হ্যালোউইনের মরসুমে ভূতপ্রেত চর্চা করতে করতে মাথা এমনে বিগড়োল, একেবারে ভূত প্রেত ড্রাকুলার দেশে এসে পড়লাম। ইয়ে, রোমেনিয়ার কথাই বলছি। আজকাল নতুন যুগের সঙ্গে বেশ তাল মেলাচ্ছে বটে, কিন্তু এখনও বুখারেস্ট ব্রাসোভ ক্লুজের বাইরে গ্রামে-গ্রুমে গেলে ভূতপ্রেতের দেখা বিস্তর পাওয়া যায় শুনেছি, যাদুকর বা ওঝাবদ্যির দেখাও মেলে। আর নেকড়ে আর ভাল্লুক তো হরবখত ঘুরছে। বিশেষ করে রোমেনিয়া হল ভাল্লুকের স্বর্গরাজ্য। তা রোমেনিয়ার গল্প যা হবে তা পরে হবেখন, এটা হল একটা বিশেষ অ্যাপ্রিশিয়েশন পোস্ট। ভূত প্রেত দানো দত্যির চেয়েও বেশি ইন্টারেস্টিং বটেক! সবটা বলাও যাবে না, তবে ছবি দিয়ে কম্পেন্সেট করার চেষ্টা করছি।
ক্লুজে নাপোকা ট্রান্সিলভিনিয়ার অর্থনৈতিক কেন্দ্র। সেখান থেকে নানান জায়গায় যাওয়া যায়, কিন্তু এই বিশেষ জায়গাটা শহরের মধ্যেই একটা গলিতে অবস্থিত, তুলনামূলক ভাবে খুব কম মানুষই এখানকার কথা জানে। তা জিনিসটা কী? না, একটা মিউজিয়াম। তবে যে সে মিউজিয়াম নয়, দুনিয়ার প্রথম স্টিমপাঙ্ক মিউজিয়াম। বোতন্ড ইস্টভান্ডি বহুদিন এক্সিবিশন মার্কেটে কাজ করেছেন, কিন্তু কিছুই তাঁর পছন্দ হচ্ছিল না। শেষমেশ পাঁচ বছরের চেষ্টায়, ভ্যাম্পায়ারদের দেশে তিনি ফ্যান্টাসির একটা জাদু দুনিয়ার নির্মাণ করেছেন। এমন চমৎকার স্টিমপাঙ্ক মিউজিয়াম যে একজন মানুষ একা দাঁড় করাতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস হবে না। আবার মনে হয়, এইসব প্যাশন প্রজেক্ট একজন দুজন পাগলই করতে পারে। খবরটা শুনেই মাথার পোকা নড়ে উঠল। আমি স্টিমপাঙ্ক এরার ভক্তই বলতে হয়, খুব বেশি জ্ঞানগম্যি না থাকলেও। একটা উপন্যাস লিখতেও শুরু করেছিলাম, সে সত্তর পার্সেন্ট হয়ে পড়ে আছে। তবে আগ্রহটা রয়ে গিয়েছে একইরকম।
কল্পবিজ্ঞানের অ্যাডমায়াররা স্টিমপাঙ্ক সম্পর্কে ভালোই জানে। ভিক্টোরিয়ান যুগে বা প্রাক পেট্রোলিয়াম ইকোনমিতে যখন স্টিম বা বাষ্পই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আর উন্নত জীবনের প্রধান অস্ত্র ছিল, স্টিমপাঙ্ক দুনিয়া গড়ে উঠেছে সেটা মাথায় রেখেই। এইচ জি ওয়েলস আর জুলে ভের্নের দুনিয়ায় যে সমস্ত যন্ত্রপাতি কল্পনা করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই স্টিমপাঙ্ক ইনোভেশন। হাওয়াই সাবমেরিন থেকে শুরু করে মেকানিকাল এক্স রে গগলস, যাদুঘড়ি থেকে শুরু করে স্টিমপাঙ্ক পাপেট, ভ্যাম্পায়ারদের সঙ্গে লড়াই করার অস্ত্র, বন্দুক, টাইটেনিয়াম টাইপিং মেশিন, গথিক অটোমেটিক আয়না, সাজুগুজুর জিনিস, রেকর্ড প্লেয়ার... হাজারো জিনিস কল্পনা করা হয়েছে, কিছু কিছু বানানোও হয়েছে।
ব্যাক টু মিউজিয়াম! এই অসামান্য জায়গাটির বিশেষত্ব, একবার ঢুকে গেলে সত্যি সত্যিই মনে হয় কল্পনার দুনিয়ায় প্রবেশ করলাম। দরজা নেই, টিকিট কাটলে দড়ি ধরে টানতে শুরু করে। সেই দড়ি একটা পুলিকে ঘুরিয়ে একটা আদ্যিকালের পর্দাকে দুদিকে সরিয়ে দেয়, আর উন্মোচিত হয় অন্য এক জগত। সেখানকার গাইডরা কেউ কাউন্ট ড্রাকুলার সহকারী, কেউ হগওয়ার্টসের ছাত্র, কেউ ক্যাপ্টেন নিমোর পার্টনার। চারিদিকে অদ্ভুতুড়ে সব যন্তপাতির মডেল, বিচিত্র আলোর নকশা। পোশন ফুটছে টগবগ করে। গাছড়া ঝুলে আছে মাথার ওপর৷ আদ্যিকালের সব যন্ত্রপাতি বলে মনে হলেও কিন্তু প্রতিটাই অপারেশনাল, মানে শুধুই দেখার জিনিস নয়। এইসব বানাতে গিয়ে/জোগাড় করতে ইস্টভান্ডি বাবুকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে সে কল্পনারও বাইরে! ঘন্টা দেড় দুই পর বাইরে এলে মনে হয়, দেখার মতো একটা জিনিস দেখলাম বটে।
দু তলা জুড়ে মিউজিয়াম, জিনিসপত্রে ঠাসা। স্টিমপাঙ্ক শুধু নয়, ফ্যান্টাসির হরেক উপাদান আছে। প্রকাণ্ড এক বুকসেল্ফ আছে, সেখান থেকে নিয়ম মেনে বিশেষ জায়গা থেকে দুটো বই সরিয়ে নিলে মাঝখান থেকে লাইব্রেরি দু ফাঁক হয়ে একটা গোপন ঘরের সন্ধান মেলে, সেখানে রাখা আছে একটা টাইমমেশিন। আজ্ঞে, চলেও। স্টিমপাঙ্ক রোমিও গেম আছে, হাতের উত্তাপ আর গতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা গানের কল আছে, ইন্সটাগ্রাম বা রিলের অ্যাডিকশন ছাড়ানোর মেশিন আছে। বিস্তর ভূতপ্রেত পরী দানো ভ্যাম্পায়ার ইত্যাদিও আছে। মুখে কথা সরে না। চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়েই থাকে। আঙুল কামড়ে বার বার ভাবি, কতটা প্যাশন থাকলে এমন একটা জায়গা তৈরি করা সম্ভব?
স্টিমপাঙ্ক মিউজিয়ামে নতুন জিনিসপত্র নিচ্ছে।টেম্পোরারি এক্সিবিশন বা অ্যাকোয়ারমেন্ট, দুটোই হতে পারে, যদি আপনার মডেল পছন্দ হয়! স্টিমপাঙ্ক শিল্পীরা যদি চিলেকোঠায় বসে অদ্ভুত কিছু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করে থাকেন, ইন্টারেক্টিভ স্টিমপাঙ্ক মিউজিয়ামে আপনার জায়গা বাঁধা!
কিছু ছবি পরে আরো অ্যাড করার ইচ্ছে রইল।