শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫

ছোট নৌকা আর একটা টেলিফোন

 


২০২১ সালে ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড যাওয়ার সময় কার্দিশ রিফিউজিদের একটা নৌকা মানে ওই স্মল বোট ডুবতে শুরু করে। উপায় না দেখে তারা ব্রিটিশ হেল্পলাইনে ফোন করে। তারা বলে, মনে হয় তোমরা ফ্রেঞ্চ ওয়াটারে আছো, অমুক নম্বরে ফোন করো। ততক্ষণে জল ঢুকতে শুরু করেছে, উনত্রিশজন যাত্রীর মধ্যে নারীপুরুষ তো আছেই, একটা বাচ্চা মেয়েও আছে। মাঝ সমুদ্রে নেটওয়ার্ক পাওয়া চাপ। তবু একজন ফোন করে। ফ্রেঞ্চ হেল্পলাইন থেকে একজন বউ তুলে বলে, তোমরা মনে হয় ব্রিটিশ ওয়াটারে আছো। ওদের জানিয়ে দিচ্ছি! লোকেশন ভেজো! লোকেশন পাঠানোও মুশকিল। ওদিকে জল কোমর অব্দি এসে গেল প্রায়। ঠান্ডা হাওয়া, জলে ভিজে সবাই কাঁপছে। যাই হোক, হেল্পলাইন থেকে বলে, শান্ত থাকুন। দেখছি কী ব্যাপার। দেখতে দেখতে বোট প্রায় ডুবে যায় আর কি! অনেকে জলে পড়ে গেছে। বেগতিক দেখে বারবার তারা ফোন করতে চেষ্টা করছে, দু দশ মিনিট পর আর কিছু করার থাকবে না। বার বার ফোন আসায় মহিলা বলেন, ধৈর্য ধরুন, দেখছি তো! কিন্তু দেখছে আর কে? ব্রিটিশ রেস্কিউ বোট অনেক দূরে, ফরাসি বোট অন্য মিশনে ব্যস্ত। একদম জলে পড়ে যাওয়ার আগে নিরুপায় হয়ে আবার ফোন করে লোকটা। মহিলা বলেন, জ্বালিয়ে মারলি মাইরি! ইউ উইল নট বি সেভড, বোঝলা?

সাতাশজন মারা যায়। সকলের লাশ ভাসতে পাওয়া যায় সমুদ্রে। প্রতি বছর ওইটুকু সামুদ্রিক পথ, যা নব্বই মিনিটে ক্রস করে দেয় ফাস্ট বোট, সেখানে লোক মরছে। এদেশে হলে অবশ্য পাত্তা দিত না। জায়গাটা ইউরোপ বলেই সাড়া পড়ে, তদন্ত হয়। রেস্কিউ হেল্পলাইনের মহিলাকে ডেকে আনা হয় জেরা করার জন্য। তিনি বলেন, "আমি কী করব? আমি তো প্রোটোকল ফলো করেছি।"

প্রশ্ন ওঠে, আপনি সিচুয়েশন এর গুরুত্ব বুঝতে পারেননি? ওরা রিফিউজি, মরে যাচ্ছিল, একটু সেন্সিটিভ হতে পারছিলেন না? উত্তর আসে, রিফিউজি না হলে মিলেনিয়ার হলে বুঝি বাঁচানোর চেষ্টা করতাম না? আমি কেন দুজন মানুষের মধ্যে তফাত করব? আমার চোখে সবাই ভিক্টিম।

“I didn’t ask you to leave, I said. It was your idea, and if you didn’t want to get your feet wet, love, you shouldn’t have embarked. I didn’t push you into the water, I didn’t fetch you from your village or field or ruin of a suburb and put you in your wretched leaky boat, and now the water’s up to your ankles, I get it that you’re frightened, and you want me to save you and you’re impatient. You’re counting on me. But I didn’t ask you for any of that. So you’ll just have to grin and bear it and let me get on with my job. And apparently these thoughts were so strong that I actually spoke them out loud.”

আপনার ওপিনিয়ন কী রিফিউজি সমস্যা নিয়ে? পুলিশ জিগোয়। উত্তর আসে, আমার কোনোও ওপিনিয়ন নেই। ওপিনিয়ন দিয়ে রেস্কিউ চলে না। সাতাশজন মারা গেছে, সারা কেরিয়ারে আমি কত রিফিউজিকে বাঁচিয়েছি সেটা কে বলবে?

দুজন মানুষ ডুবে যাচ্ছে। তাদের পরিচয় জানা কি তাদের রক্ষা করার জন্য জরুরি? হতে পারে একজন কোটিপতি, শখ করে নিজস্ব ইয়াটে করে মাছ ধরতে এসে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছেন, অন্যজন সিরিয়া বা ইরাক থেকে পালিয়ে এসেছে, তাদের ঘরবাড়ি বোমায় উড়ে গেছে, তারা যা হোক কিছু করে আইনি বা বেআইনি ভাবে নৌকা করে ইংল্যান্ডে যেতে গিয়ে নৌকাডুবির শিকার হয়েছেন। দুজনে একসঙ্গে ডুবছে? আমি একজনকে বাঁচাতে পারব। কাকে বাঁচাব? তাদের অতীত বা সিদ্ধান্ত বা গুডলাক/ব্যাডলাক জানার প্রয়োজন আমার আছে কি? একজন পেশাদার রেসকিউ অফিসারের কাছে কি দুজনেই সমান ভিকটিম নন? না সেখানেও আপনার সো কল্ড হিউম্যানিটির ভূমিকা থাকতে হবে? থাকা কি আদৌ উচিত? কে জানে? আমি তো বলতে পারছি না।

এই লেখক যে দার্শনিক বলে পরিচিত, সেটা বোঝাই যায়। তাই, স্মল বোটও ঠিক ফিকশন নয়, এটা একটা ফিলোসফিকাল প্রশ্নকে তুলে ধরেছে। সে প্রশ্ন কালেক্টিভ ডিসেন্সিটিজেশনের। উচিত অনুচিতের। মনুষ্যত্ব আর দায়িত্ববোধের মাঝে থাকা সূক্ষ্ম লাইনের। এই বই সাহিত্য হিসেবে পড়তে কেমন লাগবে জানি না, কিন্তু এই সময় আর এখনকার মানুষকে বুঝতে হলে বইটা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

একটা জায়গা পড়ে সত্যি একটু নড়ে গেছিলাম।

There is no shipwreck without spectators. Even when there’s no one, when it’s far out at sea, at night, without witnesses, when there’s no living soul in sights for thousands of nautical miles, only waves and the viscous night, covering everything, swallowing everything; when there are no more eyes to see than there are arms to reach out, there are still spectators and the shore from which they are watching is never far away, even if, at the same time, it is infinitely distant.

কিন্তু সতর্ক করে দিচ্ছি, ইটস নট অ্যান ইজি রিড। ভালো লাগবে, তা জরুরি নয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন