গত পঁচিশ বছরে যদি কেউ থাইল্যান্ডে থেকে মোটামুটি বইপত্রের ওপর নজর রেখে থাকে, তাহলে প্রাবদা ইউনকে চিনতে না পারা প্রায় অসম্ভব। ২০০০ সালের কাছাকাছি এই তরুণ লেখক থাই সাহিত্যে প্রায় ঝড় তুলে দিয়েছিলেন।
উদ্ভট বিষয়, অসামান্য ওয়ার্ডপ্লে আর ক্রমাগত বদলে যাওয়া ব্যাঙ্ককের শহুরে জীবন নিয়ে প্রাবদা ইউন একের পর এক গল্প লিখেছেন, তার অনেকগুলো থাই পাঠকদের কাছে প্রায় রেফারেন্স পয়েন্ট হয়ে গেছে। মুশকিল হল, ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির বাইরের ভাষায় সাহিত্য রচনা হলে সে সব তেমন অনুবাদ হয় না, বা হলেও অনেকসময় সেই অনুবাদে মূল সাহিত্যের ম্যাজিক ধরা পড়ে না। একটা ভাষার সঙ্গে সেই ভাষার সাহিত্যের যে বোঝাপড়া, সেটা অন্য ভাষায় নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। তবুও, বেশ কিছু প্রকাশক অনুবাদক আছেন, তাঁরা চেষ্টা করেন, আর করেন বলেই প্রায় পনেরো বছর পর টিল্টেড অ্যাক্সিস প্রেসে ডেবোরা স্মিথের সম্পাদনায় প্রাবদা ইউনের এই অনবদ্য গল্প সংকলনটা প্রকাশিত হয়েছে। ২০০০ সালে 'খোয়াম না জা পেন' নামে প্রকাশিত বইটার প্রকাশক ছিল আমারিন পাবলিশার্স, তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল বইটাকে যোগ্য স্পেস দেওয়ার, অনুবাদক মুই পুপুকসাকুলের বক্তব্য শুনে তা বোঝাও যায়। থাই ওয়ার্ডপ্লের জাদু ইংরেজিতে ফুটিয়ে তোলা সহজ নয়, কিন্তু মুই পুপুকসাকুল চেষ্টা করেছেন।
এইবার, গল্পের কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, প্রাবদা ইউন ঠিক গতানুগতিক গল্পকার নন। তাঁর গল্প নিটোল গল্প নয়, বরং এক একটা গল্প পড়লে তো মনে হয়, আদৌ আমি কী পড়লাম। ভালো, মন্দ না অদ্ভূত, সে সব বুঝতে সময় লাগে! কিছু কিছু গল্প অবশ্য প্রথম পাঠেই ছিটকে দেয়, বইয়ের প্রথম গল্প 'পেন ইন প্যারেন্থেসিস' যেমন। কয়েকটা আবার ঠাঁটিয়ে চড় বা মাথায় গাঁট্টা মারে। আগে গল্পের নামগুলো দেওয়া যাক।
১) পেন ইন প্যারেন্থেসিস
২) এই প্লোয়াং
৩) আ স্কুলগার্লস ডায়েরি
৪) মিস স্পেস
৫) সামথিং ইন দ্য এয়ার
৬) দ্য ডিসঅ্যাপিয়েরেন্স অফ দ্য সি ভ্যাম্পায়ার ইন ব্যাঙ্কক
৭) শ্যালো/ডিপ, থিক/থিন
৮) দ্য শার্প স্লিপার
৯) স্নো ফর মাদার
১০) মারুত বাই দ্য সি
১১) দ্য ক্রাইং পার্টিজ
১২) ফাউন্ড
নামেই বোঝা যাচ্ছে, এসব ঠিক কমন গল্প নয়। 'মিস স্পেস' গল্পটা শুনে মহাকাশ বা স্পেকুলেটিভ মনে হতে পারে, কিন্তু এই গল্পের বিষয়বস্তু হল থাই শব্দের মধ্যে স্পেস দেওয়ার সঙ্গে জীবনযাপনের দর্শনের কী সম্পর্ক! প্রসঙ্গত, থাই ভাষায় শব্দের মাঝে স্পেস ব্যবহার এর চলন নেই, তাতে শব্দ বাক্য বা দুইয়েরই অর্থ বদলে যেতে পারে। 'মারুত বাই দ্য সি' গল্পে মারুত বলছে, "আমি মারুত ফারুত নই আর সি এর ধারে বসার ইচ্ছেও আমার নেই। এ সেই প্রাবদা ব্যাটার কাণ্ড!" বলে লেখকের জীবন আর দর্শকের কন্ট্রাডিকশন নিয়ে পাঠককে জানিয়ে সাবধান করে দিচ্ছে মারুত।
Don’t waste your precious time with his nonsense. Granted, he might say or do things to amaze you. He might write words that tug on your heart strings. You might find his unusual perspective charming. He might lead you to believe that he has something important to say. But believe me, every single thing that you think you learn from him in fact comes from you yourself. As the Thai expression says, grandma’s treats bought with grandma’s money.
'স্নো ফর মাদার' আরেকটা চমকে দেওয়া গল্প, প্রথম বাক্য শুনেই অবধারিত ভাবে মার্কেজের উপন্যাসের প্রথম লাইনের কথা মনে পড়ে...
Nuan harboured a belief that she had never shared with anyone, not even with Aim, her regular hairdresser with whom she was so close they were practically family, But more than twenty years ago, her only son, Pon, had stormed into her mosquito net, his eight-year-old fists full of grass he had scraped up from the roadside. “Mommy, I brought you snow,” he had announced to her in his little voice and from that day on, Nuan became convinced that if only her beloved son could come into contact with snow, real snow, he might be cured.
'দ্য ক্রাইং পার্টিজ' গল্পে এক দল ছেলেমেয়ে মুঠো মুঠো লঙ্কা চিবিয়ে কান্নাকাটি করার জন্য হাউজ পার্টি করছে, কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় আসলে এই পার্টিতে কেঁদে তারা দুঃখলাঘব করছে, এন্টারটেন হচ্ছে। কিন্তু কিছুদূর এগোতেই আবার বোঝা যায়, ব্যাপারটা আসলে তা নয়।
সংক্ষেপে বলা যায়, প্রাবদা ইউন নিজের একটা জগত তৈরি করেছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সমসাময়িক থাই সাহিত্যের সঙ্গে হাতেখড়ি করতে হলে এই বইটা স্টেপিং স্টোন হিসেবে কাজ করতে পারে। ইচ্ছে হলে পড়ে দেখতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন