শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

পাহাড়যাপন ৩

 #পাহাড়যাপন


পাহাড়ে দু' মাস কেটে গেল।

মেঘ-বৃষ্টি-বরফ-বুগিয়াল নিয়ে সবুজের মাঝে দিন কাটে, গাড়িও দেখিনি বহুদিন। গ্রামের ধারে গেলে গাড়ি যাওয়ার রাস্তা চোখে পড়ে, গাড়ি চোখে পড়ে না। হিমাচলেও লকডাউন চলছে, বাস বন্ধ। হয়তো কিছু প্রাইভেট গাড়ি চলছে, কিন্তু দেখিনি। আপেল গাছের আপেল বড় হয়ে উঠছে, সবুজের আচ্ছাদন ঘন হচ্ছে রোজ। আগের চেয়ে শীত কমে গেছে অনেক, আজকাল আর কাঁপুনি দেয় না। কিন্তু সোয়েটার গায়ে দিতেই হয়।

অভ্যস্ত চোখে ঘুরে বেড়াই, ঘাসফুল আর লাল গোলাপের ঝাড় দেখে থমকে যায় স্মার্টফোন। ছবি, ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক। সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার সাবকনশিয়াস চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

কয়েকদিন ঘরে বসে বোর হয়ে গেলে পাড়া বেড়াতে বের হই। উঁচুনিচু পাথুরে পথ, মাঝে মাঝে বিশাল বিশাল পাথর। হোমস্টে, ঝোরার জল বয়ে নিয়ে যায় ফুলের বীজ, খড়ের গাদা দিয়ে বাঁধা ফসল রাখার জায়গা, তাদের মাথায় প্লাস্টিকের আবরণ। মটরশুঁটি আর কড়াইয়ের চাষ হবে, মাটি কোপানো হয়ে গেছে দেখি। ঝাবরু লোম কুকুর পিছু নেয়, পিছু নেয় মিঠে বাতাস। চড়াই-উতরাই। হাঁফ ধরে যায়, জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বিশাল পাথরের মাথায় উঠে বসি তখন। সূর্য ডুবে গেলেও আলো থাকে প্রায় সাড়ে আটটা অব্দি। কী অদ্ভুত! মায়াবী এক জোছনার আলো ছড়িয়ে থাকে চরাচর জুড়ে, তারপর খেয়াল হয় আকাশে তো চাঁদ নেই। কীসের আলো তবে? সেই জাদু আলোয় আপেল অর্চার্ডে ঘোড়ার দল ঘোরাঘুরি করে, তাদের পরিশ্রম কমেনি। এই গ্রাম ওই গ্রাম, জিনিসপত্র পৌঁছে যাচ্ছে ঘোড়ায় করেই। লকডাউন বা আনলক, গ্রামের কিছু মানুষের বিন্দুমাত্র আসে যায় না।

লকডাউন আর খুলছে না। দু' বছরের সব পরিকল্পনাই প্রায় বানের জলে ভেসে গেছে। আমি এখনও মানুষ হইনি, দু' এক বছরের বেশি প্ল্যান করা আমার ধাতে নেই। আসন্ন বছরের পরিকল্পনা আর ট্রাভেল ইটারনারি তৈরি, সেই নিয়েই জীবন চলে। নালিশ করার কোনো মানেই হয় না, নিজেরা যে কতটা প্রিভিলেজড সেটা ভালই জানি। তাও ভুলভাল চিন্তা মাথায় আসে।

মাঝে মাঝে ভাবি গত দু' তিন বছর কী করলাম! কাজের কাজ তো কিছুই করিনি। নতুন অভিজ্ঞতা প্রায় হয়ইনি কোনও। ঘাড় গুঁজে, কয়েকটা বই লিখেছি, পড়েনি প্রায় কেউই। না লিখলেও চলে যেত। চোখের পাওয়ার বেড়েছে, ঘাড়ে ব্যাথা হয়েছে, আর কিছুই হয়নি। রাশি রাশি বই আর পেপার পড়েছি, কিছু সিরিজ দেখেছি...অ্যাকাউন্ট খালি হয়েছে ঝড়ের বেগে। বাকি নীল বাটে সান্নাটা। অবশ্য কোভিডের আগেও বিশেষ কিছু করেছি বলে তো মনে হয় না। চোদ্দ আনা জলেই গেছে জীবনের সময়। কিছুই বদলায়নি। আগে অবশ্য হাবিজাবি বকার অভ্যেস ছিল না সোশ্যাল মিডিয়াতে, এখন সেটাও হয়েছে।

পরের জন্মে মানুষ না হয়ে কী হব সেটাই আজকাল চিন্তাভাবনার বিষয়। একবার ভাবি ঘোড়া, একবার ভাবি বেড়াল, একবার ভাবি...( ব্লা ব্লা ব্লা)

সঙ্গের ছবিটা আমাদের ডেরার।



২টি মন্তব্য: