বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫

দ্য টেইন্টেড কাপ

 

গত বছর রবার্ট জ্যাকসন বেনেটের ফ্যান্টাসি উপন্যাস 'দ্য টেইন্টেড কাপ' পড়ে আমার দারুণ লেগেছিল। তখন পরপর কয়েকটা ফ্যান্টাসি পড়েছি, তাতে এপিক ফ্যান্টাসি থেকে শুরু করে আরবান ফ্যান্টাসি সবই ছিল। কিন্তু এই বইটা বিশেষ ভাবে আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে রইল।
'দ্য টেইন্টেড কাপ' শ্যাডো অফ দ্য লেভিয়াথন সিরিজের প্রথম উপন্যাস। পরের বই এই বছর এপ্রিলেই হয়তো আসবে, তাই এই বইটার খবর জানিয়ে রাখছি।
ফ্যান্টাসি উপন্যাসে যা থাকে, সে সব এখানে পুরোদস্তুর আছে। চমৎকার ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং, অসামান্য কল্পনা। কিন্তু এর পাশপাশি এই বইটা আসলে একটা গোয়েন্দা গল্পও বটে। আর গোয়েন্দা জুটির চরিত্রগুলোও ভারী ইন্টারেস্টিং। আনা দোলাবরা সরকারি বিভাগে কার্যরত এক গোয়েন্দা, তার নামডাক আছে, কিন্তু মাথায় ছিট আছে বলেও কেউ কেউ বলে থাকেন। এই বয়স্ক মহিলাকে দেখে মাঝেমধ্যে মিস মার্পলের কথা মনে পড়তে পারে। আনা বইয়ের মধ্যে হুমড়ি খেয়ে বসে থাকেন আর সর্বক্ষণ গান্ধারীর মতো চোখে একটা কাপড় বেঁধে রাখেন। তাই বলে তিনি অন্ধ নন, কিন্তু একটা ইন্দ্রিয় কম ব্যবহার করলে নাকি তাঁর অন্য ইন্দ্রিয়গুলো বেশি কাজ করে, মগজাস্ত্রের তেজও বাড়ে। তার সর্বক্ষণের সহকারী ডিনিওস কোল। কোল আবার প্রশিক্ষিত এনগ্রেভার, তাকে জাদুবিদ্যায় দীক্ষিত করা হয়েছে সব কিছু টু দ্য পয়েন্ট মনে রাখার জন্য, তদন্ত করতে গিয়ে সে যা দেখে, সব কিছুই তার মাথায় ছেপে যায়। এই জুটির সামনে একটা কঠিন কেস এসে পড়ে। একের পর এক ইম্পেরিয়াল অফিসার মারা যাচ্ছে, তাদের গা থেকে গজিয়ে যাচ্ছে গাছ। এদিকে তারা যে দুনিয়ায় থাকে, সেখানে বর্ষাকালে লেভিয়াথান আর প্রকাণ্ড সামুদ্রিক প্রাণীরা হামলা করে, সমুদ্র ঘিরে থাকা নিরাপত্তা ঘেরা টপকাতে পারলে তারা গোটা দুনিয়াকেই ধ্বংস করে দেবে। ইম্পেরিয়াল অফিসারের পাশপাশি সমুদ্র ঘেরার ইঞ্জিনিয়াররাও মারা পড়তে থাকে। হাই স্টেক। রহস্যভেদ না করলে কাম খতম। এমন সময় এই তদন্তের ভার পড়ে আনা আর কোলের ওপর।
প্রথম থেকেই গল্প এগিয়েছে তরতর করে। ছোটছোট সংলাপের মাধ্যমে এই অদ্ভুত দুনিয়ার ছোটখাটো জিনিসের সঙ্গে পরিচিতি ঘটেছে পাঠকের। ক্রমে রহস্যের জাল আরো জট পাকিয়েছে, টেনশন বিল্ডাপ হয়েছে পাল্লা দিয়ে। সঙ্গে এসেছে অ্যাকশন। কিন্তু তা সত্ত্বেও আনার চরিত্রটা অসম্ভব হিউমারাস। মাঝেমধ্যেই পড়তে পড়তে হাসি পেয়ে যায়৷ একদম শার্লকিয়ান ভঙ্গিতে তদন্ত চালিয়ে এই গোয়েন্দা রহস্য সমাধান করেন, কিন্তু আগামীতে এই জুটির আরো কেস দেখার জন্য আগ্রহ কমে না।
বই জুড়ে রহস্য, অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার আর ম্যাজিকের ছড়াছড়ি। দম ফেলার জায়গা নেই, পাঠক কখন যেন এই দুনিয়ায় টেলিপোর্ট হয়ে যায়৷ অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে, লেভিয়াথনরা হামলা করছে, চক্রান্তকারীরা ঝামেলা পাকাচ্ছে, এরই মধ্যে ডিটেকশন আর ডিডাকশন চলছে, জীবন মরণ লড়াই চলছে, তলোয়ার চালাচ্ছে দুই পক্ষই। বই জমে ক্ষীর।
ফ্যান্টাসি আর শার্লকিয়ান মিস্ট্রির ভক্তদের জন্য মাস্ট রিড। দ্বিতীয় বইটা আসার আগে প্রথমটা পড়ে ফেলুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন