মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০১৫

(দানিশ সিদ্দিকির কাজ নিয়ে একটা লেখার কথা ভেবেছিলাম। হয়তো কয়েক বছর পর হত, আবার হয়তো কোনওদিনই হত না। স্বাধীন ভারতের একমাত্র পুলিৎজার জয়ী ফোটো জার্নালিস্ট, তাঁর কথা দেশের মানুষ জানল তালিবানের হাতে মারা যাওয়ার পর। দানিশের কেরিয়ার আর ছবি নিয়ে বিশেষ আলোচনাও হল না, ন্যারেটিভ ঘুরিয়ে দেওয়া হল অন্যদিকে। আমি যারাপনাই হতাশ! তবে আজকাল দেশের অবস্থা দেখে সর্বক্ষণই হতাশায় ডুবে থাকি, একধরনের নির্লিপ্তি এসে গেছে। উই ডোন্ট ডিজার্ভ পিপল লাইক হিম।

ফটোজার্নালিজম নিয়ে আমার আগ্রহ বহুদিন ধরে। চিত্র সাংবাদিকদের নিয়ে গল্পও লিখেছি, ভালো আর্টিকেল পেলে পড়ে ফেলি। কলেজ জীবন থেকেই আমি রবার্ট কাপার একনিষ্ঠ ভক্ত, ওর বায়োগ্রাফি আর ওয়ার রিপোর্টাজ পড়েছিলাম যখন, ইংরেজি প্রায় বুঝতামই না। তাও শেষ করেছিলাম, মাঝপথে থেমে যাইনি। 

একসময় ভেবেছিলাম, কাপাকে নিয়ে বাংলায় একটা দীর্ঘ উপন্যাস লিখব। সহজ ভাষায়। ওয়ার করেসপন্ডেন্টদের বিস্তারিত কথা থাকবে তাতে, ছবিও থাকবে। সে লেখার নোট এখনও পড়ে আছে। হয়নি, হওয়ার কথাও নয়। সে সময় লেখার কিছুই জানতাম না, এখনও জানি না যদিও। তাও নিজের জন্য ব্লগে একটু আধটু লিখে রেখেছিলাম আনাড়ি হাতে। লেখাটা নীচে দিয়ে দিলাম। যারা আগ্রহী, রবার্ট কাপার লেখা রিপোর্টাজগুলো পড়তে পারেন বরং। আর গ্রাফিক বায়োগ্রাফিটাও নাকি খুব ভালো। আমি পড়িনি, কিন্তু ছবিটা দিলাম। সত্যি বলছি, নতুন একটা দিগন্ত খুলে যাবে।)

৬ জুন ১৯৪৪। ইংলিশ চ্যানেলের উপকূল। বাইশটা আমেরিকান, বারোটি ব্রিটিশ, তিনটে কানাডিয়ান, একটা পোলিশ আর একটা ফরাসি। মোট উনচল্লিশটা ট্রুপ। দশ লক্ষ সৈন্য একসঙ্গে ঝাঁপিয়েছে নাজী ট্রুপদের ওপর। উদ্দেশ্য হিটলার অধিকৃত জার্মানির হাত থেকে ফ্রান্সের এই অঞ্চলকে মুক্ত করা। উভচর আক্রমণের ইতিহাসে সব চেয়ে বড় আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়েছে আজ। নরম্যান্ডির সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু হয়েছে এই অ্যাকশন। জলপথ ধরে গোপনে এখানকার বেলাভূমিতে নেমে এসেছে কয়েক লক্ষ্য সৈন্য। সেই একই সময়ে আকাশে মিত্রশক্তির ফাইটার প্লেনরা  বম্বিং করবে বলে ঠিক করা আছে। দ্রাম দ্রাম করে গর্জাচ্ছে কার্তুস, বাতাসে ভাসছে বারুদের গন্ধ। নিমেষে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে হাজার হাজার লোক। দু'দিক থেকেই চলছে প্রবল ফায়ারিং। বন্ধুর আর্তনাদ আর রক্তপাতে ফিরে তাকাচ্ছে না আর কেউ। দরকার হলে এগিয়ে যেতে হবে লাশের ওপর পা রেখে। 

এই যুদ্ধের কোড নেম অপারেশন নেপচুন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের 'গেমটার্নার' বলে মনে করা হচ্ছে এই পরিকল্পনাকে, এখানে ব্যর্থ হলে হিটলারকে আটকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। যারা এই অভিযানে নাম লিখিয়েছে, তাদের ফেরার কোনো পথ নেই। হয় জিততে হবে নয় মরতে হবে।

হিউস্টান রিলিও আছে এই দলে। ব্রিটিশ সৈন্যের  ফার্স্ট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিজনের সিক্সটিনথ রেজিমেন্টের সদস্য সে। তীরবেগে সে এগিয়ে চলেছে ফায়ারিং করতে করতে। এরকম 'সাডেন মুভমেন্ট' হলে কভারিং ফায়ার পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সবটাই ভাগ্য। ভাগ্যে থাকলে জীবন না হলে মৃত্যু। জীবন হাতে নিয়ে তাদের ওমাহা বিচের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সেইখানে কব্জা করতে পারলেই জার্মানদের কোমর ভেঙ্গে যাবে।

হিউস্টান ভেবেই রেখেছে, যুদ্ধ শেষ হলে সে ক'দিনের অন্যে বাড়ি যাবে ছুটিতে। কিন্তু সে কথা এখন নয়। হঠাৎ করে এলোপাথারি ফায়ারিং আরম্ভ হয়ে গেল সামনে থেকে। পরিত্যক্ত বাঙ্কারের মধ্যে লুকিয়ে অপেক্ষা করছিল নাজী সৈন্যদের দল। সাঁ করে একটা গুলি এসে বিঁধল রিলির কাঁধে। হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল সে। নিমেষের জন্য কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়লেও চটপট নিজেকে সামলে নিল সে। ফায়ারিং শুরু করতে করতে আড়চোখে দেখল, তার পাশে বছর কুড়ির ছেলে অ্যালেক্স গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ল। তাদের আক্রমণ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। একের পর এক সৈনিক নিহত হচ্ছে। বম্বিং স্কোয়াড এখনও আসেনি। বাঁচার কোনো উপায় নেই আর। শেল ফাটার কানফাটা শব্দে অসাড় হয়ে গেছে তার শরীর। বন্দুক আর তুলতে পারছে না সে। হিউস্টান বিস্ফারিত চোখে দেখল, সামনে থেকে তার দিকে  ছুটে আসছে মৃত্যুবাণ। অন্ধকার ভেদ করে আসা গুলিগুলো জ্বলন্ত উল্কার মতো এসে আঘাত করছে প্রতিপক্ষকে। সঙ্গীদের বুক ফুঁড়ে দিচ্ছে একটা না একটা গুলি, যে কোনও মুহুর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে হিউস্টনের দেহ। শেষবারের মতো সে তাকাল সামনে। বিদায়! 

হঠাৎ কে যেন এক ধাক্কায় তাকে মাটিতে ফেলে দিল। শেল ফায়ার এড়িয়ে অদৃশ্য দু'টো হাত তাকে বয়ে নিয়ে চলেছে পিঠে করে। কোনওমতে চোখ খুলে সে তাকাল তার উদ্ধারকারীর দিকে।আরে!এ কে?এ তো তাদের ট্রুপের কেউ নয়। তাকে আড়ালে নামিয়ে লোকটা ফিরে গেছে গোলাগুলির মাঝে। হতবাক হয়ে হিউস্টন দেখল তার দিকে। লোকটার হাতে মেশিনগান নেই, আছে একটা ক্যামেরা।

***

ডিয়ার গেরটা,

অনেকদিন হয়ে গেছে তুমি আমাকে কোনও চিঠি লেখোনি। আমাকে চিঠি না লিখলেও অবশ্য আমি তোমায় ভুলতে পারি না। তোমার আমার গল্প এক বলেই কি? জানি না। স্তাতগ্রাতের মেয়রের অফিসে একজনের সঙ্গে দেখা হতে আমি তোমার পরিবারের খোঁজ নিয়েছিলাম। কিন্তু তারাও কিছু বলতে পারল না। লিপজিগ থেকে তাদের কোথায় পাঠানো হয়েছে কেউ জানে না। প্রিয়জনদের সঙ্গে আর বোধহয় দেখা হবে না এ জীবনে। আমাকেই দেখো! ঘর ছাড়লাম, দেশ ছাড়লাম, এমনকি নিজের নামটাও ছেড়ে দিতে হলো। কী দোষ ছিল?না! আমরা জিউস, সেটাই কি একমাত্র দোষ? এই বোধহয় আমাদের নিয়তি। মেনে নেওয়া ছাড়া আর কীই বা করার আছে? ভ্যালেন্সিয়া বম্বিংসে তোলা ছবিগুলো দেখলাম। দেখে মনে হল সম্ভবত তোমার প্রিয় 'রলেই ক্যামেরা' ব্যবহার করেই ছবিগুলো তুলেছো। ইতিমধ্যে আমার আর প্যারিস যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কিন্তু খবর পেয়েছি, তুমি ভালোই কাজকর্ম করছ সেখানে। মার্ক্সিস্ট খবরের কাগজের মাধ্যমে যে তোমার সঙ্গে হেমিংওয়ে আর ওরয়েলের পরিচয় হয়েছে সেটাও জানি। আমি যদিও কট্টরপন্থীদের কাছ থেকে দূরে থাকতেই ভালোবাসি কিন্তু হেমিংওয়ের লেখা যে চমৎকার সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যাকগে, কাজের কথা শোনো। Regards, Life, Illustrated London News আর Volks-Illustrierte-তে ছাপা ফটোগুলো দেখে তোমার কাজের তারিফ না করে থাকতে পারলাম না। বলতে নেই, আমার দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তুমি ভালোই করেছ।আমাদের জীবনের কীই বা ভরসা? তুমি সে দিন ঠিকই বলেছিলে, আমাদের মতো ইহুদিদের পক্ষে সারা জীবন একজায়গায় শান্তিতে কাটানো সম্ভব নয়। যাই হোক, আশা করি তোমার কাজের মধ্যে দিয়েই তুমি সুখী হয়েছো। স্প্যানিশ সিভিল ওয়ারের সময় কর্ডোবাতে আমরা একসঙ্গে কত ভালো সময় কাটিয়েছি, সে কথা মাঝে মাঝেই মনে পড়ে যায়। প্রফেশনাল পার্টনার হিসেবেই হোক আর বন্ধু হিসেবে, সেই দিনগুলি আমার স্মৃতিতে উজ্জল হয়ে থাকবে। আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। কিন্তু গেরটা, সত্যি বলতে তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসি আমার ক্যামেরাকে। পরের সপ্তাহে চায়না যাচ্ছি। কয়েকটা ভালো শট নেওয়ার ইচ্ছে আছে সামরিক অনুপ্রবেশের। লোকে এই ছবিগুলো দেখেই অন্তত যুদ্ধের সত্য বুঝুক। আমরা তো যুদ্ধেই রইলাম সারা জীবন। বেস্ট পিকচারের খোঁজ করে গেলাম। সত্যি বলতে সত্যিটা তুলে ধরাই হয়তো বেস্ট পিকচার। The truth is the best picture and the best propaganda। যাই হোক, সারা জীবন ওয়ার করেসপন্ডেন্ট হিসেবেই বেকার থাকতে চাই। সেদিন একজন আবার জিগ্গেস করল, কেন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে গোলাগুলির মাঝে যাই? তাকে হেসে বলেছিলাম, "For a war correspondent to miss an invasion is like refusing a date with Lana Turner." ভালো থেকো গেরটা। ফিরে এসে একবার প্যারিস যাওয়ার ইচ্ছে রইল।

তোমার বন্ধু
এনদ্রে ফ্রাইডম্যান

***

১৯৪৪। লাইফ ম্যাগাজিনের দপ্তরে বসে আছেন এডিটর থমসন। ডেকে পাঠিয়েছেন ফটোগ্রাফার রালফ মারসোকে। 'The Magnificent Eleven' নামের ছবিগুলো প্রচন্ড আলোড়ন তুলেছে সারা আমেরিকা আর ইউরোপে। অনেকে বলেছে এরকম ছবি নাকি ওয়ারফ্রন্টে গিয়ে তুলতে পারা অসম্ভব। ফোটোগ্রাফগুলো আসলে জাল। জুন মাসেই অপারেশন নেপচুন করে ফ্রান্সকে ছাড়িয়ে নিয়েছে মিত্রশক্তি। সেই যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝামাঝি গিয়ে তোলা ছবিগুলো। প্রতিটা ছবিই এককথায় মাস্টারপিস। কিন্তু তাও একটা সন্দেহ থেকেই যায়। নরম্যান্ডি ল্যান্ডিংস এর ছবিগুলোতে মোট আছে ৯৫টি ছবি। এতগুলো ছবি তুলতে গেলে তো পুরো যুদ্ধটাই কভার করতে হবে। সেটা কি সম্ভব?

দরজা ঠেলে মারসো ঢুকল ভিতরে। তার দিকে তাকিয়ে থমসন প্রশ্ন করলেন, "কী মনে হয়?"

মারসো বলল, "কোনও সন্দেহের প্রশ্নই ওঠে না। কাপা ছবি জাল করার লোক নয়।"

থমসন খেঁকিয়ে উঠে বললেন, "আরে ও যুদ্ধ কভার করবে কখন? এই তো খবরে দেখলাম অভিনেতা জন জাস্টিনের স্ত্রীর সাথে অ্যাফেয়ার চালাচ্ছে।কিছুদিন আগেই ব্যাটা লন্ডন আর প্যারিসের জুয়াঘরে গোছা গোছা টাকা নিয়ে ফুর্তি করছিল।"

মারসো শান্ত স্বরে বলল, "রবার্ট কাপাকে চেনা দুস্কর স্যার। সে কখন কী করবে তা আগে থেকে বলা যায় না। কিন্তু আমি যতটা ওকে চিনি, সে মরে গেলেও যুদ্ধের ছবি জাল করবে না। দেখতে গেলে ওয়ার ফোটোগ্রাফি তো ওই শিখিয়েছে আমাদের।"

"একটু ডিটেলস দিতে পারো?"থমসন উৎসুকভাবে জিগ্গেস করলেন। মারসো একটা চেয়ার টেনে নিল। তারপর শুরু করল, "রবার্ট কাপা ওর আসল নাম নয় স্যার,আসল নাম হল এনদ্রে ফ্রাইডম্যান। জাতে ইহুদি। আঠেরো বছর বয়সে যখন ঘর ছাড়ে,  হাংরিতে ইহুদিদের জেনোসাইড চলছে। সে প্রাণ বাঁচিয়ে পালায়। ফটোগ্রাফিতে অবশ্য সে দক্ষতা অর্জন করেছিল আগেই। নিজের নাম বদলে ফ্রাঙ্ক কাপা করে যাতে শুনতে আমেরিকানদের মতো লাগে। তখন তো আমেরিকানদের ছাড়া কাজের সুযোগ পাওয়া যেত না। তারপর থেকেই সে ওয়ার জোনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্লোভাকিয়া,স্প্যানিশ সিভিল ওয়ার, চাইনিজ ইনভেশন, যুদ্ধের খবর পেলেই কাপা ফ্রন্টে ছুটে যায়। ওর মৃত্যুভয় নেই স্যার, বরং আমার মানে হয় সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে সে এরকম কোনো যুদ্ধ কভার করতে গিয়েই মরবে।"

"মানে? পাগল না হলে কেউ এরকম করতে পারে?"থমসন অবাকভাবে জিগ্গেস করলেন।

মারসো করুণভাবে একটু হাসে। থমসন তাকিয়ে রইলেন।

"পারে স্যার। ভালোবাসার জন্যে এরকম পাগলামি অনেকেই করে।"

"ভালোবাসা আবার এল কোত্থেকে? কী বলছ বাপু?একটু খোলসা করে বলবে?" থমসন রেগে গেলেন।

মারসো হেসে বলল," আপনি বলছিলেন না স্যার কাপার অ্যাফেয়ারের কথা। ওই সব কাপার খেলা মাত্র। সত্যি মিথ্যের দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। কিন্তু আমার মানে হয় কাপা যদি কাউকে ভালোবেসে থাকে সে হলো গেরদা তারো। গেরদা আর কাপার জীবনে অনেক মিল। দু'জনেই জিউস, দু'জনেকেই ঘরছাড়া হতে হয় নাজী জার্মানির অত্যাচারে। গেরদার আসল নাম আসলে গেরটা ফরাইল। গেরদা প্রথম মহিলা যে ওয়ার করেসপনডেন্ট হয়ে ফ্রন্টিয়ারে গিয়েছিল। কাপা আর গেরদা পার্টনার ছিল, দু'জনে একসঙ্গে কাজও করেছে বহুদিন। স্প্যানিশ সিভিল ওয়ারে ওদের তোলা কয়েকটি ছবি অসাধারণ। সেখান থেকে ফিরে গেরদা প্যারিসে গিয়ে কাজ শুরু করে।"

"তারপর?" থমসন কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করেন।

"গেরদা স্প্যানিশ ওয়ারের ব্রুনেটে চলে যায় নিউজ কভার করতে। সেখানে ওয়ার ফ্রন্টে গেরদা মারা যায়...কী করে হয়েছিল সেটা ঠিক জানা যায়নি। কাপা তখনও খবর পায়নি। পরে গেরদার মৃত্যসংবাদ শুনে সে প্রচন্ড শক পায়। কিন্তু কেউ কিছু বুঝতে পারেনি। আমি তখন বেশ কয়েকবার কথা বলেছি ওর সঙ্গে। সে একবারও গেরদার কথা তোলেনি। খালি বলেছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অভিজ্ঞতার কথা। বার বার সে ছুটে গেছে যুদ্ধের মধ্যে, কারো বারণ শোনেনি। কোনো প্রটেকশন নেয়নি, নিরাপত্তার কথা বললে হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। একবার জিগ্গেস করাতে সে বলেছিল, ছবি আরও ভালো করতে হবে। আমি না থাকলেও ছবিগুলো থাকবে। জানো, If your pictures aren't good enough, you aren't close enough."

মারসো কথা শেষ করে। দু'জনেই চুপ। একসময় নীরবতা ভেদ করে থমসন বললেন,"১৯ জুনের এডিসানে ছবিগুলো পাঠিয়ে দাও। নাম দাও BEACHHEADS OF NORMANDY".

***

রবার্ট কাপা জুয়া খেলে গেছে সারাজীবন। জীবন নিয়ে। হেসেখেলে, আমোদ করে,বলাইমলাইটে রয়েছে,সব সময়। সে নিউজ করেছে তার ক্যামেরা দিয়ে নয়, তার জীবন দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কাপা চিত্র সাংবাদিকদের আইকন হয়ে ওঠে। কোথায় যায়নি সে? ইউরোপ, আমেরিকা, চাইনা, ইজরায়েল! প্রতিষ্ঠিত হলিউড অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ১৯৪৫ এ,তার অনুরোধে কাপা কিছুদিনের জন্যে কাজ করে American International Pictures এ,কিন্তু সে জীবন কাপার পছন্দ হয় না। তুরস্ক থেকে ডাক পেয়ে সে চলে যায় ১৯৪৬ এ। লাইফ ম্যাগাজিনের কাজ হাতে নিয়ে সে চলে আসে সাউথ ইস্ট এশিয়াতে ১৯৫০ সালে। ফার্স্ট ইনডো চায়না ওয়ারে তার তোলা প্রচুর ফটো ছাপা হয় লাইফ ম্যাগাজিনে। ভিয়েতনামে ১৯৫৪ সালে ওয়ারফ্রন্টে কাপা মারা যায় ল্যান্ডমাইন ব্লাস্টে। তার যোগ্য এবং আকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন