রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪

শেপ অফ ওয়াটার / সিসিলিয়ান গোয়েন্দা

 


গোয়েন্দা গল্প নিয়ে আলাদা করে যে আমার খুব একটা আগ্রহ আছে, তা নয়। কিন্তু তবু আমি খুঁজে খুঁজে ডিটেকটিভ বা ক্রাইম ফিকশন পড়ি, কারণ কালচারাল অ্যাসপেক্ট। ভালো গোয়েন্দা গল্পে (সে কানাইচরণ হোক বা ইন্সপেক্টর কাগা) একটা দেশ বা শহরের বিশেষত্ব ধরা পড়া, সেখানকার মানুষের খাওয়াদাওয়া, পোশাকআশাক থেকে শুরু করে গোটা স্ল্যাং ও সংস্কৃতির বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়, কিন্তু তা গোয়েন্দা গল্পের স্বাভাবিক গতি বা ঘটনাক্রমকে প্রভাবিত করে না। এইজন্য আমি সিওল থেকে সেভিয়া আর প্যারিস থেকে পিকিং অব্দি গোয়েন্দা গল্প খুঁজে যাই, ঘরে বসে দেশভ্রমণ হয়। প্রতি বছর কিছু ভালো গল্প হাতে আসে, আবার কতগুলো পড়ে মনে হয়, না পড়লেই হত! মুশকিল হল, রহস্য গল্প হিসেবে অনেক বইই ভালো নম্বর পায় না, সবাই কিগেশিনো বা মাইগ্রে হতে পারেন না। সে যাই হোক, রিসেন্টলি যে গোয়েন্দাটি আমার মন কেড়েছেন, তিনি সিসিলিয়ান।

আন্দ্রিয়া ক্যামিলেরির ইন্সপেক্টর মন্টেলবানো সিরিজে একগাদা বই, কোনোটাই খুব একটা বড় নয়। এমন ঝরঝরে লেখা আমি ইদানীং আর পড়িনি। কামিলেরির লেখায় সিসিলিয়ান কালচার আর পলিটিক্স এভাবে উঠে এসেছে যে কোনটা কাল্পনিক আর কোনটা আসল আলাদা করে বোঝা সম্ভব নয়। সিসিলিয়ান মাফিয়া, স্থানীয় রাজনীতি, কোরাপশনের পাশাপাশি সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবন একদম গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। আর গোয়েন্দা বাবাজিও চমৎকার। একটা স্টাডি গার্লফ্রেন্ড আছে তাঁর, মাঝেমধ্যে পালের্মোতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কিছুদিন থেকে আসেন, ভালো খাবার দেখলে বাবুর নোলা বেয়ে জল পড়ে, কাজ বেড়ে গেলে দুপুরে গিয়ে একটু গড়িয়ে না নিলে চলে না। গুণ্ডা-ফুন্ডাদের সঙ্গেও গলাগলি আছে ভদ্রলোকের, তেমন তেমন হলে তাদের হেল্প নিতেও ছাড়েন না। কিন্তু পুলিশ হিসেবে মন্টেলবানো অসম্ভব তীক্ষ্ণ ও করিৎকর্মা, ভুলভাল করেন মাঝেমধ্যে, আবার সুধরেও নেন। কোর্স কারেকশন করে আসল রহস্য খুঁজে তার জট ছাড়িয়ে ফেলেন, তারপর বেবি অক্টোপাস এর রান্না আর ভালো ওয়াইন খেতে খেতে কমিশনারকে সব বুঝিয়ে বলেন। অক্টোপাস ভাজার মতোই ক্রিসপ, মুচমুচে লেখা, কিন্তু ভালো পাচকের মতো রান্নার ফিলোসফিটা কামিলেরি ঠিকই বোঝেন। ফলে স্বাদে মুচমুচে হলেও রহস্যের গভীরতা কম হয় না। এই বইটাই তাঁর প্রথম বই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন