রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪

বাবেলভার্স ও কুয়াং ইউনিভার্স

 


আর এফ কুয়াং এখন মেনস্ট্রিম সাহিত্যের স্টার বলা চলে। পপি ওয়ার ট্রিলজি লিখেই তারিফ কুড়িয়েছিলেন, তারপর 'বাবেল' লেখার পর থেকে তো তাঁর আলোচকরাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নেবুলা আর লোকাস পুরস্কার পেয়েছে, আর হিউগো পাওয়াও প্রায় পাকাই ধরে রাখা হয়েছিল, এমন সময় হিউগো নমিনেশন থেকে বইটাকে বাদ দেওয়া হয়। সে সব এমনিতে মিটে যেত, কিন্তু চেংডু ওয়ার্ল্ডকনের সময় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তুমুল হইচই হয় যে বইটাকে চাইনিজ সেন্সরশিপের কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে।

সে সব যাই হোক, আর এফ কুয়াং এর খ্যাতি কিছু কমেনি। বাবেল ব্লকবাস্টার হতে না হতেই 'ইয়েলোফেস' মার্কেটে আসে আর গত বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় বই হয়ে ওঠে। এই দুটো বইই জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে পড়েছি। 'ইয়েলোফেস' পড়তে একদিন লেগেছে, বাবেল পড়তে একমাস। তবে দুটোর মধ্যে বিস্তর তফাৎ আছে বিষয়বস্তুর দিক থেকে। ইয়েলোফেস প্রকাশনা জগতের গল্প, একজন মার্কিনি লেখিকা এক চাইনিজ বংশোদ্ভূত লেখিকার আকস্মিক মৃত্যুর পর তাঁর লেখা ম্যানুস্ক্রিপ্ট নিয়ে এসে ঘষেমেজে প্রকাশ করেন আর হিট হয়ে যান, তারপর নানান কাণ্ড ! তরতরিয়ে এগোনো যায়।

অন্যদিকে বাবেল (পুরো নাম Babel, or the Necessity of Violence: an Arcane History of Oxford Translators) আটশো পাতার বই, লেখিকার ড্রিম প্রজেক্ট, ভাষা আর ইতিহাসের আঁকেবাঁকে ঘুরে বেড়ায়, ভাষাবিজ্ঞানের প্রচুর গুরুত্বও আছে এই প্লটে, রিসার্চও করেছেন কম নয়। কিন্তু এই ম্যাজিকাল ফ্যান্টাসি পড়তে গেলে মনে রাখতে হয়, বইটা ম্যাজিক নিয়ে নয়, ভাষা নিয়ে। ফলে আমার মতে, ঐতিহাসিক হলেই বইটা আরো বেশি খুলত, ফ্যান্টাসি হিসেবে আমি এক নম্বর কমিয়ে দিয়েছি। অক্সফোর্ড নিয়ে লেখা, ঊনবিংশ শতাব্দীর অক্সফোর্ডের দুনিয়া একেবারে হাতের রেখার মতো চিনিয়েছেন, অথচ ম্যাজিক সিস্টেম এর লজিক বা ম্যাজিকাল ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং জিনিসটি আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি, অথচ অসামান্য ভালো লেখনী। ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে লেখাটাকে ভাবতে পারলে কুয়াং হয়তো বুকারে নমিনেট হয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু তা হয়নি। দুটো বইই ভালো, যদিও বাবেলকে এগিয়ে রাখার যথাযথ কারণ আছে। সময় থাকলে দুটো বইই পড়া যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন