রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪
দিনযাপন (হেমন্ত ২০২৪)
বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪
স্টোনার: এই বইটা পড়বেন না
এই হল বইয়ের শুরু! যেন বলেই দেওয়া, এই বই এক পরাজিত মানুষের গল্প বলতে চলেছে। বইয়ের শেষে মৃত্যুশয্যায় স্টোনার নিজেকেই বল, হোয়াট ডিড ইউ এক্সপেক্ট?
স্টোনারের মতো জীবন যেন কাউকে কাটাতে না হয়! সমস্ত জীবন ধরে অসম্ভব নিঃসঙ্গতা ভোগ করে লোকটা মারা যায়, আর আমিও বই শেষ করে বলি, যথেষ্ট হয়েছে! চুলোয় যা! লেটস রিড অ্যানাদার বুক! কিন্তু হায়! পরপর কয়েকদিন, কয়েক সপ্তাহ ধরে স্টোনারের জীবনের বিভিন্ন মুহুর্ত আমার মাথার মধ্যে ফিরে ফিরে আসে, আমি আর কিছুতেই মনসংযোগ করতে পারি না! পড়তে পারি না, ভাবতে গেলেই মনে হয়, হায়! জীবনের কী অপচয়! কী করে মানুষের জীবন এত দুঃখের হতে পারে! হায়!
Monstrillo... মেক্সিকান ভূতের জয়যাত্রা
হ্যালোউইন আর ভূত চতুর্দশীর মরসুমে আমার ভূতচর্চা চলছে। সকাল থেকে রাত ভূত দেখছি। সানডে সাস্পেন্সে ক্লাসিক ভূত, সিরিজে এভিল আর ফ্রম, পাশাপাশি বাংলা ইংরেজি ভূতের বই। মাংগা গ্রাফিক নভেল থেকে উইয়ার্ড জনরা, সব ঘেঁটেঘুটে দেখছি। এই ধারায় যে আজকাল দুনিয়ায় কতরকম কাজই হচ্ছে! এই বইটা রেকামেন্ড করেছেন সুলেখিকা মহাশ্বেতা।
মন্সট্রিও নাম শুনলেই মন্সটারের কথাই মনে হয় বটে। কিন্তু মেক্সিকোর এই মন্সটারাস বইটা আসলে 'ভূত নয় অদ্ভুত' গোছের! মানে, বিচিত্র প্লটই বটে!
এক মেক্সিকান দম্পতির ছেলে উঠতি বয়সেই মারা গেছে। বেচারির ফুসফুসের রোগ ছিল, সবাই জানতই সে বেশিদিন বাঁচবে না৷ কিন্তু তবুও বেশ কিছুদিন সে দুনিয়ায় ছিল। ছেলে মারা যেতে তার মা ছেলের শরীর চিরে তার ফুসফুস এর একটা অংশ কেটে সঙ্গে রেখে দেয়, সেই নিয়ে মেক্সিকোয় বাপের বাড়ি চলে যায় সে। সেখানে তার মায়ের পরিচারিকা গল্পচ্ছলে জানায় যে শরীরের কাটা অংশকে খাবার দিলে সেখান থেকে ধীরে ধীরে একটা গোটা মানুষ জন্ম নেয়। স্রেফ গাঁজা, বোঝাই যায়। কিন্তু সন্তানহারা মায়ের মন ছেলের ফুসফুসকে একটু একটু করে চিকেন মাটন খাওয়ানোর চেষ্টা করে আর বুঝতে পারে যে ফুসফুসটা সত্যিই সে সব খাচ্ছে। খেয়ে বড়ও হচ্ছে, আর মানুষের মতো না হয়ে এমন এক মন্সটারাস জোঁক সদৃশ প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে, খিদে পেলে যে কামড়ে তোমাকেই খেয়ে ফেলবে।
এইটুকু পড়ে যদি ভাবেন বাকি গল্পটা হাড়হিম করা ভূতের, হতাশই হতে হবে। বইটা আসলে পুরোপুরি ক্যারেক্টর বেসড, মন্সট্রিওর বাবা, মা, মায়ের সমকামী বান্ধবী আর তার নিজের জীবনের ওঠাপড়া নিয়েই এই গল্প এগিয়েছে। মন্সট্রিওর অস্তিত্ব প্রত্যেকের জীবনের ক্রাইসিস আর সত্তার এক একটা দিক খুলে দিতে চেয়েছে, তাদের অ্যাকশনগুলো আসলে তাদের অবসাদ দুঃখ হতাশার ম্যানেফেস্টেশন। চারজন ভিন্ন ভিন্ন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে গল্পটা বলা হয়েছে, এবং শেষ হয়েছে মন্সট্রিওর নিজের বয়ানেই। কী করে শেষ হয়েছে, সে না হয় নাই বললাম।
গেরাদো সামানো কোর্তোভার এটি প্রথম বই। তিনি খুব স্মার্টলি বইটাকে তিন চারজন চরিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন, খুব বেশি সীমানা ছাড়াননি। ক্যারেক্টর ড্রামা আর উইয়ার্ড টেল স্টাইলের মাঝে সাবলীল ভাবে মেক্সিকোর যাপন আর খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি এসেছে, কিন্তু গল্প মেক্সিকো ছেড়ে বেরোনোর পর ন্যারেটিভ এর ধার একটু হলেও কমেছে মনে হল। তবে শেষ পর্বে গিয়ে লেখক সেরা ফর্ম ফিরে পেয়েছেন, তাই ওটুকু মাফ করে দেওয়াই যায়।
এই সূত্রে মনে পড়ে গেল, কয়েক বছর আগে ইরাকের লেখক আহমেদ সাদাওয়ির 'ফ্র্যাংকেস্টাইন ইন বাগদাদ' মূলত সেই কাজটাই করেছিল, যা 'মন্সট্রিও' এই বইটায় করেছে। কিন্তু সাদাওয়ির লেখাটা ভীষণ ভাবে অ্যাবসার্ড আর ঘোর রাজনৈতিক ছিল, বিচ্ছিন্ন গল্প আর চরিত্রের জীবনগুলোকে একটা প্রাইমারি ক্রাইসিসে বাঁধার চেষ্টা তিনি করেননি, ফলে আম পাঠকের একটু একঘেয়ে লাগতেই পারে! মন্সট্রিও সেরকম বই নয়! এখানে একটা নিটোল গল্প নেই নেই করেও আছে। হ্যাঁ, একগাদা অনুত্তরিত প্রশ্ন আছে ঠিকই, আর উইয়ার্ড লিটে, বিশেষ করে এই ঘরানার হরার ফ্যান্টাসিতে 'লজিক' নিয়ে প্রশ্ন করা বোকামিই বটে! কিন্তু বইটায় একটা সেন্ট্রাল (ভূতুড়ে) ক্রাইসিস আছে আর সেই ক্রাইসিস ঘিরে কিছু সাদামাঠা মানুষের জীবন আছে, তাই থমকাতে হয় না। এ ধারার বইপত্র পড়ার শখ থাকলে বইটা হতাশ করবে না বলেই আমার ধারণা।
বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
দ্য রোড: পার্ফেকশন ইন গ্রাফিক নভেল?
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
দ্য কুইন অফ শর্ট নভেলস: বেলজিয়ান সাহিত্যের রানি
সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪
দ্য নোটবুক ট্রিলজি
She says, “Yes, there are lives sadder than the saddest of books.” I say, “Yes. No book, no matter how sad, can be as sad as a life.
জুনজো ইতোর সুন্দরী ভূত
মাংগা জগতে ভীষণ হইচই চলছে। কেন? কারণ ক্লাসিক হরার মাংগার লেখক জুনজো ইতোর 'কালজয়ী' এবং গ্লোবালি জনপ্রিয় মাংগা 'উজুমাকি'-এর একটা অ্যানিমে ভার্সন রিলিজ করেছে এইচবিও।
বলাবাহুল্য, মাংগা থেকে অ্যানিমে করা নতুন কিছুই নয়। কিন্তু ক্লাসিক মাংগা ফ্যানরা জানেন, বছরের পর বছর ধরে চলা ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট মাংগার ওই ম্যাজিক আর ধারাবাহিক আর্ট স্টাইল রঙিন অ্যানিমতে ধরে রাখা অসম্ভব। অনেক সময় অ্যানিমেশনে স্টাইলটাই বদলে যায়, গল্প ছোট করে দেওয়া হয়, স্ক্রিনের কথা ভেবে রদবদলও কম করা হয় না। তাতে অ্যানিমে হিসেবে জিনিসটা দাঁড়াক বা না দাঁড়াক, মাংগার রস আর বজায় থাকে না।
বহুদিন ধরে এই নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। কী করে মূল অ্যানিমের মেজাজ অক্ষত রাখা যায়? কাজটা আসলে টেক্নিকালি চ্যালেঞ্জিং, টাকাপয়সার অ্যাঙ্গলও আছে, অনেকবার এগিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছে জাপানি প্রয়োজকদের। কিন্তু এই প্রথম, দীর্ঘ রিসার্চ এর পর একটা অ্যানিমে আসছে, যেখানে জুনজো ইতোর ম্যাজিক পুরোপুরি বজায় রাখা হয়েছে। সাদাকালো আর্ট স্টাইল নিঁখুত রেখে, মূল গল্পের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে উজুমাকি করতে গিয়ে বারবার সমস্যায় পড়তে হয়েছে, ডেডলাইন পিছিয়েছে, দু একবার তো মনে হয়েছিল ক্যান্সেলই হয়ে গেল বুঝি! কিন্তু শেষমেশ কাজ শেষ হল। উজুমাকির একটা এপিসোড এসে গেছে আর মাংগার দর্শকরাও দেখে মুগ্ধ। সবাই বলাবলি করছে, এইবার মাংগা অ্যানিমেশনের দুনিয়া আমূল পাল্টে যাবে।
উজুমাকি বহুদিন আগে পড়েছি, সে নিয়ে কিছু বলব না বিশেষ। কিন্তু সম্প্রতি জুনজো ইতোর অন্য আরেক নামকরা কাজ শেষ হল। টমি... বা তোমি বা তোমিয়ে... কে জানে?
তা গল্প শুরু হয়েছে একটা পুলিশ সিন থেকে। টমি বলে একটা মেয়ের মৃতদেহ কেটেকেটে কে ফেলে দিয়েছে, সেই মেয়েটা স্কুলের ট্রিপে গেছিল! কিন্তু পরদিনই টমি ফিরে আসে। সবাই তাজ্জব ? টমিকে যারা মেরেছিল তারা ভাবছে, কী করে এটা সম্ভব? প্রথম, বলিউডি সিনেমা খুন ভরি মাঙ্গ-এর মতো টমি বেঁচে বদলা নিতে ফিরেছে? না টমি মরে গিয়েছিল, সত্যিই বেঁচে ফিরে এসেছে ? জুনজো ইতো, বিইং জুনজো ইতো. .. দ্বিতীয় বিকল্প বেছে নিয়েছেন।
টমি একদম ক্লাসিক হরার মাংগা, সকলের এই জিনিস ভালো লাগবেও না। এরকম গোরি হরার খুব একটা সবাই হজম করতে পারে না, আমিও নই। চার্লস বার্নসের 'ব্ল্যাক হোল' পড়তে গিয়ে আমার ভীষণ অস্বস্তি হয়েছিল, এদিকে টমি তো আবার সাড়ে সাতশো পেজ এর বিশাল ভলিউম, প্রায় কুড়ি পঁচিশ বছর ধরে চলছে।
কুড়িটা গল্প আছে টমিতে। মূল চরিত্র টমি। সে কে? একটা কিশোরী মেয়ে, ছেলেরা তাকে দেখেই তার প্রেমে পড়ে আর এমন পড়ে যে তাকে একদম মেরেই ফেলে (বোঝো! এমন প্রেমের কী দরকার? তবে এরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইতোবাবু) কিন্তু টমি হল টমি... সে মরেও মরে না। কোনও ব্যাকস্টোরির বালাই নেই, মোটের ওপর সিম্পল আর্ট স্টাইল (যদিও গল্প বিশেষে তা ধরন পাল্টেছে) মেন্টেন করে জুনজো ইতো স্মার্টলি একটা ভূতুড়ে গোরি থিমের সিরিয়াল মাংগা তৈরি করেছেন। কিছু গল্প বেশি ভালো, কিছু অভিনব প্লট আছে, অনেকগুলো প্রেডিক্টিভ, তবে মাংগা হরার এর দুনিয়ার নিরিখে সেরা কাজ এর একটা, সেটা বলতে হবে।
আমার 'উজুমাকি' বেশি প্রিয় ফর সিওর, আর সিরিজ না এলে সম্ভবত এটা পড়াও হত না। চারটে এপিসোড আসবে, তার আগে জুনজো ইতোর স্টাইলটা একটু রিভিজন করতে গেছিলাম। ব্ল্যাকহোল এর মতো অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি, বাঁচোয়া! মাংগা ফ্যান হলে পড়তেই পারেন।