শনিবার, ৫ জুন, ২০২১

সুলভিন আর সমুদ্রের গল্প


সুলভিন আর সমুদ্রের গল্প

সুদীপ চ্যাটার্জী



সমুদ্রের ভিতরের পৃথিবীটা খুব পরিচিত, খুব আপন মনে হয় সুলভিনের।  জলের নীচে ডুব দিলেই একটা অচেনা আবেশের সুর তার কানে বাজতে থাকে। সূর্যের আলোয় জলের তলার রঙ্গীন কোরালগুলো চকচক করে।  ঝাঁকে ঝাঁকে রঙিন মাছ তাকে আরচোখে দেখতে দেখতে এগিয়ে যায় জল কেটে। সমুদ্রের তলানিতে দল বেঁধে থাকা গোলাপী লাল কাঁকড়া গুলো তাকে দেখতে পেয়ে সড়সড় করে বালির তলায় লুকিয়ে পড়ে। জেলিফিশ আর স্টিং রে থেকে শুরু করে বড় বড় সামুদ্রিক কচ্ছপ,  সকলেই যেন তাকে অনেকদিন ধরে চেনে, তাকে জানাতে চায় লুকোনো কোন কথা।


সুলভিনের বয়স নয় বছর। জন্মানোর পর প্রথম যখন সে চোখ খুলেছিল, সমুদ্রের নীল সবুজ জল প্রথমে ধরা দিয়েছিল তার চোখে, তারপর সে দেখতে পেয়েছিল তার মাকে। এরপর একে একে অনেক বছর কেটে গেছে। সুলভিনরা নৌকোতে থাকে, নৌকোতে রান্না করে, নৌকোতেই ঘুমায়। তার মা রেজা তাকে বলেছে, বাজাউ লাউতরা সমুদ্র ছেড়ে কোনদিন যায় না। তাদের ডাঙায় থাকা বারণ।


সুলভিনের ভাই যখন নিখোঁজ হয় যায় সমুদ্রে, তার বয়স তিন। ভাই তাদের মোটর লাগানো নৌকা করে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিল। ঝড়ের দেবতা ‘উমবোহ্ বালিয়ু’ তাকে ফিরতে দেয়নি। বাবা কয়েকদিন মনমরা হয়ে ছিল তাদের হারিয়ে যাওয়া নৌকোর শোকে। নৌকো না থাকলে সমুদ্রে গিয়ে জালে মাছ ধরা যায় না বাজারে বিক্রি করার জন্যে। বাজাউরা টাকাপয়সা রাখে না, মাছের বদলে চাল, কেরোসিন, নুন নিয়ে আসে ডাঙা থেকে। অগত্যা সমুদ্রে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করা ছাড়া গতি নেই। সুলভিনও লেগে গিয়েছিল কাজে। বাজাউরা জলের তলায় ডাঙার চেয়ে বেশী সাবলীল, দু’বছর বয়স থেকেই সমুদ্রের গভীরে সাঁতার কাটতে ওস্তাদ হয়ে যায় তারা। দিনের মধ্যে পঞ্চাশ বার অন্তত বাঁশ দিয়ে তৈরি বর্শা হাতে নিয়ে জলে ঝাঁপায় সুলভিন, কখনো সামুদ্রিক শসা, কখনো মাছ, আবার কখন তুলে আনে অর্চিন। তা রান্না হয় তাদের ‘লেপা লেপা’ নৌকোয়।


প্রতিদিনের মত আজও জলের তলায় ডুব সাঁতার দিয়ে শিকার করছিল সুলভিন। জলপরীর মত দু’হাত দিয়ে জলের আরো গভীরে নেমে যেতে যেতে তীক্ষ্ণ চোখে চারদিকে নজর রাখছিল সে। হঠাৎ সে দেখতে পেল, জলের তলানিতে থাকা কোরালের ফাঁকে একটা জিনিস চক চক করছে। কোরালে মরা ঝিনুকের মধ্যে কখনো কখনো মুক্তো দেখতে পাওয়া যায় এদিকের সমুদ্রে, কৌতুহলী হয়ে সেইদিকে সাঁতার কাটতে লাগল সে। মিনিটখানেক পর ভুস করে জলের তলায় যখন মাথা তুলল সুলভিন, তার হাতে ধরা একটা পুরোনো কাচের বাক্স। নৌকোতে উঠে ছইয়ের ভিতরে গিয়ে বাক্সটা ভালো করে দেখল সে। খুব পুরোনো হলেও, জিনিসটা দেখতে অপূর্ব সুন্দর। বাক্সটা খুলে সুলভিন দেখতে পেল, সেখানে রাখা আছে একটা ছোট্ট হাত আয়না। আয়নার চারিদিকে বাহারি কাজ করা আছে। হয়ত সোনা বা রুপোর জল করা হয়েছিল কোন সময়ে। হাতের কাপড় দিয়ে আয়নাটাকে ভালো করে মুছলো সুলভিন, তারপর সেটাকে হাতে নিয়ে চোখের সামনে ধরল।



স্কুল থেকে বেরিয়ে নৌকোর দিকে হাঁটা লাগল ইমরান। আজ ভূগোলের ক্লাসে মানচিত্র পড়ানো হচ্ছিল, সেখানে তাদের দ্বীপটা খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। ইন্দোনেশিয়ার সুলাবেশী প্রান্তের ছোট্ট একটা দ্বীপ, সহজে কি খুঁজে পাওয়া যায়? তাদের গ্রামের পুরুত টুডো অবশ্য বলে যে একসময় বাজাউরা সারা মালয়েশিয়া, বোরনিও আর ইন্দোনেশিয়া জুড়ে বসবাস করত। তাদের রাজার মেয়ে হারিয়ে যেতে রাজা বাজাউদের আদেশ করেন সমুদ্রে গিয়ে মেয়ের সন্ধান করতে, মেয়ে হয়ত নৌকা নিয়ে সমুদ্র দেখতে গেছে। যতদিন না রাজকন্যাকে খুঁজে পাওয়া যাবে, তাদের ডাঙায় ফেরা বারণ। কিন্তু রাজকন্যাকে তারা খুঁজে পায়নি কোনদিন, কয়েক শতাব্দি কেটে গেছে তারপর। বাজাউ লাউতরা আজও সমুদ্রের বুকে নৌকোতে বসবাস করছে সাবাহ, সুলাবেশী আর অন্যান্য কয়েকটা দ্বীপে। নৌকোয় উঠে দাঁড় বাইতে বাইতে ইমরান ভাবল, সুলভিনও কি সেই গল্পের রাজকন্যের মত অদৃশ্য হয়ে যাবে?


প্রায় দু’দিন ধরে সুলভিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার চেয়ে বছরচারেকের ছোট হলেও সুলভিনকে ইমরান বন্ধুই মনে করে। ঘরের কাজ না থাকলে সুলভিন স্কুলেও যায় তার সঙ্গে। বিকেলে তার সঙ্গে গল্প করতে করতে সমুদ্র থেকে তুলে আনা শাকপাতা রান্না করে সে। সুলভিন বয়সে ছোট হলেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জলে ডুব দিতে পারে, নিশ্বাস না নিয়ে সাঁতার দিতে পারে অনেকক্ষণ। হঠাৎ করে সে কোথায় উধাও হয়ে গেল কিছুতেই বুঝতে পারে না ইমরান।


দাঁড় বাইতে বাইতে সুলভিনদের লেপা লেপার কাছে চলে এল সে। সুলভিনের মা রেজাকে দেখে ইমরান জিগ্গেস করল, “সুলভিনের কোনো খবর পেলে মাসি?”


রেজা বিষণ্ণ মুখে বলল, “সে কি আর আছে ইমরান?  মেয়েটা জল বলতে পাগল ছিল, জলে নামতে পারলেই যেন বেঁচে যেত! সমুদের দেবতা ‘উমবোহ্ দিলাউত’ তাকে জলের তলাতেই নিয়ে গেছে।”


ইমরান রেজাকে জিগ্গেস করল, “সুলভিনের জিনিসপত্র গুলো একটু ঘেঁটে দেখব মাসি? যদি কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়?”


রেজা আপত্তি করল না। ইমরান রেজার নৌকোয় উঠে এল। রেজা উঠে গিয়ে ছইয়ের মধ্যে থেকে একটা ছোট বাক্স আর একটা থলি নিয়ে এসে তার হাতে দিয়ে বলল, “মেয়েটার জিনিস বলতে এইটুকুই। ছোট থেকেই সুলভিন খুব শান্ত আর নরম স্বভাবের। এখন আমি কী যে করি?”


ইমরান থলিটা উপুড় করে দিল কোলের ওপর। কয়েকটা শামুকের খোল, চিরুনি, জামাকাপড় ছাড়া জিনিস বলতে একটা কাঁচের সুন্দর ছোট বাক্স, হয়ত জলের তলায় পড়ে ছিল অনেকদিন। সেটা হাতে তুলে চোখের সামনে আনতেই ইমরান চমকে উঠলো। এটা তো ‘বোসুঙ’ এর বাক্স, টোডু কতবার এই ভয়ংকর বাক্সের কথা বলেছে গল্পে। ইমরান বাক্সটা হাতে লাফিয়ে তার নৌকোতে চড়ে বসল। তারপর জোরে দাঁড় বাইতে লাগল টোডুর ‘লেপা লেপা’র দিকে।



বাজাউরা যে সকলেই সারাজীবন জলে থাকে তা নয়। বেশিরভাগ মানুষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডাঙায় এসে সরকারের করে দেওয়া ঘরবাড়িতে থেকে দোকান দেয়, পড়াশুনা করে, অনেকে বড় হয়ে বাইরে গিয়ে চাকরি বাকরিও করে। কিন্তু ‘কালামত’ টোডুর মত কয়েকজন আজও স্রোতের বিপরীতে গিয়ে টিকে আছে সমুদ্রের ওপর। সারা জীবনে টোডু বড়জোর বিশ পঁচিশ বার মাটিতে পা রেখেছে। খোলা আকাশ আর নীল সমুদ্রের মাঝে না থাকলে সে বাঁচবে না।


একসময় লোকে তার খাতিরও করত। এই সমুদায়ে সে একমাত্র ‘কালামত’, মরে যাওয়া লোকেদের আত্মা টোডুর শরীরে এসে তাদের পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে। নানা রকম জাদুমন্ত্রও জানে সে। অনেক বার অনেক জিনকে তাড়িয়েছে সে, কিন্তু সে সব কথা আজ অতীত। টোডু বুঝতে পারে, মানুষ বড় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, সমুদ্রের শক্তির ওপরেও তাদের বিশ্বাস কমে আসছে। প্রকৃতিকে তাচ্ছিল্য করতে শুরু করেছে আজকালকাল ছেলেরা, শহরে গিয়ে তাদের ওপর জিন ভর করেছে। টাকার লোভে দরকারের অনেক বেশি মাছ শিকার করছে তারা, সামুদ্রিক জীব ধরে বিক্রি করে আসছে শহরে, সমুদ্রের জলে আবর্জনা ফেলতে শুরু করেছে শহরের লোকেরা এসে। ‘উমবোহ্ দিলাউত’ যেদিন রুষ্ট হবে, পলকে শেষ হয়ে যাবে সবকিছু।


নিজের পুরোনো নৌকোতে বসে উদাস দৃষ্টিতে টোডু তাকিয়ে ছিল সামনের দিকে। এমন সময় তার নজরে পড়ল ইমরান দ্রুত গতিতে নাও নিয়ে তার কাছেই আসছে। মুখে অদৃশ্য একটা হাসি ফুটল বুড়োর। এই ছেলেটার মত কয়েকজন আজও তার কাছে গল্প শুনতে চায়, তারও খারাপ লাগে না স্মৃতি হাতড়ে সেই সব প্রাচীন ঘটনা বলতে।


কিন্তু আজকে গল্প শুনতে না চেয়ে ইমরান তড়িঘড়ি নৌকায় উঠে এসে বলল, “টোডু, সুলভিনকে জিনেরা ধরে নিয়ে গেছে। এই দেখো ওর কাছে ছিল এই বোসুঙ এর বাক্স।”


বৃদ্ধ টোডুর চোখে একটা বিস্ময়ের ঝিলিক দেখা দিয়ে মিলিয়ে গেল, তারপর তার চোখে ফুটে উঠল আতঙ্ক। দু’হাত দিয়ে বাক্সটা চেপে ধরে সে মন্ত্র পড়তে লাগল বিড়বিড় করে। তার মাথায় ঘুরছে তার পূর্বপুরুষদের কাছে শোনা সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা।


বহু বছর আগে যখন রাজার আদেশে সমুদ্রে নির্বাসন নিতে বাধ্য হয় তাদের পূর্বপুরুষরা, স্বয়ং সমুদ্রের এক দেবতা এসে তাদের উদ্ধার করেছিলেন। ভয়ংকর চেহারা ছিল সেই দেবতার। তার নামই ছিল ‘বাজাউ’। সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে খাদ্যভাব হলে লোকেরা তাকে ডাকত সমুদ্রে পুজো দিয়ে। সেই পুজোর পর সমুদ্রের জলে আবির্ভূত হতেন বাজাউ দেবতা, তারপর সাঁতরে সমুদ্রের বিশেষ এক অংশে এগিয়ে যেতেন। তার পিছনে পিছনে অনুসরণ করে যেত বাকি লোকেরা। তাঁর বিশাল শরীরের ভারে সমুদ্রের জল উদ্বেলিত হয় প্রকান্ড ঢেউ উঠত আর প্রচুর মাছ এসে পড়ত বাজাউদের নৌকোতে। সেই মাছ চলত বেশ কয়েকদিন। খুব দরকার না পড়লে দেবতাকে কেউ স্মরণ করত না।


কিন্তু মানুষের লোভের কোন সীমা নেই। গ্রামের অনেক বাজাউ লুকিয়ে লুকিয়ে ফন্দি আঁটতে লাগল কী করে দেবতাকে বন্দী করা যায়, তাহলে তাঁর জাদুবিদ্যের সাহায্যে আরো অনেক মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতে পারবে তারা। সমুদ্রের গভীর থেকে তুলে আনতে পারবে দামী মুক্তো, আরো অনেক হারিয়ে যাওয়া সোনা, রুপো, হিরে দখল করতে পারবে।


একদিন তারা সুযোগও পেয়ে গেল। প্রচন্ড খরায় মাছেরা সমুদ্রের অনেক গভীরে চলে গিয়েছিল। বাজাউদের পুরুত ‘কালামত’ পুজো করে স্মরণ করলেন দেবতাকে। দেবতা প্রকট হলেন জলে, তারপর এগিয়ে চললেন সাঁতার কেটে। সহসা গ্রামের কয়েকজন তাঁর দিকে তাক করে ছুঁড়তে শুরু করল বিষাক্ত তির, উদ্দেশ্য তাকে অজ্ঞান করে ধরে নিয়ে যাওয়া। একের পর এক তির বিঁধতে লাগল দেবতার শরীরে, কিন্তু আশ্চর্য্য! তিরবিদ্ধ হলেও দেবতা অজ্ঞান হলেন না। বরং প্রচন্ড এক লাফে জল থেকে উড়ে এসে পড়লেন লোকগুলোর নৌকোয়। সেই ধাক্কায় নৌকো চুরমার হয়ে গেল।


তখন দেবতার চোখ দুটো জ্বলতে শুরু করেছে। তার শরীর থেকে অসংখ্য কালো কালো ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এসে ঘুরপাক দিতে শুরু করল আকাশে। দেবতা বাজাউদের উদ্দেশ্যে বললেন, “তোদের লোভই তোদের কাল। যেই সমুদ্র তোদের থাকার জায়গা দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিস তোরা। তোদের আমি অভিশাপ দিলাম, তোরা কোনদিন শান্তিতে সমুদ্রে থাকতে পারবি না। কয়েক শতাব্দী ধরে তোদের তাড়া করে বেড়াবে জিনেরা। তোদের অভিশাপ বন্ধ রইল এই ‘বুসোঙ’ এর বাক্সে। তোদের পরের প্রজন্মের কেউ না কেউ এই বাক্স খুঁজে পাবে সমুদ্রে। যদি সেই মানুষ সৎ হয় তাহলে হয়ত সেই মুক্তি দেবে তোদের, নাহলে সমুদ্রের ঢেউরূপী জিনেরা এসে ধ্বংস করে দেবে তোদের।”


ততক্ষণে তাঁর হাতে উঠে এসেছে একটা কারুকাজখচিত একটা কালো বাক্স। ধীরে ধীরে তার শরীর সমুদ্রের জলের মত স্বচ্ছ হতে শুরু করল, তারপর আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল বাতাসে।



চোখ খুলে সুলভিন দেখল, সে শুয়ে আছে একটা নৌকোর মধ্যে। উঠে দাঁড়িয়ে সে দেখল চারিদিকে দিগন্ত অব্দি প্রসারিত সমুদ্রের অনন্ত জলরাশি, জল ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। রোদ্দুর একটু ফিকে হয়ে আছে মেঘলা হয়ে। বালির সৈকত থেকে অনেক দুরে চলে এসেছে সে। কোন অন্য নৌকো তার নজরে পড়ল না। এখান থেকে কোনদিনে গেলে তাদের বাড়ি?  


সুলভিনের মনে পড়ল সমুদ্রের তলানি থেকে সে একটা কাচের বাক্স খুঁজে পেয়েছিল। নৌকোতে পৌঁছে সে বাক্স থেকে পেয়েছিল একটা হাত আয়না। তারপর?  তারপর কী হয়েছিল?  এখানে সে এলই বা কী করে?  তবে কি “উমবোহ্ দিলাউত” এর যাদুতেই সে এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে?  এবার সে কী করবে?


মাথা ঠাণ্ডা করে ভাববার চেষ্টা করল সুলভিন। এখনো সূর্য অস্ত যায়নি। তার মানে খুব একটা দূরে নিশ্চয়ই আসেনি সে। সকলে নৌকা নিয়ে তাকে খুঁজতে বের হবে। এখন অপেক্ষা করাই একমাত্র উপায়।


জলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সুলভিনের মন ভালো হয়ে গেল। স্বচ্ছ জলের তলা দিয়ে কত মাছ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে! কী সুন্দর সূর্যের একটা রুপোলি আলো এসে পড়েছে ঢেউয়ের ওপরে। মনে হচ্ছে যেন কোন আয়নার ভিতর দিয়ে মাছগুলো চলে যাচ্ছে। আয়নার কথাটা মনে পড়তেই সুলভিন চমকে উঠল। সেই আয়নাটা?  কোথায় গেল?  সেই আয়নার মধ্যেই নিশ্চয়ই জাদু’ছিল!


নৌকোর ভিতরে খুঁজতে গিয়ে সে দেখতে পেল জিনিসটা। আয়নাটা হাতে তুলে নিয়ে ভালো করে দেখল সুলভিন। কারুকাজ করা জিনিস। দু’হাত দিয়ে চাপ দিলে শামুকের খোলের মত দুভাগ হয়ে যায়, দুদিকেই গোল আরশি লাগানো।


চোখের সামনে জিনিসটা আনতেই আয়নাতে প্রতিফলিত হয়ে উঠলো দুটো দৃশ্য। সুলভিন দেখল ডান দিকের আয়নাতে ফুটে উঠেছে সমুদ্রের বুকে এগিয়ে চলা একটা ছোট নৌকো। নৌকোতে বসে আছে তাদের গ্রামের ‘কালামত’ টোডু আর তার বন্ধু ইমরান আর ইবু। তারা জোরে জোরে সুলভিনের নাম ধরে ডাকছে। সুলভিন বুঝতে পারল তাকে খুঁজতেই বেরিয়েছে তারা। কিন্তু তাদের সঙ্গে কী করে যোগাযোগ করবে সে?  মরিয়া হয়ে আরশির কাচের ওপর হাত রাখতেই সুলভিন অবাক হয়ে দেখল তার আঙ্গুলগুলো আরশির কাচ ভেদ করে অন্যদিকে চলে গেল। সত্যি তাহলে ‘সুম্মাঙ্গা’ দেবতার জাদু’আছে এতে! কৌতুহলী হয়ে খুব সাবধানে সে তার ডান চোখ ছোঁয়াল আরশির গায়ে, তক্ষুণি সে চোখের সামনে দেখতে পেল ইমরানদের নৌকোটা। এই আয়না তাহলে একটা জাদু’পথ! তাহলে সুলভিন চাইলেই ইমরানদের কাছে চলে যেতে পারে এক্ষুনি। তারপর নিশ্চিন্তে তাদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যেতে পারে। ‘সুমাঙ্গা’ দেবতা বাজাউদের সবসময় রক্ষা করেন জিনদের কাছ থেকে, তাকে রক্ষা করতেই এই আয়না পাঠিয়েছেন তিনি। সুলভিন মনস্থির করে ফেলল, কিন্তু ফিরে যাওয়ার আগে বাঁ দিকের আয়নাটাও দেখা দরকার।


বাঁ দিকে চোখ লাগাতেই বুকটা কেঁপে উঠলো সুলভিনের। বিশাল এক জাহাজ দাঁড়িয়ে রয়েছে জলের ওপর। জাহাজের মাস্তুল থেকে কালো ধোঁয়া বেরিয়ে আকাশ ছেয়ে ফেলেছে। সমুদ্রের জলের ওপর কালো চ্যাটচ্যাটে কোন তরলের  ওপর মরে ভাসছে হাজার হাজার মাছ, জলের যন্ত্রণায় ছটপট করছে অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীরা। কয়েকটা ডলফিন করুণ স্বরে আর্তনাদ করছে ঢেউয়ের ওপরে।


সুলভিনের মনটা কেঁদে উঠলো। জলের প্রাণীরা তার কাছে অনেক বেশি আপন, সমুদ্রের জলের নীচেই সুলভিন সবচেয়ে আনন্দে থাকে। সেখানের এই করুণ পরিণতি তার মনকে ব্যাকুল করে তুলল। আর কিছু চিন্তা না করে সে কাচে চোখদুটো ছোঁয়াল, পরমুহূর্তেই সে আয়নার ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেল।  



“তারপর কি হলো টোডু?” নৌকো থেকে জল সেচতে সেচতে জিজ্ঞেস করল ইবু। টোডু সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিল। উদাসীন গলায় সে বলল, “দেবতার কথাই সত্যি হল। যেই দিন আমার ভাই তুলে এনেছিল এই বাক্স, তার পরের দিনেই শুরু হয়ে গেল প্রচন্ড ঝড় আর বৃষ্টি। সমুদ্রের ঢেউ পাহাড়ের মত উঁচু হয়ে আছড়ে পড়ল আমাদের ওপর। কত লোকে মরল, কত লোকে ভেসে গেল, কেউ হিসেব রাখেনি।”


ইমরান জিগ্গেস করল, “আর বাক্স?”


“বাক্সর কথা কারো মনে নেই। ভাইও আর ফিরল না।”


ইমরানের কাছে বোসুঙ এর বাক্সটা দেখেই টোডু ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল। তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমুদ্রে বেরিয়ে পড়েছিল নাতি ইবুকে সঙ্গে নিয়ে। ইমরানও তাদের সঙ্গ ছাড়েনি। বয়স কম হলেও ইবু চালাক চতুর ছেলে, বিদেশীদের সঙ্গে কথা বলে বলে অনেক কিছু জানে বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে। মোটর লাগানো নৌকো চালাতেও ওস্তাদ হয়ে উঠেছে। টোডু যে সুনামির কথাই বলছে সেটা বুঝতে পারল ইবু। সে ইমরানের দিকে তাকিয়ে বলল, “সুলভিন তো দুদিন আগে থেকেই নিখোঁজ। সমুদ্রে তাকে কোথায় খুঁজব আমরা?” ইমরান টোডুর দিকে তাকালো।


টোডু গম্ভীর মুখে বলল, “বাজাউ দেবতা সমুদ্রের যেই জায়গায় নিয়ে যেতেন আমাদের পূর্বপুরুষদের, সেইদিকেই যাচ্ছি আমরা। বলা যায় না, সুলভিন যদি তার পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হয়, তাকে হয়ত ফিরে পেতে পারি আমরা। তাহলে…”


কথাটা আর শেষ করল না টোডু। সুলভিনের জীবনের সঙ্গে এখন সমস্ত বাজাউ লাউতদের জীবন জড়িয়ে গেছে। মেয়েটা হয় তাদের মুক্তি দেবে নয় দেবতার অভিশাপ আবার আছড়ে পড়বে তাদের ওপর।  


এরপর ইবু আর ইমরানের বহু সাধাসাধিতেও টোডু আর মুখ খুলল না। দুশ্চিন্তাতে তার কপালের রেখা গুলো কুঁচকে গেছে। ইমরানরা একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে সমুদ্রের দিকে চেয়ে বসে রইলো। সূর্য মাথার ওপর থেকে নেমে পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে ধীর গতিতে। একটা ঠান্ডা হাওয়া চলতে শুরু করেছে সমুদ্রের বুকে। ধীরে ধীরে বিকেল হয়ে এলো।


এমন সময় হঠাৎ ইমরান বলে উঠলো, “আরে! জলটা এরকম হল কী করে?”


টোডু উঠে দাঁড়িয়ে জলের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইবু নৌকোর ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল নৌকোর। ব্যাপারটা তারও চোখে পড়েছে। সে অস্ফূটে ইমরানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তেল!”


ইমরান এরকম কোন অভিজ্ঞতা হয়নি আগে। সে অবাক হয়ে ইবুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তেল? সমুদ্রের জলে তেল আসবে কোত্থেকে?”


ইবু উত্তর দিল, “জাহাজের ট্যাঙ্কারে করে নিয়ে যাওয়া তেল, পেট্রল, ইত্যাদি। অনেক সময় ট্যাঙ্কার ফেটে অথবা অন্য কোনো অসাবধানতায় সমুদ্রের জলে পড়ে যায়। এরকম নাকি সারা দুনিয়াতে আকছার হচ্ছে। এই তেলের পরতে অক্সিজেন জলের তলায় পৌঁছতে পারে না, ফলে অনেক মাছ আর অন্যান্য প্রাণীরা মরে জলের ওপর ভেসে ওঠে।”


বাস্তবিকই তাই। সারা সমুদ্রে তেল থক থক করছে, আর তার মধ্যে ভাসছে প্রচুর মাছের মৃতদেহ। কতটা জায়গা ধরে যে তেল ছড়িয়েছে সেটা বোঝার কোন উপায় নেই। এখানে ইঞ্জিন চালানোও অসম্ভব, তেলের সংস্পর্শে আগুন ধরে যেতে পারে। নৌকোর পাটাতনের নীচ থেকে একটা বৈঠা তুলে ইবু নৌকোটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগল।


যত এগোচ্ছে দৃশ্যটা তত ভয়াবহ হয়ে উঠছে। একটা ভাসমান নরকের ওপর দিয়ে চলেছে তারা। ইমরান আর ইবুর গলার কাছে একদলা কষ্ট পাকিয়ে উঠছে। কত প্রাণীকে যে মরে থাকতে দেখল ইমরানরা। তাদের চোখের সামনে একটা ডলফিন ছটফট করতে করতে মারা গেল। টোডু বুকের ওপর হাত দিয়ে বার বার বলতে লাগল, “উমবোহ্ দিলাউত মানুষের এই অন্যায় ক্ষমা করবে না, কোনদিন ক্ষমা করবে না।”


ততক্ষণে সূর্যের আলো পড়ে অন্ধকার হতে শুরু করেছে। সহসা ইবু চেঁচিয়ে বলল, “ওই দেখো।”


দূর থেকে তারা দেখতে পেল আগুনটা। সমুদ্রের বুকে যেন একটা আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছে। একটা বিশালাকায় জাহাজ সমুদ্রের চরায় কাত হয়ে পড়ে আছে, আর সমস্ত জায়গাটা জুড়ে আগুনের শিখা দাউদাউ করে জ্বলছে আকাশের দিকে মুখ করে।



সুলভিন যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই জায়গাটা সমুদ্রের ওপরের একটা চর। ভাঁটার সময় গভীর সমুদ্রেও কোথাও কোথাও এরকম চর তৈরি হয়। কয়েক মুহর্ত আগেই এই চরে এসে উপস্থিত হয়েছে সুলভিন, কিন্তু এইবার কী করবে সে? আগুন ক্রমেই ছড়িয়ে যাচ্ছে সমুদ্রে আরো দূর পর্যন্ত।


এমন সময় সুলভিনের নজরে পড়ল চরের কাছেই কাত হয়ে আছে একটা জাহাজ। যতদুর মনে হচ্ছে এটা কোন মাল বোঝাই জাহাজ, মানুষজনের চিহ্ন দেখতে পেল না সে। হয়ত কোন দুর্ঘটনা হওয়ায় জাহাজের মানুষেরা ছোট নৌকা করে পালিয়েছে এখান থেকে। কিছু একটা আন্দাজ করে জলে একবার আঙুল ডুবিয়েই ব্যাপারটা পরিষ্কার বুঝতে পারল সুলভিন। তারপর তিরবেগে ছুটতে শুরু করল জাহাজের দিকে। ওই জাহাজটার খোলের মধ্যে রাখা তেলের টিন ফুটো হয়ে তেল এসে পড়ছে সমুদ্রে। প্রতি মুহুর্তে তেল ছড়িয়ে যাচ্ছে আরো দূরে। এক্ষুণি কিছু না করলে আরো হাজার হাজার সমুদ্রের প্রাণী মারা যাবে আজকে।


অনেক কষ্টে ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে জাহাজের ওপরে চলে এল সে। জাহাজের ওপরের বেশিরভাগ জিনিস আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেক আধপোড়া জিনিস থেকে এখনো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। মাস্তুলের ওপরে আগুন জ্বলছে এখনো। তপ্ত লোহায় পা পুড়ে যেতে লাগল ছোট্ট সুলভিনের, কিন্তু সে ব্যাথাকে পাত্তা না দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেমে এলো জাহাজের খোলে। বিশাল বিশাল কয়েকটা ট্যাঙ্কার রাখা আছে সেখানে। কোন কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার ফলে অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে সেগুলোর, গল গল করে তেল বেরিয়ে আসছে সেখান থেকে। এদিকে সেদিকে আগুনের জ্বলন্ত টুকরো এসে পড়েছে। আগুনের সঙ্গে তেলের ট্যাঙ্কারগুলোর সংযোগ হলেই প্রচন্ড বিস্ফোরণ হবে এখানে। সুলভিন বুঝতে পারল না কী করবে? অথচ তেল বেরোতে থাকলে সমুদ্রের জল বিষাক্ত হয়ে যাবে। সেটা সে কিছুতেই হতে দেবে না।


এদিকে সেদিকে তাকিয়ে সুলভিন হঠাৎ দেখতে পেয়ে গেল কয়েকটা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। তার মনে পড়ে গেল স্কুলে তাদের শিখিয়েছিল কি করে আগুন লাগলে এই যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়! সুলভিন একটা অগ্নিনিবারক যন্ত্র খুলে নিয়ে তার ক্লিপটা টেনে পাইপটা জ্বলন্ত আগুনের টুকরোগুলোর দিকে তাক করে বোতাম টিপে দিল। সঙ্গে সঙ্গে শুকনো বরফের একটা ফোয়ারা ফিনকির মত বেরিয়ে এসে আগুন নিভিয়ে দিতে লাগল। ততক্ষণে সুলভিনের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আগুন নিভিয়ে সে অগ্নিনিবারক যন্ত্র থেকে শুকনো বরফ ছড়াতে লাগল তেলের ট্যাঙ্কারের ফাটলগুলোর ওপর। কিছুক্ষণের মধ্যেই বরফ জমে গিয়ে তেল বেরোনো বন্ধ হয়ে গেল।


স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল সুলভিন। কিন্তু এখন তার কাছে সময় নেই। জাহাজের খোলের মধ্যে একটা খোলা জাল দেখতে পেল সে। সেটা হাতে করে বাইরে এসে ঝপাং করে সে জলে লাফিয়ে পড়ল। তারপর ডুব সাঁতার দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল আগুনের দিকে। আগুনের তাপে জলের তলায় স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। অনেক মাছ আর অন্যান্য প্রাণী নিশ্বাস নিতে না পেরে সেখানে খাবি খাচ্ছে, সাঁতার কাটতে না পেরে অসহায়ের মত ভেসে আছে জলে। সুলভিন তাদের হাতের জালে ঢুকিয়ে তেলের সীমানার বাইরে গিয়ে পরিষ্কার জলে ছেড়ে দিয়ে আসতে লাগল। সুলভিন জলকে ভয় করে না, সে বাজাউ লাউতদের মেয়ে। শিকার করার জন্যে এমনিতেই সে এক নিশ্বাসে জলের অনেক গভীরে ডুব দিতে পারে। অনেক দূর গিয়ে সে একবার ভুস করে মাথা তুলে নিশ্বাস নিল। তারপর আবার ডুব দিল জলের তলায়। আবার খানিক পরে মাথা তুলল, আবার ডুব দিল।


কতবার সুলভিন জলের তলায় ডুব দিচ্ছে, তার তখন খেয়ালই নেই। যেন সে তার নিজের আপনজনকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করছে। কিন্তু একটা সময়ের পর প্রকৃতির সামনে হার মানতেই হয়। নয় বছরের সুলভিনও একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ল। জলের তলায় তার দম আটকে আসছে, কিছুতেই সে নিশ্বাস নিতে পারছে না। অনেক কষ্টে সে চোখ খুলে ওপর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করল একবার, তারপর আর সুলভিনের কিছু মনে নেই।  



ইবু আর ইমরান নৌকোতে ঘুমিয়ে পড়লেও জলের দিকে দৃষ্টি রেখে ঠায় জেগে বসে ছিল টোডু। একসময় সে চমকে উঠে বসলো। তারপর ঠেলা মেরে জাগাতে লাগল ইমরান আর ইবুকে।


ইমরানরা চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসতেই টোডু উচ্ছ্বসিত স্বরে বললাম, “দেখ, দেখ। বাজাউ লাউতদের রাজকন্যা ফিরে এসেছে। আজ আমি শান্তিতে ঘুমাব। ধন্য তুমি উমবোহ্ দিলাউত, অসীম তোমার করুণা। আজ আমরা মুক্তি পেলাম। মেয়েটাকে নৌকোতে তোল রে তোরা, হাঁ করে দেখছিস কি? স্বয়ং বাজাউ দেবতা সুলভিনকে ফিরিয়ে দিতে এসেছে।”


ইমরান আর ইবু তখন হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে জলের দিকে। তাদের নৌকোর কাছে জলের মধ্যে মুখটা ওপর দিকে তুলে শব্দ করছে একটা ডলফিন, আর তার পিঠের ওপর অঘোরে ঘুমিয়ে আছে ছোট্ট সুলভিন।


অলঙ্করণঃ মৌসুমী (জয়ঢাকে প্রকাশিত)