সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪

দ্য নোটবুক ট্রিলজি

No book, no matter how sad, can be as sad as a life.

আগোতা ক্রিস্টফের নাম শুনলে মনে হয় আগাথা ক্রিস্টির হারিয়ে যাওয়া বোন। আসলে অবশ্য তা নয়। ইনি হাঙ্গেরিয়ান লেখিকা, ছাপান্ন সালে রাশিয়া হাঙ্গেরি অধিকার করার পর সুইটজারল্যান্ডে পালিয়ে যান, লেখালিখি করেন ফরাসিতে। অবশ্য বেশিরভাগ লেখাতেই হাঙ্গেরির সমাজ আর ইতিহাস উঠে আসে, কিন্তু ফরাসি লেখালিখির শৈলী বা সুইস উদাসীনতা দেখা যায় পাশাপাশি। তাহলে কী বলব এই বইকে? হাঙ্গেরিয়ান সাহিত্য? ফ্রেঞ্চ লিট? না সুইস সাহিত্যই বলতে হবে?

সে যাই হোক, আগোতা ক্রিস্টফের কলম ইন্ডি ঘরানায় বেশ নামকরা। তিনি চিরাচরিত জিনিস লিখে পাতা ভরান না। আমার এক বন্ধু বছর দুয়েক আগে তাঁর লেখা নোটবুক ট্রিলজি রেকামেন্ড করেছিল, আমি এই সেই করে আর পড়তে পারিনি। এই সপ্তাহে কম্বাইন্ড এডিশনটা ধরলাম, আড়াই দিনে শেষও হয়ে গেল। এইবার আমি ভ্যাবলা হয়ে বসে ভাবছি কী পড়লাম? মন আর মাথা দুইই গুবলেট হয়ে গেল? এত রকম ইমোশন একসঙ্গে মিশে খিচুড়ি হয়ে গেছে যে ঠিক কী লিখব বুঝে উঠতে পারছি না।

এইটুকু বলতে পারি, আগোতা ক্রিস্টফ একটা অনন্য জিনিস লিখেছেন। তিনটে বইই (নোটবুক, প্রুফ, আর দ্য থার্ড লাই) প্রায় দেড়শো পেজ না তার চেয়েও কম, আর তিনটের সুরই একেবারে আলাদা। বিশেষ করে প্রথম বইটা পড়তে গিয়ে বোঝা যায়, এ আর চারটে বইয়ের মতো নয়।

আরেকটু খোলসা করি বলা যাক। প্রথম বই শুরু হচ্ছে হাঙ্গেরির সীমানার কাছে অবস্থিত একটা মফস্বলি টাউনে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। এমন সময় এক রগচটা বদমেজাজি বুড়ির মেয়ে তার কাছে নিজের দুই জমজ ছেলেকে রেখে ফ্রন্টে যাওয়া স্বামীকে খুঁজতে যায়। এই ছেলেদুটো নেহাতই বাচ্চা, ডাইনিমার্কা দিদার কাঠখোট্টা মেজাজ আর অপরিষ্কার বাড়িঘরে তাদের টিকে থাকাই মুশকিল ছিল। কিন্তু ছেলেদুটো হাড় বিচ্ছু, বা বলা যায় শার্লকের মতো দুজন জিনিয়াস সাইকোপ্যাথ। তারা চটপট সব বুঝে নেয়, দিদাকে সিধা করে দেয়, নিজের পড়াশোনা খাওয়াদাওয়া হাইজিনের দায়িত্ব নিজে নিয়ে নেয়, প্রয়োজনে নিষ্ঠুর হতে বা দয়া দেখাতে দু'বার ভাবে না। দুই ভাই একদম হরিহর আত্মা, তারা দুজনে বিদঘুটে আর মারাত্মক সব কাজকম্মো করে, আর সব কথা লিখে রাখে একটা নোটবুকে। পড়তে গিয়ে প্রথমে মনে হবে এমন ড্রাই ফ্যাক্ট মার্কা লেখা কেন? না বর্ণনা, না ন্যারেটিভ, না ইমোশন, স্রেফ ফ্যাক্ট, স্রেফ অ্যাকশন! "আমরা বালির বস্তা দিয়ে ছেলেটাকে পেটালাম। সকালে আমরা ঘাস কাটি। দিদা চান করে না। তার গায়ে পচা গন্ধ। আমাদের মুখ ধোয়ার জায়গা নেই..." তিরিশ চল্লিশ পাতা পড়ে বোঝা যায় আসলে আমরা ওই নোটবুকটাই পড়ছি। প্রথম বইটা এমন চমৎকার ভাবে একটা ডার্ক গল্প বলেছে যে সব ভুলে পড়ে যেতে হয়। প্রায় থ্রিলারের ভঙ্গিতে গল্প এগিয়ে চলে। এরই মধ্যে হাঙ্গেরির গ্রাম্য জীবন, যুদ্ধের পরিবেশ, সংস্কৃতি সবই ধরা পড়ে যায়। বইটা এমন একটা জায়গায় শেষ হয় যে পরের বইটা না পড়ে উপায় নেই।

পরের বই 'দ্য প্রুফ' পড়তে গিয়ে দেখি লেখিকা ভোল পাল্টেছেন। প্রথম বইতে প্রায় নিয়ম করে কোনও জায়গা বা চরিত্রের নাম আসেনি, দ্বিতীয় বইতে তা পুরোমাত্রায় আছে। ন্যারেটিভ আছে, বর্ণনা আছে। সব আছে। কিন্তু গল্প শেষ হতে হতে মাথাটা একেবারে ভোম্বল হতে শুরু করে! এই মন খারাপ হচ্ছিল, এই রোমাঞ্চ হচ্ছিল, এই রহস্য সমাধানের কথা ভাবছি, তারপর সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে! প্রায় একটা ক্লিফহ্যাঙ্গারে দাঁড় করিয়ে দ্বিতীয় বই শেষ হয়।

তৃতীয় বইতে এসে আগোতা ক্রিস্টফ প্রায় "ধুত্তোর! আউট হলে হব, চালিয়ে খেলো!" বলে যে ধুন্ধুমার চারছয় মার‍তে শুরু করলেন, তাতে আমি হাঁ। ধরুন, একটা বই পড়লেন। গোটা বই ধরে মোসাদের স্পাই একটা বিশাল রহস্যের সমাধান করল। শেষে গিয়ে জানা গেল, পুরোটাই সে স্বপ্ন দেখছিল, কিন্তু স্বপ্নটায় কিছু কিছু সত্যিও আছে। কোনটা বাস্তব কোনটা অবাস্তব বোঝার চেষ্টা করতে করতেই আপনি আবিষ্কার করলেন, আপনার চোখ থেকে জল পড়তে শুরু করেছে। ভেবেছিলেন হাঁদাভোঁদা পড়ছেন, এদিকে বইটা হিস্টোরিকাল নভেল হয়ে, সাইকোলজিকাল মিস্ট্রি হয়ে থ্রিলার হয়ে আপনাকে কাঁদিয়ে ফেলছে। বই শেষ হতে হতে এমন একটা বিষাদ, এমন এক মেলানকলিক আমেজ এসে জুড়ে বসে যে পাঠক চুপ করে বসে থাকে।

আগোতা ক্রিস্টফ এই ট্রিলজিতে মানুষের নিয়তি আর যুদ্ধের বিপর্যয় এর মাঝামাঝি এমন এক আশ্চর্য গল্প বুনেছেন, যা আগে থেকে বোঝার বা অনুভব করার কোনও উপায়ই নেই। কিন্তু পড়তে পড়তে একসময় বোঝা যায়, লেখিকা পরিকল্পনা করে বা না করে ঠিক সেটাই করেছেন, ঠিক সেভাবেই বইটাকে লিখেছেন, যা হয়তো এই বইটার নিয়তিতে ছিল। দ্য স্টোরি ওয়াজ সাপোজড টু বি দিস!

I answer that I try to write true stories but that at a given point the story becomes unbearable because of it’s very truth, and then I have to change it. I tell her that I try to tell my story but all of a sudden I can’t-I don’t have the courage, it hurts too much. And so I embellish everything and describe things not as they happened but the way I wished they happened.

She says, “Yes, there are lives sadder than the saddest of books.” I say, “Yes. No book, no matter how sad, can be as sad as a life.

হাইলি রেকামেন্ডেড! সম্ভব হলে পড়ে ফেলুন।

দ্য নোটবুক ট্রিলজি
গ্রেভ প্রেস


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন