বুধবার, ৩১ মে, ২০১৭

ডবলডেকার বাস সফর আর এবনি পার্ক সিমেট্রি


প্রতিটা শহরের একটা চরিত্র থাকে। পৃথিবীতে হাজার হাজার শহর থাকলেও প্রত্যেকটা শহর তার পরিচয় বহন করে নিজস্ব ভাবে, নিজস্ব স্টাইলে। উপর থেকে দেখে কখনো কখনো অনেক মিল মনে হয় অন্য কোনো শহরের সঙ্গে, কিন্তু গভীরে প্রতিটা শহরের আত্মা নিজস্ব। লন্ডনে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে যখন চেনা জানা সবই দেখা হয়ে গেলো, তখন আমি অনুসন্ধান শুরু করলাম তুলনামূলক ভাবে অখ্যাত জায়গাগুলোর। অবশ্য হাজার হাজার বছর ধরে লন্ডন এমনভাবে উঠে এসেছে গল্পে, পত্রিকায়, সিনেমায়, মানুষের মনে, যে কোনো জায়গায় সেরকম ভাবে অজ্ঞাত রয়ে যায়নি। কিন্তু খুঁজলে কিছু না কিছু তো বেরোবেই। প্রথমেই যেটা আবিষ্কার করলাম সেটা হলো লন্ডনের বাস। লাল ডবলডেকার বাস।  

বাস আবার দেখার কি আছে?ঠিক। বাস না, বাসের রুট। বেশিরভাগ লোকই লন্ডনে এসে দেদার টিউবে চড়ে ঘুরে বেড়ায়। মাটির তলা দিয়ে টিউবের নেটওয়ার্ক এমন ভাবে কানেক্ট করা আছে যে পাঁচ মিনিটের জন্যেও ওপরে পা রাখতে হবে না। কিন্তু শহর দেখতে এসে যদি অন্ধকার সুরঙ্গই দেখবো তাহলে আর কি লাভ?লন্ডন শহরের বেশিরভাগ রাস্তাঘাট, দোকান বাজার, বাড়িঘর সবই ভিক্টরিয়া আমলের, কোথাও কোথাও জর্জিয়ান আর্কিটেকচারও দেখতে পাওয়া যায়। মাটির ওপর থেকে না দেখলে লন্ডনের শহরের সঙ্গে পরিচয়ই হবে না। আর ওপর থেকে দেখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এখানকার ডবল ডেকার লাল বাস। বিরাট বিরাট কাঁচের জানলার পাশে বসে থাকো। কোথাও নামার দরকার নেই। উপরে উঠে সামনের সিট পেয়ে গেলে তো কথাই নেই। লন্ডনের প্রতিটা চরিত্র বুঝতে পারা যায় এক এক রুটের বাসে উঠলে। উইকলি কার্ডে যে কোনো সময় যে কোনো রুটে বাসে উঠে পড়া যায়। 

একদিন সাতসকালে ঠিক করে বেরোলাম, খালি বাসে উঠে বসে থাকবো। প্রথম থেকে শেষ স্টপ। নামবো না কোথাও। যেমন ভাবা তেমনি কাজ।  প্রথমে গিয়ে ধরলাম ২৭৪ এঞ্জেল বাসস্টপ থেকে। যদি লন্ডনে সবুজ দেখতে চান এই হলো বেস্ট রুট। ক্যালেডোনিয়ান রুট ধরে বাস চললো। পথে পড়লো ক্যামডেন টাউনের বিখ্যাত মার্কেট, তারপর ফাঁকা সুন্দর সবুজ ছোট ছোট পাড়া পেরিয়ে বাস এগোতে থাকলো লন্ডন চিড়িয়াখানার দিকে। এদিকের বাড়িঘর শান্ত, কোনোকোনো স্কুলের সামনে ছেলেরা মেয়েরা সকার খেলছে। লোকজন দেখাই যায় না।  কিন্তু সবুজের প্রলেপ লেগে আছে চারদিকে। একের পর এক পার্ক চলে যাচ্ছে দুদিক দিয়ে। প্রিন্স আলবার্ট রোড ধরে প্রিন্স ক্যানাল হয়ে প্রিমরোস হিলের কাছে পৌঁছতেই চোখ জুড়িয়ে গেলো। দিগন্তপ্রসারিত সবুজ ঘাসের মাঠ উঠে গেছে একটা পাহাড়ের ওপর। পাহাড় না বলে ঢিলা বললেও তার সৌন্দর্য কমে না একটুও। পার্কের চারদিকে পাকা বাঁধানো রাস্তা দিয়ে কেউ কেউ সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে, কেউ ঘুরছে কুকুর নিয়ে। এই অনাড়ম্বর সৌন্দর্য লন্ডন ব্রিজ বা বিগবেনের চেয়ে কম কিসে?বাঁদিকে চিড়িয়াখানার ক্যাম্পাস থেকে বাঁদরের হুপহুপ শোনা যাচ্ছে। ক্যালেডোনিয়ান ক্যানালের পাশে পাশে চলেছে আমাদের বাস। মাঝে মাঝে লোকে নামছে, উঠছে। আমি আরামসে বসে আছি, সেই গিয়ে নামবো লাস্ট স্টপে।  কেন্ট পেসেজের পাশে বোটিং লেক ছাড়িয়ে, লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড কে পিছনে রেখে পৌঁছে গেলাম হাইড পার্কে। এই পার্কে সার্পেন্টাইন বলে লেকের কাছে হামেশাই শয়ে শয়ে হাঁস আর পায়রা ঘুরে বেড়ায়। ল্যাংকেস্টার গেটে যখন নামলাম চোখে আর মনে সবুজ লেগে আছে তখনও। 

দুপুরে গিয়ে উঠলাম ১৫ নম্বরে। ওরে বাবা, এই বাস একেবারে টুরিস্ট সার্কিট এর ওপর দিয়ে যায়। প্রথমে টাওয়ার ব্রিজ, তারপর একে একে চোখের সামনে আসতে থাকে নানা দ্রষ্টব্য। টাওয়ার অফ লন্ডন, ব্ল্যাকফ্র্যায়ার্স ব্রিজ, ফ্লিট স্ট্রিট, রয়েল কোর্ট অফ জাস্টিস, ট্রাফালগার স্কয়ার, সেন্ট পল ক্যাথেড্রাল। পরের দুদিন শুধু বাসেই ঘুরে ঘুরে বেড়ালাম।  যেখানে ইচ্ছে নাম, হেঁটে হেঁটে ঘোরো, আবার অন্য বাসে উঠে পড়। ১০০ নাম্বার একেবারে প্রাচীন লন্ডনের দর্শন করিয়ে দেয় আবার মিউজিয়াম দেখতে হলে ১৪ নম্বর বেস্ট। কয়েকটা দূরপাল্লার বাস ও আছে,  শহরের বাইরে চলে যাওয়া যায় গ্রামের দিকে। সেই সুযোগ আমার হয়নি। 

কিন্তু নতুন জিনিস পেলাম ডি থ্রী নম্বরে উঠে। আমরা থাকতাম ক্যানারি ওয়ার্ফে। একদিন সেখান থেকেই উঠে বসলাম এই বাসে। বাসটা যায়  লন্ডনের ডক এলাকা দিয়ে। টেম্স নদী এঁকে বেঁকে চলে গেছে। একের পর এক ছোট ছোট জেটি, সেখানে কনসাইন্টমেন্ট ওঠা নামা হচ্ছে জাহাজে। প্রচুর লোকে কাজ করে এই ওয়ার্ফে। কানাডা ওয়াটার, ক্যানারি ওয়ার্ফ ইত্যাদি। একটা পাড়া পড়লো যার নাম ইস্ট ইন্ডিয়া কলোনী, ভারত, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মিডিল ইস্টের লোকেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। গত কয়েক বছরে এই দিকের এলাকাগুলো নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে। ওল্ড ফোর্ট রোড ধরে, ইয়র্ক হল দেখে সবুজ বেথনাল গার্ডেনের সামনে দিয়ে চললো বাস। এক শহরে যে কত রকম চরিত্র থাকতে পারে, সেই অনুভব করতেই এই বাসযাত্রা। পুরোনো, অপেক্ষাকৃত ভাবে অগুছালো পাড়ার পর পাড়া পেরিয়ে চললাম। মনে হচ্ছিলো অন্য দেশে চলে এসেছি।  

প্রায় একঘন্টা পড়ে নেমে যেখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম সেটা এক আশ্চর্য সুন্দর কবরখানা। এবনি পার্ক সিমেট্রি। লন্ডন শহরের সাতটা সিমেট্রির একটি। সারি সারি কবরের পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। নানা ধরণের গাছ আর বুনো ফুলের রাজত্ব। মাঝে এক পুরোনো গির্জা। কবরখানায় এলে যে মন ভালো হয় সেটা এই প্রথম অনুভব করলাম। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গিয়ে কবরখানায় হারিয়ে গেলাম। প্রতিটা কবরের ওপর মার্বেলের ফলকে নাম লেখা। এক এক করে পড়তে লাগলাম। অনেক কবর সৈন্যদের, কত কিশোর আর যুবক মারা পড়েছে যুদ্ধে সতেরো, উনিশ, একুশ বছর বয়েসে। একটা মেয়ের কবরের সামনে কয়েকগাছা টিউলিপ ফুল। আগ্রহী হয়ে এগিয়ে গেলাম। প্রায় একশো বছর আগের সমাধি। ১৩ বছর বয়েসে মারা গেছিলো কোনো কারণে। কবরের ওপর গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, "টিউলিপ বুথ"। টিউলিপের কবরের ওপর প্রায় একশো বছর পরেও কে যেন একগোছা টিউলিপ ফুল রেখে গেছে। 
 


















মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০১৭

ন্যাশনাল গ্যালারি 

ছবি দেখতে যাওয়ার আগে কয়েকটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নেওয়া ভালো।প্রথম,আর্টের নিরানব্বই শতাংশ আমাদের আয়ত্তের বাইরে।তাই সবসময় যে নাম করা ছবি দেখতে হবে তার কোনো মানে নেই।যা ভালো লাগে তাই সময় নিয়ে দেখো।দ্বিতীয়,ইউরোপের শহরের আর্ট গ্যালারি গুলো ষোলআনা শেষ করা মানুষের কর্ম না,একদিনে তো ভাবাই যায় না।তাই দশ ভাগের এক ভাগ দেখলেও যাওয়া সফল।তৃতীয়,যদি সত্যি ইন্টারেস্ট থাকে একটু পড়াশুনা করে রাখলে সুবিধে হবে।বেশি কিছু করতে হবে না,শুধু মোটামুটি আর্ট জগতের স্ট্রাকচারটা আর মনোভাব জেনে নিলেই হবে।এই যেরকম,ইউরোপে একসময় ক্যাথোলিক চার্চের জ্বালাতনের ফলে অন্য ধরণের আঁকা বন্ধ হতে বসেছিল।কারাভাজ্জিও সেই যে লিজেন্ডারি ফলের বাস্কেটের স্টিল এঁকে ধার্মিক বিষয় নিয়ে যীশুর আখ্যান আর বাইবেলের আখ্যান তুলি তে ধরতে লাগলেন,তা একমাত্র চার্চের গোঁড়ামির জন্য।মনোভাব  ছিল যে বাইবেলের ছবি আঁকা আসল আর্ট,তার নীচের পর্যায় পড়ত ল্যান্ডস্কেপ,আর স্টিল আর্ট কে তো কেউ পাত্তাই দিতো না।কয়েকটা দেশে অবশ্য ছবিটা একটু অন্যরকম ছিল।স্ক্যান্ডিনিভিয়া অর্থাৎ ডেন্মার্ক্,নরওয়ে আর সুইডেনে আর্টিষ্টরা ল্যান্ডস্কেপ আঁকতেই বেশি পছন্দ করত,এই সব দেশের আশ্চর্য সুন্দর দৃশ্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই হোক অথবা ধর্মের বাড়াবাড়ি না হওয়ার কারণেই হোক,পাঁচটার মধ্যে চারটে ল্যান্ডস্কেপ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার আর্টিস্টরাই এঁকে গেছে।হল্যান্ডে আবার স্টিল আঁকা নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের উত্তেজনা ছিল।তাই স্টিল আর্টের নানা নির্দেশন দেখা যায় ফ্লেমিশ পেন্টারদের কাজে।ফ্রান্স,ইতালি,ব্রিটেনে আবার আর্টিস্টরা নানা ধরণের সূত্র লুকিয়ে রাখত ধার্মিক আর্টওয়ার্ক এর ফাঁকেফোকরে যাতে শিল্পী হিসেবে তাদের জাত বোঝা যায়।যেমন কাপড়ের বিশেষত্ত্ব আর ডিটেইলিং,আয়নাতে  প্রতিবিম্বের ব্যবহার,সেকেন্ডারি সাবজেক্ট হিসেবে স্টিল ওয়ার্ক কে নিয়ে আসা।রেনেসাঁর পর যদিও ধার্মিক গোঁড়ামির ব্যাপারটা আর্টের ক্ষেত্রে অনেক কমে গিয়েছিলো।নানা ভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা শুরু হয় আঁকা নিয়ে।

ন্যাশনাল গ্যালারি নাকি লুভ্যর এর বাবা।অনেককেই বলতে শুনলাম পেরিসে গিয়ে পাঁচমাসে লোকে  লুভ্যর দেখে শেষ করতে পারে না কারণ,যেখানে যত পেইন্টিং ছিল,ভালো অথবা খারাপ,তাই দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে সারা লুভ্যর মিউজিয়াম।কিন্তু ন্যাশনাল গ্যালারি নাকি খালি বেস্ট আর্ট ছাড়া নিলামে কেনেই না।সেই তর্কে না গিয়ে আমরা একদিন বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় পৌঁছে গেলাম ট্রাফালগার স্কয়ারে থাকা ন্যাশনাল গ্যালারি তে।লন্ডনে সব আর্ট গ্যালারি আর মিউজিয়াম ই ফ্রি,টিকিট ফিকিটের কোনো ব্যাপার নেই।ঢুকে চললাম প্রথমে সামনের ব্লকে থাকা ডাচ আর ল্যান্ডস্কেপ পেন্টিং দেখতে।রঙের ব্যবহার,আলোর ব্যবহার,আর থিম,এই নিয়েই নাকি খুঁটিয়ে দেখতে হয় ছবি।আমার মাথায় এত কিছু ঢোকে না।কয়েকটা ল্যান্ডস্কেপ দেখেই বুঝলাম নরওয়ে,ডেনমার্ক না হয় সুইডেনের চিত্রকরদের  আঁকা।স্ক্যানিডিনিভিয়ান আর্ট।অনেকেই আবার জীবনকালে একটা করে প্রমান আকারে সেলফ পোর্ট্রেট করে গেছেন।ডিস্টর্টেড আর্টের ও ছড়াছড়ি।

দুটো ব্যাপার এই সব আর্ট গ্যালারিতে খুব ভালো।এখানে রোজ নানা ধরণের গাইডিং ট্যুর হয় গ্যালারির পক্ষ থেকে।অনেক ছবি দেখানো হয়,তার খুঁটিনাটি বুঝে নেওয়া যায়,টাকাপয়সা দিতে হয় না।প্রায়ই স্কুলের ছেলেমেয়েরা ভিড় করে থাকে ব্রিটিশ মিউজিয়াম,টেট,লন্ডন মিউজিয়াম আর ন্যাশনাল গ্যালারিতে।স্কুলের তরফ থেকেই ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসা হয়,হয় তারা ছবি আঁকে দেখে দেখে না হয় আর্ট একটিভিটি করে।এরকম যদি আমাদের দেশে হত!

আর প্রায় প্রতিটা জায়গাতেই ফ্রি ওয়াই ফাই আছে।ছবি সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে ফ্রেমের ওপর থেকে ছবি আর আর্টিস্টের নাম দেখে মোবাইলে সার্চ করে নিলেই সব জেনে নেওয়া যায়।

হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে,অথচ সিকি ভাগও দেখা হয়নি।ফার্স্ট ফ্লোর এর একদিকে খালি বাইবেল সংক্রান্ত যীশুর গল্প,রিলিজিয়াস পেইন্টিং নিয়ে আমার আগ্রহ কমসেইদিকে জোরে পা চালিয়ে কভার করে অন্যদিকে গিয়ে ঢুকলাম।সেখানে বিরাজ করছে রাফায়েল,কারাভাজ্জিও,টার্নার,মিকেল এঞ্জেলো,ভ্যান গঘ।ভ্যান গঘের আঁকা সানফ্লওয়ার্স দেখার জন্যে এখানে লাফালাফি কান্ড,ঠিক লুভ্যর এ যেমন হয়ে থাকে লিওনার্দো না ভিঞ্চির মোনালিসার জন্যে।সে যাই হোক,কয়েকটা ছবি দেখে সত্যি দারুণ লাগলো।সেই ছবিগুলো সম্পর্কে নীচে লিখলাম।

১)Susanna at her Bath

যতদূর মনে পড়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কোনো লেখায় এই ছবির কথা আগে পড়েছিলাম।Francesco Hayez ১৮৫০ সালে যখন এই ছবি আঁকেন তখন রোমান্টিক পেইন্টিংয়ে তার বেশ নাম ডাক হয়েছে।জেলের ছেলে হয়ে জন্মালেও ফ্রান্সেস্কো দিব্যি মিলানে গিয়ে আর্টিস্ট জগতে সাড়াশব্দ তুলেছিলেন।সুসানার ছবি আসলে বাইবেলের একটা গল্প থেকেই নেওয়া,যেখানে সুসানা স্নান করতে গিয়ে বুঝতে পারে তাকে কেউ দেখছে।যেখান থেকেই দেখো মনে হবে সুসানার চোখ তোমাকেই দেখছে।




২)The Ambassadors

হান্স হলবেইনের আঁকা এই পিসটা নিয়ে নানা কথা হয়েছে। ১৫৩৩ সালে আঁকা এই পেইন্টিঙ দুজন মানুষের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে থাকার,কিন্তু তার সঙ্গে নানা ধরণের স্টিল লাইফ ব্যবহার করা হয়েছে।বাঁদিক থেকে দেখলে সেগুলো এক অর্থ বহন করে,ডান দিক থেকে দেখলে মনে হয় অন্য কিছু।উজ্জ্বল রঙে আঁকা এই বিরাট ছবির সামনে লোকেরা ডানদিক বাঁদিক করেই চলে।




৩)Whistlejacket

হুইসিলজ্যাকেট আসলে একটা তেজি ঘোড়ার ছবি।কিন্তু বাদামি রঙের বিরাট ছবিটাকে দেখলে এতো জীবন্ত মনে হয় যে বলার নয়।মনে হয় আসল ঘোড়াটা দাঁড়িয়ে পা ছুঁড়ছে ক্যানভাসের মধ্যে।এমন রিয়ালিজম এর ব্যবহার খুব কম দেখতে পাওয়া গেছে।প্রায় তিনশো বছর আগের জর্জ স্ট্যাবসের আঁকা এই ঘোড়া আজও একইরকম ভাবে তেজি ও জীবন্ত।




৪)Seaport with the Embarkation of Saint Ursula

দারুণ ছবি হওয়া সত্ত্বেও লোকের ভিড় কম ছিল সম্ভবত ক্লদে লরেন লোকেদের কাছে ততটা পরিচিত নয় বলেই ,সেই জন্যেই মনোযোগ দিতে পেরেছিলাম মনে হয়।সেন্ট উরসুলা আসলে একজন ব্রিটিশ রাজকুমারী যে রোম পাড়ি দিয়েছিলো অনেকের সাথে,কিন্তু ফেরার সময় তাদের কেউই আর বেঁচে নেই।পেইন্টিংয়ে পোর্ট আর নৌকোর সঙ্গে উরসুলাকে দেখা যাচ্ছে পতাকা হাতে।




৫)An Experiment on a Bird in the Air Pump

এই হলো ন্যাশনাল গ্যালারিতে আমার শ্রেষ্ঠ পাওনা।জোসেফ রাইটের আঁকা এই ছবি কোনো অংশে সিনেমার চেয়ে কম যায় না।রাইট ছিলেন কারাভাজ্জিওর ভক্ত।কারাভাজ্জিওর প্রতিটি ছবিতেই একটা করে আলোর উৎস থাকে এমনিতে কিন্তু সেটা পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় না।সেই প্রধান উৎস থেকে আলোএসে পড়ে নানা লোকের মুখে।একটা বৈজ্ঞানিক এক্সপেরিমেন্ট করছে একটা পাখির ওপর,ভ্যাকুম তৈরী করার চেষ্টা চলছে।এক্সপেরিমেন্ট শেষ হলেই পাখি মারা পড়বে কিন্তু সঙ্গের চরিত্ররা সকলেই এক ভাবে ব্যবহার করছে না।একটি বাচ্চা মেয়ে ভয়ে মুখ ঢেকেছে,আরেকজন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কয়েকজন নিজেরদের মধ্যে প্রেমালাপে মত্ত্ব।বৈজ্ঞানিক অবশ্য খুবই স্পর্শকাতর এই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিয়ে।যতই দেখো ছবিতে নতুন নতুন ইমোশান আবিষ্কৃত হতে থাকে।















এছাড়া ভেনিসের আঁকা কয়েকখানা ছবি আমার ভালো লেগেছিলো।ভ্যান গঘের সানফ্লওয়ার্স ছাড়াও সেজানের আঁকা ভাঙা প্লেটের স্টিল আর্ট ছিলএই সেজানকেই  মডার্ন আর্টের পিতা বলা হয়।পল সেজান বলেছিলেন,গেলাস যে গেলাসের মতোই আঁকতে হবে তার কোনো মানে নেই,আমার চোখে যদি গেলাস ডিস্টর্টেড হয়ে গামলার মত মনে হয় তাহলে সেটাই আমি আঁকবো।এই শিল্পীর চোখে আর মনে ধরা অর্থের প্রেসেন্টেশানই হলো মডার্ন আর্ট।তাতে রিয়ালিজম এর দরকার পড়ে না।

                     

একসময় যখন ঘেমে নেয়ে বসে পড়লাম হাঁপিয়ে,তখন মাত্র পঞ্চাশ ষাটটা ছবি দেখেছি।মনে মনে বললাম,বাকিগুলো না দেখাই থাকে।খুব ভালো লাগছে,বেশি দেখলে যদি খারাপ লাগে?বাকি পরে দেখবো।
এর পর যদিও তিন বার গেছিলাম ন্যাশনাল গ্যালারিতে।তিনবার যোগ করেও আশিটার বেশি ছবি উদ্ধার হয়নি।





















সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭

স্যান্ডম্যান ওয়াকিং ট্যুর
যারা যারা ইতিহাসে আগ্রহী কিন্তু পকেট গড়ের মাঠ,তাদের জন্য স্যান্ডম্যান ট্যুর ভূতের বরের মত।সারা ইউরোপের বড় বড় শহরে হয় এই ঘন্টা দুয়েকের ওয়াকিং ট্যুর।যতটা সম্ভব ঐতিহাসিক হেরিটেজ আর ল্যান্ডমার্ক দেখে নেওয়া যায় হাঁটতে হাঁটতে।সঙ্গে জানা যায় ইতিহাসের নানা গল্প।আর যদি আপনার ইচ্ছে হয়(হলফ করে বলছি ইচ্ছে না হয় যায় না)ট্যুরের শেষে নিজের পছন্দমত টাকা দিতে পারেন উৎসাহী গাইডদের।না দিলেও চলে,যদিও গাইডদের উৎসাহ দেখে কিছুই না দিতে আপনার নিজেরই লজ্জা করবে।নিশ্চয়ই ভাবছেন,হেরিটেজ তো আপনি নিজেই হেঁটে হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন।ইতিহাস জানতে গেলে তো মোবাইলে ইন্টারনেট চালিয়ে নিলেই হলো।আজ্ঞে না।এত সোজা না।ওয়াকিং ট্যুরের গাইডগুলো যে কি বস্তু,একটা ট্যুর করলেই বুঝতে পারবেন।ইতিহাস তো তাদের জানা বটেই,তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা প্রচলিত কাহিনী আর অসামান্য হিউমার।দু ঘন্টার ট্যুরে একমিনিটের জন্যেও বোর মনে হয় না।তাই একদিন রোববার সকালে সময় করে চললুম ট্রিপ এডভাইসারে এক নম্বরে থাকা এই একটিভিটি করতে।
টিউবে করে এসে হাজির হলাম কভেনান্ট গার্ডেনে।আপেল মার্কেটের কাছ থেকে শুরু হবে হাঁটা।কিছুক্ষণ আগে পৌঁছে গেছি।ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।পারফর্মিং আর্টস এর কতরকম নমুনা যে লন্ডনে আর সারা ইউরোপে রাস্তা ঘাটে দেখা যায়,বলে বোঝানো যাবে না।টিউবের রাস্তায় কেউ গিটার বা সেলো বাজাচ্ছে,অথবা গলির কাছে কেউ ব্যাগ্পায়পারে মুখ দিয়ে বসে আছে।পিকাডিলি সার্কাসে মাঝরাস্তায় হয়ত আচমকা একজন এসে ম্যাজিক দেখাতে শুরু করে দিল,কিংবা ট্রাফালগার স্কয়ারে নিজস্ব গান গেয়ে মাউথ অর্গান বাজাতে লাগলো কোনো কিশোরী।দিব্যি লাগে।আপেল মার্কেটের ভিতরে নানা ধরণের সুন্দর সাজানো দোকান বাজার,সবসময় জমজমাট।এখানের পাই হাউস সারা লন্ডনে বিখ্যাত।তার মাঝে কয়েকজন বাজিয়ে চলেছে বেহালা।জানা গেল নতুন ক্যাসেট বার করার আগে প্রতিদিন এসে এখানে কয়েকঘন্টা ফ্রি কনসার্টে বেহালা বাজিয়ে যায় তারা নিজের ইচ্ছেয়।সকলেই ট্রিনিটি কলেজ অফ মিউজিকের ছাত্র ছাত্রী।কিছুক্ষণ ঘুরে বেরিয়ে ফিরে এলাম নির্দিষ্ট জায়গায়।
অনেক লোক জড় হয়ে গেছে ততক্ষণে।দুটো ভাষায় ট্যুর হয়,ইংরাজি আর স্পানিশ।আমাদের সঙ্গে চলল যেই গাইড মেয়েটা,তার নাম পাউলিনা,তার কাছ থেকেই জানতে পারলাম সে আগে থাকত নিউয়র্কে,বছর পাঁচেক আগে ইউরোপে এসেছে।আগে ছিল এডিনবার্গে,চার বছর ধরে লন্ডনে।চললুম তার পিছন পিছন।আমরা ঘুরে দেখবো সিটি অফ ওয়েস্টমিনিস্টার।প্রায় প্রতিটা চেনা জানা ল্যান্ডমার্ক ই আছে এই সিটি অফ ওয়েস্ট মিনিস্টারে।পাউলিনার সঙ্গে আমরাও চললুম ইতিহাসের খোঁজ খবর নিতে।কভেনান্ট গার্ডেন থেকে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলুম লেইষ্টার স্কয়ার।পৃথিবীর সবচেয়ে বড় থিয়েটার ডিস্ট্রিক্ট ঘিরে ওয়েস্টএন্ডের এই সব জায়গা।যেদিকে চোখ যায় একটা না একটা অপেরা হাউস বা থিয়েটার চোখে পড়ে যায়।কিন্তু টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া,তাই লোকেরা হন্য হয়ে থাকে ডিস্কাউন্ট এর জন্যে।ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারী পেরিয়ে পৌছে গেছি ততক্ষণে ট্রাফালগার স্কুয়ার।১৮০০ সালে  ফ্রান্স আর স্পেনের সঙ্গে যুদ্ধে  ব্রিটেন ন্যাভাল  সেনার জয়গাথার ইতিহাস বহন করে লন্ডনের কেন্দ্রে থাকা এই পাবলিক স্কয়ার।পাশেই শেয়ারিং ক্রস রেল স্টেশন।হোরাসিও নেলসনের নাম বিরাট উঁচু এক স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে মাঝখানে,যিনি ট্রাফলগর্ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন।চারদিকে ঘেরা ঐতিহাসিক প্রতিমার মাঝে একটা বুড়ো আঙুলের কালো মূর্তি আলাদা করে  অস্তিত্ব জানান দেয়।ট্রাফালগার স্কোয়ারের পিছনেই ন্যাশনাল গ্যালারি,প্রায় সারা বছরই কোনো না কোনো আর্টিস্ট কে নিয়ে এক্সিবিশন চলতেই থাকে এখানে।

একটু এগিয়ে গেলেই সমারসেট হাউস,পাশেই কিংস কলেজ।সেদিকে না গিয়ে আমরা বিরাট গেটের ভিতর থেকে লন্ডনের বিখ্যাত নাক দেখে(শাসকতন্ত্রের বাড়াবাড়ি দেখে আর্টিস্টরা নাক খোদাই করে দিয়েছিল সোহোর বিখ্যাত আর্ক্গুলোতে,নাক টিপলে নাকি ভাগ্য খোলে) চললুম রয়েল হাউস প্যারেডের রাস্তা ধরে বাকিংহাম প্যালেসের দিকে।1200 শতাব্দী থেকে আজকে অব্দি কত রঙবেরঙের গল্পই না শুনলাম এর মাঝে পাউলিনার দৌলতে।কয়েকটা যেরকম কৌতুহল সৃষ্টি করে কয়েকটা আবার ঠোঁটের কোনে হাসি এনে দেয়।গড সেভ দি কুইন।রানীর দৌলতে ভালই আয় করছে লন্ডনের টুরিস্ট ডিপার্টমেন্ট।বাকিংহাম প্যালেসের নানা দ্রষ্টব্য বিক্রি হচ্ছে কুইনের বাকিংহাম প্যালেসের সাতটা রয়াল গার্ডেন লন্ডনের অন্যতম আকর্ষণ।কাছেই হলো গ্রীন পার্ক আর সেন্ট জেমস পার্ক।এই পার্কগুলোতে ঢুকলে সবুজের সমারোহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।পেলিকানদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে সেন্ট জেমস পার্কে,অনেকেই দুটোর সময় এসে ভিড় জমায় পেলিকানদের খাওয়া দেখতে।সেদিকে না গিয়ে আমরা পিছন দিয়ে চললাম ওয়েস্টমিনিস্টার এবের দিকে।

লন্ডনের সবচেয়ে বিরাট ও পুরোনো চার্চের মধ্যে একটা,প্রথম স্থান অবশ্য লিভারপুল চার্চের।রাজবাড়ির নানা অনুষ্ঠান,রানীর বিয়ে সবই হয়েছে এই চার্চে।ভিতরে ঢোকার টিকিট কুড়ি পাউন্ড,অবশ্য মাঝে মাঝে চার্চের দরজা প্রেয়ারের জন্যে খোলে,সেই সময় এমনিতেই ঢুকে পড়া যায়।পাউলিনা এরকম নানা ফন্দি ফিকির বলে চলেছে সস্তায় সব দেখে নেওয়ার।ওয়েস্টমিনিস্টার এবের বাইরে সারা পৃথিবীর নেতাদের প্রতিমা লাগানো আছে।গান্ধীজি থেকে নেলসন মান্ডেলা।সামনে টেমস নদীর পাশে হাউস অফ পার্লামেন্ট আর বিগবেন।সকলেই সিনেমাতে দেখেছে যদিও,সামনে থেকে দেখার উৎসাহ দেখলাম তাতে একটুও কমেনি।

পাউলিনার সঙ্গে গল্প হতে লাগলো হাঁটার মাঝে।ভারতে সে একবার তিন সপ্তাহের জন্যে ঘুরে গেছে,এবার তার প্ল্যান একবছরের জন্যে আসার।আমরা এডিনবার্গে যাব শুনে সে মহা খুশি।পাউলিনার পছন্দের শহর এডিনবার্গ,নানা ইনসাইট পেয়ে গেলাম ওর কাছ থেকে।রাজার চক্রান্ত,স্কটল্যান্ডের সঙ্গে লন্ডন শাসকদের যুদ্ধ,রানীর ঘরে ঢোকা পাগলের কান্ড।কোথা থেকে যে সময় কেটে গেল বুঝতেও পারা গেল না।প্রায় হাজার বছরের ইতিহাস আর দ্রষ্টব্য একসঙ্গে দেখা হলো কানাকড়ি খরচা না করে।পাউলিনা বার বার করে বলল,যদি একটা জিনিস দেখতে হয় টাকা খরচ করে তাহলো টাওয়ার অফ লন্ডন। না দেখলেও চলে অবশ্য।
একসময় ট্যুর শেষ হলো।মেয়েটা একনাগাড়ে গল্প করে গেছে আমাদের সঙ্গে,সঙ্গে সঙ্গে চলেছে নানা রসিকতা,আর গল্প।দশ পাউন্ড দিতে লজ্জাই  করছিলো।পাউলিনা মিষ্টি হেসে বিদায় নিলো।আমরা তার গল্পের ঝুলি সঙ্গে করে টেমস নদীর ধরে এগিয়ে গেলাম।  












রবিবার, ১৪ মে, ২০১৭

লন্ডন ভ্রমণ এবং  .....

1)লন্ডন যাওয়ার আগে ভিসার খবরাখবর নেওয়ার সময় শতকরা নব্বই শতাংশ জানতে পারে যে ইংল্যান্ড, ইউনাইটেড কিংডম,ব্রিটেন সব আসলে এক জায়গা নয়কোনটা সার্বভৌম রাজ্য,কোনটা দেশ,কোনটা আবার রানীর রাজত্বের অধীনে থাকা স্বাধীন প্রদেশপুরো মাথা গুবলেট করে ছেড়ে দেয় ইংরেজের পোগুলোকিন্তু হলে কি হবে,বিদেশ বলে কথাদুশ বছর আমাদের ঘাড়ে চড়ে মাথায় যে পোকা ঢুকিয়েছে সে যাবে কোথা?

তাই সঙ্গিনীর অনসাইট প্রজেক্টে বাড়ির লোক নিজের খরচে সঙ্গে যেতে পারে শুনে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে টিকিট কেটে ফেললামচাকরির বাঁধাধরা রুটিনে ইস্তফা দিয়ে ব্রেক নিয়েছি মাস কয়েকের,আমাকে আর পায় কে?ভিসা টিসা পেয়ে গোছগাছ করে শেষমেষ যেদিন রাতদুপুরে প্লেনে চড়ে বসলাম সেইদিন ফেব্রুয়ারি আঠাশপাক্কা একমাসের জন্যে দেশ ছাড়াসঙ্গিনীর দৌলতে থাকতে পয়সা লাগবে না আমার,সার্ভিস অপার্টমেন্ট আগে থেকেই ঠিক করা আছে এচ এস বি সিরব্যাসপ্লেন উড়লরাত চারটেদুবাই পৌঁছবে চার ঘন্টা পরভেবেছিলাম এক ঘুম দেব কিন্তু তার কি জো আছে?একের পর এক আসছে এয়ারহোস্টেসরা,রাত দুপুরে লোকেরা গুচ্ছের খাবার গিলছে কপাত কপাত করে,তারপর মদিরা সেবনচলেছি পশ্চিমে সময়কে পিছনে রেখেতখন একটু একটু আলো ফুটছে বাইরেনীচে দেখা যায় মাইলের পর মাইল মরুভূমির ওপর থেকে তেলের লাইন চলে গেছেআর কিছুই নেইশেষ মেষ দুবাই পৌছে ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সফার করে লন্ডনগামী বিমানে উঠে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললামআঠ ঘন্টার জন্যে নিশ্চিন্তি

লন্ডনে হিথ্রোতে নেমে ইম্মিগ্রেশান পেরিয়ে শেষ মেষ চড়ে বসলাম টিউবেব্যবস্থা খারাপ নালন্ডন শহর আসলে আলাদা আলাদা জোনে ভাগ করাসেন্ট্রাল লন্ডন প্রায় পুরোটাই পড়ে জোন এক আর দুইয়েএবার জোন এক দুইয়ের জন্যে সাপ্তাহিক পাস কেটে ফেললেই ঝামেলা শেষটিউবে চড়া যাবে আরাম করে,বাসে করে জোন এক দুইয়ের বাইরেও চলে যাওয়া যাবে সেই পাস দিয়েমাথা পিছু তেত্রিশ পাউন্ড দিতে গা চড়চড় করে বটে,কিন্তু পরে মনে হয়,আসলে ভালই টাকা বেঁচে গেছে
আমরা চললাম পিকাডিলি লাইনে করেগ্রীন পার্কে নেমে ট্রেন বদল করে জুবিলি লাইন ধরে আমরা পৌঁছবো ক্যানারি হোয়ার্ফ,নানা দেশী বিদেশী ব্যাঙ্কের অফিস আছে বলে জায়গাতে একটা রাস্তার নামই ব্যাঙ্ক স্ট্রিট করে দেওয়া হয়েছেলন্ডন আগে আসিনি বটে কিন্তু মোটামুটি সব জানাই ছিল ব্যাপার স্যাপার(দিনরাত লোনলি প্ল্যানেট আর নেটফ্লিক্স ঘাঁটলে যা হয় আর কি!)জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছেরোদ্দুর এর কোনো চিহ্ন নেইমাসে বোধহয় চারদিন ভালো রোদ ওঠে লন্ডনেসুন্দর সাজানো ছবির মত পাড়াগুলো ছাড়িয়ে মাটির তলায় ঢুকে পড়ল ট্রেনগ্রীন পার্কে নেমে দেখি ভিড়ে ভিড়দিল্লির রাজীব চৌকের মত জংশন বলে নানা জায়গায় লাইন চলে গেছে এখান থেকেকাছেই বাকিংহ্যাম প্যালেস,হেঁটেযেতে পাঁচ মিনিটট্রেন বদল করে নির্দিষ্ট স্টেশন এ গিয়ে পৌঁছলাম যখন বিকেল হয়ে এসেছেএমন হাওয়া দিচ্ছে যে ঠান্ডায় হাড় কেঁপে যায়হিহি করে কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে পৌঁছলাম থাকার জায়গায়কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়েই ঠিক করে নেওয়া হলো প্ল্যানসেটা এরকম

সোম থেকে শুক্র সঙ্গিনী যাবেন অফিসেএচ এস বি সির অফিস লন্ডন ব্রিজের কাছেপাশেই টেট মডার্ন মিউজিয়ামসকাল নটা থেকে ছটাআমি বেরোব শহর পরিদর্শনেভালো,খারাপ,নতুন,পুরোনো,জানা,অজানা সব জায়গা দেখে শেষ করব এক মাসে বলে কোমর বেঁধেছিকিছুই বাদ দেব নাখালি একটা জিনিস মনে রাখতে হবে,টাকা পয়সা বড় কম তাই পিওর ব্যাগপ্যাকার স্টাইলে পথব্রজে তীর্থ হবে,যেখানে টিকিট লাগবে বাইরে থেকে বাই বাই করে দেবরেস্টুরেন্টে ঢোকা হবে নাখাওয়া দাওয়ার জন্যে এপার্টমেন্ট এ রান্নাঘর আছে,টেসকো,শালীনবারি হাজারটা সুপারস্টোর আছে কাঁচামাল কেনার,তাতে পয়সা বাঁচবেএকান্তই বাইরে খেতে হলে ম্যাকডোনাল্ড জিন্দাবাদনিরানব্বই পেন্সের সবচেয়ে সস্তা একটা মেয়ো চিকেন বার্গান আছে,বেশ পেট ভরে যায়


প্লানটা অক্ষরে অক্ষরে পালন হয়নি বটে(মানুষের মন বলে কথা)কিন্তু পয়সা ভালই বেঁচেছিললন্ডনের গলি,তস্য গলি থেকে শুরু করে,অক্সফোর্ড আর স্কটল্যান্ডের সুদুর হাইল্যান্ডস অব্দি সফরের বিবরণ দিতে গেলে আমার বছর কাবার হয়ে যাবেতাই জানা জায়গাগুলোর কথা না বলে আশ্চর্য অভিজ্ঞতা,নতুন পরিবেশ আর বিশেষ বিশেষ দ্রষ্টব্যের কথাগুলোই লিখব