Photographs by Amira Al-Sharif |
গোটা দুনিয়া ধরে যে ছিছালেদর শুরু হয়েছে, তাতে ডিসকোর্সের কোনও জায়গা আর বাকি নেই। বাকি নেই কোনও রিস্ট্রেনও। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকার, অ্যাগ্রেশন আর রাগ সকলের নাকের ওপর বসে আছে। পান থেকে চুন খসলেই গালাগাল চড় থাপ্পড় লাথি ঘুষি কাট্টা চাকু ট্যাঙ্ক মিসাইল সার্জিকাল স্ট্রাইক যুদ্ধ... এখন এসব কোনও ব্যাপারই নয়। যেদিকে তাকাও, ভারত থেকে মেক্সিকো, রাশিয়া থেকে ইউক্রেন, কোরিয়া থেকে শ্রীলঙ্কা, নারকো টেরর থেকে রিলিজয়াস পোলেরাইজেশন... সব জায়গায় এক কাণ্ড। নিজের ইমোশন কন্ট্রোল না করতে পেরে রাগের বশত একটা ভুলভাল কাজ ঘটিয়ে ফেলা, তারপর সেটা জাস্টিফাই করা। জাস্টিফিকেশানের জন্য তামাম কারণ, হোয়াটাবাউটারি আর যুক্তিও তৈরিই থাকে। কিন্তু কেউই ভাবে না এক একটা ছোট্ট অ্যাকশনের দীর্ঘকালীন কনসিকোয়েন্স কী হতে পারে!
উদাহরণ এর জন্য, এই সময়ের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে ঘটনা গোটা দুনিয়ার ঘুম কেড়ে রেখেছে, গ্লোবাল সাপ্লাই চেনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কোটি কোটি ডলার লোকসান করিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য সহ বাকি পৃথিবীর শক্তি সমীকরণ বদলে দিচ্ছে, তা শুরু হয়েছিল এরকমই একটা ছোট্ট ঘটনা থেকে। কিছু অপমানজনক কথা, আর তারপর অন্য পক্ষকে হেয় করে একটা ছোট্ট ভায়োলেন্ট অ্যাকশন! এখন সারা দেশ ও অর্ধেক দুনিয়াকে সেই অ্যাগ্রেসনের মূল্য চোকাতে হচ্ছে।
কথা হচ্ছে হাউথি মিলিশিয়া নিয়ে, ইয়েমেনের এই সন্ত্রাসবাদী দল যা শুরু করেছে, তাতে আইসিস আর আল কায়দাও লজ্জা পেয়ে যাবে। কিন্তু, ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে অনেকেই এখনও বিশেষ কিছু বলছেন না, রাজনীতির এই নিয়ম। আসলে দুনিয়ার ঘুম উড়ে গেছে। যাই হোক, জিওপলিটিক্স নিয়ে ছোটখাটো কিছু লিখতে গেলেও অনেকটা বড় গল্প হয় যায়, আর এই ঘটনা প্রায় তিরিশ চল্লিশ বছর ধরে চলছে। ধৈর্য না থাকলে না পড়াই ভালো।
ইয়েমেন দেশটা বহুকাল ধরে দুটো আলাদা আলাদা দেশে বিভক্ত ছিল। সবচেয়ে জনবহুল জায়গায় চিরকাল জায়দি মুসলিমদের শাসন ছিল, এরা শিয়া মুসলিমের একটা গোষ্ঠী। ছয়ের দশকে একটা মিলিটারি ক্যুপ হয়ে জায়দি সাম্রাজ্য ধ্বসে পড়ে, উত্তর ইয়েমেনে নতুন শাসকদলের আবির্ভাব হয়। এদের মধ্যেও মারামারি চলতেই থাকত, ইনফ্যাক্ট প্রথম দিকের অনেক শাসককেই খুন করা হয়েছিল। কিন্তু সাতের দশকের শেষের দিকে আলী আব্দুল্লাহ সালাহ বলে একজন কর্নেল শত্রুদের দমিয়ে নর্থ ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠেন। সালাহ ছিলেন জায়দি, কিন্তু এই গোষ্ঠীর আদর্শ বিশ্বাস পূর্ব সংস্কারের সঙ্গে তার দূর-দূর অব্দি কোনও সম্পর্ক ছিল না। ১৯৯০ আসতে আসতে সালাহ দক্ষিণ আর উত্তর ইয়েমেনের একীকরণ করে নতুন দেশের পত্তন করেন, কিন্তু এই বিশাল দেশের হাল হকিকত তাঁর কিছুই জানা ছিল না। ইয়েমেনের অধিকাংশ শক্তি ছিল সুন্নিদের কাছে, জায়দিদের সেটা পছন্দ ছিল না। উত্তরের পাহাড়ে মানুষ সুযোগ সুবিধা কিছু পেত না, তাদের সাহায্য করতে একটা নন প্রফিট আর এস এস এনজিও মার্কা ধার্মিক-সামাজিক সংগঠন গড়ে ওঠে, তারা সামাজিক কাজকর্ম করত, খাদ্য পানীয় স্বাস্থ্য সুবিধা নিয়ে সভাসমিতি বসাত, কিন্তু রাজনৈতিক অভিসন্ধি তাদের ছিল না। তবে এটা সত্যিই যে জায়দি গোষ্ঠীর একজন লোক দেশের হর্তাকর্তা বিধাতা হয়ে বসেছে আর নিজের লোকদেরই পাত্তা দিচ্ছে না, এই ঘটনার ফলে সালাহ অনেকের চোখের বালি হয়ে উঠেছিলেন। যাই হোক, সালাহর নিজের ক্যাবিনেটেই এক পলিটিশিয়ান ছিলেন, তার নাম হোসেন আল- হাউথি, তিনি নিজেও জায়দি, এবং এই মানুষটি বারবার সালাহের কাছে আবেদন জানিয়ে যাচ্ছিলেন যে জায়দির প্রতি একটু সদয় হওয়া দরকার, সৌদি সরকারের কথায় না নেচে বরং দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের ওপর অ্যাকশন নেওয়া হোক, সঙ্গে তাদের নিজেদের লোককে একটু বেশি অধিকার দেওয়া হোক, টাকাপয়সা রোজগার এর ব্যবস্থা হোক, উত্তরের জনতা আর ক্যাবিনেটের অনেকেই খুব একটা খুশি নেই, বিদ্রোহ হতে পারে।
কিন্তু সালাহ তাঁকে পাত্তা দেননি। উল্টে কানের কাছে এই বকবক শুনে তাঁকে বারবার অপমান করেছেন, চোখ রাঙিয়েছেন, কড়া কড়া কথা শুনিয়েছেন, (শোনা যায় গায়ে হাতও তুলেছিলেন) এমনকি এ-ও বলেছেন, ওই পাহাড়ি অশিক্ষিত গুণ্ডাদের তিনি মোটেও কেয়ার করেন না। তারা চুলোয় যাক, সঙ্গে ইচ্ছে হলে হাউথিও সেখানে চলে যেতে পারেন। ক্যাবিনেটে তাঁর প্রয়োজন নেই।
সালাহ বেচারি জানতেন না, তার এই অদূরদর্শী মনোভাব গোটা ইয়েমনকে এমন এক চিরকালীন হিউম্যানিটেরিয়ান ক্রাইসিসে ঠেলে দেবে যেখান থেকে বেরোনোর কোনও আশাই থাকবে না। হাউথি অপমানিত হয়ে তাই করলেন, যা অন্য কোনও মাথা গরম জায়দি লিডার হলেও করত। তিনি সরকার থেকে আলাদা হয়ে সাদ্দায় একটা নিজস্ব পলিটিকাল উইং খুলে বসলেন আর নর্থের সেই ধার্মিক-সামাজিক 'বিলিভার্স ইউথ'-কে গরমাগরম ভাষণ দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুললেন। এতদিন ধরে যারা শুধুই মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে কাজ করছিল, তারা আচমকা মনে করতে শুরু করল, এসব করে কিস্যু হবে না, এই একরোখা সরকারকে তাড়াতে না পারলে তাদের মুক্তি নেই, কিছুই ঠিক হবে না। ফলে দু এক বছরের মধ্যেই ছাত্রদের জন্য সামার ক্যাম্প বদলে গেল মিলিশিয়া ক্যাম্পে, খাবারের জায়গায় বিতরণ হতে লাগল রাইফেল, ইরানের ইসলামিক বিল্পবের মতো করে একটা নতুন ইয়েমেনিক বিপ্লবের রূপরেখা তৈরি হতে লাগল। দশ বছরও হল না, দেখা গেল উত্তর ইয়েমেন জুড়ে সালাহর বিরোধীরা তাণ্ডব শুরু করেছে, পাহাড়ি অঞ্চলে নিজেদের চেকপোস্ট লাগিয়েছে, হাজার হাজার লোক অস্ত্র হাতে স্লোগান দিচ্ছে।
এমন সময় ৯/১১ এর ঘটনা ঘটে গেল। ইয়েমেনে লুকিয়ে থাকা আল কায়দার সন্ত্রাসীদের খুঁজে বার করার জন্য আমেরিকা সালাহর ওপর চাপ দিতে লাগল। সালাহ আর কী করেন, সৌদির হাত আছে তার ওপর, আর ইউ এস আর সৌদি অ্যালাই। তিনি অনুমতি দিলেন, আমেরিকান ম্যারিনরা ইয়েমেনে এসে সন্ত্রাসীদের কচুকাটা করতে লাগল, সন্দেহের বশে সাধারণ মানুষের ওপরেও টর্চার শুরু হল, ইয়েমেনের মিলিটারিও তাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। এসব দেখে জায়দিরা রেগে আগুন, তারা শিয়া সেক্ট, সৌদির সুন্নি মুসলমানদের ওপর তাদের আগে থেকেই রাগ। আর আমেরিকার ওপর তো রাগ চিরকালের। দুই শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সালাহ নিজের দেশের শিয়াদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছেন দেখে তারা উত্তর ইয়েমেন জুড়ে একেবারে সশস্ত্র বিপ্লব করে বসল। অল-হৌথি নিজে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভাষণ দিচ্ছেন, আঠ থেকে আশি সবাই ঝপাঝপ র্যাশনালাইজ হচ্ছে। ধর্মের গার্নিশিং করলেই অল্পশিক্ষিত লোকজন একদম যুক্তিবুদ্ধি হারিয়ে 'মার মার কাট কাট' করে, ততদিনে অল-হাউথি জেনে গেছেন।
এইবার টনক নড়ল সালাহর। কিন্তু তিনি হলেন রাজা, ডিপ্লোম্যাসি দেখাবেন কেন? অন্যদের অপমান করতে পারেন, তাই বলে নিজের অপমান সইবেন কেন? সেই মানুষটার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন যাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, এই গুণ্ডাদের দাবির সামনে মাথা নত করবেন? কভি নেহি। ফলে সালাহ করলেন কি, সোজা সিআইএ স্টাইলে অল-হাউথির উপর একটা 'বাউন্টি' ঘোষণা করলেন, সামরিক বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে যথেচ্ছ ভাবে রেবেল-নন রেবেল নির্বিশেষে সবাইকে কচুকাটা করলেন আর ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে বললেন, "অল হাউথি ইজ অ্যান্টিন্যাশনাল!" এর এক সপ্তাহের মধ্যেই মিলিটারি অ্যাকশন করে অল হাউথিকে একটা গুহা থেকে খুঁজে বার করা হল আর যমের বাড়ি পাঠানো হল।
সালাহ ভেবেছিলেন, কাম খতম। এই ভায়োলেন্স দেখে বিদ্রোহীরা ভয়ে সিঁটিয়ে যাবে। কিন্তু, ওই একটা বুড়ো লোক কবে বলে গেছিল না, অ্যান আই ফর অ্যান আই মেকস দ্য হোল ওয়ার্ল্ড ব্লাইন্ড!
সালাহ ভাবতেও পারেননি, অল হাউথির হত্যা আগুনে ঘি-এর কাজ করবে! হাউথি সরকার থেকে বেরিয়ে জায়দিদের অধিকার দেওয়ার জন্য কাজ করছেন (এমনটা তাদের বলে বোঝানো হয়েছিল, আসলে তিনি নিজেও ক্ষমতালোভীই ছিলেন), তাঁকে দেশদ্রোহী বলাটা লোকেদের পছন্দ হয়নি। ফলে অল হাউথির সমস্ত ফলোয়াররা একাট্টা হয়ে নিজেদের 'হাউথি-রেবেল' বলে সরকারের বিরুদ্ধে ফুল ফ্লেজড যুদ্ধ ঘোষণা করে দিল। এতদিন ধরে যারা দোনামনা করছিল, এইবার তারাও হাতিয়ার তুলে নিল! একটা মাঝারি আকারের সেপারেটিস্ট আন্দোলন কখন একটা বিশাল মিলিশিয়া গ্রুপ হয়ে উঠল, কেউ বুঝতেও পারল না।
২০০৪ সাল আসতে আসতে হাউথি সন্ত্রাস সালাহের সেনাকে তাদের স্ট্রংহোল্ড থেকে তাড়িয়ে দিয়ে জায়গা অধিকার করতে শুরু করল। স্থানীয় সমর্থন ছিলই, উত্তর মধ্য ইয়েমেনের ভূদৃশ্যের সঙ্গে তারা পরিচিত, দরকার পড়লে পাহাড়ের গিরিখাত আর গুহায় লুকিয়ে পড়ার জন্য ঘাঁটি তৈরি হয়ে গেছে। ফলে একেবারে গুরিল্লা স্টাইল ক্যাম্পেন চালিয়ে সালাহের আর্মিকে জবাই করা হতে লাগল। ইয়েমেনি আর্মি সার্চ পার্টি নিয়ে বেরোলে। তারা কিছুতেই হাউথিদের খুঁজে পায় না। গ্রামবাসীদের উপর জোরাজুরি করে তাদের ঘাঁটির খবর জানার চেষ্টা করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হল, একের পর এক পাহাড়ি আদিবাসীরা, অত্যাচারিত গ্রামের লোকজন রেগেমেগে হাতে অস্ত্র তুলে হাউথিদের সঙ্গে যোগ দিতে লাগল। সালাহ উপায়ান্তর না দেখে এইবার সৌদির কাছে সাহায্য চাইলেন, যদি শত্রুদের ঘাঁটিয়ে এয়ারস্ট্রাইল করে লাভ হয়, অস্ত্রও দরকার। সৌদি সাহায্য করল বটে, কিন্তু তখন তারা নিজেরাও জানত না এই একটা পদক্ষেপ ইয়েমেনের এই পাহাড়ি যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক করে তুলবে। এয়ারস্ট্রাইকের ফলে হাউথিদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল, তারা উত্তরে সীমানা পেরিয়ে সৌদির শহরে হামলা চালাতে লাগল, তাদের নাগরিকদের হোস্টেজ রেখে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা শুরু করে দিল।
এদিকে, ইরান এতদিন বসে বসে এই সব ঘটনার উপর নজর রাখছিল। হাউথিরা এখন সৌদিকে থাপ্পড় মারছে, আর মধ্যপ্রাচ্যের আরব জগতে সৌদি ইরানের সবচেয়ে বড় শত্রু, তাদের সর্বনাশ করতে মদদ তো দিতেই হয়। ফলে ইরান এইবার রেড সি-এর রাস্তা দিয়ে হাউথি মিলিশিয়ার জন্য অস্ত্র আর অর্থ পাঠাতে শুরু করল, বিনিময়ে তারাও রেগুলার ইন্টারভালে সৌদিতে হামলা চালিয়ে গেল, মাঝেমধ্যে ইজরায়েলেও মিসাইল ছুঁড়ে মারতে লাগল। এদিকে সৌদি পড়েছে মহা বিপদে, একদিকে দক্ষিণে হাউথিরা ঝামেলা পাকাচ্ছে, অন্যদিকে অল কায়দার একটা শাখা এসে দেশে ডেরা বেঁধেছে। হাউথিদের পরে মজা দেখাব ভেবে তারা আগে এই অল কায়দার শাখাকে টার্গেট করল। অল কায়দার সৌদি ব্রাঞ্চও কম যায় না, তারা ওখান থেকে পালিয়ে ইয়েমনে থাকা অল কায়দা ব্রাঞ্চের সঙ্গে জোট পাকিয়ে একটা খতরনাক দল বানিয়ে ফেলল, সেটার নাম অল কায়দা ইন আরাবিয়ান পেনিনসুলা কাম এ কিউ এ পি। গত দশ বছরে বোঝা গেছে, নেটওয়ার্ক আর ফান্ডিং এর দিক থেকে এই দলটির মতো বিপজ্জনক সন্ত্রাসী দল আর মধ্যপ্রাচ্য দূর, সম্ভবত দুনিয়াতেও নেই। যাই হোক, এ কিউ এ পি এর লক্ষও আইসিসের মতো একটা বিশাল ইসলামিক স্টেট বানানো, কিন্তু এই পূণ্য কাজে অন্য দল এসে ভাগ বসাবে, সেটা হতে দিতে তারা নারাজ। তাই ব্যাটাচ্ছেলেরা একদিকে হাউথি, অন্যদিকে সালাহের আর্মির সঙ্গে লড়াই শুরু করে দিল। (যারা ভাবছেন আইসিস নিজে কোথায়, সবুর করুন, এখন সবে ২০১০ সাল)
২০১১ সালে আরব বসন্তে কী হয়েছিল সবাই জানে। একের পর এক দেশে বিপ্লব শুরু হল, জনতা দুর্নীতিবাজ সরকারকে সরে যাওয়ার জন্য পথে নেমে পড়ল। একদিকে কেওস, অন্যদিকে আশা। ইরান আর সৌদি দুজনেই দেখল, সুযোগটা কাজে লাগানো যাক। এই মওকায় এমন সব দেশে অ্যালাই বানানো যাক যারা পরে দরকার পড়লে সাহায্য করতে পারবে। প্রথমেই নজর পড়ল ইয়েমেনের উপর। ইয়েমেনেও মিছিল আর জনবিদ্রোহ চলছে, হাউথিরা আগেই সরকারকে ঘোল খাওয়ানোর জন্য উঠেপড়ে লেগে আছে, এই সময়টা কাজে লাগিয়ে রেজিম চেঞ্জ করে নিজেদের একটা লোককে সরকারে বসানো হোক। কিন্তু সালাহ যেমন গোঁয়ার ছিলেন তেমন গোঁয়ার আছেন। কিছুতেই তিনি গদি ছাড়বেন না। তাতে জনারোষ আরো বেড়ে গেল। সৌদি বুঝল, এইটাই লাস্ট চান্স। তাদের দক্ষিণ সীমান্তে এসে হৌথিরা যা শুরু করেছে, সেটাকে সামাল দিতে হলে ইয়েমেনে নিজের কন্ট্রোল চাইই চাই। তারা গিয়ে মধ্যস্থতা করার জন্য ইউনাইটেড নেশনসকে ধরল। ইউ এন আর সৌদির সম্মিলিত চাপে পড়ে সালাহ গররাজি হলেন, তাছাড়া প্রাণের ভয়ও ছিল, বিপ্লবীদের হাতে পড়লে মেরে হালুয়া বানিয়ে দেবেন। তিনি গদি ছেড়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদার মনসুর হাদিকে রাষ্ট্রপতি বানালেন, কিন্তু যেতে যেতে এতদিনে সঞ্চয় করা কয়েক বিলিয়ন ডলার নিয়ে যেতে ভুললেন ন, আর্মি আর ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও টাকাপয়সা দিয়ে নিজের দিকে টেনে আনলেন। ওদিকে হাদি প্রথমদিকে হাউথিদের সঙ্গে সন্ধি করতে চাইলেন, কিন্তু বছরখানেক টানাটানি করেও কিছুই হল না, হাউথিরাও বুঝে গেল এ ব্যাটা শুধুই নাটক করতে এসেছে, ডিরেক্টর আসলে রিয়াদে বসে কাবাব খাচ্ছে। "ন্যাশনাল ডায়ালগ-এর নিকুচি" বলে তারা বেরিয়ে গেল, এতদিন সময় নষ্ট হয়েছে, সংগঠন দুর্বল করাই এর উদ্দেশ্য ছিল। তারা আবার দ্বিগুন উৎসাহে ইরানের সাহায্য নিয়ে অসমাপ্ত কাজ শেষ করায় মন দিল।
২০১৪ সাল আসতে আসতে হাউথিরা যে কোনও আধুনিক সৈন্যদলের সমকক্ষ হয়ে উঠল, একের পর এক জায়গা সরকারের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে তারা। ড্রোন, মিসাইল, রকেট, বোমা, অধ্যানুনিক রাইফেল, মাইন… ট্রেনিং ক্যাম্প দেখে বোঝার উপায় নেই এরা একটা সন্ত্রাসী দল। এদিকে হাদ্দির অবিবেচনায় দেশের অবস্থা আরো খারাপ, লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এমন সময় তেলের দাম বাড়তে শুরু করল, জনারোষ দেখে হাউথিরা বুঝল এটাই সুযোগ। তারা এইবার দক্ষিণ ইয়েমনের দিকে এগোতে শুরু করল। মজার কথা হল, এই সময়ে হাউথিদের চিরশত্রু সালাহ, বিলকুল নীতিশ কুমার স্টাইলে পালটি মারলেন, তিনি ভাবলেন, হাদ্দিকে ভাগিয়ে হাউথিদের সঙ্গে হাত মেলালে আবার গদি পাওয়া যেতে পারে! ফলে তাঁর প্রভাবে থাকা সামরিক আধিকারিকরা হাউথিদের সাহায্য করতে লাগল, কয়েকদিনের মধ্যেই রাজধানী সানা হাউথিদের নিয়ন্ত্রণে চলে এল। হাদ্দি তাঁর মন্ত্রী ফন্ত্রী নিয়ে আরো দক্ষিণে পালালেন, কিন্তু হাউথি দস্যুরা তাড়া করছে। উপায় না দেখে তিনি সৌদি আরবে পালালেন৷ ২০১৫ আসতে আসতে হাউথিরা রাজধানী সহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে কব্জা করে স্বৈরশাসন চালাতে লাগল। যে বিলিভার্স ইউথ একসময় স্কুলে গিয়ে সামার ক্যাম্প করত, খাবার আর পোশাক দিত, স্বাস্থ্যসেবার জন্য চেষ্টা করত, তারাই এখন অপ্রেসিভ রেজিম চালাচ্ছে। কারো কথা পছন্দ না হলেই শুলে চড়ানো হবে! বাচ্চাদের স্কুল থেকে সরিয়ে এনে হাতে রাইফেল ধরিয়ে দেওয়া হল, মেয়েদের লাথি মেরে ঘরে বন্ধ করা দেওয়া হল, সিভিল সোসাইটির যে ক'জন হতভাগ্য এই দেশে রয়ে গিয়েছিল, তারা স্বাভাবিক নিয়মেই জেলে পচতে থাকল বা মারা পড়ল। বাচ্চারা তখন রাইফেল হাতে সাউথ দখল করবে বলে মার্চ করছে।
এদিকে সৌদি আরব তখন নার্ভাস হয়ে গেছে। সাদার্ন নেবারের দেশে এরকম কাণ্ড হলে কে আর শান্তিতে ঘুমাতে পারে? তারপর হাউথিদের উপর ইরানের হাত আছে, কাল হয়তো এরা রিয়াদেই চড়াও হবে। সৌদিরা নিজেদের বেশ অভিজাত ধনী মনে করে, এইসব ফালতু ঝামেলায় অয়েল বিজনেস ক্ষতিগ্রস্ত হলেই হয়েছে! তা ভয় পেলে কী করতে হয়? কী আবার, ভয় পেলেও মারতে হয়, রাগ হলেও মারতে হয়, দুঃখ বা অপমান হলেও মারতে হয়, আর আনন্দ হলে তো মারতেই হয়! ভায়োলেন্স ইজ অলওয়েজ দ্য বেস্ট অপশন। ফলে সৌদি মিলিশিয়া-সিভিলিয়ান- হাউথি-আল কায়দা- বাচ্চা- বুড়ো নির্বিশেষে শয়ে শয়ে বোমা ফেলে ইয়েমনকে একেবারে ঝাঁঝরা করে দিল। ক্রাউন প্রিন্স আর রক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সলমান নতুন নতুন এসেছেন, একটা উল্লেখযোগ্য কাজ না করলে সিভি খারাপ হয়ে যাবে!
এয়ারস্ট্রাইকের পর অস্ত্র কম পড়তে এইবার তিনি বন্ধুর দিকে, মানে আমেরিকার দিকে চাইলেন। আমেরিকা ইরাকে গিয়ে বহুত ভুগেছে, নিজে আর ওই পাগলা আরবদের দুনিয়ায় ঢুকে অপমানিত হতে চায় না, তবে বন্ধু চেয়েছে বলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওবামা কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র পাঠানোর অনুমতি দিলেন, এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য নিষিদ্ধ ক্লাস্টার মিউনিশনও পাঠিয়ে দিলেন। ২০১৫ থেকে ২০১৯, সৌদি আমেরিকার সব চেয়ে বড় আর্মস ইম্পোর্টার হয়ে রইল। সেই ২০১৫ থেকেই সৌদি আরব আর আরব কোয়ালিশনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে ইয়েমেনের যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। মাঝ থেকে অল কায়দার সেই গ্রুপ এসে জায়গা হড়প করছে, বাজারের নতুন মিলিশিয়া হিরো আইসিসও এসে পড়েছে। মার মার কাট কাট! এদিকে আমেরিকা বলল, হাউথিরা চুলোয় যাক আমার কি, কিন্তু আইসিস আর আল কায়দাকে তো দমন করতেই হবে। এই বলে তারা এই ইয়েমেনে এই দুটো সন্ত্রাসী দলের ডেরায় বোমা ফেলতে শুরু করল। কতজন সন্ত্রাসী মরল জানি না, কয়েক হাজার সিভিলিয়ান যে এয়ারস্ট্রাইকে মরল, তার প্রমাণ অবশ্যই পাওয়া গেছে। হাউথিরাও চুপ করে বসার পাত্র না, তারা সৌদিতে ঢুকে একের পর এক ঘটনা ঘটাতে লাগল। সেই দেখে রক্ষামন্ত্রী সলমান রেগে গেলেন, এত বড় সাহস! পরদিনই ইয়েমেনে একশো তিরিশটা এয়ারস্ট্রাইক হল, স্কুল হাসপাতাল বাড়িঘর ওয়াটার প্লান্ট সব খতম! কল থেকে যদি বা বেরোয়, কালো জল বেরোয়। সবুজের চিহ্ন নেই। বাতাস ভারী হয়ে থাকে। রেড সি-তে সৌদি নৌবহরের পাহারা, যাতে অস্ত্র না আসতে পারে৷ কিন্তু ইরানও কম যায় না। এদিকে হাজার্নালিস্টরা ওয়ার ক্রাইমের দোহাই দিচ্ছে, সলমান ভাই নিজের পিঠ চাপড়াচ্ছেন। এই প্রক্সি ওয়ারের মাধ্যমে যে তিনি চিরশত্রু ইরানকেই মজা দেখাচ্ছেন, তাতে তার সন্দেহ নেই। ওদিকে ইরানের সরকারও আনন্দে আছে, তার পাঠানো অস্ত্র যে হাউথিরা সউদিতে ব্যবহার করছে, এটা ভেবেই মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছে।
২০১৭ সালে সৌদি আর ইউএই ভাবল, সালাহকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনলে পরিস্থিতিতে কিছুটা উন্নতি হতে পারে! সালাহ তো সেই জন্য জিভ বাড়িয়েই ছিলেন! হাউথিদের বিরুদ্ধে গেলেই তাঁকে ক্ষমতায় বসানো হবে শুনেই তিনি অবিকল ইয়েমেনিজ নীতিশ কুমার স্টাইলে রাজি হয়ে গেলেন, তাঁর নিজেদের সেনাপ্রধানরা এইবার হাউথিদের বিপক্ষে লড়তে শুরু করল। কিন্তু দুদিন পরই দেখা গেল সালাহ হাউথিদের হাতে খুন হয়েছেন। এদিকে তখন বাজারে এক সোনালি চুল ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে। তিনি আমেরিকার গদিতে বসেই বললেন, "ওয়ার ক্রাইমের নিকুচি! নিকেশ কর সব শালাকে।" এতদিন যা আসছিল, তার চেয়েও দ্বিগুণ অস্ত্র আসতে লাগল, এয়ারস্ট্রাইক বেড়ে গেল আরো বেশি! কে যে কাকে মারছে, কেন মারছে, তখন সে সব খতিয়ে দেখার সময় নেই।
২০১৮ সালে এই কনফ্লিক্ট নতুন মোড় নিল। ইউনাইটেড আরব এমিরেটস এতদিন সৌদির কোয়ালিশনে ছিল, এইবার সে বেঁকে বসল। ইউ এ ই জানাল, সে এই দলের ওপর পুরোপুরি বিশ্বাস হারিয়েছে। কিন্তু ইয়েমনে রাজনীতির প্রভাব বিস্তার করার শখ তাদের এখনও ষোল আনা। ফলে দেখা গেল, ইউ এ ই কোয়ালিশন ছেড়ে দক্ষিণ ইয়েমনে সক্রিয় এক অন্য দল সাদার্ন ট্রাঞ্জিশনাল কাউন্সিল আব এস টি সি কে সহায়তা করতে লাগল। এই দলটার সঙ্গে সৌদি ব্যাকড সরকার বা হাউথিদের সম্পর্ক ছিল না, তারা আসলে এক স্বতন্ত্র দেশ চাইছিল। ইউ এ ই খুব চালাক ভাবে দক্ষিণ থেকে তাদের সৈন্যসামন্ত সরিয়ে নিল, যাতে এসটিসির রাস্তা পরিষ্কার করে দেওয়া যায়। এক বছরের মধ্যেই তারা দক্ষিণ ইয়েমনে নিজেদের সরকার গঠন করে ফেলল, ইউ এ ই সেই সরকারকে সমর্থনও দিল। দিনে দিনে ইউ এ ই সাপোর্টেড এসটিসি আর সৌদি সাপোর্টেড সরকার হাত মিলিয়ে হাউথিদের রুখতে চেষ্টা করল, কিন্তু হাউথিরা ততদিনে অসম্ভব শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তারা ইরানিয়ান মিসাইল তাক করে একবার সৌদির অয়েল ফ্যাক্টরি, একবার ইজরায়েলকে নিশানা করছে। ২০২১ সাল আসতে আসতে হাউথিরা দেশের ৭০% জনসংখ্যাকে ভুলিয়ে বুঝিয়ে জোর করে বা মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে নিজেদের সঙ্গে করে নিয়েছিল, এই গোটা সময় ধরে এল কিউ এ পি আর আইসিস ইয়েমনের বিভিন্ন জায়গায় তাদের প্রভাব বাঁচানোর জন্য লড়াই চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষের অবস্থা কহতব্য নয়। দু কোটি মানুষকে প্রতিদিন জল আর খাবার পৌঁছে দিতে হচ্ছে। বাড়ি নেই ঘর নেই, পানীয় জল নেই, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়নের কথা বলা হাস্যকরই বটে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে, রোজ মরছেও, এর মধ্যেও কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললে শুট আউটের নির্দেশ আছে, সে সরকার হাউথির হোক, সৌদি সমর্থিত সরকারের হোক, এসটিসির হোক… প্রায় নয় বছর যুদ্ধ চলার পর যখন বন্দুকবাজরাও একটু হাঁফিয়ে উঠেছে, তখন ইউএন এর মধ্যস্থতায় একটা সিজফায়ার করা হয়, ইরান ও সৌদির মধ্যেও ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশন বহাল হয়, তাতেও চিনেরও ভূমিকা ছিল। এই ধ্বসে যাওয়া, দুমড়ে যাওয়া দেশে গিয়ে আমানা আল সারিফ, আসামা ওয়াগুইহ, মাত্তা ভেলাতি প্রভৃতিরা যে ছবি তুলে এনেছে, রিপোর্ট করেছে, সে সব দেখলে নিজেদের ভাগ্যশালী বলেই মনে হয়। সব কিছু হারিয়েও মানুষরা বলছেন, "এখনও বাঁচতে পারি! শুধু যদি এই লোকগুলো রাগ সামলে রাখে! কথায় কথায় মারামারি না করে!" এই লোকগুলো বলতে কোন লোকগুলো, সে কথার উত্তর কেউ দিতে চায়নি, সে লিস্ট অনেক বড়।
সিজফায়ার এক বছরও টেকেনি। ইজরায়েল গাজার ওপর হামলা শুরু করতেই হাউথিরা শাসানি দিয়েছিল, এই বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তারা রেড সি থেকে যাওয়া জাহাজগুলোকে নিশানা বানাতে শুরু করেছে। আঠেরো ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ জাহাজ এম ভি রুবি মার ডুবিয়ে যে উন্মাদনা শুরু হয়েছিল, তা দিন দিন আরো বেড়েছে। মার্কিন জাহাজ, ইউরোপিয়ান জাহাজ, এশিয়ান জাহাজ… কিছুই ছাড়া পাচ্ছে না। ভারতে আসতে থাকা অয়েল ট্যাঙ্কারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইন্ডিয়ান নেভি রিলিফ ওয়ার্কের জন্য কাজ করছে, এদিকে ব্রিটেন, আমেরিকারা ফের হাউথিদের ওপর বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। এমনিতেও এই জায়গাটা অসম্ভব সেনসিটিভ, চারিদিকে যত দেশ, সবগুলো ফেইল্ড স্টেট। সিভিল ওয়ার, মিলিটারি ক্যুপ, সোমালি পাইরেট, জিবুতি আর ইথিওপিয়া নিয়ে তো একটা অন্য পোস্ট লেখা যায়। দুনিয়া জুড়ে ত্রাস, কারণ রেড সি সাপ্লাই চেনের জন্য অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, তারপর ইন্টারনেটের সমস্ত কেবল এখান দিয়েই গেছে, হাউথিরা বেশিদিন এরকম চালালে গ্লোবাল ইকোনমিতে মেল্টডাউন আসতে পারে! গাজায় যুদ্ধ গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ইরান, সৌদি সবাই আবার মাঠে নেমে এসেছে, আবার সেই যুদ্ধ, সেই এয়ারস্ট্রাইক, সেই সিভিল ওয়ার, সেই হাজার হাজার মানুষের প্রাণ হারানো…
কী জানি, সালাহ যদি তিরিশ বছর আগে অল-হাউথির কথা শুনতেন! পছন্দ না করলেও তাকে যদি যথেচ্ছ অপমান না করতেন, লাথি মেরে না তাড়াতেন, তাহলে হয়তো ভবিষ্যৎটা অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু জানি, ৯৯.৯৯℅ মানুষ এই সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেওয়ার কাউন্টার লজিক ইতিমধ্যেই ভেবে ফেলেছেন। সুতরাং, চলুক যুদ্ধ! দেশে দেশে! লড়াই হাতে, কাস্তে হাতে (না'হলে চড় থাপ্পড় তো আজকাল খুবই জনপ্রিয়) মানুষে মানুষে! টিভি আর খবরের কাগজে! ফেসবুকের কমেন্টে! দ্য ওয়ার মাস্ট গো অন!