১৯৪২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। ব্রাজিলের পেট্রোপোলিস শহর, যেখানে কার্নিভালের রেশ তখনও কাটেনি। সেইদিন সন্ধ্যায় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ডিনার সেরে বাড়ি ফিরে এলেন এক দম্পতি, আজ তারা খুব আনন্দ করেছেন, দুজনেই খুশি। তারপর দাঁতফাত মেজে শোয়ার পোশাক পরে শোওয়ার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
পরদিন সকালে পরিচারিকা যখন তাদের ভাড়া করা বাড়ির দরজা খোলে প্রতিদিনের মতো, তখন কোনও সাড়াশব্দ নেই। সাধারণত এই দম্পতি খুব ভোরে উঠতেন, তাই এমন নিস্তব্ধতা দেখে পরিচারিকার সন্দেহ হয়। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে শোওয়ার ঘরের দরজা খুলতেই তার চোখ আটকে যায়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে আছেন, নিথর, প্রাণহীন। কারো দেহে প্রাণ নেই। পরিচারিকা স্তব্ধ, পুলিশ এসে হতবাক। এরা বিদেশি ছিলেন, খুব নামকরা না হলেও সাহিত্য জগতে অনেকে তাঁদের চেনেন। তাদের পরিচিতদের কেউই নাকি আন্দাজ করতে পারেনি যে এমন একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে। আগের রাতেও তারা বন্ধুদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে গল্প করেছেন, ব্রাজিলের প্রতি তাদের মুগ্ধতা, কার্নিভালের আনন্দ এবং ইউরোপের যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাতের খাবার টেবিলে তাদের দেখে মনে হয়নি যে এটাই তাদের শেষ সন্ধ্যা। কেউ বোঝেনি, স্বামী স্ত্রী ফিরে যাবেন, পরস্পকে চুমু খাবেন, এবং বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবেন।
পুলিশের ছবিতে দেখা যায়, তারা আগের রাতের পোশাকেই শুয়ে আছেন। পুরুষটি চিত হয়ে শুয়ে আছেন, আর ভদ্রমহিলা তাঁর কাঁধে মাথা রেখেছেন। বেডসাইড টেবিলে একটি নেভানো নাইট ল্যাম্প, তিনটি মুদ্রা, দেশলাই এবং একটি খালি গ্লাস। গ্লাসের পেছনে ছোট একটি চিঠি, হাতে লেখা চিঠি। পর্তুগিজ ভাষায় "Declaraçao" শিরোনামের সেই চিঠিটি আসলে জার্মান ভাষায় লেখা একটি বিদায় বার্তা:
"আমি, নিজের ইচ্ছায় এবং সম্পূর্ণ সজ্ঞানে, এই জীবন থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমার শেষ কর্তব্য হিসেবে আমি এই চমৎকার দেশ, ব্রাজিলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা আমাকে এবং আমার কাজকে এত সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছে। এখানে কাটানো প্রতিটি দিন আমাকে এই দেশের প্রতি আরও বেশি করে ভালোবাসা জুগিয়েছে। আমার মাতৃভাষা এবং আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল ইউরোপ যখন ধ্বংস হয়ে গেছে, তখন আমি এখানেই নতুন করে জীবন শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ষাট বছর বয়স পার করে নতুন করে শুরু করার মতো শক্তি আমার আর নেই। তাই আমি মনে করি, সময় থাকতে সম্মানজনকভাবে জীবনের ইতি টানাই ভালো। বন্ধুদের জানাই আমার শুভেচ্ছা! আমি আশা করি, তারা এই দীর্ঘ রাতের পর নতুন দিনের আলো দেখবে। আমি অতিরিক্ত অধৈর্য হওয়ার কারণে তাদের আগেই চলে গেলাম..."
চিঠিতে ব্রাজিলের প্রতি ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি ছিল ইউরোপে নাজিদের আগ্রাসন এবং যাযাবরের মতো জীবন কাটানোর হতাশা। ঘরে আরও কিছু চিঠি পাওয়া যায়, যা তিনি তাঁর পরিবার এবং বন্ধুদের উদ্দেশ্যে করে লিখেছিলেন। এছাড়াও, কিছু অপ্রকাশিত লেখা উদ্ধার করা হয়, যা বিংশ শতাব্দীর অন্যতম এই প্রতিভাবান লেখকের বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডারে যুক্ত হয়।
কে এই দম্পতি? অনেকে জানবেন, অনেকে জানবেন না। শিল্পী সাহিত্যিকদের জগতে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। বেশি সংবেদনশীল মানুষদের ডিফেন্স মেকানিজম ভিন্ন, সে নিয়ে প্রায় অনেকেই সহমত হয়েছেন। কিন্তু মৃত্যু নয়, আমার আগ্রহ এই দম্পতির জীবন নিয়ে।
হ্যাঁ, ভদ্রলোকের নাম স্টিফেন জোয়্যাগই বটে। ভিয়েনায় এসে অস্ট্রিয়ান লেখকদের প্রতি একটু টান বেড়েছে। সমসাময়িকদের লেখা খুব অল্পই পড়েছি পিটার হানডকে বাদে, কিন্তু অতীতের যে দুজনকে নিয়ে ফের আকর্ষণ বোধ করেছিলাম তারা হলেন স্টিফেন জোয়্যাগ আর থমাস বার্নহার্ড। কেন জানি জোয়্যাগের জন্য একটা অন্যরকম আবেগ আছে। আমি যদিও ওঁর সব লেখা পড়িনি এখনও, তবু আছে। জীবনকালে তিনি খুব বিশাল নাম করেননি ঠিকই, কিন্তু ইদানীং পাঠক তাঁকে নতুন করে আবিষ্কার করছে, মুগ্ধ হচ্ছে, 'আ নেগলেক্টেড জিনিয়াস' বলে একাধিক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। আমি প্রথমে যে ছোট্ট একটা জিনিস পড়ে ভদ্রলোকের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম, সেটা বই নয়, গল্প নয়, প্রবন্ধ নয়, বরং ভিয়েনা সম্পর্কে একটা ছোট্ট মন্তব্য। ভিয়েনা শহর হিসেবে এত কালচার্ড কেন ? নাজিদের হাতের মুঠোয় থেকেও এই শহর সেন্ট্রাল ইউরোপের কালচারাল ক্যাপিটাল হল কী করে ? জোয়্যাগ যা বলেছেন, আমারও আসলে প্রায় একই ধারণা ছিল, সেইজন্য হয়তো গুগলের কল্যাণে এখানে এসে নেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে তাঁর এই পিসটুকু চোখে পড়েছিল।
There was hardly a city in Europe where the aspiration to culture was more passionate than in Vienna. It was precisely because, after so many centuries, the monarchy, Austria itself, no longer knew either political ambition or military success, that patriotic pride was so strongly attached to the achievement of artistic supremacy. The Habsburg Empire, which had once dominated Europe, had long been despoiled of its most important and prosperous Provinces, German and Italian, Flemish and Wallonian; but the capital remained intact in its ancient splendour, the seat of the court, preserver of a millennial tradition.
আবার তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী শার্লট আল্টম্যান থুড়ি লোত্তে আল্টমানকে নিয়েও আকর্ষণ কম নেই। ভদ্রমহিলা কবি, জাতে বেলজিয়ান, এবং স্বামীর চেয়ে ঢের ছোট। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র চৌত্রিশ। তবু তারা পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ ছিলেন শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত। একে অপরের প্রতি স্নেহ ভালোবাসা তো ছিলই, মিউচুয়াল রেসপেক্টও কম ছিল না। লোত্তে আল্টমান কিচ্ছু ছাপাননি মনে হয়, কিন্তু তাঁর কাব্যচর্চার প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি স্বামীর সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করতেন, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতেন, সম্পাদনাও করতেন তাঁর লেখার। কিন্তু এই মানুষটিকে ভালোবেসেছিলেন কেন? কী দেখে? তাঁর সাহস দেখে, শিড়দাঁড়া দেখে, না লেখা পড়েই মোহিত হয়েছিলেন? কে জানে ?
১৮৮১ সালের ২৮শে নভেম্বর ভিয়েনার এক ধনী ইহুদি পরিবারে স্টিফেন জোয়্যাগ এর জন্ম হয়। (আমি জোয়্যাগ লিখছি বটে, অনেকেই স্বাইগ বা স্বেইগও বলেন শুনেছি, তবে সে থাক, উচ্চারণের রকমফের তো থাকেই) সেই সময় অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য ছিল সম্রাট ফ্রাঞ্জ জোসেফের অধীনে। সম্রাট ছিলেন একজন শিক্ষিত মানুষ, যিনি বহু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। সংস্কৃতি এবং ভিন্নতার প্রতি সহনশীলতা ছিল প্রধান বৈশিষ্ট্য।
ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে ডক্টরেট করার সময় জোয়্যাগ সাহিত্যিক মহলে পরিচিত হন। ১৯০৪ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস "Los prodigios de la vida" প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি উপন্যাস, সাংবাদিকতা, প্রবন্ধ এবং নাটক লিখতে শুরু করেন। ১৯১০ সালে তিনি ভারত এবং ১৯১২ সালে আমেরিকা ভ্রমণ করেন। ১৯১৩ সালে তিনি সালজবুর্গে গিয়ে বসবাস শুরু করেন, কাকতালীয় ভাবে যেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর আঁচ পড়েছিল বেশি। তিনি সেনার আধিকারিক হিসেবে যোগ দেন, কিন্তু পরে সুইজারল্যান্ডে নির্বাসিত হন এবং পরবর্তীতে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন, এরপর আর কোনওদিন তিনি যুদ্ধের সমর্থন করেননি। ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত সালজবুর্গে বসবাস করেছেন জোয়্যাগ। ততদিনে তিনি একটু একটু করে বুঝতে পারছেন যে নাৎসি জার্মানি আগেপরে অস্ট্রিয়াকে দখল করবেই। তিনি নিজে ধর্ম পালন করতেন না, কিন্তু বংশগতভাবে ইহুদি ছিলেন বলে তাঁকে যথেষ্ট ভুগতে হয়েছে। তবুও হিটলারের জাতীয়তাবাদী মতবাদের সমালোচনার করে তিনি আজীবন লেখালিখি চালিয়ে গিয়েছেন, যদিও সরাসরি হিটলারের বিরোধিতা করেননি বলে সাহিত্য মহলে কথাও শুনতে হয়েছে কম নয়।
ততদিনে প্রথম স্ত্রী ফ্রিডেরিক মারিয়া বার্গার ফন উইন্টারনিজের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে, নাজিদের ঝামেলা বেড়ে যাওয়ায় একসময় তাঁর নতুন পার্টনার লোত্তে আল্টমানের সঙ্গে অস্ট্রিয়া থেকে পালিয়ে প্রথমে ফ্রান্সে এবং পরে ব্রিটেনে যান।
ইংল্যান্ডের বাথে তারা একটি বাড়ি খুঁজে নেন, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জোয়্যাগের আশা ভেঙে যায়। তিনি আশঙ্কা করতে থাকেন যে জার্মানি হয়তো ব্রিটেনও আক্রমণ করবে, কারণ তাঁর বইগুলো ততদিনে একের পর এক নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং প্রকাশ্যে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দুজনে আগেভাগে নিউ ইয়র্কে পালিয়ে যান। কিন্তু সাধের অস্ট্রিয়াকে দেখতে না পেয়ে তখন তাঁর মনে অবসাদ বাসা বেঁধেছে। কবে দেশে ফিরবেন ঠিক নেই। ম্যানহাটনে স্বস্তি না পেয়ে তিনি লোত্তেকে নিয়ে "The World of Yesterday" লিখতে শুরু করেন, যা অনেকের মতে তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ। ১৯৪১ সালে "Schachnovelle" বা রয়্যাল গেম বই হয়ে প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি দক্ষিণ আমেরিকা গিয়ে ব্রাজিলে স্থায়ী ভাবে থাকতে শুরু করেন।
ব্রাজিলের তৎকালীন সরকার ইউরোপীয় ইহুদিদের আশ্রয় দিতে রাজি না হলেও, তাঁর জন্য ব্যতিক্রম কেস হিসেবে পারমিট দেওয়া হয়। ভিয়েনার এই লেখকের খ্যাতি ব্রাজিলের দরজা খুলে দেয় হয়তো। রিও ডি জ্যানেইরো থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে পেট্রোপলিসে তিনি একটি বাংলো ভাড়া নেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি ব্রাজিল এবং এর সংস্কৃতিতে মুগ্ধ হয়ে যান। (কে না হয়) তিনি ব্রাজিলকে একটি সহাবস্থানের মডেল হিসেবে দেখেছিলেন, যেখানে আফ্রিকান, পর্তুগিজ, জার্মান, ইতালীয়, সিরিয়ান এবং জাপানি বংশোদ্ভূত মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে। তিনি লিখেছিলেন: "এখানে কোনো বর্ণভেদ নেই, কোনো সেগ্রিগেশননেই, কোনো অহংকার নেই... কে এখানে জাতিগত বিশুদ্ধতার বড়াই করবে?"
কয়েক মাসের মধ্যে তিনি তাঁর শেষ বই "Brazil: Land of the Future" লেখেন, যেখানে তিনি ব্রাজিলের সমাজের প্রশংসা করেন এবং ইউরোপের অন্ধকারের বিপরীতে এই দেশকে তুলে ধরেন। কিন্তু তাঁর এই কাজের জন্যও বিতর্ক সৃষ্টি হয়, কারণ গেটুলিও ভার্গাসের সরকারের প্রতি তাঁর সমর্থন অনেক ব্রাজিলিয়ানকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
ব্রাজিলের প্রতি মুগ্ধতা তাঁর হতাশা দূর করতে পারেনি। নির্বাসনের একাকীত্ব এবং অক্ষশক্তির বিস্তার তিনি সহ্য করতে পারছিলেন না। তাঁর ভয় ছিল, জার্মানি হয়তো ব্রাজিল পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। ১৯৪২ সালের কার্নিভালের সময় তিনি এক বন্ধুকে লিখেছিলেন, "সত্যিই কি মনে করো নাৎসিরা এখানে আসবে না? এখন আর কিছুই তাদের আটকাতে পারবে না।" নিজের দেশ এবং মাতৃভাষা থেকে দূরে থাকার কষ্ট তিনি আর সহ্য করতে পারছিলেন না।
এর কয়েক দিন পরই আসে ২১শে ফেব্রুয়ারির সেই রাত। স্বামী স্ত্রী দুজনেই একসাথে বারবিচুরেট ওভারডোজ নিয়ে জীবনের শেষ নিদ্রায় শায়িত হন। জোয়্যাগ তাঁর এক বন্ধুর জন্য একটি বিদায় বার্তা লিখে যান: "আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই... আমরা ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি, তাই একে অপরের থেকে আলাদা না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।" লোত্তে তাঁর সিদ্ধান্তের কোনো ব্যাখ্যা দেননি। অটোপ্সি করে থেকে জানা যায়, জোয়্যাগের আগে মৃত্যু হয়েছিল এবং লোত্তে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর বিষ খেয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
সেই বিদায় বার্তা বা চিঠি, যা বেডসাইড টেবিলে রাখা ছিল, সেটারও এক গল্প আছে। লেখকের ইচ্ছা ছিল চিঠিটি যেন ব্রাজিলের রাইটার্স ক্লাবের সভাপতি ক্লাউডিও ডি সৌজার হাতে তুলে দেওয়া হয়, কিন্তু তা আর হয়নি। পুলিশ চিঠিটিকে তদন্তের এভিডেন্স হিসেবে নিয়ে যায়। প্রথম সেই চিঠিটি পড়েন ফ্রেডরিখ ওয়েইল নামের জার্মানির এক টেক্সটাইল ব্যবসায়ী। পুলিশ অফিসার জোসে দে মোরাইস তাঁকে চিঠিটি অনুবাদ করতে বলেন। ওয়েইল অনুবাদ করে দেন এবং অনুরোধ করেন তদন্ত শেষ হলে চিঠিটি যেন তাঁকে দেওয়া হয়, কারণ তিনি এই লেখককে ভালোবাসেন এবং শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু পুলিশ জানায়, ব্রাজিলের আইনে তা সম্ভব নয়। এর তিরিশ বছর পর সেই মামলার এক পুলিশ অফিসার ওয়েইলের সাথে যোগাযোগ করেন এবং ১০,০০০ ডলারের বিনিময়ে চিঠিটি বিক্রি করার প্রস্তাব দেন। ওয়েইল রাজি হন এবং রিওর একটি বারে গিয়ে টাকা দিয়ে চিঠিটি কিনে ফেলেন। এরপর তিনি তাঁর বন্ধুদের বারবার সেই গল্প বলতেন, কিন্তু কখনও সে চিঠি দেখাননি। ২০০০ সালে ওয়েইলের মৃত্যুর পর মনে করা হয়েছিল চিঠিটি তাঁর উত্তরাধিকারীদের কাছে আছে। কিন্তু সাংবাদিকরা জানতে পারেন, ওয়েইল ১৯৯২ সালেই চিঠিটি জেরুজালেমের ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে দান করে দিয়েছেন। আজও সেটি সেখানে সংরক্ষিত আছে।
যাই হোক, জোয়্যাগের লেখার একটা আলাদা বিশেষত্ব আছে। তাঁর লেখায় একটা মেলানকোলি আছে, একটা বিষাদ আছে, কিন্তু একইসঙ্গে একটা আত্মবিশ্লেষণ এর জায়গাও থাকে। তিনি চরিত্রদের মনোজগত নিয়েই থাকেন বেশিরভাগ, গল্প ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে নতুন গল্প শুরু হতে পারে, স্টোরি উইদিন আ স্টোরি হতে পারে, কিন্তু যাই হোক না কেন, গল্পের বাঁধুনি একচুলের জন্যও দুর্বল হয় না। একটা নেশা ধরানো ব্যাপার আছে জোয়্যাগের লেখায়। তাঁর সব লেখাই পাবলিক ডোমেনে, কিন্তু বাংলায় কতগুলো অনুবাদ হয়েছে জানি না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন