প্রতিবার পঞ্চায়েত রিলিজ হলেই যখন সবাই সে নিয়ে লাফালাফি শুরু করে, ঠিক সেই সময় আমি একটা অন্য সিনেমা বা সিরিজ রেকামেন্ড করি। নাহ, দুনিয়াটা ফুলেরার মতো অত সহজ নয়!
অ্যালেক্স গারল্যান্ডের এই সিনেমা নিয়ে ট্রেলার আসার পর থেকেই হল্লা চলছে। যারা জিওপলিটিক্স এর বিন্দুমাত্র খবর রাখেন, তাঁরা সিনেমাটা দেখলেই জেনে যাবেন ইউ এস পলিটিক্সের সমসাময়িক ঘটনা কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে? ইচ্ছে করেই খুব শাটল রেখেছে, কোনও পক্ষই নেয়নি, ফলে দুই পক্ষই সিনেমা দেখে নারাজ। ইতিমধ্যে ওটিটি রিলিজের পর হইচই ফের তুঙ্গে, কারণ ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেছে।
যখন আমাদের দেশে ইলেকশন (ধুর!) নিয়ে মিডিয়া উত্তাল, লোকজন সরব, সেই সময় নীরবে এক একটা ছোট ঘটনা এসে ওয়ার্ল্ড পলিটিক্সকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। যারা জানেন না, ডোনান্ড ট্রাম্পকে হাশ মানি মামলায় অভিযুক্ত করে সাজা দেওয়ার কথা চলছে, কোর্ট রায় দেবে এগারো জুলাই। ইতিমধ্যে ইউ এস ইলেকশন এর তোড়জোড় একেবারে শেষ পর্যায়ে, আর শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে আর পলিটিকাল অ্যানালিস্টদের প্রেডিকশনকে লাথি মেরে ট্রাম্প বাবাজি রিপাবলিকান পার্টির সবচেয়ে বড় ক্যান্ডিডেট হয়ে উঠেছেন। সেই একই ভঙ্গিতে, একই স্টুপিডিটির পরিচয় দিয়ে মারকাটারি হেট স্পিচ চালাচ্ছেন আর জনতা হো হো করে উঠছে৷ এরপর তিনি কনভিক্টেড হলে উল্টে সোনায় সোহাগা, মানুষের সিমপ্যাথি উথলে পড়ছে, জেলে গেলে তিনি জেল থেকেও প্রেসিডেন্ট ইলেকশন লড়তে পারেন, আর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও আছে ভালোই।
এদিকে বিডেনের অবস্থা ক্রমে কোণঠাসা, তিনি ইউক্রেনকে গোপনে রাশিয়ার অন্যান্য শহরে ইউ এস মিসাইল ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন, সেই খবর সম্মুখে আসার পর রাশিয়া 'ঘর মে ঘুসকর ইউরোপ কো মারেঙ্গে' বলে দিয়েছে, চীনও সম্মতি দিয়েছে সেই কথায়। আমেরিকার অবস্থা খুব একটা কাজের নয়, তাই তারা অবশেষে চেষ্টা শুরু করেছে গাজায় যুদ্ধ থামানোর জন্য! কিন্তু ইজরায়েলের গুণ্ডা সরকার কোনও কথাই শুনতে রাজি নয়! এদের মধ্যে এক বিশ্বগুরু দেশও ছিল, যারা আজকাল চোখ রাঙানি ছাড়া কথাই বলে না, ডিপ্লোম্যাসি ভুলেই গেছে (যদিও তাতে ক্ষতিই হয়। কিন্তু হলেও কি! ইলেকশনে জিতলেই হল!) তারা কলার তুলে বাতেলা মারছিল, রাশিয়া তাদের সামনে হুঁ হাঁ করে পাকিস্তানকে একগাদা অস্ত্র দিয়ে দিয়েছে।
এদিকে আরব দুনিয়ায় অন্য ঝামেলা, ইজরায়েল প্যালেস্তাইন যুদ্ধ (জেনোসাইড বলাই ঠিক) এখন যে জায়গায় আছে, অনেকের মতে যুদ্ধ না থামালে ট্রাম্পই জিতছেন, আর যুদ্ধ থামা বা না থামা, দুই পরিস্থিতিতেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সেই যুদ্ধের চেহারা অবশ্যই ভিন্ন হবে, কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। আসল রাজনীতি আর নির্বাচনকে অনেক আগেই প্রযুক্তি টেকওভার করে নিয়েছে, আমাদের চোখের সামনে যেটুকু আসে, সেটুকু শুধুই টিপ অফ দ্য আইসবার্গ। এইসবের মধ্যে ট্রাম্প কুটিল বুদ্ধি ব্যবহার করে এই সমস্যাগুলো লঙ্কানুন মাখিয়ে জনতাকে গেলাচ্ছেন, আর একের পর এক উদ্ভট সিভিল ওয়ার টাইপ উপায় বাতলাচ্ছেন। সে সব হলে কী হবে, কী হতে পারে, সিভিল ওয়ার সেই কথাই বলে। কিন্তু আসলে কিছুই বলে না, কারণ সিনেমায় সংলাপ বলতে প্রায় কিছুই নেই। সবটাই দর্শকের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আমি সিনেমাটা দেখতে বসেছি একটাই কারণে, পুরো গল্পটাই ওয়ার ফোটোগ্রাফারদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ধরা হয়েছে। অক্টোবার থেকে গাজায় পঞ্চাশজনেরও বেশি ফোটোজার্নালিস্ট মারা গেছে, রিপোর্টাররাও মারা পড়েছেন কম নয়। প্রতি বছর দুনিয়ায় যত জার্নালিস্ট মারা যান, তাদের সিংহভাগই চিত্রসাংবাদিক। অনেক সময় এদের নাম স্ট্যাটেও আসে না, কারণ অনেক ফোটোগ্রাফারই প্রেস কার্ড নিয়ে ঘোরেন না, বরং ছদ্ম পরিচয় ব্যবহার করে ওয়ার জোনে কাজ করে যান।
একটা ওয়ারজোনে গিয়ে রিপোর্টিং করতে গেলে কী হয়, তার এমন বাস্তবযোগ্য বয়ান সাম্প্রতিক কোনও সিনেমায় পাওয়া যায়নি। হয়তো পারফেক্ট সিনেমা নয়, কিন্তু পৌনে দু ঘণ্টা ধরে চোখ সরানো যায় না। এ টোয়েন্টিফোর এই প্রথম বড় বাজেটের সিনেমা করছে, আর প্রথম সিনেমাতেই জানিয়ে দিয়েছে তাদের সিনেমা এত আলাদা হয় কেন? কার্স্টান ডান্সটকে নিয়ে বিশেষ কথা হয় না, এই সিনেমায় তিনি অসামান্য। সংলাপ প্রায় নেই, কিন্তু যুদ্ধ কভার করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ধরা পড়ে এক একটা চাহনিতে, এক একটা সংলাপে। আর হ্যাঁ, মাঝে পাঁচ মিনিটের জন্য জেসি প্লামেন্স একটা সিনে এসে যা করে দিয়ে গেল, তার কোনও তুলনা নেই।
কেউ আগ্রহী হলে দেখতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন