বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

বউবাজারের ড্রাগন পরিবার



ও, আই লাভড দিজ ওয়ান সো মাচ!

ইন্দ্রপ্রমিত দাসের খুচরো লেখা আগেও বেশ কিছু পড়েছি। কিন্তু এই বইটা আমাকে মুগ্ধ করল। ভাব ও ভাষার দিক থেকে চমৎকার সাবলীল ও স্বচ্ছন্দ তো বটেই, কিন্তু ফ্যান্টাসি গল্প হিসেবেও ইউনিক। ভীষণ ভাবে বাঙালি, আর ততোটাই আন্তর্জাতিক।   

একটা সংক্ষিপ্ত আইডিয়া দিচ্ছি নামধাম বদলে। ধরে নিন, বৌবাজারের কাছে হাউস অফ ড্রাগন মানে ড্রাগন বংশের ফ্যামিলি থাকে। একসময় ড্রাগন কুইনের এর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল, তাদের জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে ড্রাগনদের একটা ভূমিকা ছিল। কিন্তু কালে কালে ড্রাগন বংশ লোপ পেয়েছে, কয়েকজন প্রাণ বাঁচাতে ড্রাগনদের রাজ্য ছেড়ে অন্য জায়গায় ঘর বেঁধেছে, সেখানকার সমাজ আলাদা, নিয়মকানুন ভিন্ন। এইবার, এই সময়, এই বংশে যদি একটা সন্তান জন্মায় যার পূর্ব জীবন সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই, সে কলকাতা মেট্রো, বৌবাজারের ভিড় আর বাঙালি চাইনিজ চাউ খেয়ে বড় হচ্ছে, তার সঙ্গে ড্রাগন বংশের ইমোশনাল সম্পর্ক কতটা থাকবে, কী করে থাকবে?

“Belief is a serpent eating its tail forever, knowing that its tail is finite.”

ইন্দ্রবাবুর বইটা এ-ই জায়গা থেকেই গল্পটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এখানে কোনও ভীষণ ক্রাইসিস নেই, বিরাট কোনও যুদ্ধ নেই, শুধু স্মৃতি আর বাস্তবের মধ্যে, বিশ্বাস ও অবিশ্বাস এর মধ্যে সেতু বানিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখার একটা মায়াময় গল্প আছে। পাশপাশি, এটা একটা কামিং অফ এজ গল্পও বটে, যেখানে দুই ভিন্ন দুনিয়ার দুই ছেলেমেয়ে একসঙ্গে বড় হচ্ছে। 

গল্প এতটাই মসৃণ ভাবে, তরতর করে এগিয়েছে যে আমি এক সিটিং-এ গোটা বই শেষ করেছি। রু আর অ্যালিস...দুই ছেলেমেয়ের বড় হওয়ার অংশটা অসম্ভব ভালো। 

ইন্দ্রবাবুর ভাষা লিরিকাল হয়েও সহজ, কিন্তু মাঝেমধ্যে সেই ভাষা মনে চাঁদনি রাতের রোশনাইয়ের মতো মায়াবী আলো ছড়িয়ে দেয়। 

খুব সূক্ষ্ম অথচ সাবলীল ভাবে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আর সেক্সুয়ালিটির দ্বন্দগুলো তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু বাঙালি পাঠকের জন্য সবচেয়ে আনন্দের জায়গা, ব্রিটিশ ফ্যান্টাসি অ্যাওয়ার্ড জয়ী এই লেখাটা ভীষণ ভাবে বাঙালি। এমন সুন্দর ভাবে ইংরেজি ন্যারেটিভের মধ্যে বাংলা কথা চলে এসেছে, একটুও বেমানান লাগেনি। 

আকাশ থেকে একটা প্রাণী পড়েছে আর রঞ্জন বলে একটা স্কুলে সেটা নিয়ে এসে বলছে, এটা কি তোমাদের সেই ছোট্ট ড্রাগন? রু বলছে, হ্যাঁ, ছোট বলে উড়তে গিয়ে ডানা খসে গেছে। তখন একটা ছেলে এসে মুখ ভেংচে বলছে, "ডোন্ট বি অ্যান ইডিওট। দ্যাটস আ টিকটিকি!" 

অ্যালিস রু এর মায়ের সামনে চালাকি করছিল বলে তাকে অবলীলায় 'Paka Meye' বলে বলে দেওয়া হচ্ছে। গল্পজুড়ে কলকাতার চিহ্ন, মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের হরেক রকম অ্যানেকডোট ছড়ানো। শেষ পর্যন্ত আসতে আসতে মন ভালো হয়ে যায়, আবার একটু মনখারাপও হয়।

ফ্যান্টাসির ভক্তরা না পড়ে থাকলে অতি অবশ্যই পড়ে ফেলুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন