সাবাহতিন আলির 'ম্যাডোনা ইন আ ফার কোট' টার্কিশ সাহিত্যের ক্লাসিক বলে গণ্য হয়েছে গত তিরিশ বছর আগে। কিন্তু প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এই বিশেষ বইটা নিয়ে পাঠক আর সমালোচকদের মধ্যে একটা দ্বিধাভাব আছে। কেউ কেউ বলে, একমাত্র দস্তয়ভস্কির 'হোয়াইট নাইটস' ছাড়া কোনও কিছুই এই অসামান্য গল্পের কাছাকাছি যেতে পারে না। বাকিদের মত, এমন মেলোড্রামাটিক কাঁদুনে প্রেম কাহিনিকে ক্লাসিক দূরস্থান, ভালো বই বলাই চলে না। এই দুই দল সত্তর বছর ধরে কুস্তি করছে, পেঙ্গুইন বইটাকে মডার্ন ক্লাসিক হিসেবে প্রকাশ করার পর এই কুস্তোকুস্তি আরো বেড়েছে।
সে যাই হোক, লেখা নিয়ে সংশয় থাকলেও লেখককে নিয়ে প্রায় কারো মনেই সংশয় নেই। এলিফ শাফাক বা ওরহান পামুকের অনেক আগেই যে গুটিকয়েক লেখক টার্কিশ সাহিত্যের মাস্টার স্টোরিটেলার্সের মধ্যে শামিল হয়েছেন, সাবাহতিন আলি তাদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু শুধু লেখক না, মানুষ হিসেবেও তাঁর জীবন কম রোমাঞ্চকর নয়। অটোমান রাজ্যের শেষ সময়ে বুলগারিয়া তাঁর জন্মস্থান হলেও আধুনিল টার্কি তাঁর কর্মভূমি, রাজনীতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন, জেলে গিয়েছেন, দেশ থেকে বেরোনোর জন্য পাসপোর্ট পাননি বলে বেআইনিভাবে পালাতে গিয়ে একজন লোককে নিয়োগ করেন, সেই তাঁকে খুন করে, সে ১৯৪৭ সালের কথা। এমন একজন ঘোর বাস্তববাদী মানুষ 'ম্যাডোনা ইন আ ফার কোট' এর মতো আপাত রোমান্টিক বিষাদে মোড়া প্রেম ও বিরহের গল্প কী করে লিখতে পেরেছেন কেউ বুঝতে পারেনি।
গল্প জটিক কিছুই নয়। বলা যায় গল্পের মধ্যে গল্প। আড়াইজন প্রধান চরিত্র, অনেকটা প্রেম আর আকর্ষণ, বাকিটা একটা দীর্ঘ বিরহ। বিষাদ আর বিরহের দীর্ঘশ্বাস। এই বই পড়তে গেলে প্রথমে মনে হয়, ওই তো একটা লাভ স্টোরি। তারপর মেলানকলিক শীতের মায়াজড়ানো গল্প পড়তে গেলে কখন যে সাদামাঠা প্লটটা নেশায় ফেলে দেয়, বার্লিন আর আঙ্কারার শীতকাল চোখের সামনে ভেসে ওঠে, কুয়াশা আর তুষারপাত শুরু হয় ঘরের ভিতর বসে, বোঝা যায় না। একসময় পাঠক আবিষ্কার করে, 'তুমি পথ হারাইয়েছ'...তার আর হুঁশ নেই।
যারা এখনও বোকার মতো সত্যিকারের প্রেম ফেম নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, পড়ে ফেলুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন