রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪

দিনযাপন (হেমন্ত ২০২৪)


“October, baptize me with leaves! Swaddle me in corduroy and nurse me with split pea soup. October, tuck tiny candy bars in my pockets and carve my smile into a thousand pumpkins. O autumn! O teakettle! O grace!” 


প্রতি বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি গিয়ে ভাবি, এইবার কি সেই 'অটাম' দেখা হবে? মার্কিনি মুলুক আর কানাডা না হোক, ছবিতে যে দেখে আসছি চিরকাল, সেই গোড়ালি ডোবা পাতার কার্পেটে হেঁটে যাওয়া দিন, সোনালি পাতার রোশনাই, সবুজ হলুদ কমলা লালের হাত ধরাধরি করে শেষ দিনগুলো কাটিয়ে দেওয়া! বিষাদের দিন হয়, আনন্দের! ফিজগেরাল্ড যেমন বলেছেন, লাইফ স্টার্টস অল ওভার এগেন হোয়েন ইন গেটস ক্রিস্প ইন ফল! 

অটাম আর ফল কি এক? মনে হয় না! সত্যি বলতে, প্রতিটা ঋতু যেন সেখানকার নিজস্বতা নিয়ে বেঁচে থাকে! ইউরোপিয়ান সামার্স আর ভারতীয় গ্রীষ্মের কোনও তুলনা টানা যায় না! অটাম আর হেমন্ত কস্মিনকালেও এক নয়! ইংরেজি 'ফল' আর হিন্দি 'পতঝড়' এর ব্যাঞ্জনা শুধু কানে নয়, মনেও অন্যরকম করে বাজে। আসলে, প্রতি বছরই অটাম দেখি ঠিকই, কিন্তু মন ভরে না! মনে হয়, আরেকটু দীর্ঘজীবী হতে পারত এই সোনালি সময়টা! 

বছর কয়েক আগে স্মরণজিত 'হেমন্তের প্রেমপত্র' নামে একটা প্রতিবেদন লিখেছিলেন, সেখানে তিনি লিখেছেন, "দুর্গাঠাকুর ভাসানের পর থেকেই হেমন্তের শুরু। গাছের পাতায় মরচে ধরতে শুরু করে তখন থেকেই। শুরু হয় পাতা ঝরার মরসুম। ব্রোঞ্জের প্রজাপতি এসে জড়ো হয় শহর থেকে গ্রামের পথেঘাটে, মানুষের মনে। নানা বাড়ির আনাচ-কানাচে ও ছাদে জ্বলে ওঠে আকাশপ্রদীপ! একাগ্র সেই আলো যেন অন্য এক পৃথিবীর কাউকে নীরবে বলে, ‘ভুলিনি, আমরা ভুলিনি তোমায়!’

জীবনে হেমন্ত আসার বিশেষ কোনও বয়স আছে বলে আমার মনে হয় না। হেমন্ত মানে বার্ধক্যের দিকে পা বাড়ানোর সূত্রপাত নয়, বরং রংমিলান্তির দিনলিপি হাতবদল করে একটু ভালো করে জীবনকে দেখে নেওয়া! নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়া, যেতে সবাইকেই হয়, সেই পার্মানেন্ট 'পতঝড়' সকলের জীবনেই আসে, কিন্তু পাতাঝরার মরসুম আসার আগে, মনের ভিতর আলো জ্বালানোর চেষ্টাটুকু আদৌ করেছি কি? আমাদের মনের আকাশপ্রদীপ কি জ্বলেছে সলতের শেষ বিন্দু অব্দি?

শরতের শেষ বা মাঝামাঝি যাই হোক, মাসখানেক ধরে আমার রুটিন, বিকেলের দিকে কানে হেডফোন লাগিয়ে ঘন্টা আড়াই তিনের জন্য হাঁটা লাগানো। মাঝেমধ্যে বেশিও হয়ে যায়!
পথও মোটের ওপর এক, কিছুদূর গিয়েই পার্কে ঢুকে পড়ি। প্রাতার নামে পার্ক বটে, আসলে চোদ্দ আনা ফরেস্ট ল্যান্ড। ঘন জঙ্গলের মধ্যে ঘোড়সওয়ারদের জন্য সুঁড়িপথ, আর অসংখ্য পায়ে চলে ট্রেল কাটাকুটি করে গেছে। মাঝে একটা ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পাকা রাস্তা,  সেখানে গাড়ি চলাচল নেই, দুদিকে গাছের সারি, প্যারালালি দুটো কাঁচা রাস্তা৷ অজস্র গাছ দুদিকেই, ঘাসবন, মখমলি মাঠ। অনেকে বড় রাস্তা দিয়ে ছোটে, অনেকে হাঁটে, কেউ কেউ স্কেট করে বা সাইকেল নিয়েও যায়। 

এই পথে গিয়ে পড়লে বোঝা যায়, অটাম কাকে বলে! হলুদের সমারোহ শুধু নয়, এখানে কিছুক্ষণ সময় কাটালে কেউ যেন মনের মধু ঢালে, মুখে একটা মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়, নাকে একটা সুগন্ধি পাকা কমলার সুবাস আসে। রিলকে লিখেছিলেন, "At no other time does the earth let itself be inhaled in one smell, the ripe earth; in a smell that is in no way inferior to the smell of the sea, bitter where it borders on taste, and more honeysweet where you feel it touching the first sounds. Containing depth within itself, darkness, something of the grave almost.'"

নিয়মিত খেয়াল করলে দেখেছি গাছগুলোর সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। শুনতে বোকা বোকা লাগে, কিন্তু এক একটা বিশেষ গাছ দেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। গ্রীষ্মের মাঝ থেকেই কিছু কিছু গাছের পাতা শুকিয়ে ঝুরঝুরে হয়ে গেছিল, কিন্তু সেপ্টেম্বর আসতে আসতে তাদের আরেক রাউন্ড নতুন পাতা গজিয়ে গিয়েছে, কচিকলাপাতা রঙ গাঢ় সবুজ হয়ে লেমন ইয়েলো, তারপর ক্রোম ইয়েলো হয়ে উঠছে একটা একটা করে। মাঝে দু চারদিন ভীষণ বৃষ্টি হয়েছিল, ভিয়েনায় বন্যা হয়ে যা তা অবস্থা, তারপর দেখি প্রখর তাপে শুকিয়ে যাওয়া মরাঘাসের ওপর লেবুরঙের অসংখ্য পাতা, দূর্বাঘাস, তার মধ্যে কোথাও কোথাও ঘাসফুল আর মাশরুম ফুটেছে, কালো বাদামি ফুটকি দেওয়া ফড়িং আর অন্যান্য উড়ুক্কু পোকা নাচানাচি করে বেড়ায়। প্রজাপতির কথা ভাবছেন তো? রোমান্টিসাইজ করে ঢুকিয়ে দিলে কেউ বুঝতে পার‍ত না ঠিকই, কিন্তু কেন জানি প্রজাপতি আমার চোখে পড়েনি। বরং অচেনা ছুটকু পাখি দেখেছি মাঝেমধ্যে। 

সেপ্টেম্বর শেষ, অক্টোবর চলছে, দুর্গাপূজা চলে গেল! ভিয়েনার চেনামুখের পুজো আর ভয়ংকরী সব কেরিয়ারিস্টিক প্রশ্নের ভয়ে এইবার আমরা প্রাগে পালিয়ে গিয়েছিলাম। চমৎকার ছিমছাম পুজো। আর উত্তুরে শহরে শীত ভালোই পড়েছে, হেমন্তও পুরোদমে হলুদের পিচকিরি চালাচ্ছে! গায়ে একাধিক লেয়ার গলিয়ে পথেঘাটে চক্কর দিই। আমাদের বন্ধু ক্রিস্টেন প্রাগের মেয়ে, ব্রাজিলে গিয়ে দেখা হয়েছিল। দু বছর পর তার সঙ্গে দেখা, আগের মতোই সুন্দরী আছে, আগের মতোই আন্তরিক। ক্রিস্টেনের বয়ফ্রেন্ড উৎকর্ষ হলদ্বানীর ছেলে, তাদের সঙ্গে আড্ডা করে বেশ হালকা লাগল। আজকাল খুব অল্প লোকের সঙ্গেই কথা বলতে ভালো লাগে। তক্কে জড়াতে ইচ্ছে করে না। কিয়ানু রিভসের মতো আমারও বলতে ইচ্ছে করে, "টু প্লাস টু ফাইভ বলছ? বেশ, তাই হবে।" ক্রিস্টেনদের সঙ্গে আড্ডা মেরে মনে একঝলক বাতাস এসে লাগল।

ক্রিস্টেন এমনিতেই ভীষণ বুদ্ধিমতী মেয়ে, এশিয়ান স্টাডিজ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছে  সে আমাদের প্রশ্ন করে ভারতবর্ষ আর সেখানকার জীবন সম্পর্কে জেনে নিতে চায়। বিভিন্ন পার্স্পেক্টিভ পেলে তার সুবিধা হয়। আমি ইনিয়েবিনিয়ে উত্তর দিই। আমাকে ভারতীয় বা বেনারসী বা বাঙালি ইত্যাদি বলে দাগিয়ে দিলে আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি, আমার সেরকম কোনও বিলংগিংই নেই। প্রতিটা দেশে গিয়েই মনে হয়, এ তো আমারই দেশ! প্রাগ আমার নিজের শহর, আর্জেন্টিনায় আমার চিরকালের বাসা, প্যারিস বা আমাজোনিয়ার মানুষকে আমি জন্ম জন্মান্তর ধরে চিনি। কোথাওই নিজেকে 'স্ট্রেঞ্জার' বলে মনে হয় না, কিন্তু তারপর আমি সেখান থেকে চলে আসি, সেই বিলংগিংনেসটাও আমার সঙ্গেই চলে আসে। যে সমস্ত শহরেই দিন কাটিয়েছি, সেই সময়ে সেই শহরগুলো আমার কাছে আপন হয়ে উঠেছে, কিন্তু কয়েক বছর পর সেখানে ফিরে গেলে (বিশেষ করে দেশে) আর আগের শহরটাকে খুঁজে পাই না। তখন আবার নতুন করা সম্পর্ক পাতাতে হয়। মেজাজে একটা উইকেন্ড কাটিয়ে ফের ভিয়েনায় ফিরে এলাম। সেই পাউঁরুটি ডিম আপেল, উল্টোপাল্টা কাজ, সেই কামচালাউ দুপুররাত্রির রান্নার ফাঁকে বই আর সিরিজের চিরাচরিত দিনলিপি। ব্যতিক্রম শুধু ওই হাঁটাটুকু। যাকে বলে, মনের তেষ্টা মেটানো। 

অক্টোবর শেষ হতে হতে সবুজ ঘাসের রঙ সূর্যাস্তের আকাশের মতোই পাল্টে যেতে থাকে। সব অবশ্য নয়, প্রকৃতিতে বৈচিত্র্য চিরকাল বিদ্যমান। একদিকে এক থালা গাছ শুকিয়ে  শাকভাজা, অন্যদিকে নতুন ঝোপে সতেজ পান্নার ছাপ দেখি। তবে কিনা সিজন চেঞ্জের ঢাক বাজছে, বুঝতে কষ্ট হয় না। টাল খাওয়া এক একটা গাছ সবুজ তৃণভূমিতে একা দাঁড়িয়ে শোভিত হয়, তারা একটু একটু করে গা মুচড়ে হলদে কালচে পাতা ফেলতে শুরু করে। চেয়ে চেয়ে দেখি, পায়ের তলায় শুকনো পাতার সঙ্খ্যা বেড়ে চলে, চেনা গাছগুলোর পাতায় রঙ ধরে। এমন কিছু ম্যাজিক সৌন্দর্য নয়! তীব্র নয়, খুব ঢিমে চালে হেমন্ত থুড়ি অটাম আর ফল এসে কড়া নাড়ে এই বনপ্রান্তরে। এক একটা গাছে এক একটা শেড, তা বদলে যেতে তিন চারদিন লাগে। আমরা বুঝি না, আমাদের চোখে সামগ্রিক বদল ছাড়া কিছু ধরা দেয় না। কিন্তু অন্যান্য প্রাণীরা হয়তো ঠিকই বোঝে! হয়তো আমার মনের ভুল, কিন্তু বুকে হাত রেখে বলছি, গরমকালে যে সমস্ত পোষা কুকুরগুলো লাফঝাঁপ করে নিরন্তর খেলা করে যেত, তাদের দুরন্তপনাতেও একটু একটু করে ভাঁটা পড়েছে। আমি মিলন কুন্দেরা বা হান্স ফালাদা কানে দিয়ে হাঁটি। হলুদের শেড ক্রমে গাঢ় হচ্ছে, পায়ের তলায় ঝরাপাতার আস্তরণ গভীর হয়। জঙ্গল পাতলা হচ্ছে, দূরে মাঝেমধ্যে হরিণের দল দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে দেখা যায়। বাতাসে হিমের ছোঁয়া, টি শার্ট থেকে সোয়েট শার্ট, তারপর একটা জ্যাকেট। রোদ এখনও ভালোই ওঠে, কিন্তু সেই আরামদায়ক উষ্ণতা আর নেই। বেখেয়াল হয়ে চলি, মাঝেমধ্যে ইয়ারপিস খুলে বেঞ্চিতে বসে জিরোই! ছোট ছোট সাজানো হ্রদ... লেক বলাই ঠিক হবে.... হাঁসের দল সাঁতার কাটে। সবুজ জলের পাশে একটা শান্ত পরিবেশ, কেউ কেউ বেঞ্চে বসে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা, কেউ কেউ দেখি ছবি আঁকছে। জলে সবুজের ছায়া পড়ে, হলুদ পাতা পড়ে, সেদিকে তাকিয়ে ঘোর লেগে যায়। আমিও বসে পড়ি ইতিউতি। জিরোই। ব্লুটুথ বন্ধ করে অবান্তর কথা ভাবি!   

অনেকদিন গান শোনা হয় না সেভাবে! বিশাল ভারদ্বাজের কথা আর সুর যে আমার কী প্রিয়! পুরোনো সুর গুনগুন করি! প্রিয় গান গাইতে গিয়ে মনে পড়ে যায়, উর্দু বইগুলো পড়া হয়নি! লখনউতে আমার বন্ধু ফৌজান আন্সারি কি এখনও উর্দুর ক্লাস নেয়? ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে একযুগ ধরে দেখা হয়নি! নিয়ম মেনেই সবাইকে মিস করি! অক্টোবর এর সময়টা আমাদের এই পুজো সেই পুজো ভাইফোঁটা করেই চলে যেত, হেমন্ত ফেমন্ত নিয়ে কোনোদিন মাথা ঘামাইনি। হেমন্তও আমাদের সেভাবে দেখা দেয়নি। কিন্তু অক্টোবারের একটা মাহাত্ম্য থাকেই, বিশেষ করে জীবনের একটা বিশেষ সময়, যখন ছেলেরা বন্ধুদের নিয়েই বেঁচে থাকে। তারপরের গপ্পো সবাই জানে। স্মৃতিচারণেরও হয়তো একটা স্পেসিফিক ঋতু আছে। ঋতু না হোক, মাস তো আছে। অক্টোবর! সুজিত সরকারের সিনেমা হোক বা আমজনতার জীবন, উই আর গ্রেটফুল ফর দিস মান্থ। আকাশের তারা হয়ে যাওয়া মানুষ, হারিয়ে যাওয়া বন্ধু, ফেলে আসা সময়... স্মরণজিতের মতোই মনে মনে বলি, ‘ভুলিনি তোদের বুঝলি! তোদের জন্য, তোমাদের জন্য আর কিচ্ছু করব না জানি। করতে পারব না। কিন্তু তোমাদের মনে রেখে দেব জেনো। ভুলব না কিছুতেই।’


দিন কাটে। হঠাৎ একদিন খেয়াল করি, হলুদ গাছগুলোর পাতা প্রায় অনেকটাই ঝরে গিয়েছে। গাছেদের হাত পা আঙুল ছড়ানো কঙ্কাল দেখা দিচ্ছে, সন্ধ্যে নামার আগে কোনো কোনো কাজে শত শত কাক এসে বসে থাকে। দেখে একটা ভূতুড়ে ছবির দৃশ্য বলে মনে হয়। কমবেশি একই রাস্তায় হাঁটি, একই সময়ে হাঁটি বলে অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়, জার্মান কেতা মেনে আলাপচারিতা হয় না বটে, কিন্তু আমি সবাইকে মনে রাখতে চেষ্টা করি। কেউ দু পায়ে দু রঙের মোজা পরে ছোটে, কেউ চারটে কুকুর নিয়ে হাঁটে। মাঝরাস্তায় গিয়ে আমি একটা বেঞ্চে বসি, তার দুটো বেঞ্চ পরে এক হুডি পরা বয়স্ক মানুষ এসে বই খুলে বসে। আমি প্রায় রোজই উঁকি মেরে নামটা দেখতে চেষ্টা করি, কিন্তু পাই না। বইটা জার্মান এটুকু বুঝতে পেরেছি। জার্মান অনুবাদও হতে পারে। হাঁটতে হাঁটতে একসময় গরমই লাগে একটু একটু। তখন সোয়েটশার্ট খুলে কিছুক্ষণ হাওয়া খাই। সিনামন অ্যান্ড ব্রাউন সুগার... ভিয়েনায় অক্টোবারের হাওয়ায় নাকি দারচিনির গন্ধ ভাসে, মোজার্টের সুর শোনা যায়। লোকজন ইয়াবড় কুমড়ো নিয়ে হ্যালোউইন এর জন্য পরিকল্পনা করছে, অনেকে ক্রিসমাস মার্কেটের জন্য রেডি! এরই মধ্যে ভিয়েনা দারুচিনি দ্বীপ হয়ে গেছে। গোল্ড অ্যান্ড ক্রিস্প... চেস্টনাট রোস্ট করার জন্য কেনার দরকার নেই, চিকু নাশপাতি আপেলের মতো চেস্টনাটও গড়াগড়ি খাচ্ছে। বাতাসে সিনামনের পাশাপাশি কফি আর রোস্টেড চেস্টনাটের গন্ধ ভাসে।

আমি সেসব বুঝি না, ভিজে মাটি আর গাছের গন্ধ পেয়েই আমি খুশি। রঙিন পাতা কুড়িয়ে হাত বুলোই। এক একটা ম্যাপলের পাতায় চার চারটে রঙের শেড। মনে হয় ঝরে পড়া পাতাগুলো সোনায় মুড়ে দিচ্ছে কেউ।

বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা মৌজ করে ছুটোছুটি করছে, দেখলে বেশ ভালোই লাগে। আমাদের তো বেশিরভাগ শহরে একটু হাত পা খেলানোর জায়গাও নেই, ঘাসে ছাওয়া একটা মাঠও পাওয়া যায় না। এরা ভালো আছে! সবুজ হলুদ কমলা পুলওভার পরে কেউ কেউ একদম বনের মধ্যে মিশে যায়, তখন মনে হয় তারাও বনের হরিণ বা কাঠবেড়ালির মতোই। ছুটোছুটি হুড়োহুড়ি করতে করতে কেউ কেউ পড়ে যায়, কিন্তু বেশি কাঁদে না কেউই। আমি দাড়িতে আঙুল বুলিয়ে মাথা ওপরে করে বসে থাকি। গাছের অ্যানাটমির ওপারে নীল আকাশ, পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, মাঝেমধ্যে প্লেনও উড়ে যায়। মাঝেমধ্যে শিরশিরে বাতাস বয়, বাদামি পাতাগুলো বৃষ্টির মতো উড়ে আসে মাটির দিকে। কাপাসের ফুলের মতো খড়কুটো ওড়ে। দেখে সাধ মেটে না। মাঝেমধ্যে ফোটোগ্রাফার হতেও ইচ্ছে করে বটে, কিন্তু আদ্যিকালের এমআই ফোনে প্রায় কোনও রঙই ধরা পরে না। আমি আবার হাঁটা লাগাই।

অন্ধকার নামার ঠিক আগে বনবীথিকার মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে দূরে চেয়ে দেখি, গাছের মাথা, পাতা আর আকাশের রঙ মিলে একটা সোনালি কুয়াশার আদল তৈরি হয়েছে দূরে! ধীরে ধীরে আলো কমে আসে, সেই বাষ্পীভূত কুয়াশা এসে ঘিরে ধরে আমাদের। কেটলির ভাপের মতো সোনালি কুয়াশা পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলি। 

দিন কাটে। যেমন কাটার কথা...








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন