বুধবার, ৭ মে, ২০২৫

মাই টেন্ডর ম্যাটাডোর

 


চিলিতে 'মাই টেন্ডর ম্যাটাডোর' বইটির একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। আধুনিক যুগের কুইয়ার ক্লাসিক তো বটেই, পেদ্রো লেমেবেলের এই উপন্যাস ১৯৮৭ সালের যে সময়টা তুলে ধরেছে, যখন চিলিতে বুগিউগি চলছে। ইউনিভার্সিটি চত্বরে ছাত্ররা একাধিক রেবেল গ্রুপ বানিয়ে প্রটস্ট করছে, কমিউনিস্ট গেরিলাবাহিনী পিনোচেকে খুন করে 'ডেমোক্রেসি' আনবে বলে হুঙ্কার দিচ্ছে, ওদিকে সরকার একের পর এক নতুন আইন বানাচ্ছে আর স্টেট স্পন্সর্ড মিডিয়া দেশের সাধারণ মানুষের ব্রেনওয়াশ করে ফেলেছে প্রায়। এমন সময় এই উপন্যাসের কাহিনি শুরু হয়। মূল স্প্যানিশে উপন্যাসের নাম হল Tengo miedo, torero যা আসলে সারা মন্টিয়েলের একটা বিখ্যাত গানের লাইন। এখন এই লাইনের সঙ্গে নানান ইমোশনাল অ্যাস্পেক্ট, আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আর নস্টালজিয়ার গল্প জড়িয়ে আছে, সে বলাই বাহুল্য। হিস্প্যানিক সাহিত্যে জনপ্রিয় প্রবাদ বা গানের কথা ব্যবহার করে উপন্যাসের নাম রাখা খুব কমন ব্যাপার, কিন্তু সে নিয়ে আপাতত আর কথা খরচ করলাম না।

আসল কথা হল, পেদ্রো লেমেবেলের এই উপন্যাস ২০০১ সালে প্রকাশিত, এই নিয়ে আগেও অনেক সিনেমা নাটক হয়েছে, এখনও হচ্ছে। নতুন যুগে পাঠকদের আগ্রহ দেখে পুশকিন প্রেস বইটা নতুন করে প্রকাশিত করেছে ২০২৫ সালে। বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে, শেষ করতে বেশ সময়ই লাগল। কেন?

কারণ, উপন্যাসটা ঠিক গতানুগতিক উপন্যাসের মতো লেখা হয়নি। চ্যাপ্টার ফ্যাপ্টারের বালাই নেই। মূল চরিত্র কুইন অফ দ্য কর্নার বলে একজন 'ট্রাভেস্টি' বা মাঝবয়সী সমকামী, তাঁকে মাঝেমধ্যে হি, আবার মাঝেমধ্যে সি লেখা হয়েছে। লাতিন আমেরিকায় ট্রাভেস্টি মানে সম্ভবত পুরুষ যিনি মহিলাদের মতো ক্রস ড্রেস করেন, কিন্তু চরিত্রটির মনের ভাব বা সিদ্ধান্তগুলো বুঝতে আমার বেশ সময় লেগেছে।

এখন এই কুইন একজন তরুণ ছাত্রের প্রেমে পড়েছেন, সেই ছাত্রটির নাম কার্লোস। সে কুইনের বাড়িতে নানান সন্দেহজনক জিনিসপত্র রেখে যাচ্ছে, অন্যান্য ছাত্রদের নিয়ে এসে গোপনীয় আলোচনা করছে, কিন্তু কুইনকে কিছু জানাচ্ছে না। আর প্রেমে অন্ধ হয়ে কুইনও জিজ্ঞেস করছেন না। আমি দিব্যি বুঝতে পারছি, কার্লোস প্যাট্রিওটিক ফ্রন্টের গেরিলাবাহিনীর সৈনিক, সে আসলে অস্ত্রশস্ত্র গোপনে রাখার জন্য কুইনের বাড়িটা ব্যবহার করছে। কিন্তু কুইন বুঝছেন না কেন? না তিনি বুঝেও বুঝতে চাইছেন না? এটা কি ও-ই 'একতরফা পেয়ার' এর পাগলামি? কার্লোসের মনে কি তাঁর জন্য কোনও ইমোশন আছে, নাকি সবটাই তাঁর ভালো ব্যবহার শুধুই তার কাজ বের করার ফন্দি? এইসব ঝামেলা না হয় হল, কিন্তু এরমধ্যে খোদ পিনোচে আর তাঁর স্ত্রী লুসিয়াও এসে পড়েছেন। পিনোচের স্বৈরাচারী শাসনের সিদ্ধান্ত, ডিপ্লোম্যাসি, এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার চলছে, আবার তাঁদের পারিবারিক জীবনের ঝামেলাও এসে পড়ছে।

এখন বইটায় না অধ্যায় আছে, না ঘটনার ভাগাভাগি আছে, না ডাবল কোট ইত্যাদির ব্যবহার আছে। সংলাপগুলো সব ন্যারেটিভে চলে এসেছে আর চারটে বাক্যের মতো। কুইনের সঙ্গে কার্লোসের কথা চলতে চলতেই লুসিয়া আর পিনোচের কথা শুরু হয়ে যাচ্ছে, কুইনের বেদনাদায়ক অতীতের সঙ্গে ঢুকে পড়ছে লুসিয়ার অতীত। আর তার সঙ্গে চলছে চিলিতে চলতে থাকা অভ্যুত্থানের লড়াই। ছাত্ররা প্রটেস্ট করছে, সেনাবাহিনী কার্ফিউ জারি করে লোকজনের ঘরেঢুকে পড়ছে, গেরিলাবাহিনী আক্রমণ করছে, ওদিকে কুইন অফ দ্য কর্নার তাঁর ওয়ানসাইডে লাভ লাইফ নিয়ে উৎকণ্ঠায় মরে যাচ্ছেন, নিজের বিপদ ডেকে এনে কার্লোসদের সাহায্য করছেন। এই কাহিনির চলন ধরতেই আমার অনেকটা সময় লেগে গেল।

আসল কথা হল, পেদ্রো নিজে সমকামী আর চল্লিশ বছর আগে সান্তিয়াগোর একজন সমকামী মানুষ, যে রেডিও আর সেলাইবোনাই নিয়েই বেঁচে আছে, সে প্রেমকে কীভাবে এক্সপ্রেস করবে, আমরা প্রথমে তা বুঝতে পারি না। তাঁর এক্সপ্রেশন, তাঁর শৈলী, তাঁর কবিতা, তাঁর বিষাদ, সবই আমাদের অচেনা। তাই অনেকেই একসময় এই বইটা পড়ে বিরক্ত হয়েছিলেন, বোলান্যো নাকি বলেছিলেন, এমন corny প্রেমের উপন্যাস আমার চাই না। কিন্তু আসলে এই প্রেম কর্নি নয়, প্রাচীনপন্থী নয়, ন্যাকা নয়, সময় ও চরিত্রের নিরিখে, এইটাই বাস্তব।

“So, like a buzzing bumblebee, he came and went through the house, feathered in his stole of: Yes, Carlos. No, Carlos. Maybe, Carlos. Perhaps, Carlos. As if the repetition of the name embroidered its letters in the air, lulled by the echo of his nearness. As if the pedal of that snarling tongue insisted on naming him, calling him, licking him, savoring those syllables, chewing that name, filling itself entirely with that Carlos so deep, that name so broad, that it remained all sigh, wrapped between the C and the A of that C-arlos that illuminated the entire house with its presence.”

একবার ব্যাপারটা ধরে নেওয়ার পর আমার আর অসুবিধা হয়নি। পেদ্রো লেমেবেল আসলে নিজেই কুইন, তিনি কুইয়ার লেখক হিসেবেই বিখ্যাত, সারাজীবন ক্রসড্রেস করেছেন, মন দিয়ে পড়লে বোঝা যায় গল্পটা অনেকটাই আত্মজৈবনিক, অটোফিকশন। কিন্তু তাই বলে দেশের তৎকালীন অবস্থা পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তুলে ধরতে তাঁর কোনও অসুবিধা হয়নি। সান্তিয়াগোর যানবাহন থেকে স্টুডেন্ট লাইফ, সাধারণ মানুষের ভাবনাচিন্তা, রাজনৈতিক পপরিস্থিতি সবই চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন, কিন্তু এসবের ঊর্ধ্বে গিয়েও বারবার মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, এটা আসলে আদতে একটা প্রেমের গল্প। এখন সেই প্রেম কতজন বুঝছে বা কতজন বুঝছে না, সেটা ভাবার দায় তাঁর নয়।

ছোট বই। কিন্তু এটা ইবুক রেকামেন্ড করব না। ভাষা আর শৈলীর কারুকাজ আছে, হার্ডকপি পড়লেই সুবিধা হবে মনে হয়।

পুশকিন প্রেস

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন