বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

স্টোনার: এই বইটা পড়বেন না


"Stoner’s colleagues, who held him in no particular esteem when he was alive, speak of him rarely now; to the older ones, his name is a reminder of the end that awaits them all, and to the younger ones it is merely a sound which evokes no sense of the past and no identity with which they can associate themselves or their careers."

এই হল বইয়ের শুরু! যেন বলেই দেওয়া, এই বই এক পরাজিত মানুষের গল্প বলতে চলেছে। বইয়ের শেষে মৃত্যুশয্যায় স্টোনার নিজেকেই বল, হোয়াট ডিড ইউ এক্সপেক্ট?

ওয়েল, নট দিস😒

জন উইলিয়ামস ১৯২২ সালে জন্মেছেন, শান্ত একটা জীবন কাটিয়েছেন, তিরিশ বছরের বেশি একই জায়গায় শিক্ষকতা করেছেন, কাজের সূত্রে দু বছর ভারত আর বর্মায় কাটিয়েছেন, তারপর বয়স হলে মারা গেছেন। বইয়ের সংখ্যা সাড়ে চার (পাঁচ নম্বরটা শেষ করতে পারেননি) শেষের দিকে দু একটা পুরস্কার পেয়েছেন, গ্রেট আমেরিকান নভেলিস্টদের মধ্যে তাঁকে গোনা হয়নি।

কিন্তু আচমকা, তাঁর মৃত্যুর তিরিশ বছর পর তাঁর একটা বই ফরাসিতে অনুবাদ হয়ে এমন সাড়া ফেলে দেয় যে আমেরিকান পাবলিশার নিজেই অবাক হয়ে যায়। গোটা ইউরোপ জুড়ে এই লেখককে নিয়ে লাফালাফি শুরু হয়, ফায়দা নিতে আমেরিকাতেও বইটা আবার করে নবরূপে প্রকাশ করে হয়। আর, থ্যাংকস টু ইন্টারনেট, জন উইলিয়ামস 'স্টোনার'-এর স্রষ্টা হিসেবে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান। হাজার হাজার পোস্ট, গুডরিডসে পাঁচতারা রিভিউর বন্যা, শয়ে শয়ে রিলস, নতুন প্রজন্মের লোকজন হামলে পড়ে একটা ভিন্টেজ ক্লাসিক পড়ছে, এমন সাধারণত দেখা যায় না। সবাই বলাবলি করছে... দ্য গ্রেটেস্ট নভেল অফ ইউ এস ইউ হ্যাভ নট হার্ড অফ...তার পাশাপাশি আরেকটা কথা যা অনেকের ধ্যান আকর্ষণ করেছে, তা হল, এরকম বিষন্নতার আখ্যান কেউ কোনোদিন লেখেনি। স্টোনার সর্বকালের সেরা মেলানকলিক টেল।

মুশকিল হল, 'মেলানকলি' আর 'বিষাদ' শব্দটার সঙ্গে কী করে যেন একটা কাব্যময়তা জড়িয়ে গেছে। বিষন্নতার একটা নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। লোকে মেলানকলিক সাহিত্য চিরকাল পড়ে ভালোবেসেছে, এখনও তার বদল ঘটেনি। কিন্তু স্টোনার আসলে সেরকম বই নয়! তাহলে এমন কী আছে যা নিয়ে এত মাতামাতি?

কী আছে, জানার চেষ্টা করলেই মনে হয় ভালো হত! কিছু কিছু ভালো জিনিস ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেই মনে হয় ভালো। যেমন, গ্রেভ অফ দ্য ফায়ারফ্লাইজ! আমি লিখে দিতে পারি, এই ভয়ংকর সুন্দর সিনেমাটা যারা একবার দেখেছেন, তাদের ৯৯% দ্বিতীয়বার দেখতে চাইবেন না। 'স্টোনার' নিয়েও আমার মনোভাব খানিক তাইই। পরবর্তীতে নাকি জন উইলিয়ামস বলেছিলেন যে স্টোনার আসলে দুঃখের গল্প নয়, রোজকার দিনযাপন আর তার জটিলতার মধ্যেও একটা শান্ত সৌন্দর্য আছে, একটা আনন্দ আছে, স্টোনার সেইরকমই গল্প। আমিও ভেবেছিলাম, হবেও বা। পার্ফেক্ট ডেজের মতো অসামান্য সিনেমা যেমন! বইটা শেষ করে বলতে বাধ্য হচ্ছি, উইলিয়ামস সাহেব, প্লিজ, বাতেলা দেবেন না! আনন্দ! বাপ রে বাপ! এই বইটা না লিখলেই তো হত!

শেষ করেছি বললাম বটে, কিন্তু শেষ করতে আমার জান বেরিয়ে গেছে। না, লেখার সমস্যা নয়। ভূমিকাতেই জন উইলিয়ামস জানিয়েছেন, গদ্য যদি পড়তে ভালো না লাগে আর শুধু তার মধ্যে নিহিত অর্থ বোঝার জন্য তা জোর করে পড়তে হয় তাহলে তার চেয়ে কষ্টকর কিছু হয় না। উইলিয়ামস সাহেবের কলম অহেতুক জটিলতা তৈরি করে না, সহজ জিনিস সহজ ভাবে লেখেন। যত দুঃখই হোক, যত ডিপ্রেসিংই হোক, যত মরবিডই হোক, পড়তে 'ভালো' লাগে। মানে, গদ্যটা ভালো লাগে, গল্পটা নয়। বারবার থামতে হয়! কেন? কী এমন আছে গল্পে?

সেটাই তো সমস্যা! গল্পে কিছুই নেই। একজন মানুষের জীবন আছে শুধু! উইলিয়াম স্টোনার! কৃষক পরিবারের এই ছেলে পড়াশোনা করতে গিয়ে ইংরেজি সাহিত্যের প্রেমে পড়ে এবং সেই একই ইউনিভার্সিটিতে সারাজীবন পড়িয়ে যায়। ঠিক তাঁর স্রষ্টার মতোই! এই গোটা জীবন ধরে লাইব্রেরি আর বইয়ের দুনিয়াযা বিচরণ আর সেই ক্ষণিক আনন্দের বাইরে তাঁর সঙ্গে যা ঘটে, তার একটাও সুখের বলা চলে না। একঘেয়ে দিনযাপন, আপনজনদের বিদায় নেওয়া, একটা অসম্ভব ডিপ্রেসিং সম্পর্ক, একটা ভেঙে যাওয়া প্রেম, কর্মক্ষেত্রের রাজনীতি, অসুখবিসুখ...একের পর এক ডিজাস্টার!

স্টোনারের মতো জীবন যেন কাউকে কাটাতে না হয়! সমস্ত জীবন ধরে অসম্ভব নিঃসঙ্গতা ভোগ করে লোকটা মারা যায়, আর আমিও বই শেষ করে বলি, যথেষ্ট হয়েছে! চুলোয় যা! লেটস রিড অ্যানাদার বুক! কিন্তু হায়! পরপর কয়েকদিন, কয়েক সপ্তাহ ধরে স্টোনারের জীবনের বিভিন্ন মুহুর্ত আমার মাথার মধ্যে ফিরে ফিরে আসে, আমি আর কিছুতেই মনসংযোগ কর‍তে পারি না! পড়তে পারি না, ভাবতে গেলেই মনে হয়, হায়! 
জীবনের কী অপচয়! কী করে মানুষের জীবন এত দুঃখের হতে পারে! হায়!

এই প্রথম একটা পোস্ট দিয়ে বলছি, এই অসম্ভব ভালো বইটা না পড়াই ভালো। প্লিজ পড়বেন না। সিরিয়াসলি, পড়বেন না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন