জেরাল্ডবাবু জিন্দেগিতে প্লেনে চড়েননি। অস্ট্রেলিয়ার এই লেখক ভিক্টোরিয়া আর মেলবর্ন করেই জীবন কাটিয়ে দিলেন, কিন্তু তাঁর লেখা সাত সমুদ্দুর তেরো নদী ঘুরে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার সাহিত্য নিয়ে বিশেষ কথাবার্তা হয় না মেনস্ট্রিমে, ইংরেজি লেখক মাত্রেই আমেরিকা আর ইউকের লেখকরা জাঁকিয়ে বসেছেন। এই দূর দেশের বিভিন্ন জায়গায় কেমন সাহিত্যচর্চা চলছে, পঞ্চাশ বছর আগেও সে খবর বিশেষ কেউ জানত না, এখনও জানে না। মাঝেমধ্যে দু একটা ঢেউ আসে, ওইটুকুই। আমি অন্তত অস্ট্রেলিয়ার লেখকদের লেখা দু চারটের বেশি পড়েছি বলে দাবী করতে পারব না।
এমন সময় দ্য প্লেন্স টাইপ এক একটা বইয়ের খবর আসে, যারা খবর রাখেন তাদের কাছ থেকেই। একশো পাতার বই, চল্লিশ বছর আগে বেরিয়েছিল, ৩০০০০ শব্দেই শেষ। স্যাম্পল পড়ে বুঝলাম বেশ সহজ ইংরেজি বলেই মনে হচ্ছে, দুদিনেই মেরে দেব।
ঘাট হয়েছে জেরাল্ড সাহেব, মাপ করে দাও।
দ্য প্লেন্স এমন একটা ভয়ংকর বই, অস্ট্রেলিয়ার প্লেন্সের মতোই তার চরিত্র। দেখে মনে হয় সবটাই 'প্লেন' কিন্তু আসলে সেখানে যে কত বৈচিত্র্য লুকিয়ে আছে, বোঝা দুষ্কর।
গল্প এক লাইনের। এক ফিল্মমেকার তার স্ক্রিপ্টের রিসার্চ এর জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্লেনস মানে ইনটেরিয়র ল্যান্ডে গেছে, যেখানে হাজার হাজার মাইল প্রায় কিছুই নেই, কারণ অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ জনসংখ্যা থাকে কূলবর্তী শহরগুলোতে। অস্ট্রেলিয়ান প্লেন্স এমন এক অদ্ভুত জায়গা যেখানকার সংস্কৃতি খোদ অস্ট্রেলিয়ার লোকজনও, মায় প্লেন্সের লোকও বুঝতে পারে না। এ এক এমন স্বতন্ত্র জগত, যা বেশি বোঝার চেষ্টা করলে মানুষ খোদ সেই প্লেন্স এর অংশ হয়ে ঘুরে মরে, কিন্তু বোঝা আর শেষ হয় না।
Not a soul in this district knows who I am or what I mean to do here...not one has seen the view of the plains that I am soon to disclose.
বোঝাই যায়, পুরো লেখাটাই অ্যালাগরিকাল। বছরের পর বছর ধরে সেই ফিল্মমেকার প্লেন্স নিয়ে গবেষণা করছে, সেখানকার শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে পাতার পর পাতা ভরাচ্ছে, কিন্তু এক দশক পরও তার সিনেমা হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। প্লেন্স নিজেই সেই সমস্ত শিল্প আর জীবনের ল্যান্ডস্কেপ, যা বোঝার কোনো উপায় নেই, কারণ বোঝার জন্য যে ভ্যান্টেজ পয়েন্টে আমাদের যেতে হবে, সেখানে যাওয়ার সাহস আমরা কোনোদিনই অর্জন করতে পারব না। এক জায়গায় লেখক লিখেছেন...
the man who would never take even the one road that led away from his isolated farmhouse for fear that he would not recognise the place if he saw it from the distant vantage that others used.
লেখা সহজ, কিন্তু প্লটফট নেই বলে মাঝেমধ্যে একটু জিরোতে হয়। ল্যান্ডস্কেপের বর্ণনা পড়ে চমৎকার লাগে, তারপর বোঝা যায়, আরে, আসলে লেখক আলাদাই গল্প বলছেন। কয়েক স্তরে গল্প, মানে গল্পহীন গল্প, কে কোনখান থেকে কানেক্ট করবে বলা মুশকিল।
তবে বইটা দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকে গিয়ে এমন জটিল আর ডিপ্রেসিং হয়ে উঠেছে যে মাঝেমধ্যে থামিয়ে দিতে হয়। নিশ্বাস ফেলতে হয়। তিরিশ হাজার শব্দের এই বইটা অনেকে তিরিশ চল্লিশ বার পড়েছে, প্রতিবারই নতুন কিছু অর্থ ধরা পড়েছে। অত সময় আর ধৈর্য দেওয়া আমার কাজ নয়, কিন্তু প্লেন্স যে আসলে মোটেও প্লেন নয়, সেটা বোঝার জন্য বিশেষ বুদ্ধি লাগে না। তবে এটুকু বোঝা গেল, অন্তত দু তিন বার না পড়লে বইটার মর্ম উদ্ধার করা মুশকিল। যারা বিদেশি সাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন, পড়ে ফেলুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন