লন্ডন ভ্রমণ এবং .....
1)লন্ডন যাওয়ার আগে ভিসার
খবরাখবর নেওয়ার সময় শতকরা নব্বই শতাংশ জানতে পারে যে ইংল্যান্ড, ইউনাইটেড কিংডম,ব্রিটেন
সব আসলে এক জায়গা নয়।কোনটা সার্বভৌম রাজ্য,কোনটা দেশ,কোনটা আবার রানীর রাজত্বের
অধীনে থাকা স্বাধীন প্রদেশ।পুরো মাথা গুবলেট করে ছেড়ে দেয় ইংরেজের পোগুলো।কিন্তু হলে কি হবে,বিদেশ
বলে কথা।দুশ বছর আমাদের ঘাড়ে চড়ে মাথায় যে পোকা ঢুকিয়েছে সে যাবে
কোথা?
তাই সঙ্গিনীর অনসাইট
প্রজেক্টে বাড়ির লোক নিজের খরচে সঙ্গে যেতে পারে শুনে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে
টিকিট কেটে ফেললাম।চাকরির বাঁধাধরা রুটিনে ইস্তফা দিয়ে ব্রেক নিয়েছি মাস
কয়েকের,আমাকে আর পায় কে?ভিসা টিসা পেয়ে গোছগাছ করে শেষমেষ যেদিন রাতদুপুরে প্লেনে
চড়ে বসলাম সেইদিন ফেব্রুয়ারি আঠাশ।পাক্কা একমাসের জন্যে দেশ ছাড়া।সঙ্গিনীর দৌলতে থাকতে
পয়সা লাগবে না আমার,সার্ভিস অপার্টমেন্ট আগে থেকেই ঠিক করা আছে এচ এস বি সির।ব্যাস।প্লেন উড়ল।রাত চারটে।দুবাই পৌঁছবে চার ঘন্টা
পর।ভেবেছিলাম এক ঘুম দেব কিন্তু তার কি জো আছে?একের পর এক আসছে
এয়ারহোস্টেসরা,রাত দুপুরে লোকেরা গুচ্ছের খাবার গিলছে কপাত কপাত করে,তারপর মদিরা
সেবন।চলেছি পশ্চিমে সময়কে পিছনে রেখে।তখন একটু একটু আলো ফুটছে
বাইরে।নীচে দেখা যায় মাইলের পর মাইল মরুভূমির ওপর থেকে তেলের লাইন
চলে গেছে।আর কিছুই নেই।শেষ মেষ দুবাই পৌছে ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সফার করে লন্ডনগামী
বিমানে উঠে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।আঠ ঘন্টার জন্যে নিশ্চিন্তি।
লন্ডনে হিথ্রোতে নেমে ইম্মিগ্রেশান পেরিয়ে শেষ মেষ চড়ে বসলাম টিউবে।ব্যবস্থা খারাপ না।লন্ডন শহর আসলে আলাদা আলাদা জোনে
ভাগ করা।সেন্ট্রাল লন্ডন প্রায় পুরোটাই পড়ে জোন এক আর দুইয়ে।এবার জোন এক দুইয়ের জন্যে
সাপ্তাহিক পাস কেটে ফেললেই ঝামেলা শেষ।টিউবে চড়া যাবে আরাম করে,বাসে করে জোন এক দুইয়ের বাইরেও চলে যাওয়া যাবে সেই
পাস দিয়ে।মাথা পিছু তেত্রিশ পাউন্ড দিতে গা চড়চড় করে বটে,কিন্তু পরে মনে হয়,আসলে ভালই
টাকা বেঁচে গেছে।
আমরা চললাম পিকাডিলি লাইনে করে।গ্রীন পার্কে নেমে ট্রেন বদল করে জুবিলি লাইন ধরে আমরা পৌঁছবো ক্যানারি
হোয়ার্ফ,নানা দেশী বিদেশী ব্যাঙ্কের অফিস আছে বলে জায়গাতে একটা রাস্তার নামই
ব্যাঙ্ক স্ট্রিট করে দেওয়া হয়েছে।লন্ডন আগে আসিনি বটে কিন্তু মোটামুটি সব জানাই ছিল ব্যাপার স্যাপার।(দিনরাত লোনলি প্ল্যানেট আর
নেটফ্লিক্স ঘাঁটলে যা হয় আর কি!)জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে।রোদ্দুর এর কোনো চিহ্ন নেই।মাসে বোধহয় চারদিন ভালো রোদ ওঠে
লন্ডনে।সুন্দর সাজানো ছবির মত পাড়াগুলো ছাড়িয়ে মাটির তলায় ঢুকে পড়ল ট্রেন।গ্রীন পার্কে নেমে দেখি ভিড়ে ভিড়।দিল্লির রাজীব চৌকের মত জংশন বলে
নানা জায়গায় লাইন চলে গেছে এখান থেকে।কাছেই বাকিংহ্যাম প্যালেস,হেঁটেযেতে পাঁচ মিনিট।ট্রেন বদল করে নির্দিষ্ট স্টেশন এ
গিয়ে পৌঁছলাম যখন বিকেল হয়ে এসেছে।এমন হাওয়া দিচ্ছে যে ঠান্ডায় হাড় কেঁপে যায়।হিহি করে কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে
পৌঁছলাম থাকার জায়গায়।কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়েই ঠিক করে নেওয়া হলো প্ল্যান।সেটা এরকম।
সোম থেকে শুক্র সঙ্গিনী যাবেন অফিসে।এচ এস বি সির অফিস লন্ডন ব্রিজের কাছে।পাশেই টেট মডার্ন মিউজিয়াম।সকাল নটা থেকে ছটা।আমি বেরোব শহর পরিদর্শনে।ভালো,খারাপ,নতুন,পুরোনো,জানা,অজানা সব জায়গা দেখে শেষ করব এক মাসে বলে কোমর
বেঁধেছি।কিছুই বাদ দেব না।খালি একটা জিনিস মনে রাখতে হবে,টাকা পয়সা বড় কম তাই পিওর ব্যাগপ্যাকার স্টাইলে
পথব্রজে তীর্থ হবে,যেখানে টিকিট লাগবে বাইরে থেকে বাই বাই করে দেব।রেস্টুরেন্টে ঢোকা হবে না।খাওয়া দাওয়ার জন্যে এপার্টমেন্ট এ
রান্নাঘর আছে,টেসকো,শালীনবারি হাজারটা সুপারস্টোর আছে কাঁচামাল কেনার,তাতে পয়সা
বাঁচবে।একান্তই বাইরে খেতে হলে ম্যাকডোনাল্ড জিন্দাবাদ।নিরানব্বই পেন্সের সবচেয়ে সস্তা
একটা মেয়ো চিকেন বার্গান আছে,বেশ পেট ভরে যায়।
প্লানটা অক্ষরে অক্ষরে পালন হয়নি বটে(মানুষের মন বলে কথা)কিন্তু পয়সা ভালই
বেঁচেছিল।লন্ডনের গলি,তস্য গলি থেকে শুরু করে,অক্সফোর্ড আর স্কটল্যান্ডের সুদুর হাইল্যান্ডস
অব্দি সফরের বিবরণ দিতে গেলে আমার বছর কাবার হয়ে যাবে।তাই জানা জায়গাগুলোর কথা না বলে আশ্চর্য
অভিজ্ঞতা,নতুন পরিবেশ আর বিশেষ বিশেষ দ্রষ্টব্যের কথাগুলোই লিখব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন