাকবে, কোথায় সংলাপ থাকবে আর কোথায় নীরবতা অবলম্বন করতে হবে এই বোধ খুঁজে না পেলে প্রেম কাহিনি আমার পোষায় না, সে বইই হোক আর সিনেমাই হোক। যাই হোক, বাতেল্লা অনেক হল। মোদ্দা কথা হল অনেকদিন বাদে একটা পুঁচকে বই পড়ে মনে হল একটা লাভ স্টোরি পড়লাম বটে। হ্যাঁ, প্রায় আশি বছর আগে লেখা একটা বই পড়ে মনে হল, লেখক একটা কিছু লিখেছেন বটে।
স্নো কান্ট্রি বিশ্ববিখ্যাত বই। কাওয়াবাতা এই বইয়ের অসামান্য অনুবাদের জোরেই নোবেল কমিটির নজরে এসেছিলেন বললে খুব একটা ভুল হবে না, যদিও অনেক বইয়ের মতো এই বইটাও আমার আগে পড়া হয়নি। কিন্তু বললে বলতে হয় জাপানি প্রেমের গল্পে একটা অন্য ব্যাপার আছে, সেটা আমি বুঝতে পেরেছি ইউকিও মিশিমার গদ্য পড়ে। হেন মানুষ নেই যে ওই কলমের প্রেমে পড়েনি। মিশিমা এরকম সব লেখা লিখেছেন যে জন্মের জন্য তাঁর গদ্যের প্রেমে পড়তে হয়। তাঁকে নোবেল দেওয়ার দাবি অনেকেই করেছেন, কিন্তু শেষমেশ মিশিমা নোবেল পাননি, পেয়েছেন কাওয়াবাতা। তবে স্নো কান্ট্রি পড়ে মনে হল, কাওয়াবাতার সঙ্গে মিশামির গদ্যের কিছু কিছু মিল আছে ঠিকই। দুজনের কেউই জোর করে গল্প গেলানোর চেষ্টা করেন না, বরং পাঠকের ওপর ভরসা করেন পুরোপুরি। যদিও পার্থক্যও অনেকটাই, কিন্তু কাওয়াবাতার গদ্যও ইমেজারিতে ভরপুর, তাঁর মর্মস্পর্শী কলমে নস্টালজিয়া আর না বলা কথার গভীরতা খেলা করে যায় মুর্হুমুহু। আশ্চর্যের কথা হল, কাওয়াবাতাও অদ্ভুতভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। (মিশামি যে মর্মান্তিক ভাবে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন, সেই হারাকিরির কথা জেনে আমার দাঁতকপাটি লেগে গিয়েছিল।) অনেকের মতে কাওয়াবার মৃত্যুও আত্মহত্যাই, অনেকে আবার সে কথা বিশ্বাস করেন না।
সে সব থাক, আসল কথা হল স্নো কান্ট্রি আমার মচৎকার লেগেছে। গল্প বলতে দু লাইন, সেও নামেই। তাই প্লট নিয়ে মায়া থাকলে এ বই না পড়াই ভালো। জাপানের এক তুষারাবৃত অঞ্চলের গল্প, যেখানে পনেরো কুড়ি ফুট বরফ পড়া কোনও ব্যাপারই নয়। শীতের ছুটি কাটাতে আর উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান করে দেহমন চাঙ্গা করতে টোকয়ো থেকে বড়লোকদের আগমন হয়। এদেরই একজন হলেন শিমামুরা। এখানে বলে রাখা দরকার এই বিলাসবহুল জায়গায় স্ত্রী ছেলে নিয়ে কেউই যায় না, স্নো কান্ট্রির অতিথিশালায় তাঁদের দেখভালের জন্য গেইশাদের বন্দোবস্ত থাকে। এই পরিচারিকাদের সঙ্গে অবশ্য টোকয়োর গেইশাদের পার্থক্য আছে। তাদেরই একজন হল কোমাকো। এই উনিশ বছরের মেয়ের জীবন খুব একটা সুখের নয়, কিন্তু সে কথা স্পষ্ট ভাবে বলা হয়নি কোথাও। শিমামুরা আর কোমাকোর প্রেম নিয়ে একটা কথাও সম্ভবত উচ্চারণ হয়নি গোটা বইয়ে, আরেক চরিত্র ইয়োকোর সম্পর্কেও যৎসামান্য জানানো হয়েছে। শিমামুরা শীতে আসেন, আবার চলে যান। দুজনেই জানে, এই প্রেমের কোনও পরিণতি নেই। বছর কাটে। বইয়ে ঠিক যা আছে, সেটা হল শিমামুরা আর কোমাকোর কথোপকথন। তাতে জোর করে কোনও দর্শন ঢোকানোর চেষ্টা নেই, কোনও জটিল মন্তব্য নেই। কিন্তু মন দিয়ে এই সংলাপগুলো পড়লেই বোঝা যায়, কাওয়াবাতা কী কাণ্ডই না ঘটিয়েছেন ছোট ছোট সংলাপ দিয়ে। কত কত অজানা কথা, চরিত্রদের মনের অনুভূতি, কত অতীত আর ভবিষ্যৎ জানিয়ে দিয়েছেন আলাদা করে একটা সংলাপও খরচ না করে। আর স্নো কান্ট্রির বর্ণনা, আহা! লেখা তো নয়, গোটা বই জুড়ে ছবি এঁকে গেছেন লেখক। দু একটা জায়গা কোট করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
It was a stern night landscape. The sound of the freezing of snow over the land seemed to roar deep into the earth. There was no moon. The stars, almost too many of them to be true, came forward so brightly that it was as if they were falling with the swiftness of the void. As the stars came nearer, the sky retreated deeper and deeper into the night clolour. The layers of the Border Range, indistinguishable one from another, cast their heaviness at the skirt of the starry sky in a blackness grave and somber enough to communicate their mass. The whole of the night scene came together in a clear, tranquil harmony.
অথবা যে সমস্ত দৃশ্যে কাওয়াবাতা শিমামুরা আর কোমাকো চুপ করে আছে...
The woman was silent, her eyes on the floor. Shimamura had come to a point where he knew he was only parading his masculine shamelessness, and yet it seemed likely enough that the woman was familiar with the failing and need not be shocked by it. He looked at her. Perhaps it was the rich lashes of the downcast eyes that made her face seem warm and sensuous. She shook her head very slightly, and again a faint blush spread over her face.
এছাড়াও গোটা বই জুড়ে বোশোর হাইকুর একাধিক রেফারেন্স আছে। সেটা জেনেবুঝেই করা হয়েছে, কারণ হাইকুর ওই তিন লাইনে মহাবিশ্ব নিয়ে আলোচনা করার মতোই স্নো কান্ট্রিতেও ইউসানারি কাওয়াবাতা একশো পাতায় পাঁচশো পাতার গল্প বলে গিয়েছেন। প্রেমের গল্প। আরো অব্যর্থ ভাবে বলতে ব্যর্থ প্রেমের গল্প। দ্য স্টোরি অফ ওয়েস্টেড লাভ। অ্যান্ড দ্য ওয়েস্টেড লাইফ।
He was conscious of an emptiness that made him see Komako’s life as beautiful but wasted, even though he himself was the object of her love; and yet the woman’s existence, her straining to live, came touching him like naked skin. He pitied her, and he pitied himself.
যারা পড়েননি, চটপট পড়ে নিন। তবে হাতে সময় নিয়ে। বইটা শেষ করতে ঘন্টা তিনেক লাগবে। কিন্তু এই সময়টুকু একসঙ্গে ইনভেস্ট না করতে পারলে হয়তো ম্যাজিকটা অধরা থেকে যেতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন