এই মলয়ালম বইটা বাংলায় আনার জন্য আমি কাঠবেড়ালির মতো খানিকটা মাটি বয়ে দিয়েছি। সরাসরি মলয়ালম থেকে বাংলা নয়, বইটা আগে হিন্দিতে অনুবাদ হয়েছিল, যদিও সে অনুবাদটা খুব একটা কাজের নয়। মলয়ালম বা অন্য ভারতীয় ভাষা জানা অনুবাদক বাংলায় খুবই কম, থাকলেও আমার সঙ্গে চেনা নেই। বাংলায় এমন কিছু কিছু বই সরাসরি অনুবাদ হলেও সিংহভাগ প্রকাশক কপিরাইট নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ, সাহিত্যসেবার নিরিখে বেআইনি অনুবাদ করে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ালেই চলে। এমনিতেও বাংলা বাজারের পেশাদারিত্ব নিয়ে...
যাকগে, এসব অপ্রাসঙ্গিক কথা থাক, মোদ্দা কথা হল জোষে পাষুক্কারণের এই 'আউট অফ দ্য বক্স' লেখাটা রাজীবদা অসম্ভব যত্ন আর মমতায় অনুবাদ করেছেন। প্রকাশকও আশা করি যত্নসহকারে প্রোডাকশন করছেন। কিন্তু কাজটায় যাঁর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তাঁর নাম এস এ কুদসি। মলয়ালম ভাষার অনুবাদক। ম্যান্ডারিন সাইফি ইংরেজিতে নিয়ে আসতে কেন লিউয়ের যা ভূমিকা, আরব আর গাল্ফ এর সাহিত্য মলয়ালমে আনতে তাঁর ভূমিকা প্রায় একই। এছাড়াও ফার্সি আর ইন্দোনেশিয়ান ইত্যাদি বই নিয়ে কাজ করেছেন, অন্যান্য অনুবাদক ও প্রকাশকদেরও নানাভাবে সাহায্য করেছেন। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফ থেকে পুরস্কার পেয়েছেন কুদসি স্যার, এমনকি তাঁর খোঁজও আমি পেয়েছি ভিনদেশি এক প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে। এমন সদাহাস্য, মৃদুভাষী, নিঃস্বার্থ মানুষ বড় একটা দেখা যায় না আজকাল। মলয়ালম সাহিত্য নিয়ে যে আমি জেনুইনলি ইন্টারেস্টেড, এটুকু জানতে পেরে নিজেই এই বইটা সাজেস্ট করেছিলেন।
না আমি মলয়ালম ভাষা জানি, না আমি প্রকাশক, জোর দিয়ে বলতেও পারি না যে কেউ বই করতে আগ্রহী হবেন। না হলে কেরালায় আধুনিক সাহিত্য (শুধু সাহিত্য কেন, আর্টের সব ফর্মেই তাঁরা শতযোজন এগিয়ে) যে সমস্ত অসামান্য কাজকর্ম হচ্ছে, সেসব আরো বেশি করে বাংলায় নিয়ে আসার জন্য কুদসি স্যার বা জোষ পাষুক্কারণের মতো আরো অনেকের সঙ্গেই কথা বলা যেত। কে আর মীরা, বেনয়ামিন, অখিক কে, ও ভি বিজয়ন, কে এল মোহনবর্মা, এস হরিশ বা জে আর ইন্দুগোপানের মতো মেনস্ট্রিম লেখকদের লেখাতেও প্রচুর বৈচিত্র্য আছে। 'হ্যাংওম্যান' কলকাতা বেসড ঐতিহাসিক উপন্যাস। বেনিয়ামিনের 'গোট ডেজ' সত্যি ঘটনা নিয়ে লেখা যেখানে একজন আরব দেশে গিয়ে ছাগলদের সঙ্গে থাকত, সেই নিয়ে একটা বড় বাজেটের সিনেমা আসন্ন। কে আর মীরার 'কাবার' বাবরি মসজিদ আর রাম মন্দির নির্মাণের সমসাময়িক রাজনীতি চমৎকার ভাবে সাহিত্যে ধরেছে। 'ভাল্লি' অসামান্য ইকো ফিকশন। এদিকে আব্রাহাম ভার্গিসের ইংরেজিতে লেখা 'দ্য কোভেনান্ট অফ ওয়াটার' তো দুনিয়া কাঁপাচ্ছে। ম্যাজিক রিয়ালিজম আর পোস্ট মডার্ন সাহিত্যের অলিগলির সঙ্গে মলয়ালম সাহিত্যের পরিচয় নতুন নয়।
অনেকেই অনেক বইয়ের ভিড়ে এই বইটা মিস করে যাবেন হয়তো, কিন্তু যাঁরা পড়বেন, তাঁরা এই একটা বইয়েই না থেমে আরো কিছু মলয়ালাম বই পড়ে দেখার চেষ্টা করবেন বলে অনুরোধ রইল। পাঠক, প্রকাশক ও অনুবাদক একসঙ্গে আগ্রহী না হলে অন্য ভাষার ভালো বই আইনি ভাবে বাংলায় আনা একটু চাপের কাজই বটে। প্রকাশক বই নিয়ে যা লিখেছেন তুলে দিলাম...
বুদ্ধন চিরিক্কুন্নিল্লা।(অস্মিত বুদ্ধ) জোসে পাষুক্করণ। ভাষান্তর রাজীব কুমার সাহা ।
বুদ্ধ ফিরে এসেছেন। পুনর্জন্ম নিয়েছেন বিহার প্রদেশের এক গণ্ডগ্রামে, এক দলিতশিশু হয়ে। বিশ শতকের পৃথিবী তাঁকে হাসতে ভুলিয়ে দেয় এক নিমেষে। তিনি হয়ে হাসেন না। হয়ে ওঠেন অস্মিত বুদ্ধ।
আর তারপর, হত্যা, রক্ত, মৃত্যু আর অত্যাচারের কুম্ভীপাকে বাঁধা পড়ে মৃত্যু থেকে মৃত্যুতে হেঁটে চলেন তিনি। নিঃশব্দে আর্তনাদ করে দলিত তরুণ, মানবজন্ম নয় আর, আমায় গোজন্ম দাও...জোসে পাষুক্করণের মালয়ালাম ডার্ক ক্লাসিক 'বুদ্ধন চিরিক্কুন্নিল্লা'র বাংলা ভাষান্তর আসছে নববর্ষে।
অনুবাদ রাজীব কুমার সাহা। প্রচ্ছদ, প্রকাশকের দীর্ঘকালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, খ্যাতনামা মারাঠী শিল্পী গীতালী তারে। জয়ঢাক প্রকাশন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন